আজকাল ফেলনা বস্তু থেকেও অনেক ভালো কিছু তৈরি করা যায়। অনেকেই আছেন যারা দেশের বিভিন্ন ফেলনা বস্তু দিয়ে উৎপাদন মুখি ও রপ্তানি
মুখি পণ্য তৈরি করে দেশ বিদেশে ভালো সুনাম কুড়িয়েছেন। নারকেলের মালা সম্পর্কে আপনারা অনেকেই জানেন। সাধারণত নারকেলের তেল উৎপাদনে
প্রচুর নারকেল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এসব নারকেলের উপরের শক্ত খোসাটাকে মালা বলা হয়।
আর
এই নারকেলের পরিত্যক্ত মালা থেকে বাণিজ্যিকভাবে বোতাম তৈরি করে সফল
উদ্যোক্তায় পরিণত হয়েছেন মাগুরা শহরতলির বরুণাতৈল গ্রামের শেখ আবদুল
হান্নান।
সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজ বাড়িতে গড়ে তোলা ব্যতিক্রমী এ কারখানায় এখন
প্রতি মাসে তৈরি হচ্ছে প্রায় ৩ লাখ বোতাম, যার বাজারদর প্রায় দেড় লাখ
টাকা।
ঢাকায় এক বন্ধুর গার্মেন্ট অ্যাকসেসরিজের দোকানে আসা-যাওয়ার
সুবাদে আবদুল হান্নানের চোখে পড়ে চীন থেকে আমদানি করা কিছু কাঠের বোতাম।
এরপর পোশাক কারখানার জন্য বিকল্প বোতাম তৈরির চিন্তা মাথায় ঢোকে তার। সে চিন্তা থেকেই তিনি নিজ বাড়িতে এসে ২০০৬ সালে
পরীক্ষামূলকভাবে
নারকেলের পরিত্যক্ত মালা থেকে বোতাম তৈরির কাজ শুরু করেন। শুরু থেকেই
এগুলো ঢাকার বিভিন্ন পোশাক কারখানায় সমাদৃত হতে থাকে।
পরে তিনি বাণিজ্যিকভাবে এ বোতামের উৎপাদন শুরু করেন।
আবদুল হান্নান প্রথমে ২০ হাজার টাকায় পাঁচটি ড্রিল মেশিন কিনে
কারখানা স্থাপন করেছিলেন। পরে মুনাফার অর্থ দিয়ে আরো ১০টি মেশিন কেনেন। একটি মেশিনে দৈনিক ৩০-৪০ হাজার বোতাম তৈরি করা সম্ভব।
প্রস্তুত প্রণালি:
পোশাক কারখানা রয়েছে, এমন জায়গায় কারখানা স্থাপন করতে হবে। প্রধান উপকরণ হচ্ছে নারকেলের মালা।
নারকেলের মালা মেশিনের সাহায্যে কেটে ছিদ্র করে মসৃণ করে নিলেই
তৈরি হয়ে গেল বোতাম।
প্রথমে ড্রিল মেশিনের মাধ্যমে ছিদ্র করে বোতামের আকার অনুযায়ী নারকেলের মালা থেকে বৃত্ত কেটে পৃথক করা হয়।
তারপর
বোতামের গায়ে অন্য একটি ড্রিল মেশিনে সুতা ভরার জন্য সূক্ষ্ম ছিদ্র করা
হয়। তারপর বৃত্তগুলো পাটের বস্তা দিয়ে ঘষে মসৃণ করা হয়।
পরে প্রতিটি
প্যাকেটে ১ হাজার করে বোতাম ভরা হয়। সর্বনিম্ন সাড়ে ৭ মিলিমিটার থেকে
সর্বোচ্চ ৪০ মিলিমিটারের বোতাম তৈরি হয় এ কারখানায়।
তবে পুঁজিস্বল্পতার কারণে কারখানার সম্প্রসারণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে হান্নান জানান।
তবে ইতালির তৈরি একই ধরনের লেজার মেশিনে এক লাখ বোতাম উৎপাদন করা সম্ভব। কিন্তু এ ধরনের একটি মেশিন কিনতে ৬০ লাখ টাকার প্রয়োজন।
পুঁজিস্বল্পতার কারণে এ মেশিন কেনা সম্ভব হচ্ছে না।
বাজারজাতকরণ:
পোশাক তৈরি প্রতিষ্ঠান, গার্মেন্টস বায়িং হাউসগুলো এর প্রধান ক্রেতা। যোগাযোগের মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ করা যায়।
সম্ভাব্য পুঁজি:
৫০০০০ টাকা থেকে ১০০০০০ টাকা পর্যন্ত
যা প্রয়োজন:
নারকেলের মালা, ড্রিল মেশিন, মসৃণ করার মেশিন।
লাভ লোকসানঃ
হান্নান জানান, তারা মাগুরাসহ বাগেরহাট সদর ও খুলনার রূপসা এলাকা থেকে প্রতি হাজার মালা ১-২ হাজার টাকা দরে কিনে আনা হয়।
প্রতি ১ হাজার নারকেলের মালা থেকে ছোটবড় মিলে ৩০ থেকে ৫০ হাজার বোতাম তৈরি হয়। আকারভেদে এক হাজার বোতামের উৎপাদন
খরচ দাঁড়ায় ২০০ থেকে ১ হাজার টাকা। বিক্রি হয় ২৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত। ঢাকার বিভিন্ন বায়িং হাউসে বোতামগুলো বিক্রি হয়।
এগুলো সাধারণত জ্যাকেট, শার্ট ও প্যান্টে ব্যবহূত হয়। বোতাম তৈরির পর নারকেলের মালার অতিরিক্ত যে অংশ থাকে, তা ঢাকার বিভিন্ন
মশার কয়েল তৈরির কারখানায় সরবরাহ করা হয়।