আমরা অনেকেই ব্যবসা শুরু করি কিন্তু সেটা সফলতার মুখ দেখতে পারেনা। আমি আজকে কিছু ভুল কারন আপনাদের সাথে আলোচনা করবো যে সব ভুল গুলি করার কারনে আমাদের ব্যবসা সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারিনা। মনোযোগ দিয়ে পোস্টটি পড়বেন ।
আমাদের প্রথম যে ভুল সেটা হলো
কম টাকায় ব্যবসা শুরু করতে চাই
অনেকেই
আমরা চাই ৫-১০ হাজার টাকা নিয়ে একটি ব্যবসা শুরু করতে। কিন্তু এই ব্যবসা
শুরু করতে গিয়ে আমদের যা হয় সেটা হলো ব্যবসাতো হয়ই না উপরন্তু আমরা আমাদের
সম্পূর্ণ পুঁজি হারিয়ে ফেলি। ধরুন আপনি চাচ্ছেন অনলাইনে কসমেটিক্সের
ব্যবসা করবেন। এবার আপনি ঢাকার চক বাজার থেকে ৫০০০ টাকার কসমেটিক্সে কিনে
অনলাইনে ব্যবসা শুরু করলেন। কিন্তু সমস্যা হলো আরেকজন ১ লাখ টাকা নিয়ে
কসমেটিক্সে ব্যবসা শুরু
করলো। উনি অবশ্যই আপনার থেকে কমে কিনতে পারবেন, কারন আপনি কিনবেন ৫০০০ টাকার আর উনি কিনবে ১০ লাখ টাকার ।
অথবা
উনি চাইলেই বিদেশ থেকে এগুলি আমদানি করে সেল করতে পারবেন। তখন তো আরো কমে
উনি কিনতে পারবেন। তাহলে ৫০০০ টাকার এই পণ্য নিয়ে আপনি ১০ লাখ টাকা
মূলধনের ব্যাক্তির সাথে কখনই টেক্কা দিতে পারবেন না। এর পর উনি ১ লাখ টাকায়
১০ টা আইটেম নিয়ে দোকান সাজাবে আর আপনি ৫০০০ টাকায় একটা আইটেমের অল্প কিছু
নিয়ে শুরু করবেন। দরকার নাই এভাবে ব্যবসা শুরু করার।
তাহলে এর কি সমাধান ? সমাধান একটাই সেটা হলো যাদের মূলধন কম তারা এই ৫-১০ হাজার টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করার দরকার নাই।
হ্যাঁ,
আপনার অনেক সখ ব্যবসা করার। সেটা আরো পরে পুরন করা যাবে। এখন আপনি একটা
চাকরি ধরেন। কোথাও থেকে একটা চাকরি জোগাড় করুন। ৫০০০ টাকার একটা ব্যবসা
থেকে আপনি কতই বা আয় করতে পারবেন। বড়জোর মাসে ১০০০ টাকা । তবে সেটা যদি হয়
ঝালমুড়ি বিক্রির ব্যবসা তবে হয়তো আপনি আরেকটু বেশী আয় করতে পারবেন। আর একটা
মাস ব্যগার খাটলেন । সময়ের মূল্য বুঝুন। ডেইলি আপনি একটা ব্যবসায় এক ঘণ্টা
সময় দিলেন। ত্রিশ দিনে ত্রিশ ঘণ্টা। ঘণ্টা যদি ১০০ টাকা করে ধরি তাহলেও
আপনি ব্যায় করলেন ৩০০০ টাকার সময়। আপনার দরকার একটা চাকরি জোগাড় করা যেখান
থেকে আপনি প্রতি মাসে একটা বেতন পাবেন। ধরুন আপনি মাসে ১৫০০০ টাকা বেতনের
একটা চাকরি জোগাড় করলেন ।
কিন্তু ব্যবসা থেকে এই ১৫০০০ টাকা আয়
করতে আপনাকে ইনভেস্ট করতে হবে কমপক্ষে ৩ লাখ টাকা। কারন ব্যবসায় ৫% এর বেশী
লাভ করাটা অনেক কস্ট সাধ্য ব্যপার। এর পর রিস্ক তো আছেই । ভুল হলে আপনি
পুজিও হারাতে পারেন।
এবারের কাজ হলো ১৫০০০ থেকে ২ হাজার করে জমা করতে থাকুন আর আপনার কাঙ্খিত ব্যবসা শিখতে থাকুন। বছরে ২৪ হাজার টাকা জোগাড় করতে পারবেন।
৫ বছর ধরে অপেক্ষা করুন। এই ফাঁকে আপনার ব্যাংকে জমবে ১২৫০০০ টাকা।
আর ৫ বছরে আপনি হয়ে যাবেন এই ব্যবসার মাষ্টার । এবার আপনার কাংখিত ব্যবসা শুরু করে দিন ধীরে ধীরে।
যদি মাসে ৫% ও আয় করতে পারেন তবে ৫০০০ টাকা+২০০০ টাকা= মোট ৭০০০ টাকা।
৫ বছরে অবশ্যই আপনার সেলারি ২০ হাজার টাকা হবে।
আপনি
চাইলেই এখন ৫০০০ টাকা জমা রাখতে পারেন। ৫০০০ টাকা প্রফিট+ ৫০০০ টাকা
সেলারি থেকে জমা = ১০ হাজার টাকা । বছরে আপনার জমা হবে ১২০০০০ টাকা।
টোটাল মূলধন হবে ২৪০০০০ টাকা। আপনি যদি মাসে ৫% ও প্রফিট করতে পারেন তবে আপনি পাবেন টোটাল ১২০০০+৫০০০ টাকা = টোটাল ১৭০০০ টাকা।
তাহলে
বছরে আপানার জমবে ২০৪০০০ টাকা। আর আপনার টোটাল মূলধন গিয়ে দাঁড়াবে ৪৪৪০০০
টাকা। তাহলে আপনার ব্যবসার মূলধন গিয়ে দাঁড়ালো ৫ লাখ এর
কাচা কাছি ।
দেখুন
এবার আপনি চাইলে পুরো
দমে ব্যবসা শুরু করতে পারবেন । সব কিছু ঠিক ঠাক
থাকলে মাত্র তিন বছরের মাথায় আপনার ব্যবসা হয়ে দাঁড়াবে ৫ লাখ টাকার মূলধনে ।
আপনাকে এবার হারাতে কষ্ট হবে।
তাহলে কম টাকায় ব্যবসা শুরু করার চিন্তা মাথায় থেকে বাদ দিয়ে একটা চাকরি জোগাড় করুন আর উপরের থিউরিটা চিন্তা করুন।
দ্বিতীয় যে ভুলটা আমরা করি সেটা হলো
ব্যবসা শিখতে আমরা সময় দিতে চাইনা।
একটা
চাকরির জন্য আমরা ১৭ বছর ধরে মাস্টার্স পাস করি আর ব্যবসা করতে গেলেই
চিন্তা করি কাল থেকেই আমি বিল গেটস হয়ে জাবো। আমাদের হাতে তখন আর সময়
থাকেনা। একটা ব্যবসা দাড়াতে ১৭ বছর লাগেনা ভাই। ১০ বছর যদি কেউ ব্যবসায় ঠিক
মত লেগে থাকে
তাহলে ব্যবসায় সফলতা আসবেই। কিন্তু সমস্যা হলো আমরা
ব্যবসা শুরু করি ১৭ বছর পড়া শুনা শেষ করে। আসলে তখন আমাদের দরকার ১ নং
সূত্র ফলো করা।
একটা চাকরি ম্যানেজ করে সেখান থেকে ৫ বছর টাকা জমিয়ে
ব্যবসাটাকে ভালো করে জেনে এর পর শুরু করা। তত দিনে ব্যবসা আর অভিজ্ঞতা
দুইটাই আপনার ভালো অবস্থানে চলে যাবে।
অথবা পড়াশুনা শেষ করে আপনি
এমন একটা চাকরি নিন যেখানে থেকে আপনার কাংখিত ব্যবসাটাও শিখা হবে। যেমন
ধরুন আপনি চাচ্ছেন আমদানি রপ্তানির ব্যবসা করবেন । এবার একটা আমদানি
রপ্তানির প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিতে পারেন। ৫ বছর যদি আপনি মাসে ৫০০০ করে
জমাতে পারেন তবে ৩ লাখ টাকা আপানার ক্যাশ জমে যাবে।
এবার শুরু করে দিন
ব্যবসা। আপনার জমানো টাকা দিয়ে স্যাম্পল আমদানি করে কাস্টমার ধরা শুরু করে
দিতে পারবেন। অথবা অন ডিমান্ড পণ্য আমদানি করে দিতে পারবেন।
পড়া
শুনা যেমন একটা শিক্ষা যেখানে ১৭ বছর শিক্ষা নেয়ার পর ২০-৩০ হাজার টাকা
সেলারি পান তেমনি একটা ব্যবসাও এক ধরনের শিক্ষা। ১৭ বছর দরকার নাই ।
৫
বছর ধরে শিক্ষা নিন। এর পর ৫ বছর ধরে ব্যবসা শুরু করলেই দেখবেন আপানার
মাসিক সেলারি কমপক্ষে ২ লাখ টাকা। দেখুন ২৫ বছরে আপনি হয়তো চাকরিতে প্রবেশ
করলেন ৩০ হাজার টাকা দিয়ে। ১০ বছর পর আপনি পাবেন ৭০-৮০ হাজার টাকা। ভালো
কোম্পানি হলে। কিন্তু ১০ বছর ধরে একটা ব্যবসা শুরু করলে মাসে ২ লাখ টাকা আয়
করতে পারবেন খুব সহজেই।
দেখুন আমরা ব্যবসাতে সময় দিতে চাইনা।
কিন্তু এটাও যে একটা শিক্ষা এবং সেটা আমাদের শিখতে হবে এই কথাটা আমরা
মানতেই চাইনা। সুতরাং ব্যবসা শিখতেও আমাদের সময় দিতে হবে।
আর
ব্যবসা না শিখে ব্যবসা করার মানে হলো ব্যবসায় নিশ্চিত লোকসান। কারন পড়া
শুনা না করে কেউ যদি চিন্তা করে সে বি সি এস পাস করবে তাহলে সেটা যেমন
অসম্ভব কিছু চিন্তা করা ছাড়া কিছুই না তেমন ব্যবসা না শিখে বিল গেটস হবার
চিন্তা করাটাও অসম্ভব কিছু।
ব্যবসা মানেই অনলাইনে বিক্রি বা দোকান দেয়া ।
এটা
হচ্ছে আমাদের আরেকটি ভুল। আমরা ব্যবসা মানেই মনে করি চক বাজার থেকে কিছু
পাইকারি কিনে অনলাইনে বা অফলাইনে কিছু বিক্রি করা। এটা আমাদের একটা ভুল
ধারনা। এখনকার যুগের ব্যাবসা মানেই পণ্য কেনা বেচা নয়। আপনি চাইলেই একটা
ডিজিটাল ব্যবসারা এজেন্সি খুলতে পারেন। যেমন এখন ফেসবুক বুস্টিং, গুগোল
অ্যাড দেয়া, ইত্যাদি ব্যবসা খুব রমরমা ব্যবসা। কেন আপনাকে বাজার থেকে পণ্য
কিনেই ব্যবসা করতে হবে আপনি চাইলেই ডিজিটাল যুগে একটা ডিজিটাল ব্যবসাও
শুরু করতে পারবেন। সুতরাং ব্যবসা মানে পণ্য না। দেখুন বর্তমান বিশ্বে
সবচেয়ে বেশী আয় করা ফেসবুকের কি কোন পণ্য আছে ? নাই। তারা ডিজিটাল পণ্য
বিক্রি করেই সবচেয়ে বড়োলোক । সুতরাং এসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন।
ব্যবসার নতুন আইডিয়া নিয়ে চিন্তা করুন।