আমরা মাত্র ৭ দিন ঘরে বসে থেকেই হাপিয়ে উঠেছি । বাইরে বের হওয়ার জন্য পরান আকুলি বিকুলি করতেছে। কিন্তু ,জানেন কি, নিচের এই লোকটা ৭ বছর একটানা কোয়ারেন্টিন অবস্থায় একটা বিল্ডিং এর ভিতর আটকা পড়ে ছিল ?
অবস্থা এতই খারাপ পর্যায়ে গেছিল, যে তার শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব দেখা দেয় একসময়। ডাক্তার তখন তাকে বললেন, আপনার পক্ষে তো আর সূর্যের আলোয় বের হওয়া সম্ভব না । আপনি এক কাজ করেন। বেশি করে গলদা চিংড়ি খান। সূর্যের আলোর মত গলদা চিংড়িতেও ভিটামিন ডি আছে।
এই লোকটা হচ্ছে জুলিয়ান এ্যাসাঞ্জ ,হ্যাকার এবং সাংবাদিক।
wikileaks.com এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সবাই তাকে চেনে । ২০১২ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ,দীর্ঘ ৭ বছর তাকে লন্ডন শহরের ইকুয়েডর দেশের এম্বাসির মধ্যে থাকতে হয়েছিল। কোনো রোগের কারনে না। বা অং সান সূচির মত মায়ানমার সরকার তাকে গৃহবন্দীও করেনি। খুব আজব সিচুয়েশন হয়েছিল তার। পুলিশ যেন তাকে এ্যারেস্ট করতে না পারে, সেজন্য এম্বাসির মধ্যে বসে ছিলেন তিনি। ইকুয়েডর এম্বাসির মধ্যে পুলিশ তার কিছু করতে পারবে না, কিন্তু এম্বাসি থেকে বের হলেই বিপদ--এমনই একটা ক্রাইসিসে কেটে গেছে তার জীবনের ৭ বছর।
২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত উইকিলিক্স ওয়েবসাইটে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারের দুর্নীতির প্রমানগুলা আপলোড করা হত। সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি প্রকাশিত হয়েছিলা আমেরিকার । বিভিন্ন ই-মেইল হ্যাক করে বা অন্য উপায়ে এসব ডকুমেন্টস জোগাড় করা হত।
এ্যাসাঞ্জের জন্ম অস্ট্রেলিয়ায় , ১৯৭১ সালে । ছোটবেলা থেকেই কম্পিউটারের সিকিউরিটি নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ১৯৮৭ সালে তার বাপ তাকে প্রথম কম্পিউটার কিনে দেয়। সেই কম্পিউটার দিয়ে গুতাইয়া গুতাইয়া বিভিন্ন ওয়েবসাইটের সিকিউরিটি ভাংগা তার নেশা হয়ে ওঠে। ১৯৯৪ সালে অস্ট্রেলিয়া পুলিশ একবার তাকে হ্যাকিং এর অভিযোগে এ্যারেস্ট করে। অল্প কিছু জরিমানা দিয়ে সে যাত্রা বেচে যান তিনি।
লেখাপড়া করেছেন মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত ও পদার্থবিদ্যা বিষয়ে।
কিন্তু একাডেমিক লেখাপড়া বাদেও তিনি প্রচুর পড়াশোনা করতেন। দর্শন থেকে শুরু করে নিউরোসায়েন্স পর্যন্ত, অনেক বিষয়েই ছিল তাঁর আগ্রহ।
ব্যাপক পড়াশোনার মাধ্যমে ইতিহাস ও সমসাময়িক বৈশ্বিক পরিস্থিতির দিকে রাজনীতি সচেতন দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করলেন। এর ফলে তিনি এমন এক ধারণায় পৌঁছান যে সব সরকার ও ক্ষমতাধর প্রতিষ্ঠান মিথ্যা বলে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে। সুতরাং সরকারমাত্রই ষড়যন্ত্রপ্রবণ।
অ্যাসাঞ্জ মনে করেন, ষড়যন্ত্রকারীদের প্রধান অস্ত্র হচ্ছে গোপনীয়তা। এই গোপনীয়তা ভেঙে দিতে পারলেই তাদের ষড়যন্ত্র ভণ্ডুল করা সম্ভব। এ রকম ভাবনা বা দর্শন থেকে তিনি ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে সমমনা কয়েকজনকে নিয়ে চালু করেন উইকিলিকস নামের এক নতুন ধরনের ওয়েবসাইট, যার কাজই হবে জনগুরুত্বপূর্ণ গোপন নথিপত্র বিশ্ববাসীর সামনে প্রকাশ করা।
কি নেই এসব দলিলপত্রে? ইরানের পরমাণু আলোচনা থেকে শুরু করে পাকিস্তানে পারমাণবিক অস্ত্রের নিরাপত্তা সম্পর্কে মার্কিন মূল্যায়ন, গুগল হ্যাক করার চীনা উদ্যোগ, গুয়ান্তানামো বন্দিদের অন্য দেশে হস্তান্তরে চাপ, আফগানিস্তানে দুর্নীতি, ইয়েমেনে বিমান হামলা সম্পর্কে, কোরিয় উপদ্বীপে উত্তেজন, ইরানে আক্রমণের জন্য সৌদি চাপ এবং আরো অনেক কিছু।
বাংলাদেশে জুলিয়ান এ্যাসাঞ্জ পপুলার হয়ে ওঠেন ২০১০ সালের দিকে। একটা প্রজন্ম তাকে IDOL মেনেছিল। বাংলাদেশ সরকারের অনেক গোপন দলিল ওদের ওয়েবসাইটে ছাপা হয়েছিল।
মূলত ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে এসব দলিল ওয়াশিংটনে পাঠানো হয়েছিল। এসব দলিলে আছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল-ইসলামী বা হুজিকে জাতীয় রাজনীতির মূল ধারায় আনতে চেয়েছিল ডিজিএফআই। এ লক্ষ্যে তারা গঠন করে ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (আইডিপি)। এজন্য তারা আইডিপিকে অর্থ সাহায্য করে।
বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে ‘সরকারি ডেথ স্কোয়াড’ হিসেবে নিন্দিত র্যাবকে যুক্তরাজ্য সরকারের উদ্যোগে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত এই বাহিনীর কাজ কর্মে সন্তষ্ট হয়ে তার বিলুপ্তিতে বিরোধী করেছেন। এছাড়াও র্যাব সদস্যরা ব্যাপকভাবে মানবাধিকার ছাড়াও অপহরণ, চাঁদাবাজি ও ক্রসফায়ারে হত্যা করার জন্য মোটা অঙ্কের ঘুষ গ্রহণের সঙ্গে জড়িত বলে উউকিলিকসর প্রকাশিত তার বার্তায় উল্লেখ আছে।
ফুলবাড়ী কয়লা খনি থেকে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলার অনুমতি দিতে বাংলাদেশ সরকারকে ব্যাপক চাপের মধ্যে রেখেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকরা। এ বিষয়ে সংসদীয় সমর্থন তৈরি করতে রাজি হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী।
উইকিলিকসে ফাঁস হওয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ফুলবাড়ী কয়লা খনি বন্ধ করে দেওয়ার পরও জিসিএম বাংলাদেশে বহাল তবিয়তে কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেছে এবং সরকারের ওপর-মহলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। ফুলবাড়ী খনি আবার খুলে দিয়ে জিসিএমের পরিকল্পনা অনুযায়ী সেখানে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে খনন চালানোর অনুমতি দিতে বাংলাদেশ সরকারকে চাপ দিয়ে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকরাও।
wikileaks ওয়েবসাইটে সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ভিডিওটা প্রকাশিত হয় ২০০৭ সালে। ৩৮ মিনিটের এই ভিডিও ফুটেজটি মার্কিন সেনাদেরই তোলা, এতে দেখানো হয়েছে মার্কিন সেনাদের হাতে রয়টারের দুজন সাংবাদিকসহ ১৮ জন বেসামরিক মানুষ হত্যার দৃশ্য। এরপর আমেরিকা জুলিয়ান এ্যাসাঞ্জকে ধরার জন্য কুত্তার মত পাগল হয়ে ওঠে। তাদের রাতের ঘুম একদম হারাম হয়ে যায়।
অ্যাসাঞ্জ তখন লুকিয়ে চলা শুরু করলেন । কখনো আইসল্যান্ড কখনো কেনিয়া কখন কোথায় থাকেন তার ঠিক-ঠিকানা নেই। কখনো হোটেলে ওঠেন না, থাকেন বন্ধুবান্ধবের বাসায়। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন না । মুঠোফোন ব্যবহার করেন একাধিক; শুধু কাউকে কল করার সময়, বাকি সময় মুঠোফোন বন্ধ থাকে, এমনকি ব্যাটারিও খুলে রাখেন, যেনো তাঁর অবস্থান ও চলাফেরার ওপর কোনো ইলেকট্রনিক যন্ত্রের সাহায্যে কেউ নজর রাখতে না পারে। সুইজারল্যান্ডের সুইসপোস্ট তাঁর অ্যাকাউন্ট বাতিল করেছে, যখন তারা আবিষ্কার করেছে যে সুইজারল্যান্ডে অ্যাসাঞ্জ যে ঠিকানায় থাকেন বলে অ্যাকাউন্টটি খোলার সময় লিখেছেন, সেটি ভুল।
শুধু জুলিয়ান এ্যাসাঞ্জ একা নন , তাঁর সহযোগীরাও বুঝতে পারেন , তাঁদের ওপর আঘাত আসবে। তাই শুরু হলো তাদের গোপন জীবন। উইকিলিকসের কোনো স্থায়ী অফিস নেই, কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকেরা সবাই গুপ্ত জীবন যাপন করতে বাধ্য হন।
২০১০ সালে এ্যসাঞ্জ এসেছিলেন সুইডেনে । সুইডেনে থাকাকালীন সময়ে দুইজন মেয়ের সাথে এ্যসাঞ্জ ডেট করেন। জানিয়ে রাখা ভাল, এ্যাসাঞ্জ পারসোনাল লাইফে একটা বিয়ে করেছিলেন ১৯৮৯ সালে, ৯৯ সালে ডিভোর্স হয়ে যায় ।
পরে এই দুই সুইডিশ তরুনী এ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের কেস করে । অভিযোগ গুলা তেমন গুরুতর ছিল না ,এমনকি ইউরোপিয়ান কনটেক্সটেও না। দুই তরুনীর একজনের অভিযোগ ছিল, শারীরিক সম্পর্কের এক পর্যায়ে মেয়েটা এ্যাসাঞ্জকে থামতে বলেছিল, কিন্তু এ্যাসাঞ্জ ততক্ষনাত না থীম দেরি করেছিল। এটাকে ''লেসার ডিগ্রি রেপ'' এর অভিযোগে ফেলা হয়েছিল।
এ্যসাঞ্জ স্বল্প সময়ের মধ্যে দুইজন আলাদা মেয়ের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেছে--এটা জানতে পেরে কজন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল। তার কনসার্ন ছিল , অন্যজনের কোন যৌনবাহিত রোগ আছে কিনা। এজন্য এ্যাসাঞ্জকে অনুরোধ করেছিল, অন্যজনের পরিচয় বা তার মেডিকেল রিপোর্ট যেন তাকে জানানো হয়। কিন্তু এ্যাসাঞ্জ সে কাজটা করেনি (সম্ভবত প্রাইভেসির কারনে) । এই ''তথ্য গোপনে''র কারনেও তার বিরুদ্ধে একটা কেস করে দেয় সে। (অথবা,আমেরিকা বা অন্য কেউ তাদেরকে কেস করতে মোটিভেট করে)
ওই সময়ে, সুইডেনে একবার কোর্টে হাজিরা দিয়েই প্রমান হল, যে এ্যাসাঞ্জের কোনো দোষ নেয়। সে ফ্রি হয়ে সুইডেন থেকে ইংল্যান্ডে চলে গেল।
ইংল্যান্ডে যাওয়ার পরে তার বিরুদ্ধে কেস আরো স্ট্রং করা হল। তার বিরুদ্ধে তখন একটা আন্তর্জাতিক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হল। এবার ও এ্যাসাঞ্জ ইংল্যান্ডের একটা কোর্টে হাজিরা দিল, এবং খুব সহজেই জামিন পেয়ে গেল ।
কিছুদিন পরে তার বিরুদ্ধে কেস আরো স্ট্রং করা হল। আমেরিকার প্লান ছিল এইরকম--একবার এ্যাসাঞ্জকে কোনো এক কেসে এ্যারেস্ট করার পরে তারপর ওকে আমেরিকায় ফিরিয়ে এনে বিভিন্ন কেসে ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট দেব।
এ্যারেস্ট হওয়া এড়ানো যাবেনা দেখে এ্যাসাঞ্জ একটা বেশ বুদ্ধিমানের মত কাজ করলেন । ২০১২ সালের ১৯শে জুন লন্ডনে অবস্থিত ইকুয়েডর দূতাবাসে গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইলেন।
ইকুয়েডর সরকার তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিল । ইকুয়েডর দেশের নাগরিকত্ব ও দিল। লন্ডন থেকে প্লেনে করে ইকুয়েডর পৌছাতে পারলেই তার আর কোনো ভয় নেই। কিন্তু দূতাবাস থেকে প্লেনে যাওয়ার পথটাতেই ঝামেলা। ইকুয়েডর দূতাবাস কম্পাউন্ড একটা সার্বভৌম জায়গা, এর ভিতর ইংল্যান্ডের পুলিশ কিছু করতে পারবে না। কিন্তু দূতাবাস থেকে বের হলেই তাকে ইংল্যান্ডের পুলিশ এ্যারেস্ট করতে পারবে।
এবং ঘটল ও তাই । এ্যসাঞ্জকে এ্যারেস্ট করার জন্য ইংল্যান্ড সরকার ইকুয়েডর এমবাসির সামনে ২৪ ঘন্টা পুলিশ দাড় করিয়ে রাখল। যেন সে বের হলেই ক্যাক করে এ্যারেস্ট করতে পারে । এ্যাসাঞ্জ ও চালাক আছে। সে ভিতর থেকে বের হয়না। একদম কুত্তার মত মাটি কামড়ে পড়ে থাকল।৩৩০ স্কয়ার ফুটের একটা রুম পেয়েছিল সে। আশেপাশের অল্প কয়েকটা রুমে যেতে পারত,যেখানে অফিসের সরকারী কাজকর্ম চলে। এভাবেই কেটে গেল ৭ বছর।
ইতিমধ্যে , বাইরের জগতে অনেক ঘটনাই ঘটতে লাগল।
নারী নির্যাতনের কেসগুলা খালাস হয়ে গেল ।
নতুন অনেক কেস তার বিরুদ্ধে আসতে লাগল (যেমন-জামিনের শর্ত না মানার অভিযোগ)।
উইকিলিক্স ওয়েবসাইট টাকার অভাবে বন্ধ হয়ে গেল, আবার চালু হল। একের পর এক জ্বালাময়ী রিপোর্ট তারা বের করতে লাগল।
জুলিয়ান এ্যাসাঞ্জকে দেখে উতসাহিত হয়ে এডওয়ার্ড স্নোডেন নামের এক গোয়েন্দা রাশিয়ায় গিয়ে আশ্রয় নিল ।
উইকিলিক্স এর মতই আরো সুন্দর সুন্দর কয়েকটা হুইসেল ব্লোয়িং ওয়েবসাইট (যেমন-পানামা পেপারস) তৈরি হল।
এ্যাসাঞ্জকে দেখার জন্য ইকুয়েডর দূতাবাসে আসলেন নোয়াম চমস্কি, লেডি গাগা,পামেলা এ্যান্ডারসন সহ অনেকে।
অস্ট্রেলিয়ায় উইকিলিক্স পার্টি নামে একটা রাজনৈতিক দল তৈরি হল,এবং তারা ইলেকশনে গো হারা হারল
বদ্ধ জায়গায় থেকে থেকে তার ফুসফুসের বারোটা বাজতে লাগল।
এরই মাঝে, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার পরে এল ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইকুয়েডর এর প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কোরায়ার পরে এল লেনিন মরেনো ।
শেষের পরিবর্তন টা এ্যাসাঞ্জ এর জন্য খারাপ হল। আগের প্রেসিডেন্ট , রাফায়েল কোরায়া বেশ কট্টর আমেরিকাবিরোধী ছিল। কিন্তু নতুন প্রেসিডেন্ট অত আমেরিকাবিরোধী নন। আমেরিকার সাথে তার দেশের আবার বিশাল এমাউন্টের লোন ও ছিল।
এদিকে , উইকিলিক্সের বন্ধু একে এক কমতে লাগল। কারন ওদের নীতি ছিল, কারো পক্ষেই কথা বলব না। যার যার দুর্নীতি পাব-সবার দুর্নীতির কথাই ফাস করব। ধরুন, উইকিলিক্সে আমেরিকার দুর্নীতির খবর পেয়ে রাশিয়া অনেক খুশি হল। পরের দিন আবার সেখানে রাশিয়ার দুর্নীতির খবর ছাপা হইলে কি অবস্থা হবে চিন্তা করে দেখুন ।
ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট ফ্যামিলির দুর্নীতির কথাও একসময় উইকিলিক্সের ইয়েবসাইটে প্রকাশিত হল । প্রেসিডেন্ট লেনিন মোরেনো গেল ক্ষেপে । দুধ কলা দিয়ে, রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়ে এতদিন কালসাপ পুষলাম !!!
সকল কনসিকোয়েন্স মিলায়ে, ২০১৯ সালের এপ্রিল ইকুয়েডর সরকার জুলিয়ান এ্যাসাঞ্জ এর রাজনৈতিক আশ্রয় বাতিল করল। কালবিলম্ব না করে ইংল্যান্ডের পুলিশ তাকে এ্যারেস্ট করল । ৭ বছর আত্মগোপনে থাকা এই ঘাগু অপরাধীর সব কেস পর্যালোচনা করে আদালত তাকে সুদীর্ঘ ৩৫০ দিনের জেল দিল ,২০১৯ সালের ১লা মে।
এখন তিনি আছেন লন্ডনের HM Prison Belmarsh নামক জেলখানায়। জেলের ভিতরে তার উপরে অনেক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে--এমন অভিযোগ তুলেছেন তার আইনজীবিরা। কিন্তু কোর্ট সে কথা শোনেনি। আমেরিকা তার বিরুদ্ধে আরো নতুন নতুন কেস সাজাচ্ছে।
ইউরোপের অন্যান্য দেশে করোনার কারনে যখন জেলখানার কয়েদীদের ছেড়ে দিচ্ছে, ইংল্যান্ড সেখানে এ্যাসাঞ্জকে ছাড়তেছে না। গত ২৫শে মার্চ তাকে জামিন দেওয়ার সর্বসেষ আবেদন খারিজ হয়ে গেছে। ৩৫০ দিনের কারাদন্ড খুব দ্রুতই শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু আমেরিকার ষড়যন্ত্রের কারনে তার পরেও নতুন কেসে তাকে জেলের মধ্যেই থাকতে হতে পারে।
ভিক্টর হুগোর জা ভালজা উপন্যাসটার কথা মনে আছে ? এক টুকরো রুটি চুরির অপরাধে ১৯ বছর জেল খেটেছিল সে। আমাদের সেঞ্চুরির এই জা ভালজার জীবন থেকেও কমপক্ষে ১০ বছর হারিয়ে যাচ্ছে । বিশ্বের প্রতিটা কিনারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যারা কাজ করে যাচ্ছে, তাদের জন্য একটা বড় মোটিভেশন এই জুলিয়ান এ্যাসাঞ্জ ।
জেল থেকে দ্রুত বেরিয়ে এসো, হে মহানায়ক । ইংল্যান্ড থেকে ইকুয়েডর, ওয়াশিংটন থেকে হোচিমিন সিটি, ঢাকা থেকে কাম্পালা---পৃথিবীর কিনারায় কিনারায় অসংখ্য অনুরাগী তোমার মুক্তির দিন গুনতেছে। পৃথিবী নামক এই কলূষিত গ্রহের জন্য তোমার মত মানুষদের অনেক বেশি প্রয়োজন।