ইলন মাস্কের উঠে আসার গল্প

ইলন মাস্কের উঠে আসার গল্প


Posted on: 2021-07-06 21:20:56 | Posted by: eibbuy.com
ইলন মাস্কের উঠে আসার গল্প

 

ইলন মাস্কের নাম শুনেননি এমন মানুষের সংখা খুবই কম। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে সফল মানুষদের মধ্যে তিনি একজন। ফোর্বসের তালিকা অনুযায়ী ইলন মাস্ক ধনীদের তালিকায় বিশ্বে ২য়। আজ আমরা ইলন মাস্ক এবং ইলন মাস্কের উঠে আসার গল্প নিয়ে আলোচনা করব।

 

ইলন মাস্ক জন্ম গ্রহন করেছিলেন ১৯৭১ সালের ২৮শে জুন দক্ষিন আফ্রিকার প্রিটোরিয়ায়। ইলন মাস্কের পূর্ণ নাম ইলন রিভ মাস্ক। ইলন মাস্কের মা ‘মেই মাস্ক’ কানাডায় জন্মগ্রহন করেছিলেন। কিন্তু তার বেড়ে উঠা হয় দক্ষিন আফ্রিকায়। এবং ইলন মাস্কের বাবা একজন দক্ষিন আফ্রিকান প্রকৌশলী। ১৯৮০ সালে ইলন মাস্কের বাবা ও মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এর ২ বছর পর ইলন মাস্ক তার বাবার সাথে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও পরে এই সিদ্ধান্তকে সে একটি ভুল সিদ্ধান্ত হিসেবে আখ্যায়িত করে। ইলন মাস্ক তার বেশিরভাগ সময় তার বাবার সাথে দক্ষিন আফ্রিকার পিটোরিয়ায় থাকতেন। তবে ইলন মাস্কের সাথে তার বাবার খুব একটা ভালো সম্পর্ক ছিল না। ইলন মাস্কের একটি ভাই ও একটি বোন আছে।

 

১২ বছর বয়সে ইলন মাস্ক একটি ভিডিও গেম তৈরি করে এবং পিসি এন্ড অফিস টেকনোলজি ম্যাগাজিনের কাছে ৫০০ ডলারের বিনিময়ে বিক্রি করেছিলেন। সেই থেকে শুরু। তার শিক্ষাজীবনের শুরুটা হয় প্রিটোরিয়া বয়েজ স্কুলে। তারপর তিনি কুইন্স ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন কিন্তু সেখানে বেশিদিন থাকেননি। কানাডা হয়ে আমেরিকায় চলে যান। তার কানাডায় আসার মূল উদ্দেশ্য ছিল আমেরিকায় আসা। কারন তখনকার সময়ে কানাডা দিয়ে আমেরিকায় ঢুকা সহজ ছিল। তারপর তিনি ১৯৯২ সালে পেনসিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। এবং সেখান থেকে পদার্থ বিজ্ঞানের উপর স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তারপর তিনি হেয়ারটন স্কুল থেকে অর্থনিতিতে আবার স্নাতক ডিগ্রি নেন। তারপর জ্বালানি পদার্থ বিজ্ঞান নিয়ে আমেরিকার বিখ্যাত স্টানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি ডিগ্রির জন্য এডমিট হলেও মাত্র ২ দিন ক্লাস করে কাজে চলে আসেন।

 

তারপর ১৯৯৫ সালে ইলন মাস্ক তার ছোট ভাই কিম্বল এবং গ্রেগ কৌরি ইনভেস্টরদের সাথে zip2 নামক একটি অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। অবশ্য zip2 প্রতিষ্ঠার আগে কয়েক জায়গায় চাকুরির জন্য আবেদন করেছিলেন এবং প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন। ১৯৯৯ সালে ৩০৭ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে zip2 বিক্রি করে দেন। তারপর এই মুলধনকে পুজি করে প্রতিষ্ঠা করেন x.com। এই x.com পরে paypal এর সাথে মিলে যায়। তাই অনেকেই ইলন মাস্ককে পেপাল এর সহ প্রতিষ্ঠাতা বলে থাকেন।

x.com মূলত অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম। এদিকে paypal ও একই ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান ছিল। কিন্তু বাজারে x.com এর চেয়ে paypal বেশ এগিয়ে ছিল। এক হওয়ার আগে বাজারে এদের মধ্যে বেশ প্রতিদ্ধন্দিতা ছিল। পরে ebay এর কাছে ২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরে বিনিময়ে paypal বিক্রিত হয়ে যায়।

ইলন মাস্ক ২০০২ সালের মে মাসে প্রতিষ্ঠা করেন spacex। ইলন মাস্কের এই প্রতিষ্ঠান এখনও সফলতার সাথে এগিয়ে যাচ্ছে। এটি মূলত মহাকাশে কোনো স্যাটেলাইট প্রেরনে কাজ করে। এমনকি বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান spacex প্রেরন করেছিল। মহাকাশে কোনো কিছু পাঠাতে যে খরচ লাগে তা অনেকটা কমিয়ে আনতে সক্ষম হয় spacex। বর্তমানে তারা একই রকেট কিভাবে বারবার ব্যবহার করা যায় সেটার ট্রায়াল পর্যায়ে আছে।

 

বর্তমানে ইলন মাস্ক বিখ্যাত গাড়ি নির্মানকারী প্রতিষ্ঠান টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে আছেন। টেসলার যাত্রা শুরু হয় ২০০৩ সালে। ২০০৪ সালে ইলন মাস্ক টেসলায় বিনিয়োগ করেন এবং পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন। টেসলার বিখ্যাত হওয়ার পিছনে ইলেকট্রিক কারের ভুমিকা সবচেয়ে বেশি। মাস্কের দূরদর্শিতাই মূলত টেসলাকে সফলতার পর্যায়ে নিয়ে যায়।

তারপর তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন সোলারসিটি। এটা মূলত সৌর পদ্ধতিতে পরিবেশবান্ধব উপায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে থাকে। বিদ্যুতের চাহিদার বড় একটি অংশ সোলারসিটি পূরন করে থাকে।

তার আরেকটি সম্ভাবনাময় প্রজেক্টের নাম হল হাইপারলুপ। হাইপারলুপ পদ্ধতিতে মানুষের যাতায়াত আরও সহজ হবে। হাইপারলুপ পদ্ধতিতে মূলত একটি বায়ুশুন্য নলের মধ্য দিয়ে একটি যানবাহন চলবে। যার গতি অনেক বেশি থাকবে। কোনো পৃষ্ট এবং বায়ুর সংস্পর্শে থাকবেনা ফলে ঘর্ষন কম থাকবে এবং কম জালানির প্রয়োজন হবে। তাই এটি পরিবেশবান্ধব। এটি পরিপূর্ন ভাবে এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। 

ইলন মাস্কের আরেকটি প্রতিষ্ঠানের কথা না বললেই নয়। সেটা হল নিউরোলিঙ্ক। নিউরোটেকনোলজি নিয়ে কাজ করার লক্ষে ২০১৬ সালে ইলন মাস্ক নিউরোলিঙ্কের সহ-প্রতিষ্ঠা করেন। এটি মূলত মানব মস্তিষ্কের সাথে মেশিনের সম্পর্ককে আরও উন্নত করবে। যা কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন প্রযুক্তিতে বড় পরিবর্তন আনবে।

 

একটা বিষয় খেয়াল করবেন যে ইলন মাস্কের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান পরিবেশ বান্ধব। টেসলা, স্পেসএক্স, সোলারসিটি, হাইপারলুপ এসবই পরিবেশ বান্ধব প্রতিষ্ঠান। উল্লেখিত প্রতিষ্ঠান ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সাথে তিনি জড়িয়ে আছেন। তিনি বর্তমানে মঙ্গলগ্রহে মানব বসতি স্থাপনের লক্ষেও কাজ করে যাচ্ছেন।

এভাবে তিনি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনীর খেতাব অর্জন করেন। ২০২১ সালের শুরুর দিকটায় ইলন মাস্ক কয়েকদিনের জন্য শীর্ষে থাকা জেফ বেজোসকে পিছনে ফেলে শীর্ষস্থান অর্জন করেন। পরে অবশ্য আবার ২য় স্থানে চলে আসেন।

 

আজকের আলোচনা নিয়ে কোন মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন।

ধন্যবাদ।


Related Post

জনপ্রিয় পণ্য

সাম্প্রতিক পণ্য

Leave a Comment:
alibaba & Import Export expert

সি এন্ড এফ, আমদানি, আলিবাবা নিয়ে যেকোনো সমস্যায় আমাকে ফেসবুকে মেসেজ করুন

এখানে ক্লিক করুন
2017 © 2024 eibbuy. All Rights Reserved.
Developed By Fluttertune react js next js