বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ হলেও বর্তমানে এটি একটি রপ্তানিকারক রাষ্ট্র হিসেবেও পরিচিত। দেশের বিভিন্ন খাত থেকে উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হচ্ছে।
পোশাক বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানিপণ্য
এ ধারনা এখন পরিবর্তন হচ্ছে। বাংলাদেশের রপ্তানি পন্যের তালিকায় এখন নতুন নতুন পন্য
যোগ হচ্ছে। কোন কোন পণ্য বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা যায় এবং সেগুলো কোন কোন দেশে রপ্তানি হচ্ছে এ বিষয় নিয়ে আজ আমরা আলোচনা করবো।
১. গার্মেন্টস ও পোশাক
রপ্তানির গন্তব্য:
বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্টস রপ্তানি করা হয় মূলত ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, এবং অস্ট্রেলিয়া। বিশেষ করে H&M, Zara, Uniqlo, Primark, এবং Walmart-এর মতো বড় কোম্পানিগুলোর জন্য বাংলাদেশ গার্মেন্টস তৈরি করে থাকে।
রপ্তানিযোগ্য পণ্য:
টিশার্ট, শার্ট, জিন্স, প্যান্ট, সুয়েটার, স্পোর্টসওয়্যার, আন্ডারগার্মেন্টস।
বর্তমানে বেশ কিছুদিন ধরে নতুন
নতুন গার্মেন্টস পন্য রপ্তানির তালিকায় যোগ হচ্ছে। এর বড় একটি উদাহরন হল টুপি।
২. জুট ও জুটজাত পণ্য
রপ্তানির গন্তব্য:
ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, তুরস্ক, ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া, এবং ইউরোপের দেশগুলোতে জুট পণ্য রপ্তানি হয়।
রপ্তানিযোগ্য পণ্য:
জুট ব্যাগ, জুটের কার্পেট, জুট ফাইবার, জুটের তৈরি গৃহস্থালী পণ্য
জুট পণ্যের চাহিদা ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকায় বাড়ছে, বিশেষ করে পরিবেশ-বান্ধব ব্যাগ এবং প্যাকেজিং সামগ্রীর ক্ষেত্রে।
৩. চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য
রপ্তানির গন্তব্য:
বাংলাদেশ থেকে চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করা হয় ইতালি, জার্মানি, স্পেন, দক্ষিণ কোরিয়া, এবং জাপানে।
রপ্তানিযোগ্য পণ্য:
চামড়ার জুতা, ব্যাগ, বেল্ট, চামড়ার জ্যাকেট
ইউরোপ এবং এশিয়ার দেশগুলিতে বাংলাদেশি চামড়া পণ্যের সুনাম রয়েছে, কারণ এখানকার চামড়ার গুণগত মান আন্তর্জাতিক মানের।
৪. খাদ্য পণ্য
রপ্তানির গন্তব্য:
বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা হয় মূলত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মধ্যপ্রাচ্য, এবং কানাডায়।
শেয়ার ব্যবসা কি? কিভাবে করবেন?
রপ্তানিযোগ্য পণ্য:
মাছ (চিংড়ি, ইলিশ), ফল (আম, কাঁঠাল), শাকসবজি, মসলা
বাংলাদেশের চিংড়ি এবং ইলিশ মাছ আন্তর্জাতিক বাজারে খুবই জনপ্রিয়, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে এই মাছের বড় চাহিদা রয়েছে।
৫. মৎস্য
রপ্তানির গন্তব্য:
মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, এবং জাপানে মৎস্য পণ্য রপ্তানি করা হয়।
রপ্তানিযোগ্য পণ্য:
চিংড়ি, পাঙ্গাস, রুই, কাতলা
বিশ্বব্যাপী হালাল খাদ্য পণ্যের চাহিদা বাড়ায় বাংলাদেশি মাছের চাহিদা রয়েছে মধ্যপ্রাচ্য এবং মুসলিমপ্রধান দেশগুলোতে।
৬. হ্যান্ডিক্রাফট ও সংস্কৃতিক পণ্য
রপ্তানির গন্তব্য:
যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জার্মানি, ফ্রান্স, এবং যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হ্যান্ডিক্রাফট পণ্য রপ্তানি করা হয়।
রপ্তানিযোগ্য পণ্য:
বাঁশের তৈরি সামগ্রী, হাতে তৈরি কাপড়, নকশিকাঁথা, মৃৎশিল্প
পশ্চিমা দেশে হাতে তৈরি এবং সাংস্কৃতিক পণ্যগুলোর চাহিদা রয়েছে। তারা বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্পকে বেশ গুরুত্ব দেয়।
৭. ঔষধ ও ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য
রপ্তানির গন্তব্য:
বাংলাদেশ থেকে ঔষধ রপ্তানি করা হয় ১৫০টিরও বেশি দেশে, যার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, কানাডা, এবং অস্ট্রেলিয়া।
রপ্তানিযোগ্য পণ্য:
এন্টিবায়োটিক, ভ্যাকসিন, জেনেরিক ড্রাগস
বাংলাদেশি ঔষধের গুণগত মান এবং কম দামের জন্য এগুলোর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল এবং নিম্নআয়ের দেশগুলোতে এই পণ্যগুলো রপ্তানি হচ্ছে।
৮. ইলেকট্রনিকস পণ্য
রপ্তানির গন্তব্য:
বাংলাদেশ থেকে ইলেকট্রনিকস পণ্য রপ্তানি করা হয় ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, এবং মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশে।
রপ্তানিযোগ্য পণ্য:
টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর, ফ্যান, মোবাইল ফোন
বাংলাদেশের তৈরি ওয়ালটন এবং স্যামসাং-এর মতো ব্র্যান্ডের পণ্য মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ এশিয়ার বাজারে ভালো বিক্রি হচ্ছে।
কিভাবে রপ্তানি ব্যবসা শুরু করবেন?
৯. কাঁচামাল
রপ্তানির গন্তব্য:
চীন, ভারত, থাইল্যান্ড, এবং মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের বিভিন্ন কাঁচামাল রপ্তানি হয়।
রপ্তানিযোগ্য পণ্য:
রাবার, বালু, পাথর, বস্ত্রের কাঁচামাল
বিশ্বের অনেক দেশের বাজার বাংলাদেশের কাঁচামালের উপর নির্ভর করে, বিশেষ করে বস্ত্রের জন্য কাঁচামালের বড় চাহিদা রয়েছে।
১০. বিউটি ও পারফিউম
রপ্তানির গন্তব্য:
বাংলাদেশ থেকে বিউটি ও পারফিউম পণ্য রপ্তানি করা হয় মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে।
রপ্তানিযোগ্য পণ্য:
সুরভিত তেল, স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টস, কসমেটিক্স।
বাংলাদেশি প্রাকৃতিক উপাদানের স্কিন কেয়ার পণ্য এবং সুরভিত তেলের আন্তর্জাতিক বাজারে ভালো চাহিদা রয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা সম্ভব এমন অনেক অপ্রচলিত পণ্য রয়েছে, যেগুলোর বৈশ্বিক চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। আগে যেসব পণ্য আমাদের দেশে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকত বা নষ্ট হয়ে যেত, বর্তমানে সেগুলো প্রক্রিয়াজাত করে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে। এখন দেখব, বাংলাদেশ থেকে কোন কোন অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানি করা যায় এবং কোন দেশে এদের চাহিদা রয়েছে। নিচে অপ্রচলিত রপ্তানি পন্যের তালিকা দেওয়া হলঃ-
কোন কোন দেশে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়?
এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী
বাংলাদেশের রপ্তানি পন্যের গন্তব্যের তালিকায় শীর্ষ ১০ টি দেশ হলো USA, জার্মানি,
UK, স্পেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, ভারত, ইতালি, জাপান, পোল্যান্ড।
বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি করা হচ্ছে, যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। গার্মেন্টস, জুট, চামড়া, খাদ্য পণ্য, মৎস্য, ঔষধ, এবং ইলেকট্রনিকসের মতো পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে।
বিদেশে সবজি রপ্তানি ব্যবসা কিভাবে শুরু করবেন?
বিশ্বব্যাপী রপ্তানি বাজারের চাহিদা অনুযায়ী নতুন পণ্য যোগ করা হচ্ছে এবং সেই সাথে বাংলাদেশি পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি পাচ্ছে।