রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করবেন যেভাবে

রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করবেন যেভাবে


Posted on: 2021-07-01 21:34:08 | Posted by: eibbuy.com
রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করবেন যেভাবে

বর্তমানে বাংলাদেশে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আগে রেস্টুরেন্টের চাহিদা সীমিত থাকলেও, এখন মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ভিন্নধর্মী খাবারের প্রতি আকর্ষণের কারণে ব্যবসার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে গেছে। মানুষ রেস্টুরেন্টে শুধুমাত্র খেতে নয়, পরিবার বা বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডা দিতে, ব্যবসায়িক মিটিং করতে এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একত্রিত হতে আসে। এই প্রবণতা বাংলাদেশের রেস্টুরেন্ট শিল্পকে উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

 

কেন রেস্টুরেন্ট ব্যবসা করবেন?

রেস্টুরেন্ট ব্যবসা করার প্রধান কারণ হচ্ছে এর বিশাল চাহিদা এবং ক্রমবর্ধমান বাজার। বর্তমানে শহরের রাস্তায় বা বাজারের আশেপাশে প্রচুর রেস্টুরেন্ট দেখা গেলেও, অধিকাংশের মান গ্রাহকদের সন্তুষ্ট করতে পারে না। তাই, মানসম্মত খাবার আকর্ষণীয় পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

 

তবে, ব্যবসা ঝুঁকিপূর্ণও হতে পারে। সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার দক্ষতা না থাকলে এবং পর্যাপ্ত পুঁজির অভাব থাকলে, রেস্টুরেন্ট ব্যবসা ক্ষতির দিকে যেতে পারে। তাই, ব্যবসায় নামার আগে সঠিক পরিকল্পনা এবং দীর্ঘমেয়াদী চিন্তাভাবনা জরুরি।

 

রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করার ধাপসমূহ

. পুঁজি নির্ধারণ করুন

প্রথম ধাপে, আপনার পুঁজির পরিমাণ নির্ধারণ করা জরুরি। আপনি কী পরিমাণ পুঁজিতে ব্যবসা শুরু করবেন, তা নির্ধারণ করে তারপর ব্যবসার পরিকল্পনা তৈরি করুন। রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় কমপক্ষে ১০-১৫ লাখ টাকার প্রয়োজন হতে পারে, তবে এটি আপনার স্থান এবং রেস্টুরেন্টের আকার অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে।

 

. স্থান নির্বাচন

রেস্টুরেন্ট ব্যবসার সফলতার অন্যতম প্রধান শর্ত হলো সঠিক স্থান নির্বাচন। স্থান নির্বাচন করার সময় নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখুন:

 লাইভ বেকারি ব্যবসা করবেন? কিভাবে শুরু করবেন...

  • মানুষের চলাচল বেশি হয় এমন স্থান।
  • পার্কিং সুবিধা।
  • প্রধান সড়কের পাশের অবস্থান।
  • মার্কেটের কাছাকাছি অবস্থান।
  • পুঁজির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ভাড়া।

যেখানে বেশি মানুষ আসে এবং খাবারের চাহিদা বেশি, সেখানে রেস্টুরেন্ট খোলার সম্ভাবনা সফলতার বেশি। আপনার টার্গেট এলাকায় ইতিমধ্যে কতগুলো রেস্টুরেন্ট আছে এবং সেগুলোর মান ব্যবসা কেমন চলছে তা যাচাই করে দেখুন। এবং আপনার টার্গেট এলাকায় যদি অন্য রেস্টুরেন্ট থাকে, তবে তাদের ব্যবসার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করুন। যদি তারা লোকসানে থাকে, তবে সেটির কারণ বিশ্লেষণ করুন এবং সেগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে আপনার রেস্টুরেন্ট পরিচালনার সময় সেসব বিষয়গুলো বিবেচনা করবেন।

 

. খাবারের ধরন নির্ধারণ করুন

আপনার রেস্টুরেন্টে কোন ধরনের খাবার পরিবেশন করবেন তা আগে থেকেই ঠিক করে রাখুন। বর্তমানে চাইনিজ, থাই, ইন্ডিয়ান, দেশীয় খাবার ছাড়াও এরাবিক খাবারের চাহিদা বেড়েছে। আপনার এলাকার চাহিদা অনুযায়ী মেনু প্রস্তুত করুন। একাধিক খাবারের অপশন রাখলে গ্রাহক আকর্ষণ করার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

খাবারের মধ্যে ভিন্নতা আনার চেষ্টা করবেন। আপনার আশেপাশের অন্য রেস্টুরেন্টে নেই এমন আইটেম আনার চেষ্টা করবেন।

 

. রেস্টুরেন্টের সাজসজ্জা

রেস্টুরেন্টের ডেকোরেশন এবং পরিবেশ গ্রাহকদের আকৃষ্ট করার একটি বড় মাধ্যম। আপনার রেস্টুরেন্ট এমনভাবে সাজান যেন এটি ক্যামেরা-বান্ধব হয়। আজকাল বেশিরভাগ গ্রাহক রেস্টুরেন্টে এসে ছবি তোলে এবং তা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে। তাই, আধুনিক চোখধাঁধানো ইন্টেরিয়র ডিজাইনের দিকে খেয়াল রাখুন।

 

ডেকোরেশন করার সময় টেবিলের পাশে কিছু বই বা ম্যাগাজিন রাখতে পারেন, যাতে গ্রাহকরা খাবার আসার সময় পড়ার মতো কিছু পায়। এছাড়া, রেস্টুরেন্টের পরিবেশ যেন পরিচ্ছন্ন স্বস্তিদায়ক হয়।

 

. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ

রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করতে হলে কিছু বৈধ কাগজপত্র প্রয়োজন। সেগুলো হলো:

 

ট্রেড লাইসেন্স: সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সংগ্রহ করা যাবে।

টিন সার্টিফিকেট: অনলাইনে আবেদন করতে পারেন।

মূসক/ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন: এটি রাজস্ব বোর্ড থেকে নিতে হবে।

এই কাগজপত্রগুলো সংগ্রহ করতে কিছু ফি লাগতে পারে, যা আপনার বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করে নিবেন।

 

কর্মচারী নিয়োগ

রেস্টুরেন্টের সাফল্যের একটি বড় অংশ নির্ভর করে দক্ষ কর্মচারীর উপর। তাই রাঁধুনি, ম্যানেজার, সার্ভ বয়, এবং পরিচ্ছন্ন কর্মী নিয়োগ করার সময় তাদের দক্ষতা যাচাই করে নিন। রাঁধুনির গুণমান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ রেস্টুরেন্টের খাবার কাস্টমারকে বারবার ফিরে আসতে বাধ্য করে।

 

মার্কেটিং এবং প্রচারণা

আপনার রেস্টুরেন্টের প্রসার ঘটানোর জন্য শুরুতেই সোশ্যাল মিডিয়া, বিশেষ করে ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করতে পারেন। আকর্ষণীয় ছবি ইউনিক অফার দিয়ে প্রচারণা চালান। বিশেষ ছাড় বা ইভেন্ট প্ল্যান করলে তা প্রচার করতে ভুলবেন না।

বিভিন্ন ডিসকাউন্ট অফার দিবেন। এবং এই ডিসকাউন্ট অফার ফেসবুক ইনস্টাগ্রামে ছড়িয়ে দিবেন। এক্ষেত্রে পোস্ট বুস্টিং করতে হবে। অথবা আপনাদের অফারের কথা তার টাইমলাইনে শেয়ার করলে সে পাবে এক্সট্রা ডিসকাউন্ট। এতে আরও বেশি প্রচার হবে।

 বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা যায় এমন পন্য এবং গন্তব্য দেশ..

প্রথম মাস থেকে বছর লোকসানের প্রস্তুতি

প্রথমদিকে আপনার রেস্টুরেন্টে কাস্টমারের অভাব হতে পারে এবং আপনি লোকসানে চলতে পারেন। এই সময়ের জন্য অতিরিক্ত কিছু টাকা হাতে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। মানসম্মত খাবার এবং সেবা নিশ্চিত করে সময়ের সাথে সাথে লোকসান কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করুন।

রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করতে কত টাকা লাগবে?

এই ব্যবসা শুরু করতে টাকা লাগতে পারে তা নির্ভর করে আপনি কোথায় রেস্টুরেন্ট দিচ্ছেন কত বড় আকারে দিচ্ছেন তার উপর। তারপরও ধারনা দেওয়ার জন্য আনুমানিক খরচ তুলে ধরলাম।

১. ভাড়া ও ডেকোরেশন:

স্থান ভাড়া:

আপনার রেস্টুরেন্টের অবস্থানের ওপর ভাড়ার পরিমাণ নির্ভর করবে। ঢাকার মতো শহরে একটি ভালো জায়গায় রেস্টুরেন্ট স্থাপনের জন্য মাসিক ভাড়া হতে পারে ৫০,০০০ থেকে ১,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া, কিছু ক্ষেত্রে ৩-৬ মাসের অগ্রিম ভাড়া দিতে হতে পারে, যা হতে পারে ৩ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত।

 

ডেকোরেশন ও ইন্টেরিয়র ডিজাইন:

রেস্টুরেন্টের অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জার জন্য সাধারণত ৩ থেকে ১০ লাখ টাকা প্রয়োজন হতে পারে। এটি নির্ভর করবে আপনার রেস্টুরেন্টের আকার এবং আপনি কতটা আকর্ষণীয়ভাবে সাজাতে চান তার উপর।

 

২. ফার্নিচার ও সরঞ্জামাদি:

ফার্নিচার:

টেবিল, চেয়ার, কাউন্টার ইত্যাদি ফার্নিচারের জন্য প্রাথমিকভাবে ২-৫ লাখ টাকা প্রয়োজন হতে পারে।

 

কিচেন সরঞ্জামাদি:

কিচেনের জন্য রান্নার চুলা, ফ্রিজ, ওভেন, ব্লেন্ডার, কিচেন টুলস ইত্যাদি কিনতে প্রায় ২-৪ লাখ টাকা প্রয়োজন হতে পারে।

 

৩. খাবার উপকরণ ও মেনু প্রস্তুতি:

প্রাথমিকভাবে ৫০,০০০ থেকে ১ লাখ টাকার কাঁচামাল লাগতে পারে। এটি আপনার মেনুর খাবারের পরিমাণ এবং কাস্টমারের চাহিদার ওপর নির্ভর করে।

৪. লাইসেন্স ও কাগজপত্র:

ট্রেড লাইসেন্স, টিন সার্টিফিকেট এবং ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন সহ বিভিন্ন কাগজপত্রের জন্য প্রায় ১৫,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকা প্রয়োজন হতে পারে।

৫. কর্মচারী বেতন:

প্রতিমাসে কর্মচারীদের বেতন হিসেবে ৫০,০০০ থেকে ১,৫০,০০০ টাকা লাগতে পারে। কর্মচারীর সংখ্যা এবং তাদের দক্ষতার উপর ভিত্তি করে এই খরচ বাড়তে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একজন দক্ষ রাঁধুনির বেতন ২০,০০০-৩০,০০০ টাকা হতে পারে, আর ম্যানেজারের বেতন ২৫,০০০-৪০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

৬. বিপণন ও প্রচারণা:

প্রথমদিকে আপনার রেস্টুরেন্টের প্রচারণার জন্য ৩০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা ব্যয় করতে হতে পারে। এই বাজেটের মাধ্যমে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে বিজ্ঞাপন দেওয়া এবং বিশেষ ছাড়ের অফার করতে পারেন।

মোট খরচ:

সব মিলিয়ে একটি ছোট বা মাঝারি মানের রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করতে মোট খরচ হতে পারে প্রায় ১০ থেকে ২৫ লাখ টাকা। তবে এই খরচ ব্যবসা আকার এবং স্থানভেদে কম বেশি হতে পারে।

সাফল্যের মূল চাবিকাঠি

রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় সফলতা পাওয়া নির্ভর করে কয়েকটি বিষয়ে:

 

  • সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া।
  • পরিশ্রম করা।
  • কর্মচারীদের সঠিকভাবে পরিচালনা করা।
  • সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা থাকা।

এই ব্যবসায় সফল হতে গেলে ধৈর্য, কৌশল এবং সঠিক নেতৃত্ব প্রয়োজন। দীর্ঘমেয়াদে সঠিক পরিকল্পনা পরিশ্রম করতে পারলে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় আপনার সাফল্য নিশ্চিত।

 অটোরিকশা ব্যবসা শুরু করবেন কিভাবে?

আজকের আলোচনা নিয়ে কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।

ধন্যবাদ।

 


Related Post

জনপ্রিয় পণ্য

সাম্প্রতিক পণ্য

Leave a Comment:
alibaba & Import Export expert

সি এন্ড এফ, আমদানি, আলিবাবা নিয়ে যেকোনো সমস্যায় আমাকে ফেসবুকে মেসেজ করুন

এখানে ক্লিক করুন
2017 © 2024 eibbuy. All Rights Reserved.
Developed By Fluttertune react js next js