আমরা শেয়ার ব্যবসার কথা প্রায়ই শুনে থাকি। কিন্তু শেয়ার ব্যবসা জিনিসটা কি? কেন আপনার শেয়ার ব্যবসা করা উচিত? কিভাবে শেয়ার ব্যবসা করবেন? শুরুটা করবেন কিভাবে? কিভাবে শেয়ার ব্যবসায় সফল ভাবে টিকে থাকবেন? বর্তমানে শেয়ার বাজারের অবস্থা কিরকম? আজ আমরা এইসব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আলোচনা করব। পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার অনুরোধ রইল।
শেয়ার
ব্যবসা কি?
কোনো কোম্পানি মূলধন
বৃদ্ধির জন্য তাদের কোম্পানির একটা অংশকে ছোট ছোট ভাগ করে জনসাধারনের কাছে বিক্রি করে।
এই ছোট ছোট ভাগগুলোকে শেয়ার বলে। এই শেয়ার
নিয়ে যেসব ব্যবসা হয় তাকেই শেয়ার ব্যবসা বলে।
একটু সহজ ভাষায় বলি… ধরুন আপনার একটি প্রতিষ্ঠান আছে যেটি বিভিন্ন ধরনের চকলেট, চিপস, বিস্কুট তৈরি করে। এখন আপনার প্রতিষ্ঠানের মুল্য ৫০ লাখ টাকা। আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানটি আরও বড় করতে চান। আরও টাকা দরকার। এই বেশি
টাকা পেতে আরও বিনিয়োগকারীর দরকার হবে যারা আপনার প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করবে। তাদের
বিনিয়োগ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের মালিকানা্র একটা অংশ তাদেরকে দিতে হবে। অর্থাৎ আপনার
প্রতিষ্ঠানের শেয়ার তারা কিনে নিল। প্রতি বছর আপনার যে লাভ হবে তারা সে লাভের অংশ পাবে।
শেয়ার ব্যবসাটাও এরকমই। তবে কিছু ব্যতিক্রমী নিয়ম নিতি আছে।
বিভিন্ন কোম্পানি তাদের
পূজি বাড়ানোর জন্য শেয়ার বাজারে আসে। তারা তাদের কোম্পানির একটা অংশ নিজ মালিকানায়
রেখে বাকিটা ছোট ছোট ভাগ করে শেয়ার বাজারে ছেড়ে দেয়। উদাহরনস্বরুপ মনে করুন আপনার সেই
চকলেট, চিপসের কোম্পানির ৫০% নিজেদের মালিকানায় রেখে বাকিটা শেয়ার বাজারে ছাড়লেন। অর্থাৎ
২৫ লাখ টাকা মূল্যের শেয়ার আপনি বিক্রি করবেন। এই ২৫ লাখ টাকাকে ১০০ টাকা করে ভাগ করে
২৫০০০ টি ভাগ করবেন। অর্থাৎ ২৫০০০টি শেয়ার এবং প্রত্যেকটি শেয়ারের মুল্য ১০০ টাকা করে।
এবার সাধারন মানুষ আপনার কোম্পানির শেয়ার কিনবে কেউ একটি কেউ ১০টি। যারা কোনো কোম্পানির
শেয়ার কিনে তাদেরকে ঐ কোম্পানির শেয়ার হোল্ডার
বলে।
কিন্তু সাধারন মানুষ আপনার কোম্পানির শেয়ার কিনে লাভ করবে কিভাবে?
কোম্পানিগুলো তাদের লভ্যাংশের
একটা অংশ তাদের শেয়ার হোল্ডারদেরকে দেয়। তাছাড়া আরও উপায় আছে। নিজের শেয়ার আরেকজনের
কাছে ক্রয় মুল্য থেকে বেশিদামে বিক্রি করে দেওয়া। ধরুন আপনার আপনি একটি শেয়ার কিনেছেন
তার মূল্য ১০০ টাকা। দুই মাস পর ঐ শেয়ারটি আপনি ১২০ টাকায় বিক্রি করলেন। এভাবে লাভ
করা যায়। আরও বেশ কয়েকটি উপায়ে শেয়ার বাজারে লাভবান হওয়া যায়। সেগুলো নিয়েও আলোচনা
করব।
শেয়ার বাজারে শেয়ারের
দাম কখনো কমে আবার কখনও বাড়ে। আপনি যে শেয়ার ১০০টাকা দিয়ে কিনেছেন সেটা কয়েকদিন পর
১২০টাকাও হতে পারে আবার ৭০ টাকাও হতে পারে। দাম কমে যাওয়ার পর যদি আপনি শেয়ার বিক্রি
করেন তাহলে আপনার লোকসান হবে। একইভাবে দাম বাড়ার পর যদি আপনি শেয়ার বিক্রি করেন তাহলে
আপনার লাভ হবে। তবে এইসব দাম বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করে।
কোম্পানির আর্থিক অবস্থা, তাদের বাজার দখল, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা, অন্যান্য বিজনেস এডভান্টেজ
ইত্যাদি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে শেয়ারের দাম বাড়ে কমে।
কেন
আপনার শেয়ার ব্যবসা করা উচিত?
শেয়ার ব্যবসা খুব ঝুকিপূর্ন
একটি ব্যবসা কিন্তু তারপরেও আপনার এ ব্যবসাটি করা উচিত। এ ব্যবসাটি আপনি পার্টটাইম ব্যবসা
হিসেবে করতে পারেন। অনেককেই বলতে শুনবেন যে শেয়ার ব্যবসা নাকি জুয়ার মতো। তাদের কথায়
কান দিবেন না। এই ব্যবসায় নাকি যাদের লাভ হয় তাদের সবসময় লাভই হয়, আর যাদের ভাগ্য খারাপ
তারা নাকি কখনও শেয়ার ব্যবসায় লাভবান হতে পারে না। এসব কথা যারা অলস অথবা শেয়ার ব্যবসা
বুঝেনা তারাই বলে। শেয়ার ব্যবসা করতে হলে আপনাকে ভাল করে পড়াশুনা করতে হবে। ধৈর্যের
সাথে শেয়ার ব্যবসা করতে হবে। এ ব্যবসায় যত লেগে থাকা হবে অভিজ্ঞতা তত বাড়বে। আর অভিজ্ঞতা
বাড়লে সম্ভাবনা বাড়বে।
আবার আপনি একমাত্র পেশা
হিসেবে এই শেয়ার ব্যবসা করতে যাবেন না। আপনার পুজির পুরোটা শেয়ার ব্যবসায় বিনিয়োগ করবেন না। এতে বিপদে পড়বেন। এরকম অনেক লোক আছেন যারা জমি সম্পত্তি বিক্রি করে শেয়ার
ব্যবসা শুরু করেন। পড়ে রাস্তায় বসেছেন।
শেয়ার ব্যবসা শুরু করার
সবচেয়ে উত্তম সময় হল ছাত্রজীবন। অনার্স প্রথম বা ২য় বর্ষ থেকেই এই ব্যবসায় ধীরে ধীরে
জড়ানো উচিত।
শেয়ার
ব্যবসা শুরু করবেন কিভাবে?
১৮ বছরের অধিক যে কেউ
শেয়ার ব্যবসা করতে পারে। শেয়ার ব্যবসা শুরু করতে আপনার একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকা
লাগবে। তারপর ঐ ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিপরিতে একটি বিও অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। একটি বিও
অ্যাকাউন্ট খুলতে ৪৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা লাগবে। বিও অ্যাকাউন্ট খোলার পর ব্রোকার হাউজের মাধ্যমে আপনি শেয়ার কেনাবেচা
করতে পারবেন। শেয়ার বাজারে ব্রোকার হাউজ ব্যাংকের মত কাজ করে। সাধারনত ব্যাংক জনগনকে
নানা রকম সেবা যেমন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, টাকা সঞ্চয়, টাকা আদান প্রদান ইত্যাদি
সেবা দিয়ে থাকে ঠিক তেমনি ভাবে শেয়ার ব্যবসায়ীদের বিও অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া, শেয়ার
কেনা বেচার জন্য টাকা জমা নেওয়া ইত্যাদি সেবা প্রদান করে থাকে ব্রোকার হাউজ। ব্যাংক
যেমন মানুষকে লোন দেয় তেমনি ভাবে ব্রোকার হাউজও বিনিয়োগকারীদের ঋন দিয়ে থাকে। যেটাকে
মার্জিন লোন বলে।
শেয়ার ব্যবসা শুরু করার
পর আপনি দুই ধরনের শেয়ার পাবেন। একটি হল প্রাইমারি শেয়ার আর আরেকটি সেকেন্ডারি শেয়ার।
কোনো কোম্পানি যখন নতুন শেয়ার বাজারে আসে তখন তারা প্রথম যে শেয়ার বিক্রি করে সেগুলো
প্রাইমারি শেয়ার। আর কোনো শেয়ার একবার বিক্রি হয়ে গেলে সেটা সেকেন্ডারি শেয়ার হয়ে যায়।
প্রাইমারি সেকেন্ডারি
ছাড়াও শেয়ারের আরোও প্রকারভেদ আছে। যেমন…
A ক্যাটাগরির
শেয়ার। যেসব কোম্পানি প্রতি বছর সাধারন সভায় ১০% বা তারও বেশি লভ্যাংশ ঘোষনা করে তাদের
শেয়ারকে A ক্যাটাগরির শেয়ার বলে। এই ক্যাটাগরির
শেয়ারের চাহিদা বেশি থাকে ফলে এর দামও উর্ধমূখী থাকে।
B ক্যাটাগরির
শেয়ার। যেসব কোম্পানি প্রতি বছর সাধারন সভায় ১০% এর কম লভ্যাংশ ঘোষনা করে তাদের শেয়ারকে B ক্যাটাগরির শেয়ার বলে। এই ধরনের শেয়ারের
দামও বেশি থাকে তবে A ক্যাটাগরি থেকে কম।
G ক্যাটাগরির
শেয়ার। যেসব কোম্পানি উৎপাদনে আসার আগেই শেয়ার বাজারে যুক্ত হয় তাদের শেয়ারকে ক্যাটাগরির
শেয়ার বলে।
N ক্যাটাগরির
শেয়ার। যেসব কোম্পানি শেয়ার বাজারে নতুন প্রবেশ করে তাদের শেয়ার হল N ক্যাটাগরির শেয়ার। এরা শেয়ার বাজারে নতুন
থাকে বিধায় এদের বার্ষিক লভ্যাংশ থাকে না।
Z ক্যাটাগরির শেয়ার। যেসব কোম্পানি প্রতি বছর বার্ষিক সাধারন সভায় বসে না, কোনো লভ্যাংশ ঘোষনা করে না এবং ন্যুনতম ৬ মাস ব্যবসায়িক উৎপাদনকার্য বন্ধ তাদের শেয়ারকে Z ক্যাটাগরির শেয়ার বলে।
শেয়ার ব্যবসায় ভাল ভাবে
টিকে থাকতে হলে আপনা্র শেয়ার বাজার সম্পর্কে ভাল ধারনা থাকা লাগবে। তাই আপনাকে এসব
নিয়ে ভাল করে পড়াশুনা করে নিতে হবে। ব্যবসা শুরু করার পর চোক কান খোলা রেখে পদক্ষেপ
নিবেন।
একটা গভেষনা অনুযায়ী শেয়ার বাজারে ৫০% ব্যবসায়ী বাজার সম্পর্কে তেমন ধারনা রাখেনা। ৪০% কিছু কিছু জানে। আর বাকি ১০% ভাল করে খোজ খবর রাখে এবং তারাই শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রন করে।
ট্রেড লাইসেন্স কি, কেন, কিভাবে করবেন?
আজ আমরা শেয়ার ব্যবসা
নিয়ে একটি প্রাথমিক ধারনা শেয়ার করলাম। শেয়ার ব্যবসার আরোও খুটিনাটি নিয়ে সামনে আলোচনা
করা হবে।
আজকের আলোচনা নিয়ে কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন।
ধন্যবাদ।