সিএনএফ” (CNF) এর পূর্ণরূপ হলো Clearing and Forwarding। এটা মূলত আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত একটি গুরুত্বপূর্ণ সেবা বা কাজ। CNF এজেন্ট বা কোম্পানি একটি আমদানি বা রপ্তানিকারকের পক্ষে পণ্য শুল্ক অফিস, বন্দর এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে পণ্য ছাড় করানো এবং গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করে।
ডকুমেন্টেশন প্রস্তুত করা
– বিল অব লেডিং, ইনভয়েস, প্যাকিং লিস্ট, এলসি ইত্যাদি তৈরি ও যাচাই।
কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স
– শুল্ক সংক্রান্ত কাগজপত্র দাখিল এবং আমদানি পণ্যের উপর সরকার নির্ধারিত শুল্ক, ট্যাক্স প্রদান করে পণ্য ছাড় করানো।
বন্দর থেকে পণ্য উঠানো ও স্থানান্তর করা
– কনটেইনার বা অন্যান্য মালামাল বন্দরে আসার পর তা খালাস করে নির্দিষ্ট গুদাম বা গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া।
বীমা ও পণ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যবস্থা
– অনেক সময় CNF এজেন্ট বীমা সংক্রান্ত বিষয়গুলোর ব্যবস্থাও করে।
সরকারি সংস্থার সাথে সমন্বয় করা
– যেমন: বিএসটিআই, ফুড অথরিটি, কেমিক্যাল ডিপার্টমেন্ট ইত্যাদির ছাড়পত্র নেওয়া।
CNF এজেন্ট আপনার পণ্য বিদেশ থেকে আনতে বা বিদেশে পাঠাতে যা যা কাজ লাগে, সেগুলো আপনার পক্ষে করে দেয়।
এখানে আমি আপনাকে আমদানির ক্ষেত্রে CNF কাজের ধাপভিত্তিক একটা সংক্ষিপ্ত গাইড দিচ্ছি:
Proforma Invoice
LC (Letter of Credit) বা TT
HS Code নির্ধারণ
আমদানির লাইসেন্স (IRC), ট্রেড লাইসেন্স, VAT, TIN ইত্যাদি প্রস্তুত থাকা দরকার।
আপনি বা আপনার ক্লায়েন্ট নথিপত্র বুঝে নেন: Bill of Lading (B/L), Packing List, Commercial Invoice, ইত্যাদি।
পণ্য এসেছে কিনা তা ট্র্যাক করতে হয় (port or shipping line এর মাধ্যমে)।
B/L-এর সাথে মূল আমদানি declaration মিলিয়ে নিতে হয়।
কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সিস্টেমে (ASYCUDA World) Bill of Entry সাবমিট করা হয়।
কাস্টমস অফিসার প্রোডাক্ট ভ্যালু যাচাই করে শুল্ক ও অন্যান্য ট্যাক্স নির্ধারণ করেন।
আপনি/ক্লায়েন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে শুল্ক ও ভ্যাট প্রদান করেন।
কখনো কখনো কাস্টমস, BSTI, বা অন্য সংস্থা থেকে ইনস্পেকশন লাগে।
সব ঠিক থাকলে পণ্য খালাস (Delivery Order) হয়।
এরপর পণ্য গন্তব্যে পাঠানো (গুদাম, কারখানা, ইত্যাদি)।
ASYCUDA World – কাস্টমস ডিক্লারেশন সাবমিট করতে।
NBR E-payment – ডিউটি/ট্যাক্স পেমেন্ট।
Port Authority Systems – চিটাগাং/মোংলা পোর্ট ট্র্যাকিং।
Shipping Line Portals – D/O ও B/L যাচাই।
আপনি যদি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (DAC) থেকে আমদানি করেন, তাহলে CNF কাজের কিছু বিশেষ দিক থাকে যেটা সিঙ্গেল কার্গো/এয়ার কার্গো হ্যান্ডলিং-এর কারণে একটু আলাদা হয় সমুদ্র বন্দরের তুলনায়।
এটি হলো এয়ার কার্গোর জন্য বিল অব লেডিং-এর বিকল্প।
এটি পণ্য কার্গোতে উঠানোর পর ইস্যু হয়।
একে বলা হয় MAWB (Master AWB) এবং HAWB (House AWB) যদি Forwarder যুক্ত থাকে।
পণ্য বিমানবন্দরে পৌঁছালে GHAC (Ground Handling Agent, সাধারণত Biman বা ইউনাইটেড এয়ার) নথি আপডেট করে।
আপনি GHAC অফিস থেকে বা GHAC ওয়েবসাইট থেকে ইনফরমেশন সংগ্রহ করতে পারেন।
ASYCUDA World সিস্টেমে প্রোডাক্টের ডিটেইল, Invoice, AWB, Packing List ইত্যাদি দিয়ে Bill of Entry সাবমিট করতে হয়।
প্রয়োজন হলে BSTI, DGDA, Quarantine, বা BCSIR থেকে ছাড়পত্র নিতে হয় নির্দিষ্ট পণ্যের জন্য।
কাস্টমস থেকে Assessed Copy পাবেন।
সেখানকার ভ্যালু অনুসারে ডিউটি/ভ্যাট NBR-এর E-payment সিস্টেমে দিয়ে পেমেন্ট করতে হয়।
GHAC অফিসে গিয়ে Handling Charge দিতে হয়।
এই চার্জ না দিলে পণ্য রিলিজ হবে না।
কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স হয়ে গেলে GHAC থেকে পণ্য রিলিজ নিতে পারবেন।
GHAC থেকে কার্গো সংগ্রহ করতে হলে GHAC-এর ডেলিভারি গেট ক্লিয়ার করতে হয়।
পণ্য বুঝে নিয়ে গন্তব্যে পাঠান (গুদাম/শোরুম ইত্যাদি)।
Airway Bill (AWB)
Invoice & Packing List
IRC, BIN, TIN, Trade License
LC/TT কপি
Authorization Letter (যদি ক্লায়েন্টের পক্ষে কাজ করেন)
Any required certificate (BSTI, DGDA etc.)
বিমানবন্দরে পণ্য বেশি দিন থাকলে Demurrage/Storage Charge বেড়ে যায়, তাই সময়মতো ক্লিয়ারেন্স জরুরি।
কাস্টমস রিলিজে জটিলতা কমাতে আগেই সব ডকুমেন্ট প্রস্তুত রাখুন।