বিরিয়ানি, কাবাব, কালাভুনা, কোরমা ইত্যাদি রান্নাতে জয়ফল অনন্য এক নাম।
রান্নার স্বাদ যেমন বাড়ায় তেমনি ভাবে সুগন্ধিও বাড়িয়ে দেয় এই জয়ফল। জয়ফল
মসলা শুধু যে স্বাদ এবং সুঘ্রান বাড়িয়ে দেয় তাই নয় জয়ফলএর পুষ্টিগুনও অনেক
ভালো।
জয়ফল গাছ চিরহরিত জাতীয় বৃক্ষ। ইন্দোনেশিয়া হল এর আদি নিবাস।
আমরা রান্নায় যে জয়ফল মসলা হিসেবে ব্যবহার করি তা শুকানো অবস্থায় থাকে।
কিন্তু এটি যখন গাছে থাকে তখন এটি রসালো একটি ফলের মত থাকে। তখন এটির খোসা
ছড়ালে ভিতরে একটি বীজ এবং ঐ বীজকে ঘীরে থাকে কয়েকটি টকটকে লাল পাপড়ি। ঐ
বীজটিই হল জয়ফল এবং পাপড়িগুলো হল জয়ত্রি। দুটির ঘ্রান এবং স্বাদ প্রায় একই
রকম। জয়ফল সাধারনত ১ ইঞ্চি থেকে ১.৫ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে। অর্থাৎ এটি ছোট
একটি ফলের মত।
জয়ফল গাছ সাধারনত ১০ থেকে ২০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়।
কিছুটা ধূসর বাদামী রঙের এ গাছটি দেখতে নলাকার এবং শাখা প্রশাখা যুক্ত।
গাছের বাকল মসৃন হয়।
ইন্দোনেশিয়া, চীন, মালেশিয়া, শ্রীলঙ্কা,
তাইওয়ান এসব দেশেই জয়ফল এবং জয়ত্রির অধিক উৎপাদন হয়ে থাকে। আমরা বাজারে যে
জয়ফল জয়ত্রি পাই তা মূলত অন্য দেশ থেকে আমদানিকৃত।
একনজরে জয়ফল এবং জয়ত্রির সংক্ষিপ্ত পরিচয়টা জেনে নেই।
নামঃ জয়ফল
ইংরেজি নামঃ Nutmeg
বৈজ্ঞানিক নামঃ Myristica fragrans
গোত্রঃ Mysristicaceae
আদি বাসস্থানঃ ইন্দোনেশিয়া
জয়ফলের উপকারিতাঃ
জয়ফলের
উপকারিতা তুলে ধরতে গেলে উপকারের তালিকা যেন শেষ হয় না। জয়ফল জয়ত্রিকে সকল
রোগের মহৌষধ বলা হয়। একটা সময় চিকিৎসকরা প্রায় সকল রোগ সারাতে জয়ফল
জয়ত্রির ব্যবহার করতেন। নিচে কয়েকটি উপকারিতার কথা তুলে ধরলাম।
১.
জয়ফল মানসিক চাপ এবং অবসাদ কমায়। আপনার যদি মানসিক চাপ বা অতিরিক্ত চিন্তা
থাকে তাহলে এই সমস্যার সমাধান হল জয়ফল। প্রাচীন রোমান এবং গ্রীকরা জয়ফলকে
ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করত।
২. পেটের ব্যথা এবং হজম সংক্রান্ত সমস্যা
কমায় জয়ফল জয়ত্রি। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সমাধানে খুব কার্যকরি ভূমিকা পালন
করে এই মসলা। এই প্রজন্মের মানুষ গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় কঠিনভাবে আক্রান্ত।
তারা কয়েকদিন পর পর ঔষধ পরিবির্তন করে। কোন লাভ হয় না। সমস্যা বাড়তেই
থাকে।
৩. কোস্টকাঠিন্য সমস্যা সমাধান করে এই জয়ফল জয়ত্রি।
৪.
মুখের ব্রন দূর করতে খুব কার্যকরি জয়ফল। জয়ফল গুড়ো করে এতে মধু মিশিয়ে
ব্রনের উপর লাগিয়ে ৩০ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিবেন। নিয়মিত
এমনটা করলে ব্রন বা মেসতা সেরে যাবে।
৫. দাতের ব্যাথা সারায় জয়ফল
জয়ত্রি। মাড়িতে সমস্যার কারনে অনেকেই দাতের ব্যথায় ভুগেন। এই সমস্যা দূর
করে জয়ফল। সামান্য পরিমান জয়ফলের তেল দাঁতে লাগিয়ে রাখলে দাতের দাতের ব্যথা
দূর হয়।
৬. লিভার ও কিডনি পরিস্কার রাখে জয়ফল জয়ত্রি। শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করে শরীরকে পরিষ্কার রাখে।
৭. রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস দুধের সাথে কিছু পরিমান জয়ফল গুড়া মিশিয়ে পান করলে ইনসোমনিয়ার সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
৮. জয়ফল রক্তের শর্করার পরিমান নিয়ন্ত্রন করে। বিশেষ করে ডায়বেটিস রোগিদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করে এই জয়ফল জয়ত্রি।
৯.
ক্লান্তি এবং অবসাদ দূর করার পাশাপাশি যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক
ভূমিকা পালন করে জয়ফল। যাদের বীর্য পাতলা তাদের বীর্য ঘন করে। এক সময় প্রায়
সকল যৌন সমস্যার সমাধান করা হত জয়ফল জয়ত্রি দিয়ে। আবার এটি শারিরিক
উদ্দীপনা বৃদ্ধি করে। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে কুসুম গরম দুধের সাথে এক
চিমটি জয়ফল গুড়ো মিশিয়ে খেলে ভাল উপকার পাওয়া যায়।
১০. মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে মাথাব্যথা দূর করে। কাচাঁ দুধ বা পানিতে জয়ফল গুড়ো মিশিয়ে মাথা বা কপালে মেসেজ করলে মাথা ব্যথা কমে।
জয়ফল কিভাবে গুড়া করতে হয় ?
অনেকেই
একটা প্রশ্ন করে থাকেন যে, জয়ফল কিভাবে গুড়া করতে হয়? জয়ফল যখন আপনি
কিনবেন সেটি শক্ত এবং ছোট আকারের ফলের মত থাকে। জয়ফল গুড়া করার আগে
সেগুলোকে একটু রোদে শুকিয়ে নিবেন। রোদে শুকানোর পরে চুলায় তাওয়ায় ভালমত গরম
করে নিতে হবে। তারপর জয়ফল গুড়ো করে ফেলবেন। রোদে না শুকালেও চলবে তবে ভাল
স্বাদ পেতে গুড়ো করার আগে অবশ্যই রোদে শুকিয়ে নিবেন। আর একটা বিষয় না বললেই
নয়, জয়ফল ব্যবহারের আগে এটি গুড়ো করবেন। অনেকেই অনেকগুলো কিনে একসাথে গুড়ো
করে রেখে দেয়। এটা মোটেই ঠিক নয়। এতে স্বাদ এবং পুষ্টিগুন দুই কমে যায়।
অল্প করে কিনে কিনে ব্যবহার করবেন। ব্যবহারের আগে রোদে শুকিয়ে গুড়ো করে
নিবেন।
জয়ফল এর দাম
জয়ফল এর দাম নিয়ে অনেকেই অনলাইনে খুজেন জয়ফলের
দাম লিখে। জয়ফল এর দাম সবসময় উঠানামা করে। বিশেষ করে ঈদের সময়। জয়ফল এর
দাম সিজনভেদে কেজিপ্রতি ১০০০ টাকা থেকে ২৫০০ হাজার টাকা পর্যন্ত থাকে। কোনো
সময় জয়ফল এর দাম আরও বেড়ে যায়। ই-বাই ডটকম থেকে জয়ফল বা জয়ত্রি কেনার আগে
সেলারের সাথে কথা বলে নিবেন। সেলারকে ফোন দিয়ে জয়ফল জয়ত্রির দাম এবং
অন্যান্য কন্ডিশন জেনে নিতে পারবেন।
জয়ফল খাওয়ার নিয়ম
• একটি পরিষ্কার বাটিতে জায়ফলের গুঁড়ো সরিয়ে তাতে দই এবং মধু মিশিয়ে নিন।
• এই মিশ্রণটি মুখে লাগান এবং ১৫-২০ মিনিটের জন্য রেখে দিন।
• ২০ মিনিটের পরে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
• এক গ্লাস দুধের সাথে এক চিমটি জায়ফলের গুঁড়ো খেলে শরীরের কোনও প্রভাব
পড়ে না।
• যে সমস্ত লোকেরা ঠান্ডা অনুভব করেন, তাদের অবশ্যই এই রেসিপিটি অনুসরণ করার চেষ্টা করা উচিত।
• জায়ফলের তেল পেশী ব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা এবং বাতের ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়।
• মুখের ঘা নিরাময় না হলে পানি দিয়ে জায়ফল রান্না করে সেই পানি দিয়ে ধুয়ে
ফেলুন।
• মুখের ফোস্কা কিছুক্ষণে সেরে যাবে।
• প্রসবের পরে, যদি কোনও মহিলার কোমর ব্যথা থাকে, তবে সকালে এবং
সন্ধ্যাবেলায় জায়ফলটি কোমরে লাগালে ব্যাথা কমে যায়।
• যদি ৯ মাস বয়সী বাচ্চার ডায়রিয়া হয় তবে জায়ফল তার জন্য প্যানিসিয়া হয়।
• একটি পেস্ট তৈরির জন্য মসৃণ পাথর দিয়ে জায়ফল পিষে নিন।
• তারপরে আপনার শিশুকে বুকের দুধ বা এক চামচ পানির মাধ্যমে খাওয়ান।
• আপনি তাৎক্ষণিক উপশম পাবেন।
•
শিশুরা প্রায়ই কাশি এবং সর্দিতে ভোগেন। এ জন্য গরুর ঘিতে সমপরিমাণ
জায়ফলের গুঁড়ো এবং শুকনো আদা মিশ্রিত করুন এবং সকালে এবং সন্ধ্যায় শিশু
এটি খাইলে তাড়াতাড়ি উপশম পাবে।
• যদি দাঁতে কোনও সমস্যা উপস্থিত থাকে
এবং ব্যথা হয় তবে খানিকটা জায়ফলের তেল নিয়ে দাঁতে ২-৩ ঘন্টা রেখে দিন।
এতে ব্যথা কমে যাবে, দাঁতের পোকাও মারা যাবে।
• যদি আপনি গর্ভধারণের কথা
ভবেন , তবে সমপরিমাণ জায়ফল এবং চিনির ৫০ গ্রাম মিছরি নিন। তারপরে পিরিয়ড
আসার পরে এটি ৬ গ্রাম পরিমাণে সেবন করুন।