ব্যবসা করতে গেলে সর্ব প্রথম যে কাগজপত্রের নাম আসে সেটা
হল ট্রেড লাইসেন্স। এক কথায় ব্যবসার জন্য
অনুমোদন পত্র হল ট্রেড লাইসেন্স। ট্রেড
লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করাটা আইনের দৃষ্টিতে দন্ডনীয় অপরাধ।
ট্রেড
লাইসেন্স কি? কেন ট্রেড লাইসেন্স করবেন? কিভাবে ট্রেড লাইসেন্স
করবেন? ট্রেড লাইসেন্সের বিভিন্ন নিয়ম কানুন এবং ট্রেড লাইসেন্সের খুটিনাটি বিভিন্ন
বিষয় নিয়ে আজ আলোচনা করব।
শুধুমাত্র আইনি জটিলতা এড়ানোর জন্য ট্রেড লাইসেন্স করতে
হবে বিষয়টা এমন না। ব্যবসা করতে গেলে ট্রেড লাইসেন্স এর নানা রকমের দরকার পরে। যেমন
আপনি যদি পার্টনারশিপে ব্যবসা করেন তাহলে চুক্তিপত্র করতে দরকার হবে ট্রেড লাইসেন্স।
ব্যবসার জন্য ব্যাংক লোন নিতে গেলে দরকার হবে ট্রেড লাইসেন্স। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের
নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে দরকার হবে ট্রেড লাইসেন্স। ব্যবসার কোনো কাজে বিদেশ
যাবেন? দরকার হবে ট্রেড লাইসেন্স। সহজ কথায় ব্যবসার প্রায় প্রতিটি পদক্ষেপে দরকার হবে
ট্রেড লাইসেন্সের। ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করতে গেলে আপনার নামে মামলা হয়ে জেল
জরিমানা পর্যন্ত হতে পারে। বৈধ যেকোনো ব্যবসার জন্য ট্রেড লাইসেন্স দরকার হবে। তবে
বাংলাদেশে অনেক ব্যবসায়ীরা ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াই ব্যবসা করে আসছেন। এটা একদম উচিত নয়।
ট্রেড লাইসেন্স কিভাবে করবেন?
ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি কর্পোরশন অফিস বা পৌরসভা অফিসে গিয়ে
আপনি ট্রেড লাইসেন্স করবেন। ট্রেড লাইসেন্স করতে ট্রেড লাইসেন্স ফি বাবদ ২০০ টাকা থেকে
২৬হাজার টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে। ট্রেড লাইসেন্স ফি কত টাকা হবে সেটা মূলত নির্ভর
করে কোন এলাকায় আপনি কোন ধরনের ব্যবসা করতে চান তার উপর। বিভিন্ন ব্যবসার জন্য ট্রেড
লাইসেন্স ফি ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। গ্রাম অঞ্চলে ট্রেড লাইসেন্স করতে কম টাকা শহরাঞ্চলে
বেশি টাকা লাগে।
ট্রেড লাইসেন্স করতে গেলে মূল ফি এর সাথে কিছু অতিরিক্ত
টাকা দিতে হয়। সেগুলো হল ভ্যাট (১৫%), লাইসেন্স বই মূল্য এবং সাইনবোর্ড চার্জ। লাইসেন্স
বইয়ের মুল্য সাধারনত ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা হয়ে থাকে। সাধারনত ট্রেড লাইসেন্স করতে
সব মিলিয়ে ৪৫০০ থেকে ৮০০০ টাকার মত লাগে (বেশিরভাগ
ক্ষেত্রে)।
ট্রেড
লাইসেন্স করতে কি কি লাগে?
১.
নির্দিষ্ট
ফরম পূরন করে জমা দিতে হয়।
২.
যে যায়গায় আপনার দোকান, অফিস, কারখানা বা কার্যালয় থাকবে সেই জায়গা যদি আপনার নিজের
হয় তাহলে ঐ জায়গার হোল্ডিং ট্যাক্সের কাগজপত্র। দোকান হলে ইউটিলিটি বিল লাগবে। আর যদি
ঐ জায়গা ভাড়ার হয় তাহলে ৩০০ টাকার একটি স্ট্যাম্পে মালিকের সাথে ভাড়ার চুক্তিপত্রের
সত্যায়িত ফটোকপি লাগবে।
৩.
আবেদনকারীর
৩-৪ কপি ছবি। ছবি অবশ্যই পাসপোর্ট সাইজের হতে হবে।
৪.
ব্যবসায়
যদি কোনো অংশীদার বা পার্টনার থাকে তাহলে ৩০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অংশীদারত্বের
চুক্তিনামা জমা দিতে হবে।
৫.
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য উপরের সবকিছুর সাথে অতিরিক্ত যেসব জিনিসের দরকার হবে-
-
পরিবেশ
সংক্রান্ত অনাপত্তি পত্র।
-
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবস্থান চিহ্নিত ম্যাপ।
-
১ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
-
ফায়ার
সার্ভিসের অনাপত্তি পত্র।
-
ডি সি সির নিয়ম কানুন মেনে চলা সংক্রান্ত অঙ্গিকারনামা। সেটি ১৫০ টাকার নির্দিষ্ট নন
জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে হবে।
৬.
ফ্যাক্টরির
জন্য অতিরিক্ত যা লাগবে-
-
পরিবেশ সংক্রান্ত অনাপত্তি পত্র।
-
ফ্যাক্টরির অবস্থান চিহ্নিত ম্যাপ।
-
আশেপাশের
জমি বা ভবন মালিকের অনাপত্তিপত্র।
- ফায়ার সারভিসের
অনাপত্তি পত্র।
৭.
ক্লিনিক
বা হাসপাতাল হলে স্বাস্থ অধিদপ্তরের অনুমতিপত্র।
সাধারনত ট্রেড লাইসেন্স করতে এইসব জিনিসের দরকার হবে। আরও
কিছুর দরকার লাগতে পারে তবে সেটা ব্যবসার ধরনের উপর নির্ভরশীল।
পুরুষ মহিলা যে কেউ ট্রেড লাইসেন্স এর আবেদন করতে পারবে।
তবে তার বয়স ১৮ বছর বা তারও অধিক হতে হবে। আর এক ব্যক্তি একাধিক ট্রেড লাইসেন্স করতে
পারবে। এক ব্যক্তি একাধিক ঠিকানা ব্যবহার করে ট্রেড লাইসেন্স করতে পারবে। এই ট্রেড
লাইসেন্স হস্তান্তর যোগ্য নয়। একটি ট্রেড লাইসেন্স একাধিক ব্যক্তি ব্যবহার করতে পারবে
না।
এবার আসি ট্রেড লাইসেন্সের মেয়াদ নিয়ে। একটি ট্রেড লাইসেন্সের মেয়াদ ১ বছর হয়। ১ বছর পর ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়। ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে কিছু টাকা নবায়ন ফি হিসেবে দিতে হয়। পুরোনো ট্রেড লাইসেন্স ব্যাংক লোন নিতে দরকার পরতে পারে। তাই প্রতি বছর ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করা উচিত।
ব্যবসার জন্য ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া টি আই এন (TIN) সার্টিফিকেট, ভ্যাট সার্টিফিকেট লাগবে। এগুলোর সম্পর্কেও এই ওয়েবসাইটে বিস্তারিত আলোচনা করা আছে। পড়ে আসতে পাড়েন।
শেয়ার ব্যবসা কি? কিভাবে করবেন?
আজকের আলোচনা নিয়ে কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট
করবেন।
ধন্যবাদ।