মাত্র ১ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে
তা অল্পদিনের মধ্যেই কোটি টাকার ব্যবসায় রুপ দেওয়া সম্ভব। তবে এর জন্য দরকার সঠিক পরিকল্পনা
এবং কার্যকরী পদ্ধতি। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে নতুন ব্যবসা শুরু করার জন্য ১ লাখ টাকা
খুব বড় অংক না হলেও আজ আমরা আলোচনা করব কিভাবে এত অল্প পূজি দিয়ে ব্যবসা দাঁড় করিয়ে
ফেলবেন। আজ আমরা বেশ কয়েকটি বিজনেস আইডিয়া নিয়ে আলোচনা করব যেগুলো ১ লাখ টাকার মধ্যে
শুরু করা সম্ভব।
১. ক্যাটারিং সার্ভিস
বিভিন্ন অফিস বা দোকানে ব্যস্ত
জীবনের দুপুরের খাবারের সহজ সমাধান হল ক্যাটারিং সার্ভিস। ক্যাটারিং সার্ভিস বলতে মূলত
খাবার প্রস্তুত ও সরবরাহ ব্যবস্থাকে বুঝায়। ক্যাটারিং সার্ভিসে টার্গেট কাস্টমার হবে
চাকরিজীবী এবং বিভিন্ন দোকানদার। তাদের সাথে দৈনিক, সাপ্তাহিক বা মাসিক চুক্তির মাধমে
খাবার সরবরাহ করতে হবে। কোনো অফিস বা স্পেস ভাড়া না নিয়ে বাসায় থেকেই এ ব্যবসা শুরু
করা সম্ভব। এবার আসি কিভাবে শুরু করবেন ক্যাটারিং সার্ভিস ব্যবসা।
প্রথমে খাবার প্রস্তুতকারী
অর্থাৎ রাধুনি নির্ধারন করে নিতে হবে। আপনি নিজে বা পরিবারের কেউ এ দায়িত্ব নিতে পারেন।
অথবা রাধুনি নিয়োগ দিতে পারেন। তারপর খাবারের মেনু ঠিক করে নিতে হবে। ন্যূনতম ৫ থেকে
৬ টি মেনু ঠিক করে নিতে হবে। বাংলাদেশে দুপুরের খাবারে সাধারনত ভাত তরকারি থাকে। তাই
মেনুর মধ্যে ভাত, পোলাউ, মাছ, মাংস, ডাল ইত্যাদি আইটেমকে প্রাধান্য দিতে হবে।
তারপর বিজ্ঞাপনের কাজ শুরু
করে দিতে হবে। বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে অফলাইন এবং অনলাইন দুইভাবেই প্রচার করা যেতে পারে।
অফলাইনের ক্ষেত্রে ভিজিটিং কার্ড বা পোস্টার ব্যবহার করতে হবে। এবং বিভিন্ন অফিস আদালতে
যে লোকেরা পত্রিকা সরবরাহ করে তাদের সাথে কন্টাক্ট করে পত্রিকার সাথে করে বিজ্ঞাপনের
পোস্টার দিলে তা তুলনামূলক বেশি নজরে আসবে।
এভাবে বিজ্ঞাপন দেওয়ার কিছুদিনের
ভিতর অর্ডার আসা শুরু করবে। কোনো একটা অফিস থেকে
২/৩ জন কাস্টমার আসলে তাদের দেখাদেখি ওখান থেকে আরও কাস্টমার আসা শুরু করবে।
তাই খাবারের মানের দিকে ফোকাস দিতে হবে।
এখানে আমরা যে ক্যাটারিং ব্যবসা
নিয়ে আলোচনা করলাম এটা মূলত ড্রপ-অফ-ক্যাটারিং সার্ভিস। এ ব্যবসা শুরু করতে খুব সামান্য
পুঁজি দরকার হবে। বিজ্ঞাপন খরচ, রান্না করতে প্রয়োজনীয় বাসন-পত্র আর খাবার সরবরাহের
জন্য জিনিসপত্র কিনতে যা খরচ শুধু তাই ই। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা
ব্যয় করেই এ ব্যবসা শুরু করা সম্ভব।
২. অনলাইন নার্সারি
বর্তমান বাংলাদেশে নতুন পরিচিত
হওয়া ব্যবসাগুলোর মধ্যে অনলাইন নার্সারি ব্যবসা অন্যতম একটি। অনলাইনে নার্সারি ব্যবসা
করার জন্য আপনাকে ছোটোখাটো ভাবে একটি নার্সারি দিতে হবে। ছোটোখাটো বলতে ১ থেকে ২ কাঠা
জমির মধ্যে দিতে পারেন। এতে অনলাইনের কাস্টমারের পাশাপাশি সরাসরি গাছ বিক্রি করা যাবে।
তবে আরেকটি উপায় আছে। আশেপাশে
কোনো নার্সারি থাকলে তাদের সাথে চুক্তি করে নিতে পারেন। আপনার অর্ডার আসলে তাদের থেকে
নিয়ে বিক্রি করবেন।
অনলাইন নার্সারি ব্যবসা করার
জন্য প্রথমে একটি ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম পেইজ খুলে নিতে হবে। সেখানে গাছ, ছাদ বাগানের
গাছ বা বারান্দার গাছের যত্ন নিয়ে পোস্ট করতে হবে। এতে ফলোয়ার বাড়বে। মনে রাখতে হবে
এ ফলোয়াররাই পটেনশিয়াল কাস্টমার। কিছুদিন যাওয়ার পর সেল পোস্ট দেওয়া শুরু করতে হবে।
সেল পোস্ট দেওয়ার পর পোস্ট বুস্টিং করতে হবে। অনলাইনে নার্সারি ব্যবসা করলে শুধু যে গাছ বা গাছের চারা বিক্রি হবে এমনটা নয়। এর সাথে আরও অনেক ধরনের পন্যও বিক্রি করা যাবে। যেমন...
এ ব্যবসা শুরু করতে গেলে খুবই অল্প টাকা লাগবে পুঁজি হিসেবে। নিজে সরাসরি নার্সারি না দিয়ে অন্য কোনো নার্সারির সাথে চুক্তি করে ব্যবসা শুরু করলে কিছু টব, সার, কীটনাশক পাইকারি কেনা বাবদ টাকা, ফেসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়াতে বিজ্ঞাপন চালানো বাবদ খরচ সব মিলিয়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পূঁজি দিয়েই শুরু করা যাবে। ধীরে ধীরে কাস্টমার আসা শুরু করলে বিজ্ঞাপন বাবদ খরচ কমিয়ে দিলেও হবে। এ ব্যবসায় পন্যের মান ভালো ধরে রাখতে পারলে রিপিট কাস্টমার আসবে।
তবে নিজে সরাসরি নার্সারি দিলে
তাতে নার্সারির জন্য জায়গা ভাড়া নেওয়া, গাছ-মাটি কেনা, গাছে পানি দেওয়াসহ অন্যান্য
খরচ মিলে আরও ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকার প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ সর্বোচ্চ এক লাখ টাকার মধ্যে
এ ব্যবসা শুরু করা সম্ভব।
৩. অনলাইনে কোর্স বিক্রি করা
আপনি যদি কোনো একটি বিষয়ে পারদর্শী
হয়ে থাকেন তাহলে অনলাইনে ঐ বিষয়ের উপর কোর্স তৈরি করে বিক্রি করে ব্যবসা গড়ে তুলতে
পারেন। অনলাইনে কোর্স বিক্রি করার একটি বড় সুবিধা হল, বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে
আপনি কাস্টমার পাবেন। আর এ কোর্স তৈরি করা এবং বিক্রি করার জন্য বড় আকারের কোনো মূল্ধনের
প্রয়োজন নেই। একবার একটি কোর্স তৈরি করলে তা বারবার বিক্রি করা যাবে, যা আপনাকে এনে
দিবে প্যাসিভ ইনকাম।
এবার আসি কিভাবে শুরু করবেন।
প্রথমে বিষয়বস্তু নির্ধারন করে নিতে হবে। অবশ্যই এমন বিষয় ঠিক করে নিবেন যেটায় আপনি
নিজে দক্ষ এবং বাজার চাহিদাও আছে। তারপর ঐ বিষয়ে অন্য যারা কোর্স তৈরি করে তাদের কোর্স
দেখে নিবেন। তাদের কোর্সের দুর্বলতা খুজে বের করে নিজের কোর্স তৈরিতে সেসব বিষয়ে গুরুত্ব
দিতে হবে। তারপর ভিডিও তৈরি করে সাথে শিক্ষার্থীদের জন্য নোট, প্র্যাকটিস শীট, কুইজ
ইত্যাদি তৈরি করতে পারেন।
তারপর প্লাটফর্ম নির্বাচন করুন।
কোর্স বিক্রি করার জন্য বেশ কয়েকটি প্লাটফর্ম রয়েছে। যেমন-
এসব প্লাটফর্মে কোর্স আপলোড
করার পর তা বিক্রি করার জন্য মার্কেটিং করতে হবে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং লিংকড-ইনে
বিজ্ঞাপন প্রচার করতে হবে। সাথে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে হবে অর্থাৎ অন্যদের দিয়ে
কোর্সের প্রচার করাবেন এবং তাদের কমিশন দিবেন। উপরে দেওয়া প্লাটফর্ম ব্যবহার ছাড়াও
কোর্স বিক্রি করা যাবে। সরাসরি সোশ্যাল মিডিয়াতে মার্কেটিং করে কোর্স বিক্রি করা যাবে।
৪.কাগজের ব্যাগ তৈরির ব্যবসা
কাগজের ব্যাগ এখন একটি জনপ্রিয়
এবং প্রয়োজনীয় পণ্য হয়ে উঠেছে। এই চাহিদার প্রেক্ষিতে, কাগজের ব্যাগ তৈরির ব্যবসা
এখন একটি লাভজনক উদ্যোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রথমে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে
কাগজের ব্যাগ উৎপাদন করতে হবে। এতে অল্প পূঁজি দিয়ে শুরু করা যাবে। পাইকারিভাবে ১০০
– ২০০ কেজি কাগজ, আঁঠা এবং অন্যান্য উপকরন কিনে নিতে হবে। ব্যাগ তৈরি করে তা সরাসরি
স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে হবে।
ম্যানুয়াল সরঞ্জাম এবং উপকরণ
কিনতে ৩০,০০০৳ থেকে ৪০,০০০৳ খরচ হবে। কাগজ তৈরির কাঁচামাল কিনতে ২০,০০০৳ থেকে ২৫,০০০৳
খরচ হবে। সবমিলিয়ে ৫০,০০০৳ থেকে ৭০,০০০৳ বিনিয়োগ করে এ ব্যবসা শুরু করা সম্ভব।
এক লাখ টাকার মধ্যে খুব ছোট
আকারে কাগজের ব্যাগ তৈরির ব্যবসা শুরু করা সম্ভব। তবে এটি হবে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে
এবং সীমিত উৎপাদনের মধ্যে। যদি ব্যবসাটি লাভজনকভাবে চালাতে পারেন, তাহলে ভবিষ্যতে আরও
বিনিয়োগ করে অটোমেটিক মেশিন কিনে এবং উৎপাদন বাড়িয়ে ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে পারবেন।
৫.বেকারি ব্যবসা
ছোট পরিসরে বেকারি ব্যবসা শুরু
করা কম খরচে একটি লাভজনক উদ্যোগ হতে পারে। এক লাখ টাকার মধ্যে বাড়ি থেকেই মজাদার কেক,
কুকি, এবং অন্যান্য বেকারি পণ্য তৈরি করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি শুরু করা সম্ভব, যা
ক্রমে একটি সফল ব্যবসায় পরিণত হতে পারে।
এ ব্যবসা শুরু করার আগে মার্কেট
টার্গেট করে নিতে হবে এবং ঐ মার্কেটের কাস্টমারদের পছন্দ অপছন্দ নিয়ে জানতে হবে। কী
ধরনের পণ্য (কেক, পাউরুটি, বিস্কুট ইত্যাদি) বেশি জনপ্রিয় তা বোঝার চেষ্টা করুন। প্রাথমিকভাবে
কিছু জনপ্রিয় পণ্য (যেমন কেক, মাফিন, কুকি) তৈরি করে বিক্রি শুরু করুন। তারপর মেনু
ঠিক করে উৎপাদন এবং বিক্রি শুরু করে দিন।
এ ব্যবসা শুরু করতে প্রথমে
বেকিং সরঞ্জাম কিনতে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ হবে। আর বিভিন্ন কাঁচামাল কিনতে আরও
১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা লাগবে। পন্য প্যাকেজিং, বিপণন এবং অন্যান্য খরচ বাবদ আরও ২০
হাজার টাকা লাগবে। অর্থাৎ ৭০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকার মধ্যেই এ ব্যবসা দাঁড় করানো
যাবে।
ক্যাটারিং সার্ভিস, অনলাইন
নার্সারি, অনলাইনে কোর্স বিক্রি, কাগজের ব্যাগ তৈরি, এবং বেকারি ব্যবসা—এমন
কিছু উদ্যোগ যা অল্প পুঁজিতে শুরু করা যায় এবং সঠিকভাবে পরিচালনা করা হলে বড় আকারের
লাভজনক ব্যবসায় রূপান্তরিত হতে পারে। প্রতিটি ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে
মনোযোগ, পরিশ্রম, এবং ধৈর্যের প্রয়োজন, যা ভবিষ্যতে আরও বড় বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি
করবে। সঠিকভাবে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করতে পারলে, এই ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলোই হতে পারে
আপনার ভবিষ্যতের বিশাল সাফল্যের ভিত্তি।