ভারতীয়
টিভি চ্যানেল গুলির কারনে ভারতে উৎপাদন কৃত কসমেটিক্স গুলি বাংলাদেশে খুবই
জনপ্রিয়। অনেকেই মনে করেন ভারতীয় কসমেটিক্স গুলি খুব ভালো এবং অরজিনাল
থাকে। যেমন ইউনিলিভারের পণ্য বাংলাদেশে বিক্রি হয়ে থাকে।
এর পরেও অনেকে চান ভারতীয় ইউনিলিভারের পণ্য । আবার ভারতীয় অনেক কসমেটিক
কোম্পানি আছে যাদের পণ্য বাংলাদেশে অনেক পপুলার। এসব কারনে অনেক আমদানি
কারক ভারত থেকে কসমেটিক আমদানি করে থাকেন। আজকের
পোষ্টে আমি আপনাদের দেখানোর চেষ্টা করবো কিভাবে আপনারা ভারত থেকে কসমেটিক আমদানি করবেন।
ভারত থেকে কসমেটিক আমদানি করতে আপনাকে কয়েকটি ধাপ পার করতে হবে।
আমদানি লাইসেন্স
বৈধ ভাবে বিশ্বের যে কোন রাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানি করতে আপনাকে আমদানি
লাইসেন্স করতে হবে। আমদানি লাইসেন্স কিভাবে করতে হয় সেটি নিয়ে আমদের
ওয়েবসাইটে অনেক বড় পোষ্ট আছে পড়ে নিবেন।
সংক্ষিপ্ত
করে বলি, আমদানি লাইসেন্স করতে আপনাকে একটা ট্রেড লাইসেন্স , ভ্যাট, টিন
করতে হবে প্রথমে। এগুলি নিয়ে আমদানি নিবন্ধকের কার্যালয়ে জমা দিতে হবে।
তবে এসব ঝামেলা আপনি কোন এজেন্ট দিয়ে করিয়ে নিলেই ভালো হবে। তারা দ্রুত করতে পারবেন। একটি কমপ্লিট আমাদানি লাইসেন্স করতে আপনাকে কম
বেশী ২৫০০০-৩০০০০ টাকা খরচ করতে হবে।
স্যাম্পল দেখা
আপনি যদি অনলাইনে ইন্ডিয়ান সেলারের সাথে কথা বলেন তবে ফাইনাল অর্ডার করার
আগে স্যাম্পল এনে দেখে নিবেন। আর যদি আপনি সরা সরি ইন্ডিয়াতে গিয়ে পণ্য
দেখে আসেন তবে স্যাম্পাল আমদানি করার দরকার নাই। সাধারণত বিদেশ থেকে
স্যাম্পল আমদানি করতে গেলে আপনাকে ৪-৫ হাজার টাকা খরচ করতে হবে।
১০
হাজার টাকা খরচ করলে আপনি ইন্ডিয়া গিয়েই পণ্যের স্যাম্পল নিয়ে আসতে পারবেন।
তবে আপনি যদি নিজেই ইন্ডিয়া যান, তাহলে কম পক্ষে ৫-১০ পিস নিয়ে আসবেন ।
এতে করে আপনি স্যাম্পল বিক্রি করে কাস্টমারের ফিডব্যাক জানতে পারেন।
Exporter Code (IEC)
এবারের কাজ হলো ইন্ডিয়ান যে থ্রি পিস সেলার আছে তার Importer Exporter Code (IEC) আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।
কারণ
Importer Exporter Code (IEC) ছাড়া ইন্ডিয়া থেকে পণ্য রপ্তানি করা যায়না।
বিক্রেতা দোকানদারের এসব না থাকলে আপনি কোন এজেন্ট ধরে তাদের দিয়ে রপ্তানির
কাজ করিয়ে নিতে পারবেন। অনেক কোম্পানি আছে যারা এসব করে দিবে। এজন্য তাদের
কিছু ফি দেয়া লাগবে।আপনি বিভিন্ন দোকান থেকে পণ্য ক্রয় করে তাদের দিয়ে
আসলে তারা বাংলাদেশে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করে দিবে।
পি আই আনা
এবারের কাজ হল সেলারের কাছ থেকে পি আই বা Proforma Invoice আনা।
PI Proforma Invoice কি আমদানিতে PI এর গুরুত্ব কেন বেশি, এসব নিয়ে বিশাল
পোষ্ট আছে। দেখে নিবেন। পি আই তে আপনার কোম্পানির একটি সিল মেরে সাইন দিয়ে
আপনি যে ব্যাংক থেকে এলসি করতে চান সে ব্যাংকে চলে যাবেন। পি আইতে আপনার
পণ্যের দাম,
ওজন, পরিমাণ, আমদানিকারকের নাম, রপাতানি কারকের নাম, রপ্তানি
কারকের ব্যাংক আকাউন্ট নাম্বার ইত্যাদি উল্লেখ থাকবে।
ভারত থেকে কসমেটিক আমদানি করতে কত ট্যাক্স দিতে হবে??
এই বিষয়টা খুব জটিল । অনেকেই হিসেব করতে পারেননা কত ট্যাক্স আসতে পারে। আমি আগেও বলেছিলাম , যেসব পণ্য আমাদের দেশে উৎপাদন হয় সেসব পণ্য আমদানি করলে ট্যাক্স অনেক বেশী দিতে হয়। আমার কাছে নিচের HS Code টি ইন্ডিয়ান থ্রি পিস এর জন্য অধিক যুক্তি যুক্ত মনে হচ্ছে ৩৩০৪৯১০০ টোটাল ট্যাক্স আসে ১২৭.৮৪ টাকা । তার মানে আপনি ১০০০ টাকার ভারত থেকে কসমেটিক আমদানি করলে আপনাকে ট্যাক্স দিতে হবে ১২৭৮ টাকা ( কম বেশী)
এলসি করা
এবার পি আই নিয়ে কোন একটা ব্যাংকে চলে যাবেন। যত ডলার এল সি
করতে চান তাদের বলবেন। তবে এলসিতে আপনি যে পণ্য আমদানি করবেন মূল ক্রয় দাম
উল্লেখ করতে হয়।
খুব সাবধানে এলসি ফর্ম পুরন করতে হবে। এখানে আপনি যে
পণ্য আনবেন তার নাম এবং HS কোড এবং ফুল ভালু উল্লেখ করতে হবে। কোন ভাবেই
জেন HS কোড ভুল না হয়।
এবার ব্যাংক সকল কাগজ পত্র সেলারকে পাঠাবে। সেলার
সব যাচাই বাছাই করে, ট্রাক চালান, এল সি ফর্ম, পি আই, কমার্শিয়াল ইনভএস,
প্যাকিং লিস্ট পুনরায় বাঙ্কে পাঠাবে।
ব্যাংক সকল কাগজ পত্র সাইন করে আপনাকে দিয়ে দিবে।
পণ্য ছাড় করানো
এবার এসব আপনি বেনাপোল বা যে সীমান্ত দিয়ে আমাদনি করবেন সেখানে কোন সি এন্ড এফের মাধ্যমে কাস্টমে জমা দিবেন।
সি এন্ড এফে আপনাকে ৩-৪ দিনে পণ্য খালাস করে দিবে। সি এন্ড এফ কি তা নিয়ে বিশাল পোষ্ট আছে। দেখে নিবেন ।
ভারত থেকে কসমেটিক আমদানি সমস্যা
আপনারা এতক্ষণ যা বুজলেন টা হল নরমাল প্রচেসে কিভাবে আমাদনি করবেন।
কিন্তু ভারত থেকে কসমেটিক আমদানি সমস্যা অনেক । কারন ভারত থেকে অধিকাংশ
পণ্য চোরাই পথে আমদানি হয়ে থাকে। বিভিন্ন লাগেজ পার্টিরা ভারত থেকে কসমেটিক
আমদানি করে থাকে। ফলে তারা ট্যাক্স ছাড়াই পণ্য আমাদনি করে থাকে। আপনি যখন
পণ্য বৈধ পথে আমাদানি করবেন তখন আপনাকে সঠিক ট্যাক্স পরিশোধ করেই আমদানি
করতে হবে।
ফলে আপনি চোরা কারবারিদের সাথে পারবেন না। তারা আপনার
চেয়ে কম দামে বিক্রি করবে।
আবার
কসমেটিক আমদানি করতে হলে কিছু কিছু পণ্যের বি এস টি আই করতে হয়। এজন্য
আপনাকে অতিরিক্ত খরচ করতে হবে। এখন আপনার সিধান্ত নিতে হবে ভারত থেকে
কসমেটিক আমদানি করবেন কিনা। তা ছাড়া ভারতীয় কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যারা
নিজেরাই এ দেশে প্রতিষ্ঠান খুলে নিজেদের পণ্য নিজেরাই বিপনন করে থাকে । ফলে
তাদের সাথে আপনি দামে প্রতিজুগিতায় পড়বেন।