ভাবছেন ফার্মেসি ব্যবসা শুরু
করবেন, কিন্তু বুঝতে পারছেন না কোথা থেকে শুরু করবেন? শুরুর
আগেই বাধা আসছে লাইসেন্স থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের চিন্তায়? আজ আমরা, “ফার্মেসি
ব্যবসা কিভাবে শুরু করবেন, ফার্মেসি ব্যবসা শুরু করতে কত টাকা লাগবে, কি কি লাইসেন্স
বা কাগজপত্রের প্রয়োজন হবে ফার্মেসি ব্যবসা শুরু করতে, কোথা থেকে কিভাবে সংগ্রহ করবেন
এই লাইসেন্স বা কাগজপত্র এবং ফার্মেসি ব্যবসার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়” নিয়ে আলোচনা
করবো।
ফার্মেসি ব্যবসা কিভাবে শুরু করবেন?
ফার্মেসি ব্যবসা শুরু করতে
গেলে প্রথমেই আপনাকে ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরি
করার সময় নিচের বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে:
১. বাজার বিশ্লেষণ
আপনার এলাকায় ফার্মেসির চাহিদা
এবং প্রতিযোগিতা সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। এর পাশাপাশি, লক্ষ্য করতে হবে কোন ধরনের
ওষুধের চাহিদা বেশি।
২. ব্যবসার নাম এবং লোকেশন
নির্বাচন
ফার্মেসির জন্য একটি আকর্ষণীয়
নাম নির্বাচন করুন। ফার্মেসির জন্য ভালো লোকেশন নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হাসপাতাল, ক্লিনিক বা চিকিৎসা কেন্দ্রের কাছে ফার্মেসি স্থাপন করলে ব্যবসায় দ্রুত সাফল্য
পাওয়া সম্ভব। তবে এলাকা বা মহল্লায় ফার্মেসি স্থাপন করতে চাইলে রাস্তার মোড় বা যেখানে
জনসমাগম বেশি সেখানে দোকান দিতে হবে।
৩. পন্য নির্বাচন
ফার্মেসিতে শুধুমাত্র সাধারণ
ঔষধ নয়, প্রয়োজন হলে প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা পণ্য রাখুন। এটি
আপনার ব্যবসার বৈচিত্র্যতা বাড়াবে।
এসব বিষয় নিয়ে বসে ব্যবসার
পরিকল্পনা ঠিক করবেন।
লাইভ বেকারি ব্যবসাঃ বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক সেরা ব্যবসার আইডিয়া
লাইসেন্স ও অনুমোদন
এবার আসি কি কি কাগজপত্রের
দরকার হবে ফার্মেসি ব্যবসা শুরু করতে। কিছু ঔষধ দোকানে নিয়ে বসে বসে বিক্রি করাটা কিন্তু
অবৈধ। আপনার থাকতে হবে ট্রেড লাইসেন্স, টিন সার্টিফিকেট এবং ফার্মেসি ব্যবসায় যেই লাইসেন্স
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ড্রাগ লাইসেন্স।
ড্রাগ লাইসেন্স পেতে হলে আপনাকে
বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল থেকে ছয় মাসের একটি ফার্মাসিষ্ট ট্রেনিং কোর্স করতে হবে।
ড্রাগ লাইসেন্স ছাড়া ঔষধ বিক্রি করা যায় না। আইনি ঝামেলায় পরতে হবে। ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের
ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনে ড্রাগ লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা যায়।
দোকান ডেকোরেশন
আপনার ফার্মেসির জন্য ঔষধ রাখার
শেলফ, ক্যাশ বক্স, রেফ্রিজারেটর দরকার হবে। খুব গোছালোভাবে ডেকারেশনের কাজটি করতে হবে।
ঔষধ কেনা ও বিক্রি শুরু করা
আপনার ফার্মেসির দোকান নেওয়া
এবং ডেকোরেশনের কাজ শেষ করার পর, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হচ্ছে ওষুধ কেনা এবং
বিক্রি শুরু করা। প্রথম দিকে আপনাকে পাইকারি দোকান থেকে ঔষধ কিনে আনতে হবে। প্রায় প্রত্যেকটি
জেলা শহরেই পাইকারি ঔষধের মার্কেট থাকে।
অনেক বড় ফার্মেসি মালিকরা
সরাসরি ওষুধ কোম্পানির ডিলার বা প্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ করে পণ্য সংগ্রহ করেন। এভাবে
আপনি সুনির্দিষ্ট কোম্পানির ওষুধ সরাসরি কোম্পানির কাছ থেকে কিনতে পারবেন।
ঔষধ বিক্রি শুরু করবেন কিভাবে?
১. প্রাথমিক স্টক ম্যানেজমেন্ট
প্রথমে, আপনার ফার্মেসির জন্য
একটি প্রাথমিক স্টক প্রস্তুত করতে হবে। আপনার এলাকায় কোন ধরনের ওষুধের চাহিদা বেশি
তা জানার জন্য বাজার বিশ্লেষণ অনুযায়ী ওষুধ সংগ্রহ করুন। সাধারণত, প্রাথমিক অবস্থায়
কিছু নির্দিষ্ট ধরনের ওষুধ সবসময় ফার্মেসিতে রাখবেন যেমন:
২. ওষুধের মেয়াদ যাচাই করা
ওষুধ কেনার পর প্রতিটি ওষুধের
মেয়াদ যাচাই করা অত্যন্ত জরুরি। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের কারণে আইনগত সমস্যা হতে পারে
এবং এটি আপনার ব্যবসার সুনাম ক্ষুণ্ণ করতে পারে। ওষুধের মেয়াদ সম্পর্কে একটি নির্দিষ্ট
ট্র্যাকিং সিস্টেম রাখুন, যাতে কোন ওষুধের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তা বিক্রি করতে পারেন।
সুপারশপ ব্যবসা শুরু করবেন কিভাবে?
৩. পণ্য ডিসপ্লে ও স্টোর ম্যানেজমেন্ট
আপনার দোকানে ওষুধগুলো সঠিকভাবে
ডিসপ্লে এবং সংরক্ষণ করবেন। ওষুধগুলো সহজেই খুঁজে পেতে এবং বিক্রি করতে সুবিধা হয় এমনভাবে
স্টোর সাজান। ওষুধগুলো ধুলো-ময়লা থেকে রক্ষা করে ঠান্ডা, শুষ্ক, এবং সঠিক তাপমাত্রায়
সংরক্ষণ করুন। কোনো কোনো ওষুধ ফ্রিজে রাখা লাগতে পারে, সেগুলো ফ্রিজে রাখবেন।
৪. গ্রাহক সেবা উন্নত করা
আপনার কর্মীদের এমন হতে হবে,
যারা গ্রাহকদের প্রয়োজন অনুযায়ী ওষুধের পরামর্শ দিতে পারে এবং তাদের যেকোনো প্রশ্নের
সহজভাবে উত্তর দিতে পারে। যদি আপনি গ্রাহকদের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেন, তাহলে
তারা বারবার আপনার ফার্মেসিতে আসতে আগ্রহী হবে।
৫. প্রোমোশন ও বিজ্ঞাপন শুরু
করা
আপনার ফার্মেসি নতুন খোলার
পর স্থানীয়ভাবে বিজ্ঞাপন দিন। লোকাল পোস্টার, পামফ্লেট, এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে
প্রচার শুরু করতে পারেন। (পামফ্লেট হল একটি ছোট, এক বা একাধিক পাতার মুদ্রিত বা ডিজিটাল
নথি, যা সাধারণত তথ্য বা বিজ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়। এটি হাতে হাতে বিতরণ
করা হয় বা জনসমাগম স্থানে রাখা হয়, যাতে মানুষ সহজেই পড়তে পারে) প্রাথমিক অবস্থায়
কিছু ডিসকাউন্ট অফার করতে পারেন, যা নতুন গ্রাহক আকৃষ্ট করতে সহায়ক হতে পারে।
ফার্মেসি ব্যবসা শুরু করতে কত টাকা লাগতে পারে?
যেকোনো ব্যবসা শুরু করতে কত
টাকা লাগবে এটা নির্ভর করবে কোন স্থানে কেমন পরিসরে ব্যবসা শুরু করবেন তার উপর। ছোট
বা মাঝারি আকারের একটি ফার্মেসি ব্যবসা শুরু করতে মোটামুটি ৩-১০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগের
প্রয়োজন হতে পারে। তবে খরচের বিবরণ কিছুটা ভিন্ন হতে পারে ব্যবসার ধরন ও স্কেল অনুযায়ী।
নিচে ফার্মেসি ব্যবসা শুরু করতে কী কী খরচ লাগতে পারে, তার বিস্তারিত ধারনা দেওয়া হলো:
মোট বিনিয়োগের ধারনা:
উপরের হিসাব অনুযায়ী, একটি
ছোট বা মাঝারি আকারের ফার্মেসি ব্যবসা শুরু করতে মোটামুটি ৩,৫০,০০০ - ১০,০০,০০০ টাকা
লাগতে পারে।
বিদেশে সবজি রপ্তানি ব্যবসা শুরু করবেন যেভাবে
উল্লেখ্য, খরচের এই পরিমাণ আপনার ব্যবসার স্থান, আকার এবং অন্যান্য বিষয় অনুসারে পরিবর্তিত হতে পারে।
চীন থেকে বাংলাদেশে পন্য আমদানি করার নিয়ম
ফার্মেসি ব্যবসা নিয়ে আপনাদের
আরও প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন।
ধন্যবাদ।