চীন থেকে বাংলাদেশে পন্য আমদানী করার নিয়ম

চীন থেকে বাংলাদেশে পন্য আমদানী করার নিয়ম


Posted on: 2024-08-28 03:22:03 | Posted by: eibbuy.com
চীন থেকে বাংলাদেশে পন্য আমদানী করার নিয়ম

বাংলাদেশে চীনা পন্যের চাহিদা বেশি হওয়ায় চীন থেকে বাংলাদেশে পন্য আমদানী করে ব্যবসা করে অনেক লাভবান হওয়া যায়। চীনের পণ্য উৎপাদন খরচ কম হওয়ার পাশাপাশি এর মান উন্নত হওয়ায় বাংলাদেশী বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। চীন থেকে বাংলাদেশে পণ্য আমদানী করতে হলে সঠিক নিয়ম-কানুন এবং প্রক্রিয়া অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরি। এই নিবন্ধে আমরা চীন থেকে বাংলাদেশে পণ্য আমদানী করার নিয়ম, খরচ, সুবিধা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।

 

চীন থেকে বাংলাদেশে পণ্য আমদানী করার ধাপসমূহ

চীন থেকে বাংলাদেশে পণ্য আমদানী সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হলে নির্দিষ্ট কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হবে। নিচে এই ধাপগুলো বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হলো:

১. পণ্য বাছাই: বাজারের চাহিদা অনুযায়ী সঠিক পণ্য নির্বাচন

পণ্য বাছাই চীন থেকে পন্য আমদানীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলোর একটি। আপনি যে পণ্যটি আমদানি করতে চান, তা অবশ্যই বাজারের চাহিদা এবং আপনার ব্যবসার ধরন অনুযায়ী হতে হবে। পণ্যের মান, বৈচিত্র্য, এবং গ্রাহকদের পছন্দ অনুযায়ী পণ্যটি বাছাই করা জরুরি। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক্স, গৃহস্থালি সামগ্রী, এবং পোশাকের চাহিদা অনেক বেশি। তাই এই ধরণের চাহিদাসম্পন্ন পণ্য বাছাই করতে হবে।

 

২. বিক্রেতার সাথে যোগাযোগ: বিশ্বস্ত ও মানসম্পন্ন বিক্রেতার সাথে সম্পর্ক স্থাপন

সঠিক বিক্রেতা নির্বাচন করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীনে অনেক বিক্রেতা রয়েছে যারা বিভিন্ন ধরনের পণ্য সরবরাহ করে, কিন্তু সকলেই মানসম্পন্ন এবং বিশ্বস্ত নয়। Alibaba, Global Sources, এবং Made-in-China এর মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে বিক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ করতে সহজ হবে। বিক্রেতা নির্বাচন করার আগে তাদের পণ্য, সরবরাহের সময়, এবং কাস্টমার রিভিউ যাচাই করে নিন। অর্ডার কনফার্ম করার আগে স্যাম্পল এনে পন্য এবং পন্যের মান যাচাই করে নিবেন। স্যাম্পল এর দাম এবং কুরিয়ার খরচ কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট করে দিলে সাপ্লায়ার কুরিয়ারে করে স্যাম্পল পাঠিয়ে দিবে।

 

3. প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট প্রস্তুত করা

চীন থেকে পণ্য আমদানী করার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট প্রস্তুত করে নিতে হবে। এগুলো হলো:

 ইম্পোর্টার রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (IRC): বাংলাদেশে আমদানী করার জন্য এই সার্টিফিকেট থাকা আবশ্যক।

প্রফর্মা ইনভয়েস(PI): প্রোফর্মা ইনভয়েসে পণ্যের পরিমাণ, আনুমানিক মূল্য, শিপিং খরচ, শর্তাবলী, এবং অন্যান্য তথ্য উল্লেখ করা থাকে। এটি বিক্রেতা (সাপ্লায়ার) ক্রেতাকে (বায়ার) সরবরাহ করে।

লেটার অফ ক্রেডিট (LC): ব্যাংকের মাধ্যমে পণ্যের অর্থ পরিশোধের নিশ্চয়তা হিসেবে এই নথি ব্যবহার করা হয়।

৪. শিপিং ব্যবস্থা করা: সঠিক পদ্ধতি নির্বাচন

পণ্য পরিবহনের জন্য সঠিক শিপিং পদ্ধতি অর্থাৎ চীন থেকে কিভাবে বাংলাদেশে পন্য আনবেন তা ঠিক করে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পণ্য পরিবহনের জন্য সাধারণত দুইটি প্রধান পদ্ধতি রয়েছে: এয়ার কার্গো, সি কার্গো। প্রতিটি পদ্ধতির খরচ, সময়, এবং নিরাপত্তা ভিন্ন রকম।

 এয়ার কার্গো: দ্রুততম পদ্ধতি হলেও খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি। সাধারণত ৫-১০ দিনের মধ্যে পণ্য পৌঁছানো সম্ভব হয়। এই পদ্ধতি সাধারণত ছোট ও উচ্চমূল্যের পণ্য পরিবহনের জন্য উপযুক্ত।

সি কার্গো: খরচ কম, কিন্তু সময় লাগে ২৫-৩০ দিন। বড় ও ভারী পণ্য পরিবহনের জন্য এই পদ্ধতি উপযুক্ত।

৫. কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স

পণ্য বাংলাদেশের বন্দরে পৌঁছানোর পর কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে হবে। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সের সময় কাস্টমস ডিউটি, ট্যাক্স, এবং অন্যান্য ফি পরিশোধ করতে হয়। পণ্য আমদানির সমস্ত নথি এবং চালান উপস্থাপন করতে হবে। পণ্যটি কাস্টমস কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরীক্ষা ও যাচাইয়ের পর মুক্তি পায়। দ্রুত ক্লিয়ারেন্স নিশ্চিত করতে হলে সমস্ত নথি সঠিক এবং সম্পূর্ণ হওয়া জরুরি। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সের ক্ষেত্রে সি এন্ড এফ এজেন্টের সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে।

বিশ্বস্ত সিএন্ডএফ এজেন্ট পেতে ক্লিক করুন।

৬. এয়ারপোর্ট বা সি পোর্ট থেকে পণ্য সংগ্রহ

পণ্য কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সের পর, পরবর্তী ধাপ হলো এয়ারপোর্ট বা সি পোর্ট থেকে পণ্য সংগ্রহ করা। পণ্য সংগ্রহের জন্য আপনাকে এয়ারপোর্ট বা সি পোর্টে যেতে হবে। পোর্টের অফিসিয়াল কাস্টমস ক্লিয়ারিং এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করুন এবং তাদের নির্দেশনা অনুসরণ করুন। পোর্টের নির্দিষ্ট স্থানে পণ্য সংগ্রহের জন্য একটি নির্ধারিত সময়সীমা থাকতে পারে, তাই সময়মতো উপস্থিত থাকতে হবে। পণ্য সংগ্রহ করার পর আপনার গুদাম বা বিক্রয় কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে স্থানীয় পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে পাঠাতে হবে। আপনি ট্রাক, লরি বা অন্যান্য পরিবহন মাধ্যম ব্যবহার করতে পারেন।

 

চীন থেকে পণ্য আমদানির খরচ

চীন থেকে পণ্য আমদানির খরচ কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে।

 ১. পণ্যের মূল্য

পণ্যের মূল্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা পণ্যের ধরন এবং পরিমাণের উপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, ইলেকট্রনিক্সের ক্ষেত্রে পণ্যের মূল্য বেশি হতে পারে, যেখানে সাধারণ গৃহস্থালি পণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে কম।

 ২. শিপিং চার্জ

শিপিং খরচ নির্ভর করে শিপিং পদ্ধতি (এয়ার, সি), পণ্যের ওজন, এবং পরিবহন দূরত্বের উপর। সি কার্গো বা জাহাজে পন্য আনার খরচ সাধারণত এয়ার কার্গোর চেয়ে কম হয়, তবে এটি সময়সাপেক্ষ। উদাহরণস্বরূপ, সি কার্গোর মাধ্যমে ২০ ফুট কন্টেইনারে পণ্য পরিবহন করতে $১,৫০০-$২,৫০০ খরচ হতে পারে, যেখানে এয়ার কার্গোতে একই ওজনের পণ্য পরিবহন করতে $৫,০০০-এর বেশি খরচ হতে পারে।

৩. কাস্টমস ডিউটি

কাস্টমস ডিউটি পণ্যের মূল্য এবং প্রকারের উপর ভিত্তি করে ধার্য করা হয়। বাংলাদেশে সাধারণত আমদানীকৃত পণ্যের জন্য ১৫-২৫% কাস্টমস ডিউটি আরোপ করা হয়, তবে কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে এই হার বেশি হতে পারে।

 ৪. বীমা খরচ

শিপিংয়ের সময় পণ্যের নিরাপত্তার জন্য বীমা করতে হয়। বীমার খরচ সাধারণত পণ্যের মূল্যের ০.৫%-২% পর্যন্ত হতে পারে। বীমা করা হলে পরিবহনের সময় পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হলে আপনি ক্ষতিপূরণ পাবেন।

 ৫. স্থানীয় পরিবহন খরচ

বাংলাদেশের বন্দরে পৌঁছানোর পর পণ্য গুদাম বা বিক্রয় কেন্দ্র পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার জন্য স্থানীয় পরিবহন খরচও যুক্ত হবে। এই খরচটি নির্ভর করে দূরত্ব, পণ্যের পরিমাণ, এবং পরিবহনের মাধ্যমের উপর।

 

চীন থেকে পণ্য আমদানির খরচ পরিবর্তনশীল, কারণ বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম, শিপিং খরচ, এবং কাস্টমস ডিউটির হার পরিবর্তিত হতে পারে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক মুদ্রার বিনিময় হার, বিশ্বব্যাপী সাপ্লাই চেইনের পরিস্থিতি, এবং শুল্ক নীতি পরিবর্তনের ফলে খরচ বৃদ্ধি বা হ্রাস পেতে পারে। তাই আমদানির পরিকল্পনা করার সময় সবসময় বর্তমান বাজার পরিস্থিতি এবং খরচের একটি আপডেটেড ধারণা রাখা জরুরি।

চীন থেকে পণ্য আমদানির জন্য সাপ্লায়ার খুঁজে পাওয়ার উপায়

চীন থেকে পণ্য আমদানি করার জন্য উপযুক্ত সাপ্লায়ার খুঁজে পাওয়ার জন্য বিভিন্ন উপায় অনুসরন করতে পারেন।

 ১. অনলাইন মার্কেটপ্লেস ব্যবহার

অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলো যেমন Alibaba, Global Sources, এবং Made-in-China ব্যবহার করে চীনা সাপ্লায়ারদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন।  এই প্ল্যাটফর্মগুলিতে আপনি বিভিন্ন ধরনের পণ্য খুঁজে পাওয়ার পাশাপাশি সাপ্লায়ারদের সাথে সরাসরি আলোচনা করে দাম এবং অন্যান্য শর্তাবলী নির্ধারণ করে নিতে  পারেন। অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলির মাধ্যমে আপনি সাপ্লায়ারদের প্রোফাইল, রেটিং, এবং কাস্টমার রিভিউ দেখতে পারবেন।

১ লাখ টাকার মধ্যে বাংলাদেশে শুরু করার মতো ৫টি লাভজনক ব্যবসা

 ২. চীনে ভ্রমণ করা

চীন থেকে পণ্য আমদানি করার জন্য সরাসরি চীনে যেয়ে পন্য ক্রয় করতে পারেন। এটি আপনাকে স্থানীয় বাজারের অবস্থা, উৎপাদন প্রক্রিয়া, এবং পণ্যের গুণমান সরাসরি পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ করে দিবে। বিভিন্ন ট্রেড শো, প্রদর্শনী, এবং কারখানা সফরের মাধ্যমে আপনি সরাসরি সাপ্লায়ারদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

 ৩. এজেন্ট নিয়োগ করা

চীনে অবস্থানরত কাউকে স্থানীয় এজেন্ট বা ব্রোকার হিসেবে নিয়োগ করে নিতে পারেন। স্থানীয় এজেন্টরা চীনের বাজারে অভিজ্ঞ এবং তারা আপনাকে সঠিক সাপ্লায়ার খুঁজে পেতে, মূল্য নিয়ে আলোচনা করতে, এবং আমদানির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সহায়তা করতে পারে। এজেন্টরা সাধারণত স্থানীয় ভাষা জানেন এবং স্থানীয় সাপ্লায়ারদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে সক্ষম। এছাড়া, তারা শিপিং, কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স, এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কাজগুলো করতে সাহায্য করতে পারবে।

বায়িং হাউজ কিভাবে দিবেনঃ সম্পূর্ন গাইডলাইন



চীন থেকে বাংলাদেশে পণ্য আমদানী করে ব্যবসা করা চ্যালেঞ্জিং হলেও লাভজনক প্রক্রিয়া। সঠিক পণ্য নির্বাচন, বিশ্বস্ত সাপ্লায়ার খুঁজে পাওয়া, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট প্রস্তুতি, এবং কার্যকর শিপিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করা আপনার সফলতা অর্জনের মূল চাবিকাঠি।

চীন থেকে বাংলাদেশে পন্য আমদানী বা যেকোনো দেশ থেকে পন্য আমদানী করা নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন।

ধন্যবাদ।


Related Post

জনপ্রিয় পণ্য

সাম্প্রতিক পণ্য

Leave a Comment:
alibaba & Import Export expert

সি এন্ড এফ, আমদানি, আলিবাবা নিয়ে যেকোনো সমস্যায় আমাকে ফেসবুকে মেসেজ করুন

এখানে ক্লিক করুন
2017 © 2024 eibbuy. All Rights Reserved.
Developed By Fluttertune react js next js