কিভাবে শুরু করবেন সোনালী মুরগির খামার, সোনালী মুরগি পালন পদ্ধতি
Posted on: 2022-04-12 20:54:53
| Posted by: eibbuy.com
মাংস বা ডিম উৎপাদন এর জন্য কক মুরগী হিসেবে সোনালী মুরগি পালন বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে । কারণ হিসেবে খামারিরা বলছে সোনালি মুরগির রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং এর বাজার চাহিদা খুব ভালো থাকা। নতুন করে যারা খামার করতে চান, তাদের অনেকেই প্রথমে সোনালি মুরগি দিয়ে খামার শুরু করার কথা চিন্তা করেন। আজকের পর্বে আমরা অলোচনা করব,
কেন সোনালী মুরগির পালন লাভজনক,, কিভাবে সোনালী মুরগির বাচ্চা নির্ধারণ করতে হয়,, সোনালী মুরগির খামারের সেড কিভাবে নির্মাণ করতে হয়,, খাদ্য ব্যবস্থাপনা,, সোনালী মুরগির টিকা কি?? ,, সোনালী মুরগির খামারে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস এবং সর্বশেষ আলোচনা করব সোনালী মুরগির বিক্রির বিষয় নিয়ে।
কেন সোনালি মুরগী পালন লাভজনক??
সোনালি মুরগির জাত বাংলাদেশের আবহাওয়া উপযোগী। অপরদিকে সোনালী মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই ভালো।হাইব্রিড জাতের তুলনায় সোনালি মুরগির রোগ-বালাই বেশ কম। সোনালী মুরগির আবহাওয়া পরিবর্তনের তেমন প্রভাব এর উপর পড়েনা।আপনি যদি নিয়মিত টীকা প্রদান করেন এবং খামারের জৈব নিরাপত্তা মেনে চললে খামারে রোগ-বালাই আনুপাতিক হারে কম দেখা যায়। অপরদিকে ব্রয়লার মুরগির মাংসের প্রতি অনেকের অনীহা থাকলেও সোনালি মুরগির মাংসের চাহিদা ব্যাপক। বাজার দর বেশ ভালো থাকায় এর বানিজ্যিক গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবং খামারিদের কাছ থেকে খুচরা ব্যাবসায়ীরা ভালো দামে ক্রয় করছে। এতে খামারিদের ভালো লাভ হচ্ছে।
সোনালী মুরগির বাচ্চা নির্বাচন
সোনালি একটি স্বতন্ত্র মুরগির জাত হলেও বর্তমানে এর কিছু ভ্যারিয়েশন বাজারে বিদ্যমান রয়েছে যেমনঃ সোনালি ক্লাসিক ও হাইব্রিড সোনালি।
সত্যিকার সোনালি অর্থাৎ আর-আই-আর ও ফাউমি মুরগির সংকরায়নে সোনালী মুরগির জাত উদ্ভাবিত হলেও ইনব্রিডিং ও বিভিন্ন কারনে এর মূল জাতের বৈশিষ্ট্য লোপ পেয়েছে। ফলে জাত উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন হ্যাচারি অন্যান্য ভারি জাতের মুরগির সাথে ক্রসব্রিড করে সোনালির জাত উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এজন্যই বাজারে সোনালী মুরগীর বিভিন্ন ভ্যারিয়ান্ট বিদ্যমান। তবে অনেক খামারিদের কাছে আলোচনা করে তারা বলছেন হাইব্রিড জাতের সোনালী মুরগির ভালো নয় কারণ এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব কম। তবে এ জাতের সোনালী মুরগির খুব বড় হবে। আপনি যদি নতুন খামারি হয়ে থাকেন তাহলে প্রথমত এই জাতের সোনালী মুরগির না অনাই ভালো। এর পরেও যদি মনে হয় তাহলে আপনার আশে পাশের খামারি বা আপনার জেলা বা উপজেলা প্রাণীসম্পদ অফিসে গিয়ে পরামর্শ নিবেন। তারা আবশ্যই তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবে।
এবার আলোচনা করব ভালো মানের সোনালি মুরগির বাচ্চার বৈশিষ্ট্যসমূহঃ
১। একটি ভালো মানের বাচ্চার ওজন
সোনালি (ক্ল্যাসিক) মুরগির বাচ্চার ওজন ২৫ – ৩০ গ্রাম হয়ে থাকে।
সোনালি (হাইব্রিড) মুরগির বাচ্চার ওজন ৩০ – ৩৫ গ্রাম হয়ে থাকে।
২। ভালো মানের মুরগির বাচ্চা লম্বায় ১৭.৫ সেঃমিঃ হয়ে থাকে। ভালো মানের বাচ্চার ওজন ও আকারের মধ্যে সমতা থাকে।
৩। মুরগির ভালো মানের বাচ্চা ঝড়ঝড়ে, শুষ্ক ও কিচিরমিচির শব্দ করে থাকে।
৪। ভালো মানের মুরগির বাচ্চার আচরণ হবে সতর্কমূলক এবং শব্দের প্রতি সংবেদনশীল।
৫। ভালো মানের বাচ্চার নাভীর চারিপাশ শুষ্ক এবং ডাউন ফেদারবিহীন হবে না অর্থাৎ পশম থাকবে। ডাউনফেদার শুষ্ক, নরম এবং সমস্ত শরীরকে ঢেকে রাখবে।
৬। ভালো মানের বাচ্চার পায়ের অনাবৃত অংশ সচ্ছ এবং চকচকে হবে। হক জয়েন্ট ফোলা বা লাল হবেনা কিন্তু হলুদ হবে।
৭। ভালো বাচ্চার মৃত্যুর হার ১% বেশী হবে না এবং দ্বিতীয় সপ্তাহে তা ১.৫% এর বেশী হবেনা।
৮। বাচ্চার পা এবং ঠোট বাকা বা কোঁকড়ানো হবে না। এছাড়াও পায়ুপথ শুকনো হবে।
সোনালী মুরগির বাচ্চা ক্রয় করার সময় এসব বিষয় গুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাড়াতাড়ি করে নিয়ে আসা যাবে না এর কোনটা অনুপস্থিত থাকলে আপনি লোকসানে সমুখীন হবেন।
কিভাবে সোনালী মুরগির ঘর প্রস্তুত করতে হয়ঃ
সোনালী মুরগী পালনে ঘর হবে পূর্ব-পশ্চিম বরাবর লম্বা। অথবা বাতাস চলাচল করে এরুপ অবস্থানে যেন একদিক দিয়ে বাতাস ডুকে অপর দিক দিয়ে বের হয়ে যায়। প্রস্থ সাধারনত ২০ থেকে ২৫ ফুট এবং দৈর্ঘ্য ১৫০ ফুট বা চাহিদা অনুযায়ী করা যেতে পারে।
মেঝে হবে মাটি থেকে কমপক্ষে এক ফুট উচুতে। এবং চারপাশ ভালোভাবে নেট দিয়ে ঘেরা দিতে হবে এমন নেট ব্যবহার করতে হবে যেন আলো বাতাস ডুকে । নেট উপর পর্দা দিতে হবে যেন ঝড় বা বৃষ্টি এবং শীতের সময় ডেকে রাখা যায়। এরুপ ভাবে তৈরি করতে হবে যেন বাহির হতে কোন কিছু শেডে প্রবেশ করতে না পারে।
ডিমের জন্য পালন করলে প্রতিটি মুরগির জন্য ১.৫ বর্গফুট জায়গা প্রয়োজন।
বয়স ও ধরণ অনুযায়ী সোনালি মুরগির প্রয়োজনীয় জায়গার পরিমাণঃ
সোনালি ক্ল্যাসিক
বয়স (সপ্তাহ) বর্গফুট/বাচ্চা
১ম সপ্তাহ ০.২০ বর্গফুট
২য় সপ্তাহ ০.৪০ বর্গফুট
৩য় সপ্তাহ ০.৫০ বর্গফুট
৪র্থ সপ্তাহ ০.৬০ বর্গফুট
৫ম সপ্তাহ ০.৭০ বর্গফুট
৬ষ্ঠ সপ্তাহের অধিক ০.৮৫ বর্গফুট
সোনালি হাইব্রিড
বয়স (সপ্তাহ) বর্গফুট/বাচ্চা
১ম সপ্তাহ ০.২০ বর্গফুট
২য় সপ্তাহ ০.৪০ বর্গফুট
৩য় সপ্তাহ ০.৬০ বর্গফুট
৪র্থ সপ্তাহ ০.৮০ বর্গফুট
৫ম সপ্তাহ ০.৯০ বর্গফুট
৬ষ্ঠ সপ্তাহের অধিক ১.০০ বর্গফুট
একটি সোনালী মুরগির বাচ্চা হিসেবে।
ব্রুডিং ব্যবস্থাপনাঃ
সোনালী মুরগির বাচ্চা সঠিক পরিচর্যা মাধ্যমে আপনার ব্যবসা হতে পারে একটি লাভজনক ব্যবসা। পোল্টি ব্যবসায় ব্রুডিং হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ সময়ে কি কি করতে হবে তা সকল খামারিদের জানা আবশ্যক। নিচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
ব্রুডিং কতদিন করতে হয়?
আমাদের দেশের আবহাওয়ায় গ্রীষ্মকালে ব্রয়লার, সোনালী, লেয়ার মুরগি, হাঁস ও কোয়েল পাখির ক্ষেত্রে পরিবেশ ও বাচ্চার অবস্থার উপর ভিত্তি করে বয়স অনুযায়ী নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ২ সপ্তাহ থেকে ৩ সপ্তাহ হতে পারে তবে শীতকালে এ সময়সীমা আরো কিছুদিন বেড়ে যায়। সাধারণত শীতে ব্রয়লার, সোনালী, লেয়ার মুরগি, হাঁস ও কোয়েল পাখির ক্ষেত্রে ৩ সপ্তাহ থেকে ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত ব্রুডিং করা উচিত।
ব্রুডার যেভাবে প্রস্তুত করতে হবেঃ
(*) প্রথমেই যে জায়গায় ব্রুডিং করা হবে সেটি জীবাণুমুক্ত করতে হবে এবং সেখানে ২-৩ ইঞ্চি পুরো করে লিটার বিছিয়ে নিতে হবে। ব্রুডিং এ লিটার হিসাবে ধানের তুষ সবচেয়ে ভাল। ব্রুডিং এ লিটার হিসাবে কাঠের গুড়া দেয়া যাবে না। কারন কাঠের গুড়ার কণাগুলো অতিক্ষুদ্র হওয়ায় তা বাতাসে উড়ে এবং বাচ্চার নাক মুখ দিয়ে প্রবেশ করে ইনফেকশন সৃষ্টি করে। ফলে বাচ্চা সর্দি ও নিউমোনিয়ায় ও Aspergilloses রোগে ভুগে। ব্রুডিং এ কাঠের গুড়া ব্যবহার অনুচিত। ধানের তুষ না পাওয়া গেলে পরিবর্তে চটের বস্তা ব্যবহার করা যেতে পারে।
(*) এর পর বাচ্চার পরিমাণ অনুপাতে চিকগার্ড বসাতে হবে। চিকগার্ড বসানোর পর জীবাণুমুক্ত পুরাতন খবরের কাগজ একটা একটা করে স্তরে স্তরে বিছিয়ে দিতে হবে। বাচ্চা ব্রুডারে আনার অন্তত ১-২দিন আগে ব্রুডার সেটআপ করে রাখতে হবে।
(*) বাচ্চার পরিমাণের অনুপাতে হোবার সেট করতে হবে। প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা অর্থাৎ ৩৫ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপ যাতে হয় সে অনুযায়ী হোবারে বাল্ব দিতে হবে। বাচ্চা ব্রুডারে দেওয়ার অন্তত ২-৪ ঘন্টা আগে হোবার জ্বালিয়ে রাখতে হবে। আগেই নিশ্চত হতে হবে যাতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ তাপ উৎপন্ন হয়।
(*) বাচ্চা আনার ২-১ দিন আগেই খাবার ও পানির পাত্র জীবানুনাশক যেমনঃ টিমসেন, জিপিসি-৮, ভাইরোসিড, পভিসেপ-১০%, পটাশ, ভারকন এস, ফার্ম-৩০ ইত্যাদি মেশানো পানি দিয়ে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে রেডি রাখতে হবে।
(*) ব্রুডিং হতে ২-৩ ইঞ্চি উপরে থার্মোমিটার ঝুলিয়ে রাখতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে বেশী উপরে বা বেশী নিচে এবং হোবারের ঠিক নিচে থার্মোমিটার রাখা যাবেনা। তাহলে সঠিক তাপ পরিমাপ করা সম্ভব হবেনা।
(*) ব্রুডিং ঘরের আদ্রতা পরিমাপের জন্য ঘরের একপাশে হাইগ্রোমিটার ঝুলিয়ে রাখতে হবে। তবে খোলামেলা খামারের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়।
(*) শীতকালে ব্রুডিং এ প্রয়োজনীয় তাপ পেতে অনেকে ব্রুডারের উপরাংশ ঢেকে দেয়। যা অনেক বড় একটা ভুল। এমনটা কখনোই করা যাবেনা। প্রয়োজনে বাল্ব বাড়িয়ে দিয়ে তাপ বাড়াতে হবে।
সোনালি মুরগির বাচ্চার ব্রুডিং তাপমাত্রাঃ
বয়স (সপ্তাহ)
তাপমাত্রা (সেলসিয়াস) তাপমাত্রা (ফারেনহাইট)
১ম সপ্তাহ ৩৫ ডিগ্রি ৯৫ ডিগ্রি
২য় সপ্তাহ ৩২.২ ডিগ্রি ৯০ ডিগ্রি
৩য় সপ্তাহ ২৯.৫ ডিগ্রি ৮৫ ডিগ্রি
৪র্থ সপ্তাহ ২৭.৬ ডিগ্রি ৮০ ডিগ্রি
৫ম সপ্তাহ ২৩.৮৮ ডিগ্রি ৭৫ ডিগ্রি
অধিকাংশ খামারিদের মতে ব্রুডিং এমন যায়গায় হওয়া উচিত যেখানে শুধু ব্রুডিং করা হয়ে এবং বাচ্চা মুরগির ব্রুডিং শেষ সেটি জীবানু মুক্ত করে পেলে রাখা। এখন ব্রুডিং থেকে বাচ্চা বের করে অন্য স্থানে রাখা। সোনালী মুরগির খাবার নিয়ে আপনার জানা আছে মনে করি এখন আমরা জানবো বয়স অনুযায়ী সোনালি মুরগির খাবার ও পানির পাত্রের সংখ্যা (১০০০ মুরগির জন্য)ঃ
বয়স (সপ্তাহ) খাবার পাত্রের সংখ্যা পানির পাত্রের সংখ্যা
১ম সপ্তাহ ১০ টি ১০ টি
২য় সপ্তাহ ১৫ টি ১৫ টি
৩য় সপ্তাহ ২০ টি ২০ টি
৪র্থ সপ্তাহ ২৫ টি ২৫ টি
৫ম সপ্তাহ ৩০ টি ৩০ টি
৬ষ্ঠ সপ্তাহ ৩৫ টি ৩৫ টি
৭ম সপ্তাহ ৪০ টি ৪০ টি
৮ম সপ্তাহের অধিক ৪৫ টি
সোনালি মুরগির রোগ সমূহ এবং ভ্যাকসিন সিডিউলঃ
সোনালি মুরগির সাধারন রোগ সমূহের মধ্যে রয়েছে, রানিক্ষেত, গাম্বুরো, কক্সিডিওসিস, করাইজা, কলেরা সহ বেশ কিছু ঠান্ডা জনিত রোগ। নিয়মিত ভ্যাকসিন প্রদান করলে এবং খামারে সঠিক জৈব নিরাপত্তা মেনে চললে অধিকাংশ রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়।
সোনালি মুরগির ভ্যাকসিন শিডিউল
বয়স (দিন) রোগের নাম ভ্যাক্সিনের নাম প্রয়োগের স্থানঃ
(১) ৩-৫ দিন রানীক্ষেত ও ব্রংকাইটিস আইবি+এনডি এক চোখে এক ফোঁটা
(২) ১০-১২ দিন গামবোরো আই বি ডি মুখে এক ফোঁটা
(৩) ১৮-২২ দিন গামবোরো আই বি ডি খাবার পানিতে
(৪) ২৪-২৬ রানীক্ষেত এন ডি এক চোখে এক ফোঁটা
(৫)৩০- ৩৫ দিন ফাউল পক্স ভ্যাকসিন ফাউল পক্স মুরগির পাখার পালকবিহীন চামড়ায় বিশেষ সুচ ফুটিয়ে দিতে হয়
(৬) ৪৪-৪৮ দিন রানীক্ষেত মাংস পেশিতে
নির্দিষ্ট এলাকায় রোগের প্রকোপ এবং মুরগির শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে এলাকাভেদে ভ্যাকসিনেশন শিডিউল ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। এক্ষেত্রে উক্ত এলাকার একজন রেজিস্টার্ড ভেটেরিনারিয়ানের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে আপনার ফার্মের জন্য ভ্যাকসিন শিডিউল তৈরি করিয়ে নিতে পারেন। শিতল স্থানে ভ্যাক্সিন সংরক্ষণ করুন।
খামারের বায়োসিকিউরিটি বা জৈবনিরাপত্তা
যেকোনো খামারের সাফল্যের পিছনে বায়োসিকিউরিটি বা জৈব–নিরাপত্তা বিশেষ ভূমিকা রাখে। কারন জৈব নিরাপত্তা মেনে চললে খামারে রোগ–বালাই হওয়ার প্রবণতা কম থাকে। তাই সঠিকভাবে খামারের বায়োসিকিউরিটি বজায় রাখতে পারলে খামার করে সফল হওয়া সম্ভব। নিচে এ সকল বিষয়ে অলোচনা করব,
ঘর প্রস্তুতের ক্ষেত্রেঃ
খামার ঘরটি যথাসম্ভব বসতবাড়ি থেকে দূরে হওয়া উচিত।
একটি খামার থেকে অন্য একটি খামারের দূরত্ব কমপক্ষে ১০০ মিটার হওয়া উচিত।
খামার ঘরটি অবশ্যই পূর্ব–পশ্চিম বরাবর লম্বা হতে হবে।
ঘরের উত্তর ও দক্ষিণ দিক খোলা রাখতে হবে।
খামারের আশে–পাশে কোনো জলাশয় বা ডোবা থাকা উচিত নয়।
ঘরে পর্যাপ্ত আলো–বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা থাকা।
খামারে প্রবেশের পথে (দরজার সামনে) একটি ফুটবাথ তৈরি করা। ফুটবাথ হচ্ছে খামারের প্রবেশ পথে একটি ছোট বাথ ট্যাব বা কুয়ার মত পাকা করে তৈরি করা এবং সেখানে সবসময় জীবাণুনাশক মিশ্রিত পানি পূর্ণ থাকবে। যখন কেউ খামারে প্রবেশ করবে তখন যেন সে তার পা এই পানিতে ডুবিয়ে তারপরে খামারে প্রবেশ করে। এতে খামারি বা দর্শণার্থীর পায়ের সাহায্যে খামারে কোনো জীবাণু প্রবেশ করতে পারবে না।
মুরগী বিক্রি করার পর খামারের লিটার এমন স্থানে পেলা যাতে খামারে যেন তার দুরগন্ধ না আসে।
খামারের অবশিষ্ট লিটার এর সঠিক ব্যবস্থা করা। এমন স্থানে না পেলা যার পচা গন্ধ মানুষ এর ক্ষতির কারণ না হয়।
দর্শণার্থী প্রবেশের ক্ষেত্রেঃ
খামারে বিনা প্রয়োজনে বাইরের কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া উচিত না। এতে যেকোনো সময় জীবাণুর আক্রমন হতে পারে।অনেক সময় সৌজন্যতার জন্য আমরা বন্ধু–বান্ধব বা আত্মীয়–স্বজনদের খামারে ঢুকতে দেই। কিন্তু এটা খামারের জৈব–নিরাপত্তার ক্ষেত্রে করা উচিত নয়।যদি বিশেষ কাউকে ঢুকতে দিতে হয় তবে ঢোকার আগে অবশ্যই তাকে ভালভাবে জীবাণু নাশক স্প্রে করে নিতে হবে। ফুটবাথে পা ডুবিয়ে তারপরে খামারে ঢুকাতে হবে। বেশি ভাল হয় যদি খামারে কাজ করার জন্য আলাদা পোশাক এবং আলাদা জুতা বা স্যান্ডেল থাকে। যখন কেউ খামারে প্রবেশ করবে তখন সেই পোশাক পড়ে প্রবেশ করবে এবং এই পোশাক গুলা নিয়মিত জীবানুমুক্ত রাখতে হবে।
খামারে কোনো কারনে কোনো মুরগি মারা গেলে তা এদিক সেদিকে না ফেলে দিয়ে একটা নির্দিষ্ট গর্ত করে সেখানে মাটি চাপা দিন। এতে ওই মৃত মুরগি থেকে রোগ-জীবাণু ছড়াতে পারবে না। এই বিষয় টা একটু গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত।
সোনালী মুরগির বিক্রিঃ
যে কোন ব্যবসার প্রথম শর্ত হলো আপনি কোথায় কিভাবে বিক্রি করবেন। মুরগির খামারে এর ক্ষেত্রে আপনি একটি বিক্রয় সেন্টার খুলতে পারেন, যেটি আপনার খামারের সামনে হতে পারে বা যে কোন স্থানে হতে পারে। এতে করে আপনি কিছু মুরগী খুচরা বিক্রি করতে পারবেন এতে করে ভালো মানের লাভ করতে পারবেন। এর পর যারা খুচরা বিক্রি করে তাদের সাথে যোগাযোগ করুন, এ ছাড়া কিছু মুরগীর খাদ্য বিক্রেতা যারা নিজেরা দায়িত্ব নিয়ে মুরগী বিক্রি করিয়ে দেয়। আপনারা এলাকায় এরুপ থাকলে যোগাযোগ করুন। সোনালী মুরগির একটি নিদিষ্ট ওজনের সময় বিক্রি করতে হয় যেমন ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের মধ্যে চাহিদা বেশি। এর বেশি ওজন হলে লোকসান হবে। এছাড়া সোনালী মুরগির বাড়িতে পালন করতে দেখা যায় আপনার এলাকায় যদি এরুপ থাকে তাহলে খাচায় করে বিক্রি করতে পারেন। মুরগী বিক্রি করার সময় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নিদিষ্ট সময়ে বিক্রি করা। বছরের কোন সময় বেশি বিক্রি হয় সে বিষয় খেয়াল রেখে মুরগির বাচ্চা উঠাতে হবে। সর্বপরি সফলতা একদিন আসবেই আপনাকে এ ব্যবসায় লেগে থাকতে হবে। আমাদের পোস্ট এ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।