যারা আমদানি রপ্তানি ব্যবসায় নতুন আছেন তাদের অধিকাংশই জানেন না যে আলিবাবা কি? এমনকি বড় বড় ব্যবসায়ীরাও আলিবাবা জিনিসটা কি সেটার উত্তর জানেন না অথবা উত্তর খুঁজেছেন কিন্তু মনমতো উত্তর পাননি। যেকোনো ব্যবসায়ীদের জন্যই আলিবাবা সম্পর্কে জানা উচিত। আজকের আলোচনায় আমরা জানবো আলিবাবা আসলে কি? তাদের কাজ কি? আমি আলিবাবা থেকে কিভাবে উপকৃত হব? তাছাড়া আলিবাবা থেকে কিভাবে পন্য আনবো, কোন ধরনের পন্য আনবো,কিভাবে পন্য এবং বিক্রেতা যাচাই করব, এই সম্পর্কিত আরও অনেক তথ্য আমরা ইতিমধ্যেই দিয়েছি। আপনি চাইলে দেখে আসতে পারেন।আজ আমরা প্রাথমিক ধারনা থেকেই শুরু করব। চলুন শুরু করা যাক।
আলিবাবা হলো একটি চাইনিজ মাল্টিন্যাশনাল অর্থাৎ বহুজাতিক একটি ই-কমার্স ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। আলিবাবা বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ১০টি প্রতিষ্ঠানের একটি। আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা হলেন ১৯৬৪ সালের ১৫ই অক্টোবরে চীনের একটি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া সন্তান "জ্যাক মা"। জ্যাক মা যখন কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটের সাথে পরিচিত হন তখনই তার মাথায় ই-কমার্স ব্যবসার আইডিয়া চলে আসে। তারপর তার আরও কয়েকজন বন্ধু মিলে ৪ এপ্রিল ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেন আলিবাবা। আলিবাবার নামকরণ করা হয় সেই বিখ্যাত আরব গল্প "আলিবাবা এবং চল্লিশ চোর" গল্প থকেই। আলিবাবাকে ব্যবসায়ীদের একটি প্লাটফর্মও বলতে পারেন। এখানে মূলত পন্য বেচাকেনা হয়। বিশ্বের যত ধরনের পন্যই বলুন না কেনো আলিবাবায় আপনি প্রায় সবগুলোই পাবেন। আপনি আপনার যেকোনো পন্যও এখানে বিক্রি করতে পারেন। তার জন্য আপনাকে প্রথমে আপনার নামে বা আপনার প্রতিষ্ঠানের নামে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। তার পর আলিবাবাতে পন্যের বিজ্ঞাপন দিতে হবে। তারপর বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে যখন কোনো বায়ার ঐ পন্য সম্পর্কে সার্চ করবে তখন সে আপনার বিজ্ঞাপনটিও দেখতে পাবে। তারপর সে আপনার সাথে যোগাযোগ করে পন্য ক্রয় করবে। আবার আপনার কোনো ধরনের পন্যের প্রয়োজন হলে আলিবাবা থেকে ক্রয় করতেও পারেন। তবে পন্য ক্রয় করতে আপনার অ্যাকাউন্ট না থাকলেও হবে।
ব্যবসা শুরু করার প্রথম বছরেই আলিবাবা প্রায় ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ পায় আমেরিকার বিখ্যাত Golden Sachs এবং জাপানের বিখ্যাত Soft Bank থেকে। ব্যবসায় প্রথম লাভের মুখ দেখতে আলিবাবাকে প্রায় ৩ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। আলিবাবার প্রথম লক্ষ ছিল শুধু চীনের সাধারণ মানুষকে সেবা প্রদান করবে। কিন্তু আলিবাবার ব্যবসা এখন পুরো বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত। আর বর্তমানে চীনের বাইরে আলিবাবার সেলার থেকে বায়ারের সংখ্যা বেশি। এমনকি চীনে বিশ্বের বড় একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান E-Bay ব্যবসা করতে গিয়ে আলিবাবার কারণে টিকতে পারেনি। চীনভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা দেখে Yahoo আলিবাবায় টাকা বিনিয়োগ করার চিন্তা ভাবনা শুরু করে এবং শেষে ২০০৫ সালে Yahoo প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারে ৪০% শেয়ার কিনে নেয়। আর সেই ৪০% শেয়ারের বর্তমান মূল্য প্রায় ১০ বিলিয়ন ইউএস ডলার।
বর্তমানে আলিবাবা বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায় জড়িয়ে পরছে। তাদের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাবে ব্যবসা করছে। আলিবাবা ক্লাউড, আলিপে, তাওবাও, টিমল, পে টিএম, আলি এক্সপ্রেস, আলিমামা, আলিওয়াংথেং এগুলো সব আলিবাবার অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। এমনকি বাংলাদেশের দারাজ নামক প্রতিষ্ঠানটিও সম্পুর্ণ মালিকানাধীন। বাংলাদেশের খাবার ডেলিভারি প্রতিষ্ঠান হাংরিনাকি, এটাও আলিবাবার মালিকানাধীন। বি টু বি, বি টু সি, সি টু সি সকল ধরনের ব্যবসাই বর্তমানে আলিবাবা করছে। তারা প্রায় ২০০টি দেশে ছড়িয়ে আছে।
আশা করি আলিবাবা সম্পর্কিত প্রাথমিক ধারনা পেয়েছেন। আপনার মতামত বা কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে জানাবেন। ধন্যবাদ।