বাংলাদেশে চীনা পন্যের চাহিদা
বেশি হওয়ায় চীন থেকে বাংলাদেশে পন্য আমদানী করে ব্যবসা করে অনেক লাভবান হওয়া
যায়। চীনের পণ্য উৎপাদন খরচ কম হওয়ার পাশাপাশি এর মান উন্নত হওয়ায় বাংলাদেশী বাজারে
এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। চীন থেকে বাংলাদেশে পণ্য আমদানী করতে হলে সঠিক নিয়ম-কানুন
এবং প্রক্রিয়া অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরি। এই নিবন্ধে আমরা চীন থেকে বাংলাদেশে পণ্য
আমদানী করার নিয়ম, খরচ, সুবিধা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।
চীন থেকে বাংলাদেশে পণ্য আমদানী করার ধাপসমূহ
চীন থেকে বাংলাদেশে পণ্য আমদানী
সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হলে নির্দিষ্ট কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হবে। নিচে এই ধাপগুলো বিস্তারিতভাবে
বর্ণনা করা হলো:
১. পণ্য বাছাই: বাজারের চাহিদা
অনুযায়ী সঠিক পণ্য নির্বাচন
পণ্য বাছাই চীন থেকে পন্য আমদানীর
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলোর একটি। আপনি যে পণ্যটি আমদানি করতে চান, তা অবশ্যই বাজারের
চাহিদা এবং আপনার ব্যবসার ধরন অনুযায়ী হতে হবে। পণ্যের মান, বৈচিত্র্য, এবং গ্রাহকদের
পছন্দ অনুযায়ী পণ্যটি বাছাই করা জরুরি। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক্স, গৃহস্থালি
সামগ্রী, এবং পোশাকের চাহিদা অনেক বেশি। তাই এই ধরণের চাহিদাসম্পন্ন পণ্য বাছাই করতে
হবে।
২. বিক্রেতার সাথে যোগাযোগ:
বিশ্বস্ত ও মানসম্পন্ন বিক্রেতার সাথে সম্পর্ক স্থাপন
সঠিক বিক্রেতা নির্বাচন করাও
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীনে অনেক বিক্রেতা রয়েছে যারা বিভিন্ন ধরনের পণ্য সরবরাহ করে,
কিন্তু সকলেই মানসম্পন্ন এবং বিশ্বস্ত নয়। Alibaba, Global Sources, এবং
Made-in-China এর মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে বিক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ করতে
সহজ হবে। বিক্রেতা নির্বাচন করার আগে তাদের পণ্য, সরবরাহের সময়, এবং কাস্টমার রিভিউ
যাচাই করে নিন। অর্ডার কনফার্ম করার আগে স্যাম্পল এনে পন্য এবং পন্যের মান যাচাই করে
নিবেন। স্যাম্পল এর দাম এবং কুরিয়ার খরচ কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট করে দিলে সাপ্লায়ার
কুরিয়ারে করে স্যাম্পল পাঠিয়ে দিবে।
3. প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট প্রস্তুত
করা
চীন থেকে পণ্য আমদানী করার
জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট প্রস্তুত করে নিতে হবে। এগুলো হলো:
ইম্পোর্টার রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (IRC): বাংলাদেশে আমদানী করার জন্য এই সার্টিফিকেট থাকা আবশ্যক।
প্রফর্মা ইনভয়েস(PI): প্রোফর্মা
ইনভয়েসে পণ্যের পরিমাণ, আনুমানিক মূল্য, শিপিং খরচ, শর্তাবলী, এবং অন্যান্য তথ্য উল্লেখ
করা থাকে। এটি বিক্রেতা (সাপ্লায়ার) ক্রেতাকে (বায়ার) সরবরাহ করে।
লেটার অফ ক্রেডিট (LC): ব্যাংকের
মাধ্যমে পণ্যের অর্থ পরিশোধের নিশ্চয়তা হিসেবে এই নথি ব্যবহার করা হয়।
৪. শিপিং ব্যবস্থা করা: সঠিক
পদ্ধতি নির্বাচন
পণ্য পরিবহনের জন্য সঠিক শিপিং
পদ্ধতি অর্থাৎ চীন থেকে কিভাবে বাংলাদেশে পন্য আনবেন তা ঠিক করে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পণ্য পরিবহনের জন্য সাধারণত দুইটি প্রধান পদ্ধতি রয়েছে: এয়ার কার্গো, সি কার্গো।
প্রতিটি পদ্ধতির খরচ, সময়, এবং নিরাপত্তা ভিন্ন রকম।
এয়ার কার্গো: দ্রুততম পদ্ধতি হলেও খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি। সাধারণত ৫-১০ দিনের মধ্যে পণ্য পৌঁছানো সম্ভব হয়। এই পদ্ধতি সাধারণত ছোট ও উচ্চমূল্যের পণ্য পরিবহনের জন্য উপযুক্ত।
সি কার্গো: খরচ
কম, কিন্তু সময় লাগে ২৫-৩০ দিন। বড় ও ভারী পণ্য পরিবহনের জন্য এই পদ্ধতি উপযুক্ত।
৫. কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স
পণ্য বাংলাদেশের বন্দরে পৌঁছানোর পর কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে হবে। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সের সময় কাস্টমস ডিউটি, ট্যাক্স, এবং অন্যান্য ফি পরিশোধ করতে হয়। পণ্য আমদানির সমস্ত নথি এবং চালান উপস্থাপন করতে হবে। পণ্যটি কাস্টমস কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরীক্ষা ও যাচাইয়ের পর মুক্তি পায়। দ্রুত ক্লিয়ারেন্স নিশ্চিত করতে হলে সমস্ত নথি সঠিক এবং সম্পূর্ণ হওয়া জরুরি। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সের ক্ষেত্রে সি এন্ড এফ এজেন্টের সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে।
বিশ্বস্ত সিএন্ডএফ এজেন্ট পেতে ক্লিক করুন।
৬. এয়ারপোর্ট বা সি পোর্ট থেকে
পণ্য সংগ্রহ
পণ্য কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সের
পর, পরবর্তী ধাপ হলো এয়ারপোর্ট বা সি পোর্ট থেকে পণ্য সংগ্রহ করা। পণ্য সংগ্রহের জন্য
আপনাকে এয়ারপোর্ট বা সি পোর্টে যেতে হবে। পোর্টের অফিসিয়াল কাস্টমস ক্লিয়ারিং এজেন্টের
সঙ্গে যোগাযোগ করুন এবং তাদের নির্দেশনা অনুসরণ করুন। পোর্টের নির্দিষ্ট স্থানে পণ্য
সংগ্রহের জন্য একটি নির্ধারিত সময়সীমা থাকতে পারে, তাই সময়মতো উপস্থিত থাকতে হবে।
পণ্য সংগ্রহ করার পর আপনার গুদাম বা বিক্রয় কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে স্থানীয় পরিবহন ব্যবস্থার
মাধ্যমে পাঠাতে হবে। আপনি ট্রাক, লরি বা অন্যান্য পরিবহন মাধ্যম ব্যবহার করতে পারেন।
চীন থেকে পণ্য আমদানির খরচ
চীন থেকে পণ্য আমদানির খরচ
কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে।
১. পণ্যের মূল্য
পণ্যের মূল্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
উপাদান, যা পণ্যের ধরন এবং পরিমাণের উপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, ইলেকট্রনিক্সের
ক্ষেত্রে পণ্যের মূল্য বেশি হতে পারে, যেখানে সাধারণ গৃহস্থালি পণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে
কম।
২. শিপিং চার্জ
শিপিং খরচ নির্ভর করে শিপিং
পদ্ধতি (এয়ার, সি), পণ্যের ওজন, এবং পরিবহন দূরত্বের উপর। সি কার্গো বা জাহাজে পন্য
আনার খরচ সাধারণত এয়ার কার্গোর চেয়ে কম হয়, তবে এটি সময়সাপেক্ষ। উদাহরণস্বরূপ,
সি কার্গোর মাধ্যমে ২০ ফুট কন্টেইনারে পণ্য পরিবহন করতে $১,৫০০-$২,৫০০ খরচ হতে পারে,
যেখানে এয়ার কার্গোতে একই ওজনের পণ্য পরিবহন করতে $৫,০০০-এর বেশি খরচ হতে পারে।
৩. কাস্টমস ডিউটি
কাস্টমস ডিউটি পণ্যের মূল্য
এবং প্রকারের উপর ভিত্তি করে ধার্য করা হয়। বাংলাদেশে সাধারণত আমদানীকৃত পণ্যের জন্য
১৫-২৫% কাস্টমস ডিউটি আরোপ করা হয়, তবে কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে এই হার বেশি হতে পারে।
৪. বীমা খরচ
শিপিংয়ের সময় পণ্যের নিরাপত্তার
জন্য বীমা করতে হয়। বীমার খরচ সাধারণত পণ্যের মূল্যের ০.৫%-২% পর্যন্ত হতে পারে। বীমা
করা হলে পরিবহনের সময় পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হলে আপনি ক্ষতিপূরণ পাবেন।
৫. স্থানীয় পরিবহন খরচ
বাংলাদেশের বন্দরে পৌঁছানোর
পর পণ্য গুদাম বা বিক্রয় কেন্দ্র পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার জন্য স্থানীয় পরিবহন খরচও
যুক্ত হবে। এই খরচটি নির্ভর করে দূরত্ব, পণ্যের পরিমাণ, এবং পরিবহনের মাধ্যমের উপর।
চীন থেকে পণ্য আমদানির খরচ
পরিবর্তনশীল, কারণ বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম, শিপিং খরচ, এবং কাস্টমস ডিউটির হার পরিবর্তিত
হতে পারে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক মুদ্রার বিনিময় হার, বিশ্বব্যাপী সাপ্লাই চেইনের পরিস্থিতি,
এবং শুল্ক নীতি পরিবর্তনের ফলে খরচ বৃদ্ধি বা হ্রাস পেতে পারে। তাই আমদানির পরিকল্পনা
করার সময় সবসময় বর্তমান বাজার পরিস্থিতি এবং খরচের একটি আপডেটেড ধারণা রাখা জরুরি।
চীন থেকে পণ্য আমদানির জন্য সাপ্লায়ার খুঁজে পাওয়ার উপায়
চীন থেকে পণ্য আমদানি করার
জন্য উপযুক্ত সাপ্লায়ার খুঁজে পাওয়ার জন্য বিভিন্ন উপায় অনুসরন করতে পারেন।
১. অনলাইন মার্কেটপ্লেস ব্যবহার
অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলো যেমন Alibaba, Global Sources, এবং Made-in-China ব্যবহার করে চীনা সাপ্লায়ারদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন। এই প্ল্যাটফর্মগুলিতে আপনি বিভিন্ন ধরনের পণ্য খুঁজে পাওয়ার পাশাপাশি সাপ্লায়ারদের সাথে সরাসরি আলোচনা করে দাম এবং অন্যান্য শর্তাবলী নির্ধারণ করে নিতে পারেন। অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলির মাধ্যমে আপনি সাপ্লায়ারদের প্রোফাইল, রেটিং, এবং কাস্টমার রিভিউ দেখতে পারবেন।
১ লাখ টাকার মধ্যে বাংলাদেশে শুরু করার মতো ৫টি লাভজনক ব্যবসা
২. চীনে ভ্রমণ করা
চীন থেকে পণ্য আমদানি করার
জন্য সরাসরি চীনে যেয়ে পন্য ক্রয় করতে পারেন। এটি আপনাকে স্থানীয় বাজারের অবস্থা,
উৎপাদন প্রক্রিয়া, এবং পণ্যের গুণমান সরাসরি পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ করে দিবে। বিভিন্ন
ট্রেড শো, প্রদর্শনী, এবং কারখানা সফরের মাধ্যমে আপনি সরাসরি সাপ্লায়ারদের সাথে যোগাযোগ
করতে পারেন।
৩. এজেন্ট নিয়োগ করা
চীনে অবস্থানরত কাউকে স্থানীয় এজেন্ট বা ব্রোকার হিসেবে নিয়োগ করে নিতে পারেন। স্থানীয় এজেন্টরা চীনের বাজারে অভিজ্ঞ এবং তারা আপনাকে সঠিক সাপ্লায়ার খুঁজে পেতে, মূল্য নিয়ে আলোচনা করতে, এবং আমদানির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সহায়তা করতে পারে। এজেন্টরা সাধারণত স্থানীয় ভাষা জানেন এবং স্থানীয় সাপ্লায়ারদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে সক্ষম। এছাড়া, তারা শিপিং, কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স, এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কাজগুলো করতে সাহায্য করতে পারবে।
বায়িং হাউজ কিভাবে দিবেনঃ সম্পূর্ন গাইডলাইন
চীন থেকে বাংলাদেশে পণ্য আমদানী করে ব্যবসা করা চ্যালেঞ্জিং হলেও লাভজনক প্রক্রিয়া।
সঠিক পণ্য নির্বাচন, বিশ্বস্ত সাপ্লায়ার খুঁজে পাওয়া, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট প্রস্তুতি,
এবং কার্যকর শিপিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করা আপনার সফলতা অর্জনের মূল চাবিকাঠি।
চীন থেকে বাংলাদেশে পন্য আমদানী বা যেকোনো দেশ থেকে পন্য আমদানী করা নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন।
ধন্যবাদ।
বর্তমান সময়ে ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি ব্যবসা দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে অনলাইন মার্কেটিংয়ের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্য ও সেবা প্রচারের জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সির দিকে ঝুঁকছে। এই পরিস্থিতিতে, ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি একটি লাভজনক ব্যবসা হতে পারে। আজ আমরা জানবো কীভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি শুরু করা যায়, কেন এটি শুরু করবেন, কত টাকা লাগবে, এবং এ ধরনের একটি এজেন্সি চালাতে যা যা প্রয়োজন।
কেন ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি শুরু করবেন?
বাজারের চাহিদা:
বাংলাদেশের ডিজিটাল মার্কেটিং খাত দ্রুত বিকাশ লাভ করছে। বর্তমানে ছোট-বড় সব ধরনের ব্যবসাই তাদের অনলাইন উপস্থিতি বাড়াতে ইচ্ছুক। বিশেষ করে, ই-কমার্স, এফএমসিজি, এবং সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রির প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মার্কেটিং বাজেটের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ব্যয় করছে।
উন্নত প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা:
বাংলাদেশে ইন্টারনেট সংযোগের সহজলভ্যতা এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম যেমন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব, এবং গুগল অ্যাডওয়ার্ডসের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সিগুলোর জন্য বড় একটি বাজার তৈরি হয়েছে।
সক্ষমতা বৃদ্ধির সুযোগ:
ডিজিটাল মার্কেটিং খাতে বিনিয়োগ করে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বিক্রয় বাড়াতে সক্ষম হচ্ছে। এছাড়াও, ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে কাস্টমারদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব, যা ব্র্যান্ডের প্রতি কাস্টমারদের আস্থা ও বিশ্বস্ততা বৃদ্ধি করে।
লাভজনক ব্যবসার সুযোগ:
ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি শুরু করতে তুলনামূলকভাবে কম পুঁজি প্রয়োজন হয়। যদি আপনি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে দক্ষ হন, তবে আপনার জন্য এটি একটি লাভজনক ব্যবসা হতে পারে। এছাড়াও, এই ব্যবসা সঠিক পরিকল্পনা এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে অনেক দ্রুত প্রতিষ্ঠিত করা যায়।
কীভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি শুরু করবেন?
১. বাজার গবেষণা করুন: ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি শুরু করার আগে বাজার গবেষণা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার টার্গেট মার্কেট কারা হবে, তাদের কী কী চাহিদা আছে, এবং আপনার প্রতিযোগীরা কীভাবে কাজ করছে—এগুলো বোঝা জরুরি। বাংলাদেশের বাজারে যে ধরনের সেবা বেশি চাহিদা রয়েছে, তা নির্ধারণ করে সেই অনুযায়ী আপনার এজেন্সির সেবা অফার করুন।
২. আপনার বিশেষজ্ঞ ক্ষেত্র নির্বাচন করুন: ডিজিটাল মার্কেটিং এর বিভিন্ন শাখা রয়েছে, যেমন সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO), পেইড অ্যাডভার্টাইজিং (PPC), কন্টেন্ট মার্কেটিং, ইমেইল মার্কেটিং ইত্যাদি। আপনি সবগুলো সার্ভিসই দিতে পারেন, তবে বিশেষ একটি ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করলে তা আপনার ব্যবসাকে দ্রুত সফল হতে সাহায্য করবে।
৩. সেবা পরিকল্পনা করুন: আপনার ক্লায়েন্টদের জন্য কি ধরনের সেবা অফার করবেন তা নির্ধারণ করুন। আপনি একটি পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি চালাতে পারেন, যা সব ধরনের ডিজিটাল মার্কেটিং সেবা প্রদান করবে। অথবা, আপনি নির্দিষ্ট একটি ক্ষেত্রে ফোকাস করতে পারেন, যেমন শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বা শুধুমাত্র SEO সেবা।
৪. টিম গঠন করুন: আপনার এজেন্সির জন্য দক্ষ কর্মীদের নিয়োগ করুন। ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সির জন্য সাধারণত কন্টেন্ট রাইটার, গ্রাফিক ডিজাইনার, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার, SEO স্পেশালিস্ট, এবং পেইড অ্যাডভার্টাইজিং এক্সপার্ট প্রয়োজন হয়। আপনি চাইলে শুরুতে ফ্রিল্যান্সারদের সাথে কাজ করতে পারেন, তবে ব্যবসা বড় করার সাথে সাথে পার্মানেন্ট টিম গঠন করে নিতে হবে।
৫. টেকনোলজি ও টুলস নির্বাচন করুন: ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি পরিচালনার জন্য কিছু বিশেষ টেকনোলজি এবং টুলসের প্রয়োজন হবে। Google Analytics, SEMrush, Ahrefs, Hootsuite, Canva ইত্যাদি টুলস আপনার কাজে লাগতে পারে। এই টুলসগুলো ব্যবহার করে আপনি ক্লায়েন্টদের জন্য উন্নত সেবা প্রদান করতে পারবেন।
৬. একটি কার্যকর ওয়েবসাইট তৈরি করুন: আপনার এজেন্সির জন্য একটি প্রফেশনাল ওয়েবসাইট তৈরি করুন। এখানে আপনার সেবাগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিন, ক্লায়েন্টদের রিভিউ শেয়ার করুন, এবং আপনার পোর্টফোলিও প্রদর্শন করুন। ওয়েবসাইটটি অবশ্যই SEO ফ্রেন্ডলি হওয়া উচিত, যাতে আপনার সম্ভাব্য ক্লায়েন্টরা সহজেই আপনাকে খুঁজে পায়।
৭. ট্রেড লাইসেন্স ও নিবন্ধন করুন: আপনার ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি আইনত বৈধভাবে পরিচালনা করতে হলে একটি ট্রেড লাইসেন্স প্রয়োজন হবে। বাংলাদেশে ব্যবসায়িক নিবন্ধন প্রক্রিয়া অনেক সহজ, আপনি স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে লাইসেন্স পেতে পারেন।
৮. সঠিক মূল্য নির্ধারণ করুন: আপনার সেবাগুলোর জন্য সঠিক মূল্য নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম দিকে কম মূল্যে সেবা দিতে পারেন, যাতে আপনি ক্লায়েন্ট আকর্ষণ করতে পারেন। তবে, সেবার গুণমান এবং প্রতিযোগীদের মূল্য বিবেচনা করে মূল্য নির্ধারণ করুন।
৯. ক্লায়েন্ট আকর্ষণ করতে মার্কেটিং পরিকল্পনা করুন: প্রথম দিকে ক্লায়েন্ট পাওয়ার জন্য মার্কেটিং প্ল্যানিং তৈরি করুন। সোশ্যাল মিডিয়া, ইমেইল মার্কেটিং, এবং রেফারেল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে ক্লায়েন্ট আকর্ষণ করুন। এছাড়া, Google My Business এ আপনার ব্যবসার নিবন্ধন করুন, যাতে স্থানীয় ক্লায়েন্টরা আপনাকে খুঁজে পায়।
ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি শুরু করতে কত টাকা লাগবে?
শুরুতে কম বিনিয়োগ:
ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি শুরু করতে তুলনামূলকভাবে কম পুঁজি প্রয়োজন হয়। আপনি যদি বাসায় থেকে ব্যবসা শুরু করেন, তবে অফিস ভাড়ার খরচ বাঁচাতে পারবেন। সাধারণত, একটি ছোট এজেন্সি শুরু করতে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার মধ্যে প্রয়োজন হতে পারে। এই খরচের মধ্যে থাকবে অফিস সেটআপ, টিম গঠন, এবং প্রাথমিক মার্কেটিং খরচ।
যদি বাসা থেকেই কাজ শুরু করেন, তবে অফিস ভাড়ার খরচ এড়ানো সম্ভব। তবে, অফিসের জন্য প্রাথমিক সরঞ্জামাদি যেমন একটি কম্পিউটার, প্রিন্টার, এবং ইন্টারনেট কানেকশন এর জন্য প্রায় ২০,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকা লাগতে পারে।
টুলস ও সফটওয়্যার খরচ:
ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি পরিচালনার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় টুলস এবং সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে, যার জন্য কিছু টাকা খরচ করতে করতে হবে। SEO টুলস, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট টুলস, এবং গ্রাফিক ডিজাইন সফটওয়ারের জন্য মোটামুটি ৫,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকা প্রতি মাসে খরচ হতে পারে। তবে, অনেক টুলসের ফ্রি বা ট্রায়াল ভার্সন পাওয়া যায়, যা শুরুতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
টিম এবং কর্মীদের বেতন:
আপনি যদি শুরুতেই একটি টিম নিয়ে কাজ করতে চান, তবে তাদের বেতন খরচ বিবেচনা করতে হবে। তবে, ফ্রিল্যান্সারদের মাধ্যমে কাজ করালে এই খরচ কিছুটা কমানো সম্ভব। শুরুতে এক বা দুইজন কর্মী নিয়োগ দিলে তাদের বেতন হবে প্রতি মাসে প্রায় ১৫,০০০ থেকে ২৫,০০০ টাকা। ফ্রিল্যান্সারদের মাধ্যমে কাজ করালে বেতন খরচ কিছুটা কমানো সম্ভব, যেখানে প্রতি কন্ট্রাকের জন্য ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা খরচ হতে পারে।
মার্কেটিং খরচ:
আপনার ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সির প্রচারের জন্য কিছু খরচ করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাডভার্টাইজিং, Google Ads, এবং ইমেইল মার্কেটিংয়ের জন্য প্রাথমিকভাবে কিছু বাজেট বরাদ্দ করতে হবে। আপনার এজেন্সির প্রচারের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ও Google Ads ব্যবহার করতে প্রাথমিকভাবে ৫,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকা বাজেট বরাদ্দ করা উচিত। এতে করে আপনার ব্যবসার পরিচিতি বৃদ্ধি পাবে এবং নতুন ক্লায়েন্ট আকর্ষণ করতে সহায়তা করবে।
ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি সফল করতে করণীয়
গুণগত সেবা প্রদান:
আপনার ক্লায়েন্টদের সর্বোচ্চ মানের সেবা প্রদান করতে হবে। আপনার কাজের মান যদি ভালো হয়, তবে ক্লায়েন্টরা আবার আপনার কাছে আসবে এবং রেফারেল দেবে।
সততা ও স্বচ্ছতা:
ক্লায়েন্টদের সাথে সততা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন এবং তাদের কাজের আপডেট দিন। যদি কোনো সমস্যা হয়, তবে সেটি ক্লায়েন্টকে জানিয়ে দ্রুত সমাধান করুন।
শেখা ও উন্নতি করা:
ডিজিটাল মার্কেটিং খাত দ্রুত পরিবর্তনশীল। তাই, আপনাকে সবসময় নতুন ট্রেন্ড এবং প্রযুক্তি সম্পর্কে শিখতে হবে। আপনার টিমকে প্রশিক্ষণ দিন এবং নিজেদের দক্ষতা উন্নয়ন করুন।
নেটওয়ার্কিং:
ডিজিটাল মার্কেটিং ইন্ডাস্ট্রিতে নেটওয়ার্কিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন ইভেন্ট, ওয়ার্কশপ, এবং কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করুন। এখান থেকে আপনি নতুন ক্লায়েন্ট পেতে পারেন এবং আপনার ব্যবসা সম্পর্কে প্রচার বাড়াতে পারবেন।
১ লাখ টাকার মধ্যে বাংলাদেশে শুরু করার মতো ৫টি লাভজনক ব্যবসা
ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি ব্যবসা শুরু করা আজকের দিনে একটি লাভজনক এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ। বাংলাদেশে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে, এবং এই খাতে সঠিক পরিকল্পনা এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে সফলতা অর্জন করা সম্ভব।
আশা করি আজকের আলোচনা থেকে ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়েছেন। সঠিক পরিকল্পনা, দক্ষতা, এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে আপনি আপনার এজেন্সিকে দ্রুত সফল করতে পারবেন।
শেয়ার ব্যবসা কি? কিভাবে করবেন?
মাত্র ১ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে
তা অল্পদিনের মধ্যেই কোটি টাকার ব্যবসায় রুপ দেওয়া সম্ভব। তবে এর জন্য দরকার সঠিক পরিকল্পনা
এবং কার্যকরী পদ্ধতি। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে নতুন ব্যবসা শুরু করার জন্য ১ লাখ টাকা
খুব বড় অংক না হলেও আজ আমরা আলোচনা করব কিভাবে এত অল্প পূজি দিয়ে ব্যবসা দাঁড় করিয়ে
ফেলবেন। আজ আমরা বেশ কয়েকটি বিজনেস আইডিয়া নিয়ে আলোচনা করব যেগুলো ১ লাখ টাকার মধ্যে
শুরু করা সম্ভব।
১. ক্যাটারিং সার্ভিস
বিভিন্ন অফিস বা দোকানে ব্যস্ত
জীবনের দুপুরের খাবারের সহজ সমাধান হল ক্যাটারিং সার্ভিস। ক্যাটারিং সার্ভিস বলতে মূলত
খাবার প্রস্তুত ও সরবরাহ ব্যবস্থাকে বুঝায়। ক্যাটারিং সার্ভিসে টার্গেট কাস্টমার হবে
চাকরিজীবী এবং বিভিন্ন দোকানদার। তাদের সাথে দৈনিক, সাপ্তাহিক বা মাসিক চুক্তির মাধমে
খাবার সরবরাহ করতে হবে। কোনো অফিস বা স্পেস ভাড়া না নিয়ে বাসায় থেকেই এ ব্যবসা শুরু
করা সম্ভব। এবার আসি কিভাবে শুরু করবেন ক্যাটারিং সার্ভিস ব্যবসা।
প্রথমে খাবার প্রস্তুতকারী
অর্থাৎ রাধুনি নির্ধারন করে নিতে হবে। আপনি নিজে বা পরিবারের কেউ এ দায়িত্ব নিতে পারেন।
অথবা রাধুনি নিয়োগ দিতে পারেন। তারপর খাবারের মেনু ঠিক করে নিতে হবে। ন্যূনতম ৫ থেকে
৬ টি মেনু ঠিক করে নিতে হবে। বাংলাদেশে দুপুরের খাবারে সাধারনত ভাত তরকারি থাকে। তাই
মেনুর মধ্যে ভাত, পোলাউ, মাছ, মাংস, ডাল ইত্যাদি আইটেমকে প্রাধান্য দিতে হবে।
তারপর বিজ্ঞাপনের কাজ শুরু
করে দিতে হবে। বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে অফলাইন এবং অনলাইন দুইভাবেই প্রচার করা যেতে পারে।
অফলাইনের ক্ষেত্রে ভিজিটিং কার্ড বা পোস্টার ব্যবহার করতে হবে। এবং বিভিন্ন অফিস আদালতে
যে লোকেরা পত্রিকা সরবরাহ করে তাদের সাথে কন্টাক্ট করে পত্রিকার সাথে করে বিজ্ঞাপনের
পোস্টার দিলে তা তুলনামূলক বেশি নজরে আসবে।
এভাবে বিজ্ঞাপন দেওয়ার কিছুদিনের
ভিতর অর্ডার আসা শুরু করবে। কোনো একটা অফিস থেকে
২/৩ জন কাস্টমার আসলে তাদের দেখাদেখি ওখান থেকে আরও কাস্টমার আসা শুরু করবে।
তাই খাবারের মানের দিকে ফোকাস দিতে হবে।
এখানে আমরা যে ক্যাটারিং ব্যবসা
নিয়ে আলোচনা করলাম এটা মূলত ড্রপ-অফ-ক্যাটারিং সার্ভিস। এ ব্যবসা শুরু করতে খুব সামান্য
পুঁজি দরকার হবে। বিজ্ঞাপন খরচ, রান্না করতে প্রয়োজনীয় বাসন-পত্র আর খাবার সরবরাহের
জন্য জিনিসপত্র কিনতে যা খরচ শুধু তাই ই। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা
ব্যয় করেই এ ব্যবসা শুরু করা সম্ভব।
২. অনলাইন নার্সারি
বর্তমান বাংলাদেশে নতুন পরিচিত
হওয়া ব্যবসাগুলোর মধ্যে অনলাইন নার্সারি ব্যবসা অন্যতম একটি। অনলাইনে নার্সারি ব্যবসা
করার জন্য আপনাকে ছোটোখাটো ভাবে একটি নার্সারি দিতে হবে। ছোটোখাটো বলতে ১ থেকে ২ কাঠা
জমির মধ্যে দিতে পারেন। এতে অনলাইনের কাস্টমারের পাশাপাশি সরাসরি গাছ বিক্রি করা যাবে।
তবে আরেকটি উপায় আছে। আশেপাশে
কোনো নার্সারি থাকলে তাদের সাথে চুক্তি করে নিতে পারেন। আপনার অর্ডার আসলে তাদের থেকে
নিয়ে বিক্রি করবেন।
অনলাইন নার্সারি ব্যবসা করার
জন্য প্রথমে একটি ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম পেইজ খুলে নিতে হবে। সেখানে গাছ, ছাদ বাগানের
গাছ বা বারান্দার গাছের যত্ন নিয়ে পোস্ট করতে হবে। এতে ফলোয়ার বাড়বে। মনে রাখতে হবে
এ ফলোয়াররাই পটেনশিয়াল কাস্টমার। কিছুদিন যাওয়ার পর সেল পোস্ট দেওয়া শুরু করতে হবে।
সেল পোস্ট দেওয়ার পর পোস্ট বুস্টিং করতে হবে। অনলাইনে নার্সারি ব্যবসা করলে শুধু যে গাছ বা গাছের চারা বিক্রি হবে এমনটা নয়। এর সাথে আরও অনেক ধরনের পন্যও বিক্রি করা যাবে। যেমন...
এ ব্যবসা শুরু করতে গেলে খুবই অল্প টাকা লাগবে পুঁজি হিসেবে। নিজে সরাসরি নার্সারি না দিয়ে অন্য কোনো নার্সারির সাথে চুক্তি করে ব্যবসা শুরু করলে কিছু টব, সার, কীটনাশক পাইকারি কেনা বাবদ টাকা, ফেসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়াতে বিজ্ঞাপন চালানো বাবদ খরচ সব মিলিয়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পূঁজি দিয়েই শুরু করা যাবে। ধীরে ধীরে কাস্টমার আসা শুরু করলে বিজ্ঞাপন বাবদ খরচ কমিয়ে দিলেও হবে। এ ব্যবসায় পন্যের মান ভালো ধরে রাখতে পারলে রিপিট কাস্টমার আসবে।
তবে নিজে সরাসরি নার্সারি দিলে
তাতে নার্সারির জন্য জায়গা ভাড়া নেওয়া, গাছ-মাটি কেনা, গাছে পানি দেওয়াসহ অন্যান্য
খরচ মিলে আরও ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকার প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ সর্বোচ্চ এক লাখ টাকার মধ্যে
এ ব্যবসা শুরু করা সম্ভব।
৩. অনলাইনে কোর্স বিক্রি করা
আপনি যদি কোনো একটি বিষয়ে পারদর্শী
হয়ে থাকেন তাহলে অনলাইনে ঐ বিষয়ের উপর কোর্স তৈরি করে বিক্রি করে ব্যবসা গড়ে তুলতে
পারেন। অনলাইনে কোর্স বিক্রি করার একটি বড় সুবিধা হল, বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে
আপনি কাস্টমার পাবেন। আর এ কোর্স তৈরি করা এবং বিক্রি করার জন্য বড় আকারের কোনো মূল্ধনের
প্রয়োজন নেই। একবার একটি কোর্স তৈরি করলে তা বারবার বিক্রি করা যাবে, যা আপনাকে এনে
দিবে প্যাসিভ ইনকাম।
এবার আসি কিভাবে শুরু করবেন।
প্রথমে বিষয়বস্তু নির্ধারন করে নিতে হবে। অবশ্যই এমন বিষয় ঠিক করে নিবেন যেটায় আপনি
নিজে দক্ষ এবং বাজার চাহিদাও আছে। তারপর ঐ বিষয়ে অন্য যারা কোর্স তৈরি করে তাদের কোর্স
দেখে নিবেন। তাদের কোর্সের দুর্বলতা খুজে বের করে নিজের কোর্স তৈরিতে সেসব বিষয়ে গুরুত্ব
দিতে হবে। তারপর ভিডিও তৈরি করে সাথে শিক্ষার্থীদের জন্য নোট, প্র্যাকটিস শীট, কুইজ
ইত্যাদি তৈরি করতে পারেন।
তারপর প্লাটফর্ম নির্বাচন করুন।
কোর্স বিক্রি করার জন্য বেশ কয়েকটি প্লাটফর্ম রয়েছে। যেমন-
এসব প্লাটফর্মে কোর্স আপলোড
করার পর তা বিক্রি করার জন্য মার্কেটিং করতে হবে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং লিংকড-ইনে
বিজ্ঞাপন প্রচার করতে হবে। সাথে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে হবে অর্থাৎ অন্যদের দিয়ে
কোর্সের প্রচার করাবেন এবং তাদের কমিশন দিবেন। উপরে দেওয়া প্লাটফর্ম ব্যবহার ছাড়াও
কোর্স বিক্রি করা যাবে। সরাসরি সোশ্যাল মিডিয়াতে মার্কেটিং করে কোর্স বিক্রি করা যাবে।
৪.কাগজের ব্যাগ তৈরির ব্যবসা
কাগজের ব্যাগ এখন একটি জনপ্রিয়
এবং প্রয়োজনীয় পণ্য হয়ে উঠেছে। এই চাহিদার প্রেক্ষিতে, কাগজের ব্যাগ তৈরির ব্যবসা
এখন একটি লাভজনক উদ্যোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রথমে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে
কাগজের ব্যাগ উৎপাদন করতে হবে। এতে অল্প পূঁজি দিয়ে শুরু করা যাবে। পাইকারিভাবে ১০০
– ২০০ কেজি কাগজ, আঁঠা এবং অন্যান্য উপকরন কিনে নিতে হবে। ব্যাগ তৈরি করে তা সরাসরি
স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে হবে।
ম্যানুয়াল সরঞ্জাম এবং উপকরণ
কিনতে ৩০,০০০৳ থেকে ৪০,০০০৳ খরচ হবে। কাগজ তৈরির কাঁচামাল কিনতে ২০,০০০৳ থেকে ২৫,০০০৳
খরচ হবে। সবমিলিয়ে ৫০,০০০৳ থেকে ৭০,০০০৳ বিনিয়োগ করে এ ব্যবসা শুরু করা সম্ভব।
এক লাখ টাকার মধ্যে খুব ছোট
আকারে কাগজের ব্যাগ তৈরির ব্যবসা শুরু করা সম্ভব। তবে এটি হবে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে
এবং সীমিত উৎপাদনের মধ্যে। যদি ব্যবসাটি লাভজনকভাবে চালাতে পারেন, তাহলে ভবিষ্যতে আরও
বিনিয়োগ করে অটোমেটিক মেশিন কিনে এবং উৎপাদন বাড়িয়ে ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে পারবেন।
৫.বেকারি ব্যবসা
ছোট পরিসরে বেকারি ব্যবসা শুরু
করা কম খরচে একটি লাভজনক উদ্যোগ হতে পারে। এক লাখ টাকার মধ্যে বাড়ি থেকেই মজাদার কেক,
কুকি, এবং অন্যান্য বেকারি পণ্য তৈরি করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি শুরু করা সম্ভব, যা
ক্রমে একটি সফল ব্যবসায় পরিণত হতে পারে।
এ ব্যবসা শুরু করার আগে মার্কেট
টার্গেট করে নিতে হবে এবং ঐ মার্কেটের কাস্টমারদের পছন্দ অপছন্দ নিয়ে জানতে হবে। কী
ধরনের পণ্য (কেক, পাউরুটি, বিস্কুট ইত্যাদি) বেশি জনপ্রিয় তা বোঝার চেষ্টা করুন। প্রাথমিকভাবে
কিছু জনপ্রিয় পণ্য (যেমন কেক, মাফিন, কুকি) তৈরি করে বিক্রি শুরু করুন। তারপর মেনু
ঠিক করে উৎপাদন এবং বিক্রি শুরু করে দিন।
এ ব্যবসা শুরু করতে প্রথমে
বেকিং সরঞ্জাম কিনতে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ হবে। আর বিভিন্ন কাঁচামাল কিনতে আরও
১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা লাগবে। পন্য প্যাকেজিং, বিপণন এবং অন্যান্য খরচ বাবদ আরও ২০
হাজার টাকা লাগবে। অর্থাৎ ৭০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকার মধ্যেই এ ব্যবসা দাঁড় করানো
যাবে।
ক্যাটারিং সার্ভিস, অনলাইন
নার্সারি, অনলাইনে কোর্স বিক্রি, কাগজের ব্যাগ তৈরি, এবং বেকারি ব্যবসা—এমন
কিছু উদ্যোগ যা অল্প পুঁজিতে শুরু করা যায় এবং সঠিকভাবে পরিচালনা করা হলে বড় আকারের
লাভজনক ব্যবসায় রূপান্তরিত হতে পারে। প্রতিটি ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে
মনোযোগ, পরিশ্রম, এবং ধৈর্যের প্রয়োজন, যা ভবিষ্যতে আরও বড় বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি
করবে। সঠিকভাবে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করতে পারলে, এই ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলোই হতে পারে
আপনার ভবিষ্যতের বিশাল সাফল্যের ভিত্তি।
সৌদি আরবে প্রবাসী বা যেকোনো দেশে প্রবাসী হিসেবে জীবনযাপন করার সময় অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়। তবে, সৌদি আরবে প্রবাসী জীবন মানেই যে সবসময় অন্যের অধীনে কাজ করতে হবে, তা নয়। যেসব সৌদি আরবে প্রবাসী নিজস্ব ব্যবসার মাধ্যমে স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করতে চান, তাদের জন্য সৌদি আরবের বাজারে রয়েছে অনেক সুযোগ। এখানে আমরা আলোচনা করবো সৌদি আরবে প্রবাসীদেরজন্য কিছু লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া, যা আপনাকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন হতে সহায়তা করবে।
আমদানি-রপ্তানি ব্যবসা:
সৌদি আরব একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র, যেখানে বিভিন্ন দেশের পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়। বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্য, কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স, এবং গার্মেন্টস পণ্যগুলির চাহিদা অনেক বেশি। আপনি বিভিন্ন দেশের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে আমদানি-রপ্তানি ব্যবসা শুরু করতে পারেন। আপনি যদি বাংলাদেশি হয়ে থাকেন তাহলে তাহলে সৌদি আরবে আমদানি রপ্তানি ব্যবসা করার সুযোগ সুবিধা অন্যদের তুলনায় বেশি পাবেন। বাংলাদেশি খাদ্যদ্রব্য যেমন মাছ, শাক-সবজি, বিভিন্ন আঁচার ইত্যাদি পন্যের চাহিদা সৌদি আরবের স্থানীয় এবং বাংলাদেশিসহ অন্যান্য প্রবাসীদের মধ্যেও বেশি। একজন সৌদি আরবে প্রবাসী হিসেবে আপনি আবার বাংলাদেশ থেকে ভালো মানের গার্মেন্টস আইটেম নিয়ে সহজেই ব্যবসা শুরু করে দিতে পারেন।
খাবারের দোকান বা রেস্টুরেন্ট:
সৌদি
আরবে নানা ধরনের খাবারের
প্রতি মানুষের আগ্রহ রয়েছে। আপনি যদি বিভিন্ন
দেশের খাবার রান্না করতে জানেন, তবে
একটি খাবারের দোকান বা রেস্টুরেন্ট চালু
করতে পারেন। বিশেষ করে, বাংলাদেশী, ভারতীয়,
এবং পাকিস্তানী খাবারের জনপ্রিয়তা রয়েছে এখানে। এছাড়া, স্বাস্থ্যসম্মত ও হালাল খাবার
সরবরাহ করেও আপনি ভালো
লাভ করতে পারেন।
সৌদি আরবে প্রবাসী হিসেবে আবার আবার যৌথভাবেও শুরু করতে পারেন খাবারের দোকান বা রেস্টুরেন্ট ব্যবসা। আপনি বাংলাদেশি
রান্না জানলে, ভারতীয় এবং পাকিস্তানি রান্না জানা লোককে শেয়ারে নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে
পারেন। অথবা ভিন্ন
ভিন্ন দেশের স্বাদ দেওয়ার জন্য কয়েকজন রাধুনি নিয়োগ দিতে পারেন। এতে একটু বেশি পূজি
দরকার হবে।
কনস্ট্রাকশন বা নির্মাণ ব্যবসা:
সৌদি আরবে বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে, যা কনস্ট্রাকশন ব্যবসার জন্য একটি ভালো সুযোগ। আপনি যদি নির্মাণ শিল্পে অভিজ্ঞতা রাখেন, তবে একটি নির্মাণ কোম্পানি গঠন করে কাজ করতে পারেন। বিশেষ করে, বাণিজ্যিক এবং আবাসিক ভবন নির্মাণে আপনার দক্ষতা কাজে লাগতে পারেন।
আইটি এবং ডিজিটাল সার্ভিস:
সৌদি আরবে প্রযুক্তির ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আইটি এবং ডিজিটাল সার্ভিসের চাহিদা বৃদ্ধি করেছে। আপনি যদি ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, বা ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে দক্ষ হন, তবে আপনি এই সেক্টরে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এছাড়া, ই-কমার্স সাইট নির্মাণ বা পরিচালনার সেবাও দিতে পারেন।
প্রপার্টি ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস:
অনেক প্রবাসী সৌদি আরবে দীর্ঘমেয়াদি থাকার জন্য সম্পত্তি কিনে থাকেন। তবে, দেশে যাওয়ার সময় তাদের সম্পত্তি পরিচালনার জন্য একজন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তির প্রয়োজন হয়। প্রপার্টি ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস প্রদান করে আপনি এই চাহিদা পূরণ করতে পারেন। এটি একটি লাভজনক ব্যবসার সুযোগ হতে পারে।
গৃহস্থালি সেবা (হাউজহোল্ড সার্ভিস):
সৌদি আরবে অনেক পরিবারের জন্য গৃহস্থালি সেবা, যেমন পরিচ্ছন্নতা, রান্না, এবং বাচ্চাদের যত্ন একটি প্রয়োজনীয় সেবা। আপনি যদি দক্ষ কর্মী সংগ্রহ করতে পারেন, তবে এই ধরনের সেবা প্রদান করে একটি ভালো ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এই ব্যবসায় আপনি অন্য প্রবাসীদের চাকরি দিবেন। এক্ষেত্রে দক্ষ কর্মী সংগ্রহ করে তাদের প্রশিক্ষন দিতে হবে।
অটোমোবাইল সার্ভিস সেন্টার:
সৌদি আরবে গাড়ির সংখ্যা অনেক বেশি, যা অটোমোবাইল সার্ভিসের চাহিদা বৃদ্ধি করেছে। আপনি যদি গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ বা মেরামতের কাজ জানেন, তবে একটি অটোমোবাইল সার্ভিস সেন্টার চালু করতে পারেন। এটি একটি লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া হতে পারে।
টিউশন বা ট্রেনিং সেন্টার:
প্রবাসী
পরিবারগুলির মধ্যে অনেকেই সন্তানের শিক্ষার প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেন। আপনি যদি
ভালো শিক্ষক হন, তবে টিউশন
বা ট্রেনিং সেন্টার চালু করতে পারেন।
বিশেষ করে, ইংরেজি, গণিত,
এবং বিজ্ঞান বিষয়ে টিউশন বা আইইএলটিএস এবং
টোফেল প্রস্তুতির কোর্স চালু করতে পারেন।
আবার আপনি টিউশন মিডিয়া হিসেবে কাজ করতে পারেন। কয়েকজন মিলে বিভিন্ন বিষয়ে কোর্স করানোর ট্রেনিং সেন্টার খুলতেও পারেন।
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট:
সৌদি আরবে বিভিন্ন সামাজিক ও কর্পোরেট ইভেন্টের আয়োজন করার চাহিদা রয়েছে। বিয়ে, জন্মদিন, কর্পোরেট মিটিং বা অন্যান্য ইভেন্টের আয়োজন করে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এই ধরনের সেবা প্রদান করে আপনি ভালো লাভ করতে পারেন। সৌদি আরবে প্রবাসী হিসেবে ব্যবসা শুরু করা একটি সাহসী এবং সম্ভাবনাময় পদক্ষেপ হতে পারে। আপনার দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সঠিক এবং পারফেক্ট ব্যবসার আইডিয়া বেছে নিন, এবং ব্যবসার পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে চোখ কান খোলা রাখুন। নিয়মিত বাজার বিশ্লেষণ এবং স্থানীয় আইন ও নীতিমালা মেনে চলার মাধ্যমে আপনি সফল ব্যবসায়ী হয়ে উঠতে পারেন।
স্থানীয় আইন ও নীতিমালা বলতে যেকোনো ব্যবসা শুরু করতে অনেক কাগজপ্ত্র করতে হয়। এসব ঠিক করে ব্যবসা শুরু করতে হবে। অন্যথায় আইনি অনেক ঝামেলায় জড়াতে হবে। একটু অনলাইনে ঘাটাঘাটি করে নিবেন কোন ব্যবসা শুরু করতে আপনি প্রবাসী হিসেবে কি কি কাগজপত্র করা লাগবে। যদি আপনি সঠিক এবং সুন্দরভাবে পরিকল্পনা করেন এবং আপনার ব্যবসার প্রতিটি দিক ভালোভাবে পরিচালনা করেন, তাহলে আপনি অল্প টাকা বিনিয়োগ করে ভালো পরিমান লাভ করতে পারবেন।
যদি
আপনি ধৈর্য্য ধরে কাজ করেন,
এবং ব্যবসায় লেগে থাকেন
তাহলে সৌদি আরবে প্রবাসী
হিসেবে একটি সফল ব্যবসা
গড়ে তোলা কঠিন কোনো বিষয় নয়।
গার্মেন্টস শিল্পে বায়িং হাউজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি
বায়ার এবং গার্মেন্টসের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন হিসাবে কাজ করে যা উভয়
পক্ষের জন্য সুবিধাজনক হিসেবে কাজ করে ৷ অনেক বায়িং হাউজ আছে যারা নিজেরা
উৎপাদন না করেও ব্যবসা পরিচালনা করেন । যদি আপনি একটি বায়িং হাউজ শুরু
করতে চান, তবে এই গাইডটি আপনার জন্য। এখানে আমরা বায়িং হাউজ শুরু করার
ধাপগুলি আলোচনা করব।
১. বাজার গবেষণা
প্রথম ধাপ:
বায়িং হাউজ করার প্রথম ধাপ হচ্ছে বাজার গবেষণা করা ৷ আপনি যে প্রোডাক্ট নিয়ে
বাজার জব করতে চাচ্ছেন বা বিদেশ বায়েদের কাছে বিক্রি করতে চাচ্ছেন সেই
প্রোডাক্ট নিয়ে আপনাকে অবশ্যই বাজার গবেষণা করতে হবে কোন কোন মার্কেটে
আপনি আপনার প্রোডাক্ট গুলো বিক্রি করতে চাচ্ছেন বা কোন দেশীয় মার্কেটগুলো
আপনি ধরতে চাচ্ছেন এটা নিয়ে আপনাকে অনেক বিশাল একটি গবেষণা করতে হবে ৷
কোন ধরনের পণ্য বাজারে সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে, কারা আপনার প্রতিযোগী,
এবং তাদের কৌশল কী তা বুঝে নিন।
যেমন আপনি যদি নিটওয়ার আইটেম
বিক্রি করার চিন্তা করেন তাহলে আপনাকে কিছু বেসিক আইটেম যেমন টি-শার্ট, সুইট শার্ট,হুডি, বক্সার এই টাইপের প্রোডাক্ট গুলোর কথা চিন্তা করতে হবে
এবং এই প্রোডাক্টগুলো আপনি কোন মার্কেটে বিক্রি করবেন সেগুলো আপনার গবেষণা
করতে হবে ৷ আপনি যদি এই প্রোডাক্টগুলো ইউরোপের কোন মার্কেটে বিক্রি করতে
চান তাহলে সেখানে অনেক হাই ফেব্রিক্স জিএসএম প্রয়োজন হবে ৷ আবার যদি আপনি
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেই বিক্রি করার চিন্তা করেন তাহলে অনেক ল জিএমএস
ফেব্রিক্স দিয়ে টি-শার্ট তৈরি করতে হবে ৷
গ্রাহক চাহিদা:
গ্রাহকরা
কী চাচ্ছেন এবং কোন দামে তা চাচ্ছেন তা জানা গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনাকে
সঠিকভাবে পণ্য নির্বাচন করতে এবং মূল্য নির্ধারণ করতে সাহায্য করবে। আপনি
যে দেশে পন্য রপ্তানি করতে চান সে দেশের ফ্যাশন সম্পর্কে ভালো করে জানুন ৷
যেমন রাশিয়া ঠান্ডা প্রধান দেশ ৷ রাশিয়াতে আপনি জ্যাকেট সেল করতে পারবেন
আনেক ভালো দামে ৷ আবার মধ্যপ্রাচ্য গরমের দেশ ৷ সেখানে রাশিয়ার মত জ্যাকেট
বিক্রি করতে পারবেন না ৷
২. ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরি
ব্যবসায়িক কাঠামোঃ
আপনার
ব্যবসায়িক কাঠামো কী হবে তা নির্ধারণ করুন। এটি একটি সলো প্রোপ্রাইটরশিপ,
পার্টনারশিপ, এলএলসি বা কর্পোরেশন হতে পারে। তবে বাংলাদেশে সাধারনত বায়িং
হাউজ দিতে তেমন কোন লাইসেন্সের প্রয়োজন হয় না ৷ আপনি চাইলে যে ফ্যাক্টরি
থেকে প্রডাক্ট তৈরি করবেন সেখান থেকেই রপ্তানি করতে পারবেন ৷ বাংলাদেশ
বায়িং হাউজ এসোসিয়েশন নামে একটা সংগঠন আছে ৷ সেখান থেকে সদস্যপদ নিয়েও
ব্যবসা শুরু করতে পারেন ৷ এ জন্য ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে ৷
বাজেট ও অর্থায়ন:
বায়িং
হাউজের প্রাথমিক বিনিয়োগ হলো একটা সুন্দর ডেকোরেশন করা অফিস ৷ এই অফিসটি
খুব সুন্দরভাবে সাজাতে হবে যাতে করে একজন বায়ার এসে আপনার এবিলিটি
সম্পর্কে খুব ভালো ধারনা করতে পারে ৷ এর পরের খরচ হলো মার্কেটিং করার কাজে ৷
যেহেতু বায়ার বাংলাদেশে থাকেনা, বিদেশ থেকে একজন বায়ার বাংলাদেশে নিয়ে
আসতে আপনাকে প্রচুর খরচ করতে হবে ৷ সম্ভাব্য যত রকমের মার্কেটিং করা সম্ভব
সবকিছুই করতে হবে ৷ অনেক সময় বিদেশের মেলাতে অংশগ্রহণ করতে পারেন ৷
এক্ষেত্রে ১০-২০ লাখ টাকাও খরচ হয়ে যেতে পারে ৷
সুতরাং এসব বিষয় মাথা রেখে সামনে আগাতে হবে ৷
কৌশলগত পরিকল্পনা:
আপনার
বায়িং হাউজের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী কৌশলগত পরিকল্পনা তৈরি করুন, যেখানে
লক্ষ্য, উদ্দশ্য এবং কৌশল নির্ধারণ করা থাকবে। বায়িং হাউজ একটি চলমান এবং
দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা ৷ হুট করেই বায়ার পেয়ে যাবেন, এটা ভাবা মোটেও
ঠিক নায় ৷ এখানে আপনাকে একজন পারফেক্ট বায়ার পেতে মাসের পর মাস অপেক্ষা
করতে হবে ৷ এই সময়টাতে আপনাকে লং টাইম খরচ করে যেতে হবে ৷ এই পরিমাণ
ইনভেস্টমেন্ট এবং ধৈয্য নিয়েই আপনাকে বায়িং হাউজের ব্যাবসায় নামতে হবে ৷
৩. আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন
লাইসেন্স ও রেজিস্ট্রেশন:
বাংলাদেশে
সাধারনত বায়িং হাউজ দিতে তেমন কোন লাইসেন্সের প্রয়োজন হয় না ৷ আপনি
চাইলে যে ফ্যাক্টরি থেকে প্রডাক্ট তৈরি করবেন সেখান থেকেই রপ্তানি করতে
পারবেন ৷ বাংলাদেশ বায়িং হাউজ এসোসিয়েশন নামে একটা সংগঠন আছে ৷ সেখান
থেকে সদস্যপদ নিয়েও ব্যবসা শুরু করতে পারেন ৷ এ জন্য ট্রেড লাইসেন্স নিতে
হবে ৷
ট্রেডমার্ক:
আপনি যদি কোন নিজস্ব ব্রান্ড নিয়ে কাজ করতে
চান তবে নিজে একটা ইউনিক নাম দিয়ে ট্রেড মার্ক করিয়ে নিতে পারেন ৷ অনেক
ফ্যাক্টরি আছেন যারা এসব নিয়ে চিন্তা করেন না ৷ বাংলাদেশ বিশ্বের সেরা
গার্মেন্টস উৎপাদনকারী হয়েও নিজস্ব কোন ব্রান্ডের প্রডাক্ট বিশ্ব বাজারে
তৈরি করতে পারেনি ৷ ছোট থেকে যদি সবাই এরকম চিন্তা করে একটা করে ব্রান্ড
রেডি করতে পারে তাহলে একসময় আমাদের বায়ার খুজতে হবে না ৷ নিজেরাই একটা
ব্রান্ড হতে পারবো ৷ ভিয়েতনামের অনেক ব্রান্ড এখন বিশ্বব্যাপী পপুলার ৷
৪. সাপ্লায়ার ও ম্যানুফ্যাকচারারদের সাথে সম্পর্ক তৈরি
উৎপাদনকারীর নির্বাচন:
যেহেতু
আপনি বাইং হাউজ সেহেতু আপনার ফ্যাক্টরি না থাকারই কথা সুতরাং আপনাকে
বিভিন্ন ফ্যাক্টরি থেকে প্রডাক্ট সোর্সি করতে হবে যে জন্য বিশ্বস্ত এবং
মানসম্পন্ন উৎপাদনকারীদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করুন। তাদের উৎপাদন ক্ষমতা,
গুণগত মান এবং ডেলিভারি সময় সম্পর্কে নিশ্চিত হন। প্রথমত আপনি তাদের কাছ
বিভিন্ন প্রডাক্টের স্যাম্পল কালেক্ট করুন ৷ তাদের থেকে বাল্ক ওর্ডারের
প্রাইস নেগোসিয়েশন করুন ৷ এতে করে যখনই আপনি কোন ওর্ডার পাবেন, সাথে সাথেই
বায়ারকে আপনি প্রাইস দিতে পারবেন ৷
৫. টিম গঠন ও প্রশিক্ষণ
বিশেষজ্ঞ দল:
একটি
দক্ষ এবং অভিজ্ঞ দল গঠন করুন। প্রোডাক্ট ম্যানেজার, কাস্টমার সার্ভিস
প্রতিনিধি, কোয়ালিটি কন্ট্রোল এক্সপার্ট ইত্যাদি পদে লোক নিয়োগ করুন।
বিশেষ করে আপনাকে মার্চেন্ডাইজার নিয়োগ করতে হবে কারণ তারা আপনার
প্রোডাক্ট এর কস্টিং করতে সাহায্য করবে এবং বায়ারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা
করবে ৷ বিভিন্ন ফ্যাক্টরি থেকে যখন আপনি প্রোডাক্ট তৈরি করতে যাবেন তখন
মার্চেন্ডাইজারদের একটি বিশাল ভূমিকা থাকবে কারণ তারা ফ্যাক্টরি এবং আপনার
প্রতিষ্ঠানের মাঝে একটি সেতুবন্ধ হিসেব কাজ করবে ৷ প্রডাক্টের কোয়ালিটি
ঠিক রাখা, সঠিক পরিমাণ প্রডাক্ট উৎপাদন করা ইত্যাদি বিষয়
মার্চেন্ডাইজাররাই তদারকি করে থাকে ৷
৬. কার্যকর মার্কেটিং ও ব্র্যান্ডিং
কোম্পানি পরিচিতি:
একটি
শক্তিশালী ব্র্যান্ড পরিচিতি গড়ে তুলুন। লোগো, ওয়েবসাইট, এবং সোশ্যাল
মিডিয়া প্রোফাইল তৈরি করুন। একটা সুন্দর করে সাজিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করুন
এবং ওয়েবসাইটের সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের কাজগুলো করে রাখবেন ৷ এতে
মোটামুটি প্রাথমিকভাবে ভালো একটা ইনভেস্টমেন্ট বাজেট রাখবেন ৷ যেমন এক থেকে
দুই লাখ টাকার মত খরচ করে একটা ওয়েবসাইট তৈরি করে সেই ওয়েবসাইটে সার্চ
ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন করিয়ে নেবেব ৷ বর্তমানে পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের
ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে আপনি অনেক ফ্রিল্যান্সার পাবেন যেমন
আপ ওয়ার্ক, ফাইবার ৷ মোটামুটি এই সমস্ত ওয়েবসাইট থেকে আপনি খুব কম খরচে
একজন ফ্রিল্যান্সার হায়ার করে নিতে পারবেন আপনার ওয়েবসাইটের ডিজাইন এবং
এসইও কমপ্লিট করার জন্য ৷ মনে রাখবেন শুধুমাত্র ওয়েবসাইট তৈরি করলেই হবেনা
আপনাকে অবশ্যই সেটার সঠিক সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন করিয়ে নিতে হবে না
হলে ওয়েবসাইট দিয়ে আপনি বায়ার পাওয়ার আশা করতে পারবেন না ৷ আর ঠিক মত
সারসিফিন অপটিমাইজেশন করিয়ে নিতে পারলে আপনি ওয়েবসাইট দিয়েও অনেক বায়ার
পেতে পারবেন ৷
মার্কেটিং কৌশল:
বিভিন্ন মার্কেটিং চ্যানেলের
মাধ্যমে আপনার বায়িং হাউজের প্রচার করুন। সোশ্যাল মিডিয়া, ইমেইল
মার্কেটিং, এবং অনলাইন বিজ্ঞাপন ব্যবহার করে গ্রাহকদের আকর্ষণ করুন। কিভাবে
আপনি অনলাইন থেকে বা অফলাইন থেকে আপনার বাইং হাউজের জন্য বায়ার পাবেন
সেটি নিয়ে আমাদের আরেকটি বিস্তারিত পোস্ট রয়েছে নিচের লিং থেকে সেটা
বিস্তারিত দেখে নিবেন ৷ এখানে আমি সরাসরি ইমেইল মার্কেটিং এই বিষয়টি নিয়ে
আলোচনা করলাম আশা করি এটি আপনারা এখান থেকে দেখে উপকৃত হবেন ৷
সরাসরি ইমেইল মার্কেটিং
ইমেইল লিস্ট সংগ্রহ:
বিভিন্ন
বিজনেস ডিরেক্টরি এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে বায়ারদের ইমেইল সংগ্রহ
করুন। তারপর তাদের কাছে আপনার পণ্যের তথ্যসহ ইমেইল পাঠান।
নিচে
কিছু বিজনেস ডিরেক্টরী এবং ডাটাবেজের ঠিকানা দেওয়া হল এগুলো থেকে আপনি
প্রাথমিকভাবে ফ্রিতে কিছু বায়ারের ইমেইল লিস্ট কালেক্ট করতে পারবেন তবে
বেশি পরিমাণে কালেক্ট করতে গেলে সেখানে আপনি পেইড অ্যাকাউন্ট খুলে নিতে হবে
৷
Business Directories and Databases:
LinkedIn Sales Navigator: Allows you to filter and find business owners based on various criteria.
ZoomInfo:Provides detailed information about businesses and their key contacts.
Hoover's: Offers business data, including contacts for many companies.
Dun & Bradstreet: Has a comprehensive database of business information.
UpLead: Offers access to business contacts and email lists.
Lead411: Provides targeted sales leads and email lists.
InfoUSA: Sells business contact lists that can be filtered by various criteria.
ইমেইল মার্কেটিং:
একটি
প্রফেশনাল ইমেইল টেমপ্লেট তৈরি করুন, যেখানে আপনার পণ্যের বিবরণ, ছবি এবং
আপনার কোম্পানির তথ্য থাকবে। এটি বায়ারদের আকর্ষণ করতে সাহায্য করবে।
একটা
বিষয় মনে রাখবেন সেটি হচ্ছে যে আপনি যদি নিজে হাজার হাজার বায়ারের কাছে
একত্রে ইমেইল পাঠাতে চান সেটি আপনার জন্য অনেক ডিফিকাল্ট হয়ে যাবে ৷ কারণ
আপনার নিজস্ব ইমেইল দিয়ে আপনি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ইমেইল পাঠাতে পারবেন
এবং একই ইমেইল যদি মানুষের কাছে বারবার ফরওয়ার্ড করে সে ক্ষেত্রে আপনার
নিজস্ব ইমেইল আইডি স্পাম হিসেবে ধরে নিতে পারে এবং সেই ক্ষেত্রে আপনার
সমস্ত ইমেইল বায়ারের স্পাম বক্সে গিয়ে জমা হবে এবং অনেক ক্ষেত্রে
বায়াররা ইমেইল গুলি ওপেন করে দেখেন না এজন্য আপনি প্রফেশনালদের থেকে অল্প
কিছু টাকা খরচ করে সার্ভিস নিতে পারেন ৷
বাল্ক ইমেইল সেন্ডিং
সার্ভিস নিতে হলে আপনি ফাইবার থেকে একজন ফ্রিল্যান্সার হায়ার করে নিতে
পারেন ৷ এক্ষেত্রে আপনাকে ৫০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা সর্বোচ্চ খরচ করা লাগতে
পারে ৷ এই টাকা দিয়ে তারা আপনাকে প্রতি দিন পাঁচ থেকে দশ হাজার ইমেল
আইডিতে মেইল করার ব্যবস্থা করে দেবে ৷ সুতরাং এটা আপনার জন্য বেস্ট হবে ৷
নিজে একটা একটা করে মেইল যদি আপনি পাঠাতে চান সেক্ষেত্রে আপনার প্রচুর সময়
লাগবে ৷
উপসংহার
বায়িং হাউজ শুরু করা একটি চ্যালেঞ্জিং
কিন্তু লাভজনক উদ্যোগ হতে পারে। সঠিক পরিকল্পনা, দক্ষ টিম, মানসম্পন্ন
সাপ্লায়ার, এবং কার্যকর মার্কেটিং কৌশল ব্যবহার করে আপনি সফল হতে পারেন।
উপরের ধাপগুলো অনুসরণ করে আপনি আপনার বায়িং হাউজকে একটি সফল ব্যবসায়
পরিণত করতে পারবেন।
আজকের প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে শুধুমাত্র একাডেমিক জ্ঞান দিয়ে সফল হওয়া
কঠিন। আনার সবাই যে কেবল পড়াশুনা করে চাকরি করবে সেটাও ঠিক নয়৷ অনেকেরই
ইচ্চা থাকে পড়াশুনা শেষ করে ব্যবসা শুরু করবেন ৷ শিক্ষার্থীরা এখন নিজেদের
পড়ালেখার পাশাপাশি ব্যবসায়িক উদ্যোগের মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা
এবং ভবিষ্যত জীবেনর জন্য বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের চেষ্টা করছে। এই
আর্টিকেলে আমরা পড়ালেখার পাশাপাশি কি ধরনের ব্যবসা শুরু করা যায় এবং
পড়ালেখার পাশাপাশি ব্যবসা করার চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করব।
টি-শার্ট একটি বহুল ব্যবহৃত এবং জনপ্রিয় পোশাক। সহজলভ্যতা, আরামদায়কতা
এবং বহুমুখীতা এ পোশাকটিকে সকল বয়সী মানুষের প্রিয় করে তুলেছে। বর্তমান
বিশ্বে সবচেয়ে বেশী বিক্রিত পোষাক হলো টি শার্ট ৷ এটিকে আপনি ডিসপোজেবল
পোষাক হিসেবে ভাবতে পারেন ৷ এক সমীক্ষায় দেখা গেছে আমেরিকাতে প্রতি বছর
গড়ে একজন লোক ১০-১৫ টি টি শার্ট ব্যবহার করে থাকে ৷ বাংলাদেশেও টি শার্ট
দিন দিন পপুলারিটি পাচ্চে ৷ ফলে টি-শার্টের ব্যবসা একটি লাভজনক উদ্যোগ
হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই আর্টিকেলে আমরা টি-শার্ট ব্যবসা করার কিছু কারণ
নিয়ে আলোচনা করবো।
আলিবাবা একটি জনপ্রিয় অনলাইন মার্কেটপ্লেস, যেখানে আপনি সহজেই বিভিন্ন দেশের বায়ারদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন। একটি ফ্রী একাউন্ট খুলে প্রোফাইল তৈরি করে এবং আপনার পণ্য যোগ করে বিনামূল্যে বায়ারদের আকর্ষণ করতে পারেন। তবে বর্তমানে আলিবাবার ফ্রী একাউন্ট খোলা একটু কঠিন ৷ অনেক ধরনের ভেরিফিকেশন করতে হয়৷ কিছু লিড আপনি আলিবাবা থেকে নিতে পারবেন ৷
ইন্ডিয়া মার্ট একটি ব্যবসা থেকে ব্যবসার (B2B) অনলাইন মার্কেটপ্লেস। এখানে বিভিন্ন গার্মেন্টস বায়ারের প্রোফাইল এবং যোগাযোগের তথ্য পাওয়া যায়। ফ্রী সাপ্লায়ার একাউন্ট খুলে আপনি এই মার্কেট থেকে বায়ারের তথ্য খুজে পেতে পারেন ৷
গ্লোবাল সোর্সেস (Global Sources):
গ্লোবাল সোর্সেস একটি অনলাইন বিজনেস ডিরেক্টরি, যেখানে আপনি বিভিন্ন বায়ারের তালিকা পেতে পারেন। বিনামূল্যে প্রোফাইল তৈরি করে বায়ারদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
এই তিনটা ছাড়াও আরো অনেক বি টু বি ওয়েবসাইট আছে যেখান থেকে আপনি বি টু বি বায়ারের লিড নিতে পারবেন ৷
বর্তমানে বায়ারের তথ্য খুজে বের করার সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হচ্ছে গুগল ম্যাপ ৷ গুগল ম্যাপ থেকে ডাটা স্ক্রাপিং করে আপনি বায়ারের সকল তথ্য খুজে বের করতে পারবেন ৷ যেমন বায়ারের ই মেইল আইডি, মোবাইল নাম্বার ইত্যাদি ৷ এসব দিয়ে খুব সহযেই বায়ারদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন ৷ গুগল ম্যাপে সকল অফলাইন বায়ারদের স্টোরের ঠিকানা, ইমেইল আইডি, মোবাইল নাম্বার দেয়া থাকে ৷
২. সোশ্যাল মিডিয়া ও প্রফেশনাল নেটওয়ার্কিং
লিঙ্কডইন (LinkedIn):
লিঙ্কডইন একটি প্রফেশনাল নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্ম। এখানে আপনি গার্মেন্টস বায়ারদের খুঁজে পেতে পারেন। আপনার প্রোফাইলটি সুন্দর ভাবে সাজিয়ে রাখুন যাতে করে আপনাকে একজন প্রফেশনাল উৎপাদনকারী মনে হয় ৷ এবার আপনার গার্মেন্ট ব্যবসা রিলেটেড গ্রুপগুলোতে যোগ দিন। নিয়মিত বিভিন্ন পোষ্টের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করুন ৷ নিজেও মাঝে মধ্যে পোষ্ট করুন ৷ সুন্দর সুন্দর আর্টিকেল লিখুন ৷ আজকাল চ্যাট জি পি টি দিয়ে অনেক সুন্দর সুন্দর আর্টিকেল লেখা যায় ৷ আপনার ব্যবসা রিলেটেড আর্টিকেল লেখে ওসব গ্রুপে পাবলিক করুন ৷ কিছুদিনের মধ্যেই আপনি একটা পপুলারিটি পাবেন ৷ দু এক জন বিজ ওনারের পোষ্টে কমেন্ট করুন ৷ তাদের সাথে সাখ্যাতা গড়ে তুলুন ৷ এক সময় আপনি তাদেরকে আপনার সার্ভিস অফার করুন ৷
ফেসবুক গ্রুপ:
ফেসবুকে বিভিন্ন গার্মেন্টস এবং টেক্সটাইল সম্পর্কিত গ্রুপ রয়েছে। এই গ্রুপগুলোতে যোগ দিয়ে আপনি বায়ারদের খুঁজে পেতে পারেন এবং আপনার পণ্য সম্পর্কে তথ্য শেয়ার করতে পারেন এছাড়া আমদানি রপ্তানি সম্পর্কিত অনেক বড় বড় গ্রুপ আছে ৷ সেখানে আপনার পন্য বা সার্ভিস নিয়মিত পোষ্ট করুন ৷ একটা বিষয় মনে রাখবেন, হুট করেই কিন্ত আপনি বায়ার খুজে পাবেন না ৷ এটার জন্য ধৈয্য ধরে পড়ে থাকতে হবে ৷ নিয়মিত আপনার কাজ চালিয়ে গেলে কিছু দিন পর আপনি ফল পেতে শুরু করবেন ৷
ইন্সটাগ্রাম:
ইন্সটাগ্রাম একটি ভিজ্যুয়াল প্ল্যাটফর্ম।আপনার পণ্যের সুন্দর ছবি এবং ভিডিও পোস্ট করে এবং পন্য রিলেটেড কিছু হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করেও কিন্ত আপনি বায়ারদের আকর্ষণ করতে পারেন। কারন এসব প্লাটফর্মে অনেক গার্মেন্টস রিলেটেড মানুষের বিচরন থাকে ৷ একটা বিষয় খেয়াল রাখবেন, প্রতিদিন আপনাকে এসব কাজ চালিয়ে যেতে হবে ৷ মাঝে মধ্যে করলে হবে না ৷
৩. বিজনেস ফোরাম ও অনলাইন কমিউনিটি
রেডিট (Reddit):
রেডিটে বিভিন্ন বিজনেস এবং উদ্যোক্তা সম্পর্কিত সাবরেডিট রয়েছে। এখানে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে এবং পরামর্শ নিয়ে বায়ার খুঁজে পেতে পারেন। এছাড়া অনেকেই এখানে সাপ্লায়ার খোজার জন্য পোস্ট করে থাকেন, তাদেরকে আপনি আপনার সার্ভিস অফার করতে পারেন ৷
কোরা (Quora):
কোরা একটি প্রশ্ন-উত্তরের প্ল্যাটফর্ম। এখানে আপনি গার্মেন্টস বায়ার খোঁজার উপায় সম্পর্কে প্রশ্ন করতে পারেন এবং বিশেষজ্ঞদের থেকে উত্তর পেতে পারেন। অনেকে কোরাতে সাপ্লায়ার কিভাবে পেতে পারে সেসব নিয়েও প্রশ্ন করে থাকেন ৷ আপনি কৌশলে সেসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন ৷ সাথে তাদেরকে আপনার সার্ভিস অফার করতে পারেন ৷ তবে এসব করতে হবে সুকৌশলে ৷ যাতে করে বায়াররা বুঝতে না পারে আপনি বিজ্ঞাপন করতেছেন ৷
৪. সরাসরি ইমেইল মার্কেটিং
ইমেইল লিস্ট সংগ্রহ:
বিভিন্ন বিজনেস ডিরেক্টরি এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে বায়ারদের ইমেইল সংগ্রহ করুন। তারপর তাদের কাছে আপনার পণ্যের তথ্যসহ ইমেইল পাঠান।
নিচে কিছু বিজনেস ডিরেক্টরী এবং ডাটাবেজের ঠিকানা দেওয়া হল এগুলো থেকে আপনি প্রাথমিকভাবে ফ্রিতে কিছু বায়ারের ইমেইল লিস্ট কালেক্ট করতে পারবেন তবে বেশি পরিমাণে কালেক্ট করতে গেলে সেখানে আপনি পেইড অ্যাকাউন্ট খুলে নিতে হবে ৷
Business Directories and Databases:
LinkedIn SalesNavigator: Allows you to filter and find business owners based on various criteria.
ZoomInfo:Provides detailed information about businesses and their key contacts.
ইমেইল মার্কেটিং:
একটি প্রফেশনাল ইমেইল টেমপ্লেট তৈরি করুন, যেখানে আপনার পণ্যের বিবরণ, ছবি এবং আপনার কোম্পানির তথ্য থাকবে। এটি বায়ারদের আকর্ষণ করতে সাহায্য করবে।
একটা বিষয় মনে রাখবেন সেটি হচ্ছে যে আপনি যদি নিজে হাজার হাজার বায়ারের কাছে একত্রে ইমেইল পাঠাতে চান সেটি আপনার জন্য অনেক ডিফিকাল্ট হয়ে যাবে ৷ কারণ আপনার নিজস্ব ইমেইল দিয়ে আপনি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ইমেইল পাঠাতে পারবেন এবং একই ইমেইল যদি মানুষের কাছে বারবার ফরওয়ার্ড করে সে ক্ষেত্রে আপনার নিজস্ব ইমেইল আইডি স্পাম হিসেবে ধরে নিতে পারে এবং সেই ক্ষেত্রে আপনার সমস্ত ইমেইল বায়ারের স্পাম বক্সে গিয়ে জমা হবে এবং অনেক ক্ষেত্রে বায়াররা ইমেইল গুলি ওপেন করে দেখেন না এজন্য আপনি প্রফেশনালদের থেকে অল্প কিছু টাকা খরচ করে সার্ভিস নিতে পারেন ৷
বাল্ক ইমেইল সেন্ডিং সার্ভিস নিতে হলে আপনি ফাইবার থেকে একজন ফ্রিল্যান্সার হায়ার করে নিতে পারেন ৷ এক্ষেত্রে আপনাকে ৫০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা সর্বোচ্চ খরচ করা লাগতে পারে ৷ এই টাকা দিয়ে তারা আপনাকে প্রতি দিন পাঁচ থেকে দশ হাজার ইমেল আইডিতে মেইল করার ব্যবস্থা করে দেবে ৷ সুতরাং এটা আপনার জন্য বেস্ট হবে ৷ নিজে একটা একটা করে মেইল যদি আপনি পাঠাতে চান সেক্ষেত্রে আপনার প্রচুর সময় লাগবে ৷
৫. বিনামূল্যে বিজনেস ইভেন্ট ও এক্সিবিশন
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অনলাইন ওয়েবিনার এবং ভার্চুয়াল এক্সিবিশন আয়োজন করে, যেখানে বিনামূল্যে অংশগ্রহণ করে বায়ারদের সাথে পরিচিত হওয়া যায়।
স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বিজনেস মিটআপ এবং নেটওয়ার্কিং ইভেন্টে যোগ দিন। এটি বায়ারদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের একটি ভালো উপায়।
তবে উপরের এই দুটি অপশন খুবই লিমিটেড ৷ এই ভাবে আপনি বায়ার খুব কমই খুঁজে পাবেন ৷ আপনি চাইলে বিভিন্ন ইন্টারন্যাশনাল মেলা গুলোতে বায়ার হিসাবে অংশগ্রহণ করে আশেপাশের দু চারজন বায়ারের সাথে কথা বলে দেখতে পারেন যে তারা কোন প্রোডাক্ট নেওয়ার আগ্রহ রয়েছে কিনা ৷ চাইলে আপনার সাথে তারা যোগাযোগ করতে পারেন ৷ তবে এটা খুব সাবধানে করতে হবে কারণ যারা স্টল নিয়ে থাকেন তারা সাধারণত এই ধরনের কোন গেস্ট এলাউ করে থাকে না৷
উপসংহার
বর্তমানে টি-শার্ট ব্যবসা একটি লাভজনক এবং সৃজনশীল উদ্যোগ হতে পারে। এ ব্যবসা শুরু করার জন্য সামান্য কিছু মূলধন, পরিকল্পনা এবং প্রচেষ্টা প্রয়োজন। এই পোস্টে এখানে ধাপে ধাপে গাইড দেওয়া হলো যা আপনাকে আপনার টি-শার্ট ব্যবসা শুরু করতে পরিপুর্ন ভাবে সাহায্য করবে।
১. বাজার গবেষণা এবং পরিকল্পনা
বাজার গবেষণা:
শুধু টি শার্ট ব্যবসাই নয় যে কোন ব্যবসা শুরু করতে অবশ্যই আগে আপনাকে বাজাক গবেষণা করতে হবে ৷ টি-শার্ট ব্যবসা শুরু করার আগে বাজার গবেষণা করা জরুরি। প্রথমেই দেখতে হবে কোন ধরনের টি-শার্ট বর্তমানে খুব বেশী জনপ্রিয় এবং আপনার গ্রাহকরা কোন ধরনের ডিজাইন পছন্দ করেন। বাজারে যে সব টি শার্ট ব্রান্ড পপুলার তাদেরকেও বিশ্লেষণ করুন এবং তাদের ব্যবসায়ীক সফলতার দিক গুলি ও ব্যর্থতার দিক গুলি থেকে শিখুন। তাদের ডিজাইন গুলি ফলো করুন ৷ বাজারের ট্রেন্ডিং ডিজাইন গুলি দেখে সেগুলি থেকে ডিজাইনের ধারনা নিতে পারেন ৷ বর্তমানে ড্রপ সোল্ডার টি শার্টের কদর দিন দিন বেড়ে চলতেছে ৷ অনেকেই এই টি শার্ট নিয়ে ব্যবসা করে খুব ভালো প্রফিট করতেছেন ৷
ব্যবসা পরিকল্পনা তৈরি:
টি শার্ট ব্যবসার শুরুতেই একটি বিস্তারিত ব্যবসা পরিকল্পনা তৈরি করুন। এতে আপনার ব্যবসার লক্ষ্য কি, টার্গেট গ্রাহক কত, প্রারম্ভিক বিনিয়োগ কি পরিমান, উৎপাদন প্রক্রিয়া কি ধরনের হবে, বিজ্ঞাপন কৌশল এবং বিক্রয় পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত করুন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু করুন ৷ এই পরিকল্পনা করতে প্রয়োজনে আপনি কয়েকজন অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী থেকে পরামর্শ নিতে পারেন ৷ অনলাইনে আজকাল অনেকেই তাদের ব্যবসায়ীক অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন ৷ সেগুলি থেকেও ধারনা নিতে পারেন ৷
২. ডিজাইন ও ব্র্যান্ডিং
ডিজাইন তৈরি:
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো এটা ৷ সঠিক ভাবে বাজার ট্রেন্ড অনুযায়ী যদি ডিজাইন করতে না পারেন তবে আপনি টি শার্ট বিক্রি করতে পারবেন না ৷ প্রথমেই আশে পাশের ব্রান্ড রিসার্স করে আপনার টি-শার্টের ডিজাইন কেমন হবে তা ঠিক করুন। নিজে ডিজাইন করতে পারেন অথবা ডিজাইনার হায়ার করতে পারেন। ডিজাইন ইউনিক এবং আকর্ষণীয় হতে হবে যা আপনার ব্র্যান্ডের পরিচয় তুলে ধরবে। গুগলে সার্চ করলে অনেক টি শার্টের ডিজাইন আইডিয়া পাবেন ৷ পিন্টারেস্টে সবচেয়ে বেশী টি শার্ট ডিজাইন পাবেন ৷ এছাড়া আপওয়ার্ক থেকেও ফ্রিল্যান্সার হায়ার করে টি শার্ট ডিজাইন করিয়ে নিতে পারেন ৷
ব্র্যান্ডিং:
একটি সুন্দর ব্র্যান্ড নাম এবং লোগো নির্বাচন করুন। চেষ্টা করবেন টোটালি ডিফরেন্ট এবং ইউনিক একটি নাম নির্বাচন করতে ৷ একটু ছোট নাম দিবেন যাতে করে সহযে উচ্চারন করা যায় ৷ একটা ইউনিক ব্রান্ড নেম আপনার ব্যবসার পরিচিতি বাড়াবে এবং গ্রাহকদের কাছে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলবে। এক্ষেত্রে আপনি পরিচিত মানুষের সহযোগিতা নিতে পারেন ৷ আবার অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ব্রান্ড নেম সাজেস্ট করে ৷
৩. সরবরাহকারী এবং উৎপাদন
সরবরাহকারী নির্বাচন:
টি শার্ট ব্যবসার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সরবরাহকারী নির্বাচনে করা ৷ আপনি শুরুতেই নিজে উৎপাদন করার চিন্তা না করাই ভালো ৷ এটা অনেক ব্যয়বহুল এবং রিস্কের ব্যাপার ৷ কয়েকটা ফ্যাক্টরি নির্বাচন করুন ৷ সবার থেকে স্যাম্পল নিন ৷ যার স্যাম্পল আপনার কাছে ভালো মনে হবে তার সাথে কথা বলুন ৷ টি শার্টের ফেব্রিক্স, কালার, জি এস এম, সেলাই, ইত্যাদি সম্পর্কে ভালো ধারনা নিন ৷
৪. ওয়েবসাইট ও অনলাইন স্টোর সেটআপ
ওয়েবসাইট তৈরি:
বার্তমানে অনলাইনে প্রচুর পরিমানে প্রডাক্ট বিক্রি হয়ে থাকে ৷ সোস্যাল মিডিয়ার পাশাপাশি আপনি একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে নিতে পারেন ৷ আপনার ব্রান্ডের নাম দিয়ে প্রফেশনাল ওয়েবসাইট তৈরি করুন যেখানে আপনার টি-শার্টের ডিজাইন শো করা হবে ৷ স্যোসাল মিডিয়াতে বিজ্ঞাপনের সময় ওয়েবসাইটের ঠিকানা দিয়ে দিবেন ৷ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইন অর্ডার গ্রহণ এবং পেমেন্ট প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে। বিভিন্ন পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করতে পারেন ৷ এতে করে সহযে কাস্টমার অনলাইন থেকে পন্য ক্রয় করতে পারবে ৷
৫. বিপণন ও প্রচারণা
ডিজিটাল মার্কেটিং:
সোশ্যাল মিডিয়া, ইমেইল মার্কেটিং এবং পেইড অ্যাডভার্টাইজিং ব্যবহার করে আপনার ব্র্যান্ডের প্রচারণা করুন। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মে আপনার টি-শার্ট প্রচার করুন। বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো ফেসবুক মার্কেটিং ৷ আপনার ব্রান্ডের নামে একটা ফেসবুক পেজ খুলে সেখানে আপনি টি শার্টের ছবি ডিটেইলস পোস্ট করতে পারেন ৷ এই পেজ থেকেই ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন ৷ সাথে সরাসরি ওর্ডার করার জন্য ওয়েবসাইটের ঠিকানা দিয়ে দিবেন ৷
অফলাইন প্রচারণা:
এটা অনেকটা ব্যয়বহুল ৷ বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় স্থানীয় ইভেন্ট, মেলা বা প্রদর্শনী অনুষ্ঠীত হয় ৷ আপনি চাইলে অংশগ্রহণ করতে পারেন। এটি আপনার ব্র্যান্ডের পরিচিতি বাড়াবে এবং স্থানীয় গ্রাহকদের কাছে পৌঁছাবে। এ ছাড়া বিভিন্ন খেলা-দুলাতে আপনি টি শার্ট স্পন্সর করতে পারেন ৷
৬. বিক্রয় ও গ্রাহক সেবা
বিক্রয় ব্যবস্থাপনা:
ব্যবসাতে এটি খুবই গুরুত্বপুর্ন কাজ ৷ আপনার বিক্রি এবং ক্রয় হিসেব নিয়মিত করতে হবে ৷ অনলাইনে আজকাল বিভিন্ন সফটওয়্যার পাওয়া যায় ৷ এসব দিয়ে ক্রয় বিক্রয় ট্র্যাকিং করতে পারবেন এবং স্টক ম্যানেজমেন্ট মনিটর করতে পারবেন। মনে রাখবেন গ্রাহকদের অর্ডার সঠিকভাবে পূরণ করতে না পারলে বিজ্ঞাপনের টাকা পুরোটাই লস হবে আপনার ৷
গ্রাহক সেবা:
গ্রাহকদের সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ গ্রাহক সেবা প্রদান করুন। কোন কাস্টমার টি শার্ট ক্রয় করলে তার থেকে কিছুদিন পর ফিডব্যাক সংগ্রহ করুন ৷ তারা যদি কোন ভালো বা খারাপ রিভিউ করে সেগুলি সংশোধন করার ব্যবস্থা করুন ৷ কাস্টমারের ফিডব্যাক অনুযায়ী আপনার পণ্য ও সেবা পরিবর্তন করুন।
৭. আইনগত বিষয়
লাইসেন্স ও নিবন্ধন:
ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় লাইসেন্স এবং নিবন্ধন নিন। ব্যবসার আইনগত দিক ঠিকভাবে মেনে চলুন। তবে প্রাথমিক ভাবে অনলাইনে ব্যবসা করার জন্য লাইসেন্স না করলেও চলবে ৷ তবে করে নিলে ভালো হবে ৷ কারন পেমেন্ট গেটওয়ে বা ট্রেড মার্ক করতে আপনাকে ট্রেড লাইসেন্স সাবমিট করতে হবে ৷
কপিরাইট:
আপনার ডিজাইন এবং ব্র্যান্ড নামের জন্য কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন করুন যাতে আপনার আইডিয়া সুরক্ষিত থাকে। কপিরাইট করতে প্রাথমিক ভাবে ১০০০০ টাকার মত খরচ হতে পারে ৷ বাংলাদেশে অনেক এজেন্সি আছে যারা আপনার হয়ে এসব কাজ করে দিবে ৷
টি-শার্ট ব্যবসা শুরু করা একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ হলেও কিন্তু এটি খুব উৎসাহজনক একটি উদ্যোগ। আপনার সঠিক পরিকল্পনা, সৃজনশীলতা এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে একটি সফল টি শার্ট ব্যবসা গড়ে তুলতে পারবেন।
ব্যবসা শুরু করতে অনেকেই অনলাইনকে বেছে নেন ৷ অল্প খরচে খুব সহজেই ই কমার্স শুরু করা যায় ৷ ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করার জন্য বেশ কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হয়। আজকের পোস্টে আমি আপনাদেরকে একটি সঠিক গাইডলাইন দেওয়ার চেষ্টা করব কিভাবে আপনারা একটি ই-কমার্স ব্যবসা শূন্য থেকে শুরু করতে পারেন ৷ এই গাইডটি আপনাকে সঠিকভাবে ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করতে সাহায্য করবে।
প্রডাক্ট নির্বাচন:
আপনার প্রথম কাজ হবে একটি নির্দিষ্ট প্রডাক্ট ক্যাটাগরি (নিস) নির্বাচন করা, যে প্রডাক্ট নিয়ে আপনি ব্যবসা শুরু করতে চান। ক্যাটাগরি হতে পারে পোশাক, ইলেকট্রনিক্স, হোম ডেকোর, বই ইত্যাদি। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে পোশাক এবং ইলেকট্রনিক্স পণ্য নিয়ে সবাই ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করে ৷
সিঙ্গেল ও মাল্টিভেন্ডর ই-কমার্সঃ
ই-কমার্স ব্যবসার সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে একটি হচ্ছে মাল্টিভেন্ডর ই-কমার্স আর একটি হচ্ছে সিঙ্গেল ই কমার্স ৷ মাল্টি ভেন্ডর ই-কমার্স হচ্ছে আপনি আপনার ওয়েবসাইটে বিভিন্ন সাপ্লায়ারদেরকে যুক্ত করে তাদের পণ্য বিক্রির সুযোগ দিবেন আর সিঙ্গেল ই-কমার্স হচ্ছে শুধুমাত্র আপনি আপনার প্রোডাক্ট বিক্রি করবেন ৷ আপনাকে প্রথমেই নির্ধারণ করতে হবে আপনি আসলে কি ধরনের ব্যবসা শুরু করতে চাচ্ছেন ৷
বাজার গবেষণা:
ক্যাটাগরি নির্বাচন করার পর, আপনার বাজার গবেষণা করা প্রয়োজন। আপনার টার্গেট করা গ্রাহকদের প্রডাক্ট চাহিদা, বাজারে অন্য ই কমার্স ওয়েবসাইটের এই প্রডাক্টের প্রতিযোগিতা এবং বাজারের ট্রেন্ড সম্বন্ধে জানতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় বিভিন্ন প্রোডাক্ট ই-কমার্স ওয়েবসাইটে অনেক কম ধরে বিক্রি হয়ে থাকে কারণ তারা বাল্ক পরিমাণে প্রোডাক্ট ক্রয় করে সেগুলি কম দরে বিক্রি করতে পারে ৷ সেসব প্রোডাক্ট নিয়ে যদি আপনি ব্যবসা করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে বেশি পরিমাণে প্রোডাক্ট ক্রয় করে স্টক করে সেগুলি বিক্রি করতে হবে ৷ আবার অনেকেই ইউনিক প্রোডাক্ট বিদেশ থেকে আমদানি করে বিক্রি করে সে ক্ষেত্রে আপনাকে দেখতে হবে যে এই সব পন্য গুলো কোন দেশ থেকে আমদানী করা হয় এবং কিভাবে কম দরে আপনি আমদানি করে বাংলাদেশ বিক্রি করতে পারবেন ৷
আবার অনেক প্রোডাক্ট রয়েছে যেগুলোর মার্কেটে যোগান খুবই কম ৷ আপনি যদি এসব প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করেন সেক্ষেত্রে দেখা যাবে যে আপনি কিছুদিন বিক্রি করার পরে সেই প্রোডাক্ট আর মার্কেটে খুজে পাবেন না ৷ সেজন্য অবশ্যই প্রোডাক্টের ক্যাটাগরি নির্বাচনের সময় এমন প্রোডাক্ট নির্বাচন করবেন যেই প্রোডাক্টগুলো সব সময় মার্কেটে এভেইলেবেল থাকে অর্থাৎ আপনি পাইকারি মার্কেট থেকে এই প্রোডাক্টগুলো সবসময় ক্রয় করতে পারবেন এবং সবার সাথে তাল মিলিয়ে আপনি কম রেটে সেগুলো ক্রয় করে বিক্রি করার এবিলিটি থাকতে হবে ৷ এজন্য ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করার আগে প্রোডাক্ট নির্বাচন খুবই খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ ৷
ব্যবসা পরিকল্পনা তৈরি:
ই কমার্স ব্যবসার শুরুতেই একটি বিস্তারিত ব্যবসা পরিকল্পনা তৈরি করুন। এতে আপনার ব্যবসার লক্ষ্য কি, টার্গেট গ্রাহক কত, প্রারম্ভিক বিনিয়োগ কি পরিমান, সাপ্লায়ার প্রক্রিয়া কি ধরনের হবে, বিজ্ঞাপন কৌশল এবং বিক্রয় পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত করুন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু করুন ৷ এই পরিকল্পনা করতে প্রয়োজনে আপনি কয়েকজন অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী থেকে পরামর্শ নিতে পারেন ৷ অনলাইনে আজকাল অনেকেই তাদের ব্যবসায়ীক অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন ৷ সেগুলি থেকেও ধারনা নিতে পারেন ৷
২. ব্যবসার নাম এবং ডোমেইন নিবন্ধন
ব্যবসার নাম নির্বাচন:
আপনার ব্যবসার জন্য একটি আকর্ষণীয় ও সহজে মনে রাখা যায় এমন নাম নির্বাচন করুন। চেষ্টা করবেন ছোট এবং সহজে লেখা যায় এই ধরনের নাম নির্বাচন করতে ৷ যেহেতু এটি ই-কমার্স ব্যবসা সেহেতু এই ওয়েবসাইটটি আপনি সবার মাঝে শেয়ার করতে হবে এবং এই ওয়েবসাইটের নামটি সবাই ব্রাউজারে টাইপ করে সেখান থেকে আপনার ওয়েবসাইটে প্রবেশ করবে ৷ সুতরাং নামটি যত ছোট এবং সহজে উচ্চারণ যোগ্য হবে তত সহজেই মানুষের ওয়েবসাইটটিতে প্রবেশ করতে পারবে ৷ কঠিন কোন নাম যেটা উচ্চারণ করা বা বানান করা কঠিন হয় সেই ধরনের নাম যদি আপনি ব্যবহার করেন তাহলে এটি কাস্টমার ব্যবহার করে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে সমস্যা হবে বা তারা নামের বানান ঠিকমতো না করতে পেরে অন্য ওয়েবসাইটে প্রবেশ করবে এতে করে আপনি আপনার কাস্টমার হারাবেন ৷
নাম নির্বাচন করার আগেই অবশ্যই আপনি চেক করে নিবেন যে আপনার এই ব্যবসাটির নামে ডোমেইন অ্যাভেইলেবেল রয়েছে কিনা ৷ কারণ অনেক সময় দেখা যায় যে আপনি হয়তো একটা নাম নির্বাচন করেছেন কিন্তু আপনি যেই নামে ডোমেটি চাচ্ছেন অলরেডি সেই ডোমেটি অন্য কেউ ও তার নিজের ব্যবসা নামে নিয়েছে সুতরাং অবশ্যই নাম নির্বাচনের আগে ডোমেইন নাম ঠিক করবেন যদি দেখেন যে এই নামে ডোমেইন এভেইলেবেল রয়েছে তাহলে ডোমেইনটি আগে রেজিস্ট্রেশন করবেন তারপরে আপনার ব্যবসার অন্যান্য লাইসেন্স রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করবেন ৷
৩. ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম নির্বাচন
ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরির জন্য বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা যেতে পারে। জনপ্রিয় কিছু প্ল্যাটফর্ম হল Shopify, WooCommerce, BigCommerce ইত্যাদি। আপনার ব্যবসার জন্য সঠিক প্ল্যাটফর্ম নির্বাচন করুন। তবে এই ওয়েবসাইট ডিজাইন কিন্তু আপনি যদি একজন ওয়েবসাইট ডেভেলপার না হন তাহলে সহজে করতে পারবেন না ৷ যদি অনলাইনে বিভিন্ন টিউটোরিয়াল দেখে নিজে নিজে করার চেষ্টা করেন তাহলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হবেন ৷ সেজন্য আপনাকে কোন একজন ভালো মানের ওয়েবসাইট ডেভলপারের সহযোগিতা নিতে হবে ৷ বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা আপনাকে ই-কমার্স ওয়েবসাইট খুব সহজে অল্প টাকার মধ্যে করে দিবে ৷
প্রাথমিকভাবে তত বড় কোন ধরনের প্রতিষ্ঠান দিয়ে আপনার ওয়েবসাইট তৈরি করার প্রয়োজন নেই ছোটখাটো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অল্প টাকা ওয়েবসাইট তৈরি করে ব্যবসাটা শুরু করবেন ৷ এরপরে যদি দেখেন যে আপনার ওয়েবসাইটে কাস্টমারের সংখ্যা দিন দিন বাড়তেছে এবং আপনার ইনভেস্টমেন্ট রিটার্ন সঠিকভাবে আসতেছে তখন বড় কোন ডেভলপার দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করিয়ে নিতে পারেন ৷
৪. ওয়েবসাইট ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট
ওয়েবসাইট ডিজাইন:
একটি আকর্ষণীয় ও ব্যবহারবান্ধব ওয়েবসাইট ডিজাইন করুন। আপনার পণ্য প্রদর্শনের জন্য সুন্দর ও প্রফেশনাল লেআউট ব্যবহার করুন। ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য প্রথমে আপনি একটি ডেমো টেমপ্লেট দেখে নিবেন ৷ যে সব ডেভলপার দিয়ে কাজ করাবেন তাদের থেকে ওয়েবসাইটের ডেমো দেখে নিবেন ৷ ওয়েবসাইটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো একজন ভিজিটর ওয়েবসাইট ভিজিট করার সময় যেন সহজে আপনার ওয়েবসাইটে প্রোডাক্ট অর্ডার করতে পারে এবং এখানে যে সমস্ত ফিচারগুলো ব্যবহার করবেন সেগুলো যেন ইউজার ফ্রেন্ডলি হয় অর্থাৎ একজন কাস্টমার ওয়েবসাইটে এসে যেন অপেক্ষা করতে না হয় যে কিভাবে তিনি অর্ডারটা প্লেস করবেন এটা বুঝতে ৷ আপনি এমন ধরনের ইউজার ইন্টারফেস তৈরি করবেন যাতে করে ওয়েবসাইটে ঢুকে প্রোডাক্ট দেখা মাত্রই কাস্টমার অর্ডার প্লেস করতে পারে ৷
ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট:
ডিজাইনের পরে ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট শুরু করুন। ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্টে প্রয়োজনীয় ফিচার যেমন শপিং কার্ট, পেমেন্ট গেটওয়ে, প্রোডাক্ট ক্যাটালগ ইত্যাদি সংযোজন করুন। বাংলাদেশি অনেক কোম্পানি পেমেন্ট গেটওয়ে সার্ভিস দিয়ে থাকে ৷ তাদের পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে সকল ধরনের মোবাইল ব্যাংকিং এবং ব্যাংকের কার্ড দিয়ে পেমেন্ট করার ব্যবস্থা করা যায় ৷ ফলে একজন কাস্টমার খুব সহজেই আপনার ওয়েবসাইটের প্রোডাক্টগুলি অর্ডার করতে পারবে ৷
৫. প্রোডাক্ট লিস্টিং এবং ম্যানেজমেন্ট
প্রোডাক্ট লিস্টিং:
আপনার ওয়েবসাইটে প্রোডাক্ট লিস্টিং করুন। প্রতিটি প্রোডাক্টের জন্য বিস্তারিত বিবরণ, মূল্য, ছবি এবং স্টক উল্লেখ করুন। প্রোডাক্ট লিস্টিং এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ক্লিয়ার ভাবে প্রোডাক্ট এর ছবি তুলে সেই ছবি পোস্টিং করা ছবি তোলার জন্য আপনাকে সর্বোচ্চ বাজেট নির্ধারণ করতে হবে প্রয়োজনে প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার দিয়ে আপনার প্রোডাক্টের ছবি তুলে সেই ছবি এডিট করে আপনি ওয়েবসাইটে প্রোডাক্ট এর ছবি পোস্ট করবেন ৷
৬. পেমেন্ট এবং শিপিং সেটআপ
পেমেন্ট গেটওয়ে:
আপনার ওয়েবসাইটে বিভিন্ন পেমেন্ট অপশন সংযোজন করুন। যেমন ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিং ইত্যাদি। বাংলাদেশি অনেক কোম্পানি পেমেন্ট গেটওয়ে সার্ভিস দিয়ে থাকে ৷ তাদের পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে সকল ধরনের মোবাইল ব্যাংকিং এবং ব্যাংকের কার্ড দিয়ে পেমেন্ট করার ব্যবস্থা করা যায় ৷ ফলে একজন কাস্টমার খুব সহজেই আপনার ওয়েবসাইটের প্রোডাক্টগুলি অর্ডার করতে পারবে ৷
শিপিং ম্যানেজমেন্ট:
ই-কমার্স এর পণ্য ডেলিভারি বাংলাদেশে একটি প্রধান সমস্যা হয়ে উঠছে ই-কমার্স ব্যবসার জন্য ৷ বাংলাদেশে অনেক ডেলিভারি কোম্পানি থাকা সত্ত্বেও ঠিকমতো প্রোডাক্ট ডেলেভারী মেনটেইন করাটা খুবই টিফিকাল্ট হয়ে উঠতেছে ৷ ডেলিভারি কুরিয়ার কোম্পানিগুলোর অব্যবস্থাপনা, পন্য ডেলিভারিতে দেরি করা, সঠিক সময়ে কাস্টমারের হাতে পণ্য পৌঁছে না দেওয়া, কাস্টমারদেরকে ভুল ইনফরমেশন দেওয়া, অনেক সময় কাস্টমারদের কে পণ্য ডেলিভারী না দিয়েই চলে আসা, অনেক সময় অন্য হারিয়ে ফেলা বা ড্যামেজ করা ফেলা ইত্যাদি কারণে আসলে বাংলাদেশে ই কমার্স পন্য ডেলিভারি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমটা খুবই বাজে হয়ে উঠতেছে ৷ বর্তমানে স্টেডফাস্ট, পাঠাও খুব জনপ্রিয় কুরিয়ার ৷ এরা ক্যাশ অন ডেলিভারী সিস্টেমে সারা দেশে পন্য হোম ডেলিভারী করে থাকে৷ কাস্টমার থেকে পাওয়া পেমেন্ট খুব সহযেই ব্যাংকে পাঠিয়ে দেয় ৷
৭. বিপণন এবং প্রচারনা
ডিজিটাল মার্কেটিং:
ডিজিটাল মার্কেটিং কৌশল ব্যবহার করুন। সামাজিক মাধ্যম, ইমেইল মার্কেটিং, এসইও, পেইড অ্যাডভার্টাইজিং ইত্যাদি মাধ্যমে আপনার ব্যবসা প্রচার করুন। সোশ্যাল মিডিয়া, ইমেইল মার্কেটিং এবং পেইড অ্যাডভার্টাইজিং ব্যবহার করে আপনার ব্র্যান্ডের প্রচারণা করুন। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মে আপনার ই কমার্স ওয়েবসাইট প্রচার করুন। বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো ফেসবুক মার্কেটিং ৷ আপনার ব্রান্ডের নামে একটা ফেসবুক পেজ খুলে সেখানে আপনি প্রডাক্টের ছবি ডিটেইলস পোস্ট করতে পারেন ৷ এই পেজ থেকেই ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন ৷ সাথে সরাসরি ওর্ডার করার জন্য ওয়েবসাইটের ঠিকানা দিয়ে দিবেন ৷
গ্রাহক সেবা:
২৪ ঘন্টা গ্রাহক সেবা দেবার সিস্টেম তৈরি করুন ৷ যাতে গ্রাহকদের যেকোনো সমস্যা দ্রুত সমাধান করা যায়
৮. বিক্রয় এবং বিশ্লেষণ
বিক্রয় ট্র্যাকিং:
আপনার বিক্রি এবং ক্রয় হিসেব নিয়মিত করতে হবে ৷ অনলাইনে আজকাল বিভিন্ন সফটওয়্যার পাওয়া যায় ৷ এসব দিয়ে ক্রয় বিক্রয় ট্র্যাকিং করতে পারবেন এবং স্টক ম্যানেজমেন্ট মনিটর করতে পারবেন। মনে রাখবেন গ্রাহকদের অর্ডার সঠিকভাবে পূরণ করতে না পারলে বিজ্ঞাপনের টাকা পুরোটাই লস হবে আপনার ৷
ফিডব্যাক সংগ্রহ:
গ্রাহকদের সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ গ্রাহক সেবা প্রদান করুন। কোন কাস্টমার টি শার্ট ক্রয় করলে তার থেকে কিছুদিন পর ফিডব্যাক সংগ্রহ করুন ৷ তারা যদি কোন ভালো বা খারাপ রিভিউ করে সেগুলি সংশোধন করার ব্যবস্থা করুন ৷ কাস্টমারের ফিডব্যাক অনুযায়ী আপনার পণ্য ও সেবা পরিবর্তন করুন।
ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করা একটি চ্যালেঞ্জিং কিন্তু লাভজনক উদ্যোগ হতে পারে। সঠিক পরিকল্পনা ও স্ট্রাটেজি ব্যবহার করে আপনি সফল ই-কমার্স ব্যবসা গড়ে তুলতে পারেন।