গার্মেন্টস শিল্পে বায়িং হাউজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি
বায়ার এবং গার্মেন্টসের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন হিসাবে কাজ করে যা উভয়
পক্ষের জন্য সুবিধাজনক হিসেবে কাজ করে ৷ অনেক বায়িং হাউজ আছে যারা নিজেরা
উৎপাদন না করেও ব্যবসা পরিচালনা করেন । যদি আপনি একটি বায়িং হাউজ শুরু
করতে চান, তবে এই গাইডটি আপনার জন্য। এখানে আমরা বায়িং হাউজ শুরু করার
ধাপগুলি আলোচনা করব।
১. বাজার গবেষণা
প্রথম ধাপ:
বায়িং হাউজ করার প্রথম ধাপ হচ্ছে বাজার গবেষণা করা ৷ আপনি যে প্রোডাক্ট নিয়ে
বাজার জব করতে চাচ্ছেন বা বিদেশ বায়েদের কাছে বিক্রি করতে চাচ্ছেন সেই
প্রোডাক্ট নিয়ে আপনাকে অবশ্যই বাজার গবেষণা করতে হবে কোন কোন মার্কেটে
আপনি আপনার প্রোডাক্ট গুলো বিক্রি করতে চাচ্ছেন বা কোন দেশীয় মার্কেটগুলো
আপনি ধরতে চাচ্ছেন এটা নিয়ে আপনাকে অনেক বিশাল একটি গবেষণা করতে হবে ৷
কোন ধরনের পণ্য বাজারে সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে, কারা আপনার প্রতিযোগী,
এবং তাদের কৌশল কী তা বুঝে নিন।
যেমন আপনি যদি নিটওয়ার আইটেম
বিক্রি করার চিন্তা করেন তাহলে আপনাকে কিছু বেসিক আইটেম যেমন টি-শার্ট, সুইট শার্ট,হুডি, বক্সার এই টাইপের প্রোডাক্ট গুলোর কথা চিন্তা করতে হবে
এবং এই প্রোডাক্টগুলো আপনি কোন মার্কেটে বিক্রি করবেন সেগুলো আপনার গবেষণা
করতে হবে ৷ আপনি যদি এই প্রোডাক্টগুলো ইউরোপের কোন মার্কেটে বিক্রি করতে
চান তাহলে সেখানে অনেক হাই ফেব্রিক্স জিএসএম প্রয়োজন হবে ৷ আবার যদি আপনি
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেই বিক্রি করার চিন্তা করেন তাহলে অনেক ল জিএমএস
ফেব্রিক্স দিয়ে টি-শার্ট তৈরি করতে হবে ৷
গ্রাহক চাহিদা:
গ্রাহকরা
কী চাচ্ছেন এবং কোন দামে তা চাচ্ছেন তা জানা গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনাকে
সঠিকভাবে পণ্য নির্বাচন করতে এবং মূল্য নির্ধারণ করতে সাহায্য করবে। আপনি
যে দেশে পন্য রপ্তানি করতে চান সে দেশের ফ্যাশন সম্পর্কে ভালো করে জানুন ৷
যেমন রাশিয়া ঠান্ডা প্রধান দেশ ৷ রাশিয়াতে আপনি জ্যাকেট সেল করতে পারবেন
আনেক ভালো দামে ৷ আবার মধ্যপ্রাচ্য গরমের দেশ ৷ সেখানে রাশিয়ার মত জ্যাকেট
বিক্রি করতে পারবেন না ৷
২. ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরি
ব্যবসায়িক কাঠামোঃ
আপনার
ব্যবসায়িক কাঠামো কী হবে তা নির্ধারণ করুন। এটি একটি সলো প্রোপ্রাইটরশিপ,
পার্টনারশিপ, এলএলসি বা কর্পোরেশন হতে পারে। তবে বাংলাদেশে সাধারনত বায়িং
হাউজ দিতে তেমন কোন লাইসেন্সের প্রয়োজন হয় না ৷ আপনি চাইলে যে ফ্যাক্টরি
থেকে প্রডাক্ট তৈরি করবেন সেখান থেকেই রপ্তানি করতে পারবেন ৷ বাংলাদেশ
বায়িং হাউজ এসোসিয়েশন নামে একটা সংগঠন আছে ৷ সেখান থেকে সদস্যপদ নিয়েও
ব্যবসা শুরু করতে পারেন ৷ এ জন্য ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে ৷
বাজেট ও অর্থায়ন:
বায়িং
হাউজের প্রাথমিক বিনিয়োগ হলো একটা সুন্দর ডেকোরেশন করা অফিস ৷ এই অফিসটি
খুব সুন্দরভাবে সাজাতে হবে যাতে করে একজন বায়ার এসে আপনার এবিলিটি
সম্পর্কে খুব ভালো ধারনা করতে পারে ৷ এর পরের খরচ হলো মার্কেটিং করার কাজে ৷
যেহেতু বায়ার বাংলাদেশে থাকেনা, বিদেশ থেকে একজন বায়ার বাংলাদেশে নিয়ে
আসতে আপনাকে প্রচুর খরচ করতে হবে ৷ সম্ভাব্য যত রকমের মার্কেটিং করা সম্ভব
সবকিছুই করতে হবে ৷ অনেক সময় বিদেশের মেলাতে অংশগ্রহণ করতে পারেন ৷
এক্ষেত্রে ১০-২০ লাখ টাকাও খরচ হয়ে যেতে পারে ৷
সুতরাং এসব বিষয় মাথা রেখে সামনে আগাতে হবে ৷
কৌশলগত পরিকল্পনা:
আপনার
বায়িং হাউজের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী কৌশলগত পরিকল্পনা তৈরি করুন, যেখানে
লক্ষ্য, উদ্দশ্য এবং কৌশল নির্ধারণ করা থাকবে। বায়িং হাউজ একটি চলমান এবং
দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা ৷ হুট করেই বায়ার পেয়ে যাবেন, এটা ভাবা মোটেও
ঠিক নায় ৷ এখানে আপনাকে একজন পারফেক্ট বায়ার পেতে মাসের পর মাস অপেক্ষা
করতে হবে ৷ এই সময়টাতে আপনাকে লং টাইম খরচ করে যেতে হবে ৷ এই পরিমাণ
ইনভেস্টমেন্ট এবং ধৈয্য নিয়েই আপনাকে বায়িং হাউজের ব্যাবসায় নামতে হবে ৷
৩. আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন
লাইসেন্স ও রেজিস্ট্রেশন:
বাংলাদেশে
সাধারনত বায়িং হাউজ দিতে তেমন কোন লাইসেন্সের প্রয়োজন হয় না ৷ আপনি
চাইলে যে ফ্যাক্টরি থেকে প্রডাক্ট তৈরি করবেন সেখান থেকেই রপ্তানি করতে
পারবেন ৷ বাংলাদেশ বায়িং হাউজ এসোসিয়েশন নামে একটা সংগঠন আছে ৷ সেখান
থেকে সদস্যপদ নিয়েও ব্যবসা শুরু করতে পারেন ৷ এ জন্য ট্রেড লাইসেন্স নিতে
হবে ৷
ট্রেডমার্ক:
আপনি যদি কোন নিজস্ব ব্রান্ড নিয়ে কাজ করতে
চান তবে নিজে একটা ইউনিক নাম দিয়ে ট্রেড মার্ক করিয়ে নিতে পারেন ৷ অনেক
ফ্যাক্টরি আছেন যারা এসব নিয়ে চিন্তা করেন না ৷ বাংলাদেশ বিশ্বের সেরা
গার্মেন্টস উৎপাদনকারী হয়েও নিজস্ব কোন ব্রান্ডের প্রডাক্ট বিশ্ব বাজারে
তৈরি করতে পারেনি ৷ ছোট থেকে যদি সবাই এরকম চিন্তা করে একটা করে ব্রান্ড
রেডি করতে পারে তাহলে একসময় আমাদের বায়ার খুজতে হবে না ৷ নিজেরাই একটা
ব্রান্ড হতে পারবো ৷ ভিয়েতনামের অনেক ব্রান্ড এখন বিশ্বব্যাপী পপুলার ৷
৪. সাপ্লায়ার ও ম্যানুফ্যাকচারারদের সাথে সম্পর্ক তৈরি
উৎপাদনকারীর নির্বাচন:
যেহেতু
আপনি বাইং হাউজ সেহেতু আপনার ফ্যাক্টরি না থাকারই কথা সুতরাং আপনাকে
বিভিন্ন ফ্যাক্টরি থেকে প্রডাক্ট সোর্সি করতে হবে যে জন্য বিশ্বস্ত এবং
মানসম্পন্ন উৎপাদনকারীদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করুন। তাদের উৎপাদন ক্ষমতা,
গুণগত মান এবং ডেলিভারি সময় সম্পর্কে নিশ্চিত হন। প্রথমত আপনি তাদের কাছ
বিভিন্ন প্রডাক্টের স্যাম্পল কালেক্ট করুন ৷ তাদের থেকে বাল্ক ওর্ডারের
প্রাইস নেগোসিয়েশন করুন ৷ এতে করে যখনই আপনি কোন ওর্ডার পাবেন, সাথে সাথেই
বায়ারকে আপনি প্রাইস দিতে পারবেন ৷
৫. টিম গঠন ও প্রশিক্ষণ
বিশেষজ্ঞ দল:
একটি
দক্ষ এবং অভিজ্ঞ দল গঠন করুন। প্রোডাক্ট ম্যানেজার, কাস্টমার সার্ভিস
প্রতিনিধি, কোয়ালিটি কন্ট্রোল এক্সপার্ট ইত্যাদি পদে লোক নিয়োগ করুন।
বিশেষ করে আপনাকে মার্চেন্ডাইজার নিয়োগ করতে হবে কারণ তারা আপনার
প্রোডাক্ট এর কস্টিং করতে সাহায্য করবে এবং বায়ারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা
করবে ৷ বিভিন্ন ফ্যাক্টরি থেকে যখন আপনি প্রোডাক্ট তৈরি করতে যাবেন তখন
মার্চেন্ডাইজারদের একটি বিশাল ভূমিকা থাকবে কারণ তারা ফ্যাক্টরি এবং আপনার
প্রতিষ্ঠানের মাঝে একটি সেতুবন্ধ হিসেব কাজ করবে ৷ প্রডাক্টের কোয়ালিটি
ঠিক রাখা, সঠিক পরিমাণ প্রডাক্ট উৎপাদন করা ইত্যাদি বিষয়
মার্চেন্ডাইজাররাই তদারকি করে থাকে ৷
৬. কার্যকর মার্কেটিং ও ব্র্যান্ডিং
কোম্পানি পরিচিতি:
একটি
শক্তিশালী ব্র্যান্ড পরিচিতি গড়ে তুলুন। লোগো, ওয়েবসাইট, এবং সোশ্যাল
মিডিয়া প্রোফাইল তৈরি করুন। একটা সুন্দর করে সাজিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করুন
এবং ওয়েবসাইটের সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের কাজগুলো করে রাখবেন ৷ এতে
মোটামুটি প্রাথমিকভাবে ভালো একটা ইনভেস্টমেন্ট বাজেট রাখবেন ৷ যেমন এক থেকে
দুই লাখ টাকার মত খরচ করে একটা ওয়েবসাইট তৈরি করে সেই ওয়েবসাইটে সার্চ
ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন করিয়ে নেবেব ৷ বর্তমানে পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের
ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে আপনি অনেক ফ্রিল্যান্সার পাবেন যেমন
আপ ওয়ার্ক, ফাইবার ৷ মোটামুটি এই সমস্ত ওয়েবসাইট থেকে আপনি খুব কম খরচে
একজন ফ্রিল্যান্সার হায়ার করে নিতে পারবেন আপনার ওয়েবসাইটের ডিজাইন এবং
এসইও কমপ্লিট করার জন্য ৷ মনে রাখবেন শুধুমাত্র ওয়েবসাইট তৈরি করলেই হবেনা
আপনাকে অবশ্যই সেটার সঠিক সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন করিয়ে নিতে হবে না
হলে ওয়েবসাইট দিয়ে আপনি বায়ার পাওয়ার আশা করতে পারবেন না ৷ আর ঠিক মত
সারসিফিন অপটিমাইজেশন করিয়ে নিতে পারলে আপনি ওয়েবসাইট দিয়েও অনেক বায়ার
পেতে পারবেন ৷
মার্কেটিং কৌশল:
বিভিন্ন মার্কেটিং চ্যানেলের
মাধ্যমে আপনার বায়িং হাউজের প্রচার করুন। সোশ্যাল মিডিয়া, ইমেইল
মার্কেটিং, এবং অনলাইন বিজ্ঞাপন ব্যবহার করে গ্রাহকদের আকর্ষণ করুন। কিভাবে
আপনি অনলাইন থেকে বা অফলাইন থেকে আপনার বাইং হাউজের জন্য বায়ার পাবেন
সেটি নিয়ে আমাদের আরেকটি বিস্তারিত পোস্ট রয়েছে নিচের লিং থেকে সেটা
বিস্তারিত দেখে নিবেন ৷ এখানে আমি সরাসরি ইমেইল মার্কেটিং এই বিষয়টি নিয়ে
আলোচনা করলাম আশা করি এটি আপনারা এখান থেকে দেখে উপকৃত হবেন ৷
সরাসরি ইমেইল মার্কেটিং
ইমেইল লিস্ট সংগ্রহ:
বিভিন্ন
বিজনেস ডিরেক্টরি এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে বায়ারদের ইমেইল সংগ্রহ
করুন। তারপর তাদের কাছে আপনার পণ্যের তথ্যসহ ইমেইল পাঠান।
নিচে
কিছু বিজনেস ডিরেক্টরী এবং ডাটাবেজের ঠিকানা দেওয়া হল এগুলো থেকে আপনি
প্রাথমিকভাবে ফ্রিতে কিছু বায়ারের ইমেইল লিস্ট কালেক্ট করতে পারবেন তবে
বেশি পরিমাণে কালেক্ট করতে গেলে সেখানে আপনি পেইড অ্যাকাউন্ট খুলে নিতে হবে
৷
Business Directories and Databases:
LinkedIn Sales Navigator: Allows you to filter and find business owners based on various criteria.
ZoomInfo:Provides detailed information about businesses and their key contacts.
Hoover's: Offers business data, including contacts for many companies.
Dun & Bradstreet: Has a comprehensive database of business information.
UpLead: Offers access to business contacts and email lists.
Lead411: Provides targeted sales leads and email lists.
InfoUSA: Sells business contact lists that can be filtered by various criteria.
ইমেইল মার্কেটিং:
একটি
প্রফেশনাল ইমেইল টেমপ্লেট তৈরি করুন, যেখানে আপনার পণ্যের বিবরণ, ছবি এবং
আপনার কোম্পানির তথ্য থাকবে। এটি বায়ারদের আকর্ষণ করতে সাহায্য করবে।
একটা
বিষয় মনে রাখবেন সেটি হচ্ছে যে আপনি যদি নিজে হাজার হাজার বায়ারের কাছে
একত্রে ইমেইল পাঠাতে চান সেটি আপনার জন্য অনেক ডিফিকাল্ট হয়ে যাবে ৷ কারণ
আপনার নিজস্ব ইমেইল দিয়ে আপনি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ইমেইল পাঠাতে পারবেন
এবং একই ইমেইল যদি মানুষের কাছে বারবার ফরওয়ার্ড করে সে ক্ষেত্রে আপনার
নিজস্ব ইমেইল আইডি স্পাম হিসেবে ধরে নিতে পারে এবং সেই ক্ষেত্রে আপনার
সমস্ত ইমেইল বায়ারের স্পাম বক্সে গিয়ে জমা হবে এবং অনেক ক্ষেত্রে
বায়াররা ইমেইল গুলি ওপেন করে দেখেন না এজন্য আপনি প্রফেশনালদের থেকে অল্প
কিছু টাকা খরচ করে সার্ভিস নিতে পারেন ৷
বাল্ক ইমেইল সেন্ডিং
সার্ভিস নিতে হলে আপনি ফাইবার থেকে একজন ফ্রিল্যান্সার হায়ার করে নিতে
পারেন ৷ এক্ষেত্রে আপনাকে ৫০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা সর্বোচ্চ খরচ করা লাগতে
পারে ৷ এই টাকা দিয়ে তারা আপনাকে প্রতি দিন পাঁচ থেকে দশ হাজার ইমেল
আইডিতে মেইল করার ব্যবস্থা করে দেবে ৷ সুতরাং এটা আপনার জন্য বেস্ট হবে ৷
নিজে একটা একটা করে মেইল যদি আপনি পাঠাতে চান সেক্ষেত্রে আপনার প্রচুর সময়
লাগবে ৷
উপসংহার
বায়িং হাউজ শুরু করা একটি চ্যালেঞ্জিং
কিন্তু লাভজনক উদ্যোগ হতে পারে। সঠিক পরিকল্পনা, দক্ষ টিম, মানসম্পন্ন
সাপ্লায়ার, এবং কার্যকর মার্কেটিং কৌশল ব্যবহার করে আপনি সফল হতে পারেন।
উপরের ধাপগুলো অনুসরণ করে আপনি আপনার বায়িং হাউজকে একটি সফল ব্যবসায়
পরিণত করতে পারবেন।