চীনের বর্তমান এ পরিস্থিতি যদি আরো দুইমাস চলতে থাকে তাহলে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প অর্ধেক ধ্বসে যাবে। উন্নয়নশীল, মধ্যম আয়ের দেশগুলো বড়সড় ধাক্কা খাবে। কি রকম..?
চীন থেকে
আমদানি বন্ধ থাকলে বাংলাদেশর পণ্যের দাম বাড়তে পারে দ্বিগুণ। কারণ চীন থেকে
বাংলাদেশ প্রতি বছর গড়ে ১৫ বিলিয়ন ডলার আমদানি করে। এর মধ্যে আছে ঔষধ
তৈরির কাচামাল, গার্মেন্টস শিল্পের কাঁচামাল, ইলেক্ট্রনিক পণ্য,
যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র ইত্যাদি..!!
ঔষধ শিল্পঃ
চীনে আরো সপ্তাহখানেক যদি এ অবস্থা চলে তাহলে ইউরোপের কোনো দেশ বা অন্য কোথাও থেকে আনতে হবে এসব কাঁচামাল। সেক্ষেত্রে উৎপাদন খরচ হবে দ্বিগুণের বেশি। যার প্রভাব পড়বে ওষুধের দামের ওপর..!!
গার্মেন্টস শিল্পঃ
বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাত এগিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হলো সস্তা শ্রমবাজার ও কাঁচামাল। বোতাম, সুতা থেকে শুরু করে আমাদের গার্মেন্টস শিল্পের ৯৯% কাঁচামাল ও মেশিনারিজ আসে চীন থেকে। তারউপর বর্তমানে প্রতিদ্ব’ন্দ্বিতাপূর্ণ বাজার ও আন্তর্জাতিক নানা চাপ, চীনের কাচামাল সরবরাহ বন্ধ থাকলে গার্মেন্টস শিল্পের ধ্বস তলানিতে গিয়ে ঠেকতে পারে..!!
ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যঃ
আমাদের দেশের ইলেক্ট্রনিক্স যত পণ্য আছে, এগুলোর প্রায় সবগুলোর ই যন্ত্রাংশ আসে চীন থেকে। এমনকি ওয়ালটনের টিভি, ফ্রিজসহ যাবতীয় সকল পণ্যের যন্ত্রাংশ চীন থেকে আনা হয়। একই অবস্থা দেশের অন্য ব্র্যান্ডগুলোরও। মাসখানেক চীন থেকে পণ্য আসা বন্ধ থাকলে টিভি ফ্রিজসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের দাম কয়েকগুণ বেড়ে যেতে পারে..!!
কসমেটিকসঃ
বাংলাদেশের কসমেটিকের বড় একটা বাজার সয়লাব করে আছে চায়নিজ কসমেটিক পণ্যে। দেশের বাজারে যে লিপস্টিক ৫শ থেকে ৬শ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে, চীন কয়েকসাপ্তাহ বাণিজ্য বন্ধ রাখলে, একই পণ্যের দ্বিগুণ দাম হতে পারে..!!
এছাড়া,
প্লাস্টিক ও আসবাবপত্র কোম্পানিগুলোও চীন থেকে কাচামাল সরবরাহ করে। খেলনা,
খাদ্যপণ্য, দুধ ও কোটাজাত পণ্য ইত্যাদি চীন থেকে আমদানি করতে হয়..!!
চীনের এ পরিস্থিতিতে লাভবান হবে কোন দেশ..?
বিশেষ করে
ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, ভারত এসব দেশ লাভবান হবে। এর কারণ, চীন তাঁদের উৎপাদন
ব্যয় কামতে ৩৩% গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি ভিয়েতনামে সরিয়ে নিয়েছে। এছাড়া (EU)
সঙ্গে ভিয়েতনামের ফ্রিট্রেড চুক্তি (এফটিএ) হওয়ায় সল্পমূল্যে পণ্য
রপ্তানিতে ভিয়েতনাম এগিয়ে যাবে আরো একধাপ..!!
এছাড়া
ফিলিপাইন ইউরোপ আমেরিকার নিকটবর্তী হওয়ায় সেসব দেশথেকে তাঁদের প্রয়োজনীয়
কাচামাল সরবরাহ করতে পারবে। যেটা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ব্যয় সাধ্য হয়ে
পড়বে..!!
এছাড়া ভারত
দিনদিন তুলা চাষে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ায়, লোয়েস্ট মজুরী খরচ এবং প্রয়োজনীয়
কাচামাল নিজেরাই উৎপাদনে আসায় তাঁদের গার্মেন্টস শিল্প এক ধাপ এগিয়ে যেতে
পারে। তারউপর ভারতের সঙ্গে বহিঃ বিশ্বের কূটনীতিক তৎপরতা ভালো হওয়ায়, এ
সুযোগ ভারত হাতছাড়া করবেনা বলেও ধারণা আছে...!!
বিশ্বের
প্রায় প্রতিটি উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতি প্রায় থমকে গেছে। চীনের সঙ্গে
বাণিজ্য যুদ্ধ থাকা সত্বেও আমেরিকা চীনকে সহায়তার জন্য এগিয়ে এসেছে..!
কেবল বাংলাদেশ ও দেশের জনগণ অনেকটা সস্তিতে আছে। চীনাবাসীর উপর এ 'গজব' ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের জন্য বড়ই সুখের ও আনন্দের ব্যাপার..!!
কিন্তু যাদের উপর নির্ভর করে বিশ্ব অর্থনীতির চাকা ঘুরে, তাঁদের দুর্ভোগ মানে, সারাবিশ্বের জন্য গজব..!!
চীন কেবল একটি দেশ নয়। চীন হলো একটি বাজার। বাজার বন্ধ হওয়া মানে, খাবার কেনা বন্ধ..!!