বিউটি পার্লার সাজ নেয়া আজকাল একটা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক মেয়েদের নিত্যকার কাজের মধ্যে বিউটি পার্লার সাজ নেয়া একটা কাজ। রূপচর্চার বিষয়টি সেই আদিকাল থেকে চলে আসছে। আর রূপজগতের ভেলায় সবাই একটু হলেও নিজেকে ভাসিয়ে রাখতে পছন্দ করেন।
সময়ের সাথে সাথে সব কিছুই পরিবর্তিত হচ্ছে, সাজগোজের বিষয়েও আসছে নতুনত্বের ছোঁয়া। ঘরে বসেও রূপচর্চা করা যায় কিন্তু বিউটি পার্লার রূপচর্চায় এনেছে অনেক নতুন নতুন পদ্ধতি যা সবার মন কেড়েছে আর সেই সাথে ফ্যাশন এর বিষয় সম্পর্কেও সকলকে সচেতন করছে আগের থেকে অনেক বেশী। মানুষের এই রূপচর্চা বিষয়টিকে কাজে লাগিয়ে আপনিও শুরু করতে পারেন বিউটি পার্লার সাজ ব্যবসা। এই ব্যবসা শুরু করতে আপনাকে খুব বেশী টাকা খরচ করতে হবেনা। বিউটি পার্লার ডেকোরেশন করতে একটু বেশী টাকা খরচ করতে হয়। তবে আপনি চাইলে আপনার বাসায় কোন ছোট স্পেস নিয়েও শুরু করতে পারেন বিউটি পার্লার ব্যবসা।
কিভাবে শুরু করবেন বিউটি পার্লার ব্যবসা
আমাদের দেশে এখনো বিউটি পার্লার একটি ক্রম বর্ধনশীল ব্যবসা। এটার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বাংলাদেশে। আধুনিক সংস্কৃতিতে মেয়েরা বিউটি পার্লারে সাঁজতে পছন্দ করে। এজন্য এ ব্যবসাটা এখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তেছে। কিন্তু আমাদের সামাজিক প্রেক্ষিতে এখনো এই ব্যবসাটাকে মেনে নিতে পারেনা। অনেকেই এটাকে হীন কাজ ভাবে। তবে যাই হোক এসব প্রতিবন্ধকতাকে পাস কাটিয়ে আপনি যদি শুরু করতে পারেন তবে এটা হবে এখন অনেক ভালো ব্যবসা।
ব্যবসা শুরুর জন্যে স্থান নির্বাচন।
বিউটি পার্লার এর ব্যবসা শুরু করার আগে আপনাকে একটা সুন্দর যায়গা নির্বাচন করতে হবে। কারণ বিউটি পার্লার সাজ নিতে সাধারণত মেয়েরাই আসবে। সুতরাং যেসব স্থানে মেয়েরা অবাধে আসা যাওয়া করতে পারবে এমন কোন স্থানে বিউটি পার্লার ব্যবসা দেয়ার জন্য নির্বাচন করতে পারেন। সাধারণত কোন বাসা বাড়ির নিচ তলা, বাজার থেকে একটু দূরে যেখানে সাধারণ মানুষের আনাগোনা কম হবে, রিক্সা গাড়ির অবাধ চলাচল হয় এমন জাগায় বিউটি পার্লার দিলে ভালো হবে। একটু বড় পরিসরে এটা দিতে হবে।
সেখানে অবশ্যই পর্যাপ্ত পানি , ওয়াসরুম, গোসলের ব্যবস্থা থাকতে হবে। কারন অনেক সময় আপনার কাস্টমারকে গোসল করা বা ওয়াসরুমে যাবার প্রয়োজন হতে পারে। বিয়ের ক্ষেত্রে অনেক সময় বাড়ি থেকে গাড়ি বা রিক্সা দিয়ে কনে আসে। সে জন্য আপনাকে অবশ্যই জায়গা নির্বাচন করার আগে চিন্তা করতে হবে বিউটি পার্লার পর্যন্ত গাড়ি বা রিক্সা প্রবেশ করতে পারবে কিনা। এছাড়া আসে পাশের মানুষের আর্থিক দিক ও বিবেচনা করতে হবে। কারন আপনি যদি দরিদ্র এলাকায় কোন বিউটি পার্লার খুলে বসেন তবে সেখানে মানুষ আসবেনা। কারন তারা তাদের প্রয়োজনীয় দ্রব্র কেনার আগে কখনোই বিউটি পার্লার যাবেনা । এজন্য বিউটি পার্লার ব্যবসা দেবার আগে অবশ্যই মানুষের আয়ের দিক বিবেচনা করতে হবে।
যে দোকান বা ভবনে আপনারা বিউটি পার্লার ব্যবসা দিতে চান অবশ্যই সেটা মেয়াদের চলাচলের জন্য নিরাপদ হতে হবে। না হলে মেয়েরা সেখানে যাবেনা। প্রয়োজনীয় সি সি ক্যামেরা লাগাতে হবে। যাতে কেউ কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটাতে পারে।
নিজেকে কিভাবে বিউটি পার্লার ব্যবসার জন্যে দক্ষ করবেন ?
আসলে যে ব্যবসাই আপনি করবেন তার শুরুতে আপনাকে অবশ্যই সে ব্যবসা সম্পর্কে গভীর ধারনা নিতে হবে। এজন্যে বিউটি পার্লারকে ভালভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য একজন বিউটি পার্লার মালিক বা বিউটিশিয়ানকে পেশাগতভাবে দক্ষ হতে হতে হবে। একজন বিউটি পার্লার মালিক চাইলে বিউটিশিয়ান কোর্স করে নিতে পারেন। ঢাকাতে অধিকাংশ বিউটি পার্লার গুলিতে বিউটিশিয়ান কোর্স করানো হয়। সেখানে আপনি ইন্টার্ন বিউটিসিয়ান হিসেবে কাজ করতে পারেন।
এটা করলে এজন্যে ভালো হবে যে আসলে বিউটি পার্লারে যে প্রোডাক্ট গুলো সেগুলো কোথা থেকে কিনতে হয় সে সম্পর্কে আপনি ধারণা পেয়ে যাবেন।
আবার দেখা যাবে যে আপনি যে বিউটি পার্লারে কাজ করবেন সেখানের কিছু কাস্টমারও আপনি পেয়ে যাবেন যারা পরবর্তীতে আপনার কাস্টমার হিসেবে থেকে যাবে । যদি সে বিউটি পার্লারটি আপনার আশেপাশে কোথাও হয় যেখানে আপনিও কোন বিউটি পার্লার দেন । কারণ বিউটি পার্লার আসলে হচ্ছে একটি সার্ভিস রিলেটেড ব্যবসা । এই ধরনের ব্যবসাতে সবচেয়ে ভালো সার্ভিস যে দেবে কাস্টমার তার কাছেই যাবে।
এছাড়া বিউটি পার্লারের প্রোডাক্ট এর ক্ষেত্রে আপনার ভাল মন্দের অনেক ব্যাপার থাকে । এই সমস্ত প্রোডাক্ট অনেক সময় ভালো হয় বা অনেক সময় খারাপ হয় । ভালো মন্দ টা জানতে হলে আপনাকে অবশ্যই সেখানে প্র্যাকটিক্যালি কাজ করে জানতে হবে । তবে সেখানে অনেক সাপ্লাইয়ারের সাথে আপনার পরিচয় হবে যারা বিউটি পার্লারের এই সমস্ত প্রোডাক্ট গুলো বাকিতে দিয়ে যায় এবং পরবর্তীতে তারা টাকা নিয়ে যায় । আপনি যখন বিউটিপার্লার টা দিবেন তখন আগে থেকেই যদি এদের সাথে পরিচয় থাকে তাহলে আপনার এই পার্লারের চলতি মূলধনের জন্য তেমন বেশি ইনভেস্ট করতে হবে না এই সমস্ত প্রোডাক্ট গুলো আপনি তাদের থেকেই নিতে পারবেন ।
বিউটি পার্লার দিতে কত টাকা খরচ হবে?
একটা বিউটি পার্লার দিতে তেমন বেশী খরচ হবেনা। আপনি চাইলে আপনার বাসায় ও শুরু করতে পারেন বিউটি পার্লার ব্যবসা
। তবে যারা ব্যবসা আর নিজের লাইফকে আলাদা রাখতে চান তারা ভালো কোন শপিং মলে শুরু করতে পারবেন বিউটি পার্লার ব্যবসা। যদি দোকান নিয়ে শুরু করেন তবে আপনাকে অ্যাডভাঞ্চ বাবদ অবস্থান অনুযায়ী বেশ কিছু টাকা খরচ করতে হবে। সেটা ২ লাখ টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা হতে পারে। তবে বিউটি পার্লার ডেকোরেশন করতে একটু বেশী খরচ হয়। ৫০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকা খরচ হতে পারে। এছাড়া ভাল মানের আসবাবপত্র যেমন চেয়ার, আয়না, হেয়ার স্পা মেশিন, হেয়ার রিকভারি মেশিন, ফেসিয়াল মেশিন, হেয়ার হিটার লাগবে। সেই সাথে লাগবে ভালো মানের কসমেটিক্স এর। সব মিলিয়ে ৫ লাখ টাকা হলে আপনি শুরু করতে পারবেন বিউটি পার্লার ব্যবসা।
বিউটি পার্লার দিতে তেমন বেশি খরচ হবেনা কিন্তু আপনি যদি একটু আধুনিক মানের বিউটি পার্লার দিতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে কমপক্ষে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা দিয়ে শুরু করতে হবে একসাথে। তবে আপনি চাইলে আপনার বাসা থেকেও কিন্তু এটি শুরু করতে পারেন তবে সেটা খুবই খুবই সীমিত আকারে সেটা শুরু হবে কারণ বিউটি পার্লারের সবচেয়ে বেশি যে ব্যাপারটা সেটা হচ্ছে যে এটার লোকেশন টা খুব ভালো মানের হতে হবে এবং এটার ভিতরে যে ডেকোরেশন করা হবে সেটা সেটা খুব ঝক ঝকে থাকতে হবে তা না হলে আপনি তেমন কাস্টমার পাবেন না।
বিউটি পার্লারে বিভিন্ন ধরনের চেয়ার ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন ধরনের আয়না ব্যবহৃত হয় । যে সমস্ত অন্যান্য ইন্সট্রুমেন্ট গুলো রয়েছে যেগুলো বিউটি পার্লারের কাজে ব্যবহৃত হয় সেগুলোর অনেক বেশি দাম। ভালো মানের আসবাবপত্র যদি আপনি না কিনে মোটামুটি মানের আসবাবপত্র কিনেন সেক্ষেত্রে ভালো মানের যে কাস্টমার রয়েছে তারা আপনার এখানে আসবে না । আর ভালো মানের কাস্টমার যদি আপনার এখানে না আসে তাহলে সেখান থেকে আপনি আয় করতে পারবেন না । কারণ হচ্ছে একটু যদি আপার ক্লাসের লোকেরা আপনার এখানে আসা যাওয়া করে সেক্ষেত্রে আপনি তাদের থেকে অনেক বেশি চার্জ নিতে পারবেন। কারণ যারা একটু নিম্নআয়ের মানুষ তাদের কাছ থেকে তেমন বেশি চার্জ আপনি নিতে পারবেন না এবং তারা নিয়মিত আপনার এই বিউটি পার্লার আসবেও না।
সেজন্য আপনাকে অবশ্যই ভালো মানের চেয়ার আয়না হেয়ার স্পা মেশিন, হেয়ার রিকভারি মেশিন, ফেসিয়াল মেশিন, হেয়ার হিটার এগুলো খুব
দামী দামী নিতে হবে। তাহলে আপনি হাই ক্লাসের লোকদেরকে আপনার এই বিউটি পার্লারে আনতে পারবেন। তবে এই সমস্ত মূলধনী যন্ত্রপাতি গুলো আপনার
একবার ক্রয় করলেই হবে ।এগুলো বার বার কিনতে হবে না। আপনার পার্লারের কারিগরের পরিমাণ অনুযায়ী আপনি এগুলো ক্রয় করবেন । যেমন আপনার পার্লারের যদি আপনি তিনজন কারিগর রাখেন সে ক্ষেত্রে এই ধরনের তিনটা সেট আপনার ক্রয় করতে হবে।
এছাড়া বিউটি পার্লারে অবশ্যই এয়ারকন্ডিশন নিতে হবে কারণ এয়ারকন্ডিশন ছাড়া বিউটি পার্লারে কাজ করা সম্ভব হবে না । বিভিন্ন ধরনের বড় বড় বিয়ের আয়োজন গুলিতে আপনারা যদি কাজ করেন সে ক্ষেত্রে অবশ্যই এয়ারকন্ডিশনের এখানে লাগাতে হবে। বিউটি পার্লারের চলতি মূলধন তেমন বেশি লাগে না । আপনি ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকার মতো চলতি মূলধন ব্যবহার করলেই বিউটি পার্লার ব্যবসা শুরু করতে পারে। তবে আজকাল বিউটি পার্লারগুলোতে শুধুই কেবল বিউটি পার্লারের কাজ করা হয় না সেখানে বিভিন্ন ধরনের কসমেটিক্স আইটেম বিক্রি করা হয় , গার্মেন্টস আইটেম বিক্রি করা হয়, মেয়েদের আন্ডার গার্মেন্টস যেমন ব্রা-পেন্টি বিক্রি করা হয় । এরপর বিভিন্ন ধরনের দামি দামি কসমেটিকস বিক্রি করা হয়। সুতরাং আপনি চাইলে এই বিউটিপার্লার টা কে ছোটখাটো একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ বিক্রয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে তৈরি করতে পারেন। আবার অনেকে চায় যে বিউটি পার্লারের কিছু সরঞ্জাম নিজের বাসায় নিয়ে পরবর্তীতে সেগুলো দিয়ে কাজ করার জন্য । সেই ধরনের প্রোডাক্ট কিন্তু আপনি বিক্রি করতে পারবেন।
বিউটি পার্লার ডেকোরেশন
বিউটি পার্লার দেয়ার আগে ভালো কোন প্রতিষ্ঠান দিয়ে বিউটি পার্লার ডেকোরেশন করতে হবে। যদি তা সম্ভব না হয় তবে নিজেই দুই একটি পার্লার দেখে আপনার বিউটি পার্লার ডেকোরেশন করে নিতে পারেন। আপনি আপনার পার্লার এর রুমটি নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী সাজাতে পারেন। সাজানো গোছানোর বিষয়টা একান্তই নিজস্ব ইচ্ছের উপর নির্ভর করে। আপনি যেভাবে সাজাবেন সেভাবেই সেজে উঠবে আপনার পার্লার।
কোথায় পাবেন পার্লার সামগ্রী?
ঢাকার চক বাজারে পার্লার সামগ্রী কম দামে পাবেন। এছাড়া নিউ মার্কেটের পাশে চাঁদনি চক মার্কেটে পার্লার সামগ্রী কম দামে পাবেন। তবে চেষ্টা করবেন
আজে বাজে পণ্য ব্যবহার না করে ভালো মানের পার্লার সামগ্রী ব্যবহার করতে।
বিউটিশিয়ান কোর্স কোথায় করবেন ?
বিউটি পার্লারকে ভালভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য একজন বিউটি পার্লার মালিক বা বিউটিশিয়ানকে পেশাগতভাবে দক্ষ হতে হতে হবে। এজন্য চাইলে তিনি বিউটিশিয়ান কোর্স করে নিতে পারেন। ঢাকাতে অধিকাংশ বিউটি পার্লার গুলিতে বিউটিশিয়ান কোর্স করানো হয়। ভালো কোনো বিউটি পার্লার থেকে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন । প্রশিক্ষণ গুলো মোটামোটি ৩ মাসের হয়ে থাকে । ৩ মাসের প্রশিক্ষণ খরচ অবস্থা ভেদে ৩-৫ হাজার টাকা পড়তে পারে ।