পড়ালেখার পাশাপাশি ব্যবসা: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
Posted on: 2024-08-09 21:48:33
| Posted by: eibbuy.com
পড়ালেখার পাশাপাশি ব্যবসা: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
আজকের প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে শুধুমাত্র একাডেমিক জ্ঞান দিয়ে সফল হওয়া
কঠিন। আনার সবাই যে কেবল পড়াশুনা করে চাকরি করবে সেটাও ঠিক নয়৷ অনেকেরই
ইচ্চা থাকে পড়াশুনা শেষ করে ব্যবসা শুরু করবেন ৷ শিক্ষার্থীরা এখন নিজেদের
পড়ালেখার পাশাপাশি ব্যবসায়িক উদ্যোগের মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা
এবং ভবিষ্যত জীবেনর জন্য বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের চেষ্টা করছে। এই
আর্টিকেলে আমরা পড়ালেখার পাশাপাশি কি ধরনের ব্যবসা শুরু করা যায় এবং
পড়ালেখার পাশাপাশি ব্যবসা করার চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করব।
পড়ালেখার পাশাপাশি কি ব্যবসা করা যায়: কিছু সম্ভাব্য ধারণা
এখানে আমরা কিছু সম্ভাব্য ব্যবসার ধারণা নিয়ে আলোচনা করব, যা শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার পাশাপাশি করতে পারে।
ফ্রিল্যান্সিং:সবচেয়ে কম ইনভেষ্টে ছাত্ররা শুরু করতে পারে ফ্রিল্যান্সিং ৷
১. লেখালেখি:যারা
লেখালেখিতে দক্ষ, তারা ফ্রিল্যান্স রাইটিং বা ব্লগিং করতে পারে। বিভিন্ন
ওয়েবসাইট এবং কোম্পানি কনটেন্ট লেখার জন্য ফ্রিল্যান্সার খুঁজে থাকে।
বর্তমানে কনটেন্ট রাইটারদের খুব ভালো চাহিদা আছে ৷ ওয়েবসাইটে কন্টেট লেখার
জন্য অনেক বড় বড় আর্টিকেল রাইটের হায়ার করে থাকে ৷ যত ভালো মান সম্পন্য
আর্টিকেল লিখতে পারবেন, তত ভালো টাকা আয় করা সম্ভব ৷
২. গ্রাফিক ডিজাইন:গ্রাফিক
ডিজাইনে দক্ষ শিক্ষার্থীরা ফ্রিল্যান্স গ্রাফিক ডিজাইনিং কাজ করতে পারে।
বিভিন্ন কোম্পানি এবং প্রতিষ্ঠান তাদের ডিজাইন প্রয়োজন মেটানোর জন্য
ফ্রিল্যান্সারদের নিয়োগ করে থাকে। বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশী চাহিদা হলো
গ্রাফিক ডিজাইনারদের ৷ সোসাল মিডিয়া মার্কেটিং সব কোম্পানীরাই করে থাকে ৷
গ্রাফিক ডিজাইনারদের কাজ হলো সোসাল মিডিয়ার পোষ্ট গুলি সুন্দর ভাবে তৈরি
করা ৷ এছড়া ই কমার্স ওয়েবসাইটের জন্য প্রডাক্টের ছবি তৈরি করতেও গ্রাফিক
ডিজাইনারদের ব্যাপক কদর রয়েছে ৷
৩. ওয়েব ডেভেলপমেন্ট:যারা
ওয়েব ডেভেলপমেন্টে দক্ষ, তারা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে বিভিন্ন ওয়েবসাইট
তৈরি এবং মেইনটেনেন্সের কাজ করতে পারে। ওয়েবসাইট তৈরি করা তেমন কঠিন কাজ
নয় ৷ ওয়েবসাইট তৈরির ল্যাংগুয়েজ গুলি ২-৩ বছরের মধ্যে রপ্ত করা যায় ৷
এ
ছড়া কিছু CMS আছে যেগুলি দিয়ে খুব সহযেই ওয়েবসাইট তৈরি করা যায় ৷ যেমন
ওয়ার্ড প্রেস দিয়ে খুব সহযেই ওয়েবসাইট তৈরি করা সম্ভব ৷ এবং ওয়ার্ড
প্রেস সেখা তেমন কোন কঠিন কাজ না ৷ আজকাল অনলাইনে টিউটোরিয়াল দেখেও আপনি
ওয়ার্ড প্রেস শিখতে পারবেন ৷
অনলাইন ব্যবসা:
১. ই-কমার্স:বাংলাদেশে
অনলাইনে ই কমার্স ব্যবসা করা খুবই সহয ৷ তেমন কোন লাইসেন্স প্রয়োজম হয়নি
বলে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ই-কমার্স সাইট, সোসাল নেটওয়ার্ক ওয়েবসাইট যেমন
ফেসবুক, ইউটিউবে পণ্য বিক্রি করা যেতে পারে। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন
হ্যান্ডমেড পণ্য, ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেট, গার্মেন্টস আইটেম বিক্রি করতে পারেন
৷
২. ড্রপশিপিং:ড্রপশিপিং ব্যবসা শুরু করা সহজ এবং কম মূলধনে
করা যায়। এতে শিক্ষার্থীরা তৃতীয় পক্ষের সরবরাহকারীর কাছ থেকে পণ্য ক্রয়
করে গ্রাহকদের কাছে সরাসরি পাঠিয়ে দেয়। বাংলাদেশে বসে অনেকেই এ্যামাজনে
ড্রপ সিপিং ব্যবসা করতে পারেন ৷ অনলাইনে খুজলে অনেক টিউটোরিয়াল পাবেন
যেগুলি দিয়ে শিখতে পারেন কিভাবে আপনি এ্যামাজনে ড্রপ শিপিং ব্যবসা করতে
পারেন ৷
টিউশনি:১. একাডেমিক টিউশন:যারা একাডেমিকভাবে
ভালো, তারা ছোট বা বড় শিক্ষার্থীদের জন্য টিউশন দিতে পারে। এটি একটি
প্রচলিত এবং লাভজনক ব্যবসা হতে পারে। নিজে টিউশন করার পাশাপাশি কোচিং
সেন্টার খুলেও ব্যবসা করা সম্ভব ৷ অনেকেই কোচিং সেন্টার খুল ভালো মানের আয়
করে থাকেন ৷ সেখানে ব্যাচ আকারে ২০-৩০ জন লোক একত্রে পড়িয়ে থাকেন ৷ নিজে
শিক্ষকতা করার পাশাপাশি বেতন ভুক্ত শিক্ষকও নিয়োগ দিয়ে থাকেন ৷
২. ভাষা শিক্ষা:যারা
একাধিক ভাষায় দক্ষ, তারা ভাষা শেখানোর ক্লাস নিতে পারে। বিভিন্ন অনলাইন
প্ল্যাটফর্মে ভাষা শিক্ষার সুযোগ রয়েছে। ইংরেজিতে দক্ষ হতে পারলে এটা
অনলাইনে শিখিয়ে আপনি অনেক ভালো পরিমাণে আয় করতে পারবেন ৷
এছাড়া
বাংলাদেশে আরবি শিক্ষার একটা ব্যপক চাহিদা আছে ৷ এখন অনেক প্রতিষ্ঠান আছে
যারা অনলাইনে আরবি শিক্ষা দিয়ে থাকেন ৷ এছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক
অনলাইন প্রতিষ্ঠান আছে যারা অনলাইনে শিক্ষাদানের কাজ করে থাকেন ৷
হস্তশিল্প ও কারুকার্য:১.হ্যান্ডমেড জুয়েলারি:শিক্ষার্থীরা
হ্যান্ডমেড জুয়েলারি তৈরি করে স্থানীয় বাজার বা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে
বিক্রি করতে পারে। এটা খুব সহয একটা কাজ ৷ অনেকেই বাংলাদেশে মাটির
জুয়েলারী, কাঠের জুয়েলারী, ফাইবারের জুয়েলারী তৈরি করে অনেকেই অনলাইনে
বা অফলাইনে বিক্রি করে থাকেন ৷
২.আর্ট এবং ক্রাফ্টস:যারা
শিল্পকর্মে পারদর্শী, তারা তাদের তৈরি আর্ট ও ক্রাফ্টস বিক্রি করতে পারে।
যেমন অপনি বিভিন্ন চিত্র কর্ম তৈরি করে সেটা অনলাইনে বিক্রি করতে পারেন ৷
তেমন কোন ইনভেস্টমেন্টের প্রয়োজন হবে না ৷ কিছু কালি আর আর্ট কাপড়ের
প্রযোজন হবে ৷
অন্যান্য ব্যবসা:১. ফটোগ্রাফি:যারা
ফটোগ্রাফিতে আগ্রহী, তারা ইভেন্ট ফটোগ্রাফি, পোর্ট্রেট ফটোগ্রাফি, বা স্টক
ফটোগ্রাফি করে আয় করতে পারে। বর্তমানে ফটোগ্রাফির ব্যপক চাহিদা আছে
মার্কেটে ৷ বিশেষ করে লোকাল অনুষ্ঠানগুলিতে ফটোগ্রাফির ব্যপক চাহিদা এবং
ভালো আয়ের সুযোগ রয়েছে।
২. ফিটনেস ট্রেনিং:যারা ফিটনেসে
আগ্রহী এবং জ্ঞান রাখে, তারা পার্সোনাল ট্রেনার হিসেবে কাজ করতে পারে।
বিভিন্ন জিম বা ফিটনেস সেন্টারে এই ধরনের ট্রেনারদের প্রয়োজন হয়।
এবার আমরা জানবো পড়ালেখার পাশাপাশি ব্যবসা করার চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে ৷
চ্যালেঞ্জসমূহ:১. সময় ব্যবস্থাপনা:পড়ালেখা
এবং ব্যবসা উভয়েই প্রচুর সময় এবং মনোযোগের প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের অনেক
সময়ই উভয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে কঠিন হয়ে যায়।
২. অর্থনৈতিক চাপ:একটি
ব্যবসা শুরু করতে এবং চালাতে প্রাথমিক মূলধনের প্রয়োজন হয়। অনেক
শিক্ষার্থীর জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়, বিশেষ করে যদি
তাদের কোন নির্দিষ্ট মুলধনের যোগান না থাকে। কারন অধিকাংশ সময় বাংলাদেশের
অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের বিস্বাস করতে চায়না ৷ এবং তারা চায়না পড়াশুনা
ছাড়া অন্য কিছু পাশাপাশি করুক ৷ ফলে শিক্ষার্থীদের জন্য মুলধন যোগাড়
করাটাই সবচেয়ে বড় টেনশনের কারন হয়ে থাকে ৷
৩. মানসিক চাপ:ব্যবসায়িক
চ্যালেঞ্জ এবং একাডেমিক চাপ একসঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক
প্রভাব ফেলতে পারে। দীর্ঘ সময় কাজ করা, ব্যবসায়িক ব্যর্থতা, এবং পরীক্ষার
চাপ সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য মানসিক চাপের কারণ হতে পারে।
৪. অভিজ্ঞতার অভাব:প্রথমবারের
মতো ব্যবসা শুরু করা শিক্ষার্থীদের অনেকেই অভিজ্ঞতার অভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত
নিতে ব্যর্থ হতে পারে। এটি তাদের ব্যবসার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। অধিকাংশ
সময় ভুল ইনভেস্টমেন্টের কারনে তারা মুলধন হারিয়ে ফেলে ৷
সম্ভাবনাসমূহ:
১. আর্থিক স্বনির্ভরতা:পড়ালেখার পাশাপাশি ব্যবসা করলে শিক্ষার্থীরা নিজের খরচ নিজেই বহন করতে পারে, যা তাদের আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হতে সাহায্য করে।
২. বাস্তব অভিজ্ঞতা:ব্যবসা
পরিচালনা করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বাস্তব জীবনের সমস্যা সমাধানের দক্ষতা
অর্জন করে, যা তাদের ভবিষ্যতের পেশাগত জীবনে সহায়ক হতে পারে।
৩. নেটওয়ার্কিং:ব্যবসা
করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে
পারে, যা তাদের নেটওয়ার্কিং দক্ষতা উন্নত করতে সাহায্য করে।
৪. নতুন দক্ষতা অর্জন:ব্যবসা
পরিচালনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নেতৃত্ব, সময় ব্যবস্থাপনা, এবং যোগাযোগ
দক্ষতা উন্নত করতে পারে। এই দক্ষতাগুলি তাদের পেশাগত জীবনে গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করে।
সর্বপরি পড়াশুনার পাশাপাশি ব্যবসার মাধ্যমে ছোট থেকে আমাদের একটা স্বনির্ভরতা গড়ে উঠে ৷ ফলে আমরা
উপসংহার:
পড়ালেখার
পাশাপাশি ব্যবসা পরিচালনা করা একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ, কিন্তু এটি
শিক্ষার্থীদের জন্য অসংখ্য সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে পারে। সঠিক
পরিকল্পনা, সময় ব্যবস্থাপনা, এবং সমর্থনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সফলভাবে
এই দুটি ক্ষেত্রেই উন্নতি করতে পারে।