কিভাবে ড্রোন আমদানি করবেন , ড্রোন আমদানি নীতিমালা ২০২০ ( How to import drone, Drone Import Policy 2020 )
Posted on: 2022-05-14 19:55:16
| Posted by: eibbuy.com
বর্তমান এই প্রযুক্তির যুগে মনুষ্যবিহীন আকাশযান বা ড্রোন আর বিরল নয়। বর্তমানে গবেষণার কাজে এবং দুর্গম স্থানের চিত্র ধারণে ও সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নানা কাজে, ব্যক্তিগত শখ পূরনে এখন ড্রোন ব্যবহার হচ্ছে। সর্ব সাধারনের যে কোন স্থানে ড্রোন যথেচ্ছ ব্যবহারে বিমান উড্ডয়নে বাধাগ্রস্ত হতে পারে বা জননিরাপত্তা এমনকি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা পর্যন্ত বিঘ্নিত হতে পারে এই কথা ভেবে বাংলাদেশ সরকার ড্রোন আমদানি নীতিমালা এবং ড্রোন উড্ডয়ন নীতিমালা ২০২০ প্রনয়ণ করেছেন । কিন্তু সে নীতিমালায় ড্রোন আমদানি নীতিমালা বিস্তারিত ভাবে বর্ননা নেই। যে সকল ড্রোন ৫ কেজির উপরে সেগুলো নিয়ে বর্ননা রয়েছে। কিন্তু এর নিচে হলে কি হবে সেটা লিখা নেই। ড্রোন আমদানি ও উড্ডয়ন নীতিমালা ২০২০ এ ড্রোন উড্ডয়ন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা আছে। ড্রোন আমদানি বা বানানোর অনুমতি কঠিন হয়ে পড়ায় বর্তমানে দেশে চাহিদার দিকে তাকিয়ে এখন প্রচুর ড্রোন আমদানি হচ্ছে অবৈধভাবে। আজকের পর্বে আমরা অলোচনা করব কিভাবে ড্রোন আমদানি করবেন, ড্রোন আমদানি নীতিমালা বিস্তারিত ভাবে অলোচনা করব।
(*) ড্রোন আমদানি, তৈরি ও সংযোজন-ড্রোন বা ড্রোনের যন্ত্রাংশ আমদানি, তৈরি ও সংযোজন-এর ক্ষেত্রে নিম্নবর্ণিত শর্তাবলী পালন করতে হবে
(১) সরকারের আমদানি নীতিমালা অনুসারে এবং শিল্প মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত পদ্ধতিতে ড্রোন বা ড্রোনের যন্ত্রাংশ আমদানি অথবা ড্রোন তৈরি ও সংযোজনের কারখানা স্থাপন করতে হবে। ৫ (পাঁচ) কেজির (Payload-সহ) বেশি ওজনের ড্রোন উৎপাদনের ক্ষেত্রে জননিরাপত্তা বিভাগের অনাপত্তি গ্রহণ করতে হবে। তবে খেলনা জাতীয় ড্রোন উৎপাদনের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার অনুমতি গ্রহণের প্রয়োজন হবে না।
(খ) ক, খ ও গ শ্রেণির জন্য ৫ (পাঁচ) কেজির (Payload-সহ) বেশি ওজনের ড্রোন বা ড্রোনের যন্ত্রাংশের ক্ষেত্রে, আমদানির পূর্বেই, ড্রোন বা ড্রোনের যন্ত্রাংশের বিস্তারিত সুনির্দিষ্ট বর্ণনা (Specification) স্পেসিফিকেশন ও সংখ্যা উল্লেখসহ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি গ্রহণ করতে হবে।
(গ) প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তিপত্র ইস্যুর ১ (এক) বছরের মধ্যে অনুমোদিত স্পেসিফিকেশন মোতাবেক ড্রোন ড্রোন যন্ত্রাংশসমূহ আমদানি করা যাবে এবং আমদানি পরবর্তী সময়ের জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অন্য কোনো নির্দেশনা থাকলে তা প্রতিপালন করতে হবে
(ঘ) প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তির কপি ও অনুমোদিত স্পেসিফিকেশনের কপিসহ কাস্টমস কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত পদ্ধতিতে প্রযোজ্য শুল্ক পরিশোধ করে ৫ (পাঁচ) কেজির (Payload-সহ) বেশি ওজনের ক, খ ও গ শ্রেণিভুক্ত ড্রোন আমদানি করা যাবে এবং এ সময় কাস্টমস কর্তৃপক্ষের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তির মূলকপি ও অনুমোদিত স্পেসিফিকেশনের মূলকপি প্রদর্শনে আমদানিকারী বাধ্য থাকবে।
(ঙ) ড্রোন তৈরি ও সংযোজনের কারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে ড্রোনের বিস্তারিত স্পেসিফিকেশন উল্লেখসহ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি গ্রহণ করতে হবে এবং অনুমোদিত স্পেসিফিকেশনের বাইরে নতুন স্পেসিফিকেশনের ড্রোন তৈরির ক্ষেত্রেও পুনরায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি গ্রহণ করতে হবে।
(*)বিবেচনামূলক ক্ষমতা—এ নীতিমালার পূর্বোক্ত অনুচ্ছেদসমূহে যা কিছুই থাকুক না কেন, বেসামরিক বিমান চলাচল, রাষ্ট্রীয় এবং জননিরাপত্তার স্বার্থে অথবা অন্য কোনো কারণে সরকার যে কোনো সময়ে যে কোনো বেসামরিক ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের ড্রোন নিবন্ধন ও উড্ডয়নের অনুমোদন মঞ্জুর/বাতিল/প্রত্যাখ্যানের ক্ষমতা সংরক্ষণ করবে।
সুতরাং উপরের বিষয় থেকে আমরা বুঝতে পারলাম, আপনি যে পোর্ট দিয়ে ড্রোন আমদানি করবেন সে পোর্টে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সমসাময়িক বিষয় খেয়াল রেখে এবং পোর্ট এর রুলস মেনে আপনার ড্রোন ক্লিয়ারিং এর অনুমোদন দিবে। তাই যারা বৈধ ভাবে ড্রোন আমদানি করবেন তারা আমদানি করার পূর্বে যে পোর্ট দিয়ে ড্রোন আমদানি করবেন সে পোর্টে কাস্টমস ডাটা শিট নিয়ে নিবেন । এবং সে পোর্ট দিয়ে ড্রোন ক্লিয়ারিং হয়েছে কিনা হলে কিভাবে ক্লিয়ারিং এর অনুমোদন দিয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিবেন। তা না হলে আপনি লোকসানে সমুক্ষিন হবেন।
যারা ড্রোন উড্ডয়ন করতে চান তারা ড্রোন এর নিবন্ধন করতে হবে। তবে সকল শ্রেণির ড্রোন এর জন্য নিবন্ধন করার প্রয়োজন নেই।
(ক) ‘খ’ ও ‘গ’ শ্রেণির ড্রোন বেবিচক-এর ANO-তে নির্ধারিত ফর্মে ও পদ্ধতিতে আবেদন করে বেবিচক-এর নিকট হতে ড্রোনের নিবন্ধন/পরিচিতি নম্বর গ্রহণ করতে হবে;
(খ) ‘ক’ শ্রেণির ড্রোন ১০০ (একশত) ফুটের (৩০.৪৮ মিটার) বেশি উচ্চতায় উড্ডয়ন ক্ষমতাসম্পন্ন হলে অথবা ৫ (পাঁচ) কেজির (Payload-সহ) বেশি ওজনের হলে উক্ত ড্রোনের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক;
(গ) ড্রোন নিবন্ধনের জন্য নিম্নবর্ণিত কাগজপত্রাদি বেবিচক-এর নিকট দাখিল করতে হবে
(৮) প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তিপত্র (প্রযোজ্যক্ষেত্রে); এবং
(৯) বেবিচক-এর চাহিদা মোতাবেক অন্যান্য কাগজপত্র/তথ্য।
(ঘ) প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, বিটিআরসি, ও বেবিচক তাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ‘অনাপত্তি’ / প্রত্যয়নপত্র গ্রহণ, নিবন্ধন ও উড্ডয়নের অনুমতি প্রাপ্তির পদ্ধতি সম্পর্কে জনসাধারণের অবগতির জন্য প্রচার করবে।
(ঙ) ড্রোন উড্ডয়নকালে সৃষ্ট যে-কোনো অ্যাচিত জরুরি পরিস্থিতি, যেমন : ড্রোনের ব্যাটারি/ উড্ডয়নের শক্তি ফুরিয়ে যাওয়া, ড্রোনটি নিয়ন্ত্রণসীমার বাইরে চলে যাওয়া, ড্রোনের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা, অনিচ্ছাকৃত কারণে কোনো প্রাণি সম্পত্তির জন্য হুমকি/ক্ষতির সম্ভাবনা ইত্যাদি সৃষ্টি হলে তা মোকাবিলার জন্য লিখিত পরিকল্পনা থাকতে হবে।
(চ) ‘ক’ {৫ (পাঁচ) কেজির (Payload-সহ) ঊর্ধ্বে}, ‘খ’ ও ‘গ’ শ্রেণির ড্রোনের ফ্রিকোয়েন্সি অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থার (রেডিও, টেলিভিশন, মোবাইল, স্যাটেলাইট ও এভিয়েশন) জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী নয় মর্মে বিটিআরসি-এর প্রত্যয়ন সংগ্রহ করতে হবে।
(*) বাংলাদেশ সরকার ড্রোন উড্ডয়ন জোন বিমান ও জনসাধারণের সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ড্রোন উড্ডয়ন জোনকে ৩ ভাগে বিভক্ত করে।
(ক) গ্রিন জোন (এ জোনে ড্রোন উড্ডয়নে কোনো প্রকার অনুমতির প্রয়োজন হবে না)
(১) বিমানবন্দর /কেপিআই-এ ই-এর ৩ কিলোমিটার বাইরে এবং ৫ (পাঁচ) কিলোমিটার-এর কম দূরত্বে ৫০ (পঞ্চাশ) ফুটের (১৫.২৪) মিটার অধিক উচ্চতায় ড্রোন উড্ডয়ন কোন অনুমতি লাগবে না।
(২) বিমানবন্দর/কেপিআই-এর ৫ (পাঁচ) কিলোমিটার বাইরে এবং ১০০ (একশত)
ফুটের (৩০.৪৮ মিটার) অধিক উচ্চতায়
(খ) ইয়োলো জোন (অনুমতি সাপেক্ষে পরিচালনা) সংরক্ষিত এলাকা (Restricted Area), সামরিক এলাকা (Military Area), ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা (Populated Area), জনসমাগমপূর্ণ এলাকা (Congested Area) আবশ্যক অনুমতি নিয়ে ড্রোন উড্ডয়ন করতে হবে।
(গ) রেড জোন (বিশেষ অনুমতি সাপেক্ষে পরিচালনা) : নিষিদ্ধ এলাকা (Prohibited Area), বিপজ্জনক এলাকা (Danger Area), বিমানবন্দর ( Airport)/কেপিআই (KPI)/ বিশেষ কেপিআই (Special KPI) এ জোনে ড্রোন উড্ডয়ন সর্বসাধারণ এর জন্য উন্মুক্ত নয়।
বাংলাদেশ সরকার থেকে প্রনয়ন করা ড্রোন আমদানি নীতিমালার পূর্বোক্ত অনুচ্ছেদ সমূহে যা কিছুই থাকুক না কেন, বেসামরিক বিমান চলাচল, রাষ্ট্রীয় এবং জননিরাপত্তার স্বার্থে অথবা অন্য কোনো কারণে সরকার যে কোনো সময়ে যে কোনো বেসামরিক ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের ড্রোন নিবন্ধন ও উড্ডয়নের অনুমোদন মঞ্জুর/বাতিল/প্রত্যাখ্যানের ক্ষমতা সংরক্ষণ করবে। তাই আমাদের উচিত অযথা ড্রোন উড্ডয়ন না করা । এবং দেশের আইন মেনে বিদেশ থেকে ড্রোন আমদানি করা ।