বই হল মানুষের শ্রেষ্ট বন্ধু।
বই পড়ার ইতিহাস বেশ পুরোনো। তাই বইয়ের ব্যবসাও বলতে গেলে ভাল একটি ব্যবসা তবে যদি আপনি
সঠিক উপায়ে ব্যবসাটি ধরতে পারেন। বইয়ের ব্যবসার মধ্যে অনেকগুলো ধরন আছে, আবার ভিন্ন
ভিন্ন ধরনের বইয়ের ব্যবসা ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে করা যায়। আজ আমরা কি কি ধরনের বইয়ের ব্যবসা
কিভাবে কিভাবে করা যায়, বইয়ের ব্যবসা শুরু করতে কত টাকা পুজি লাগবে, শুরুটা করব কিভাবে,
কোথায় শুরু করব বইয়ের ব্যবসা এবং বই ব্যবসার অন্যান্য দিক নিয়ে আলোচনা করব।
বই ব্যবসার ধরন
বই জিনিসটার মধ্যে যেমন বিভিন্ন
ধরন আছে ঠিক এর ব্যবসার মধ্যেও প্রকারভেদ আছে। স্কুল কলেজে যেসব বই পাঠদান হয়, বাচ্চাদের
বই, গল্পের বই, বিদেশি বই, ইসলামিক বই, মাদরাসায় পাঠদান হয় এমন বই নিয়ে ব্যবসা করা
যেতে পারে। এক দোকানে উপরে উল্লেখিত সব ধরনের বই সাধারনত বেচাকিনি করা হয় না।
পুরানো বইয়ের ব্যবসাও বর্তমানে
খুব ভালো একটি ব্যবসা। বিভিন্ন স্থানে পুরাতন বইয়ের লট পাওয়া যায়। আবার ভাংরিমাল ওয়ালার
কাছ থেকেও নাম মাত্র দামে পুরাতন বই কিনতে পারেন। বিভিন্ন প্রকাশনীর কাছে এমন বই থাকে
যেগুলো ওরা দীর্ঘসময় ধরে বিক্রি করতে পারেনা সেগুলো লট আকারে কম দামে বিক্রি করে দেয়।
পুরাতন বইয়ের মধ্যে কিছু বই আছে যেগুলো দুর্লভ ও দুষ্প্রাপ্য। এগুলো অনেক দামে খুচরা
বাজারে বিক্রি করা যায়।
ইসলামিক বইয়ের বাজার অনেক
বড়। বর্তমানে সাধারন মানুষের মধ্যে ইসলামিক বই পড়ার প্রবনতা বেড়েছে। ইসলামিক বইয়ের
বাজার দিন দিন বড় হয়েই চলছে। আপনাকে ইসলামিক বইয়ের বাজার ধরতে হলে দোকানের স্থান খুব
ভাবনা চিন্তা করে নির্বাচন করতে হবে।
মাদরাসায় পাঠদান হয় এমন বইয়ের
ব্যবসাও দারুন। সাধারনত মাদ্রাসায় পড়ানো হয় এরকম মূল কিতাবের বেচাকিনি হয় ঢাকার বাংলাবাজারকে
ঘিরে। তাই ঢাকার বাহিরে বড় কোনো মাদরাসা থাকলে ঐ মাদরাসাকে ঘিরে শুরু করতে পারেন এই
ব্যবসা। মাদরাসার কিতাবের পাশাপাশি অন্যান্য ইসলামিক বই ও লাইব্রেরির ব্যবসা করা যেতে
পারে।
আপনি চাইলে যেকোনো ধরনের
বইয়ের ব্যবসা অনলাইনেও করতে পারেন। অনলাইনে অন্যান্য ব্যবসা করাটা একটু কঠিন হলেও বইয়ের
ব্যবসাটা অনলাইনে অনেক সহজেই দাড় করানো যায়। ফেসবুকে পেইজ খুলে তার মাধ্যমে, নিজে ওয়েবসাইট
তৈরি করে অথবা অন্য ওয়েবসাইটে বই বিক্রি করতে পারেন। আপনি চাইলে সম্পূর্ন বিনামূল্যে
আমাদের এই ওয়েবসাইটে বই বিক্রি করতে পারেন।
কিভাবে শুরু করবেন
যেকোনো ব্যবসার ক্ষেত্রে
ব্যবসা শুরু করার আগে নিজে কাগজ কলম নিয়ে বসবেন। আপনি ঠিক কি কি পন্য নিয়ে ব্যবসা করতে
চাচ্ছেন? এসব পন্যের কাস্টমার কারা? যেখানে দোকানটি দিতে চাচ্ছেন সেখানে ওইসব পন্যের
কাস্টমার আসবে কি? এই পুঁজিতে এর চাইতে সুবিধাজনক অন্য কোন ব্যবসা শুরু করা যায় কি
না? এসব প্রশ্নের উত্তর নিজে ঠিক করে তারপর ব্যবসায় আসার সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।
বইয়ের ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রথমে
আপনাকে ঠিক করতে হবে কোথায় কোন ধরনের বই নিয়ে ব্যবসা শুরু করবেন। ব্যবসার স্থান, ব্যবসার
পন্য ঠিক করে কাগজ কলম নিয়ে একটি পরিকল্পনা তৈরি করুন। যে কোন কাজের পরিকল্পনা ঠিকঠাক
মত না থাকলে তার ফলাফল কাঙ্ক্ষিত মানের হয় না। ব্যবসার ক্ষেত্রে পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ন
একটি বিষয়। পুঁজির বিষয় মাথায় রেখে পরিকল্পনা তৈরি করবেন। দোকানের এডভান্স, দোকান ডেকোরেশন,
মাসিক ভাড়া, প্রথমে যে পন্য দোকানে উঠাবেন তা কত টাকা লাগতে পারে, বিজ্ঞাপন দেয়া লাগলে
কিভাবে বিজ্ঞাপন দিলে সর্বোচ্চো আউটপুট পাওয়া যাবে এসব বিষয় আপনার পরিকল্পনায় রাখবেন।
পরিকল্পনা তৈরি হলে মাঠে
নেমে পড়ুন। দোকান ঠিক করে এডভান্স দিয়ে দোকান নিয়ে নিন। পছন্দ অনুযায়ী দোকান ডেকোরেশন
করে পন্য উঠিয়ে ফেলুন।
আর যদি আপনি অনলাইনে ব্যবসা
করতে চান তাহলে প্রথমে ফেসবুকের মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করুন। অনলাইনে পুরাতন বইয়ের ব্যবসাও
জমজমাট হয়। ফেসবুকে বই বিক্রির জন্য পোস্ট বুস্ট করতে হবে। আর একসাথে অনেক বই কিনলে
তাদেরকে ডিসকাউন্ট দিবেন, তাহলে কাস্টমার বাড়বে। বইয়ের কাস্টমার আবার আপনার থেকে বই
কেনার সম্ভাবনা আছে। তাই কাস্টমার ধরে রাখার চেষ্টা করবেন। কথায় আছে আপনি যদি একটি
ভাল বই পড়েন তাহলে তা আপনাকে আরও বই পড়তে উৎসাহিত করবে। ফেসবুক পেইজ ভালোভাবে চালু
হয়ে গেলে ইউটিউব চ্যানেল খুলবেন সেখানে বিভিন্ন বইয়ের রিভিউ দিবেন এতে আপনার কাস্টমার
আরও বাড়বে। সাথে ইউটিউব ফেসবুক থেকে আয় করতেও পারবেন। এভাবে কিছুদূর যাওয়ার পর নিজে
একটা ওয়েবসাইট খুলে ফেলুন। বর্তমানে বই বিক্রির জন্য বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো পজিশনে
থাকা ওয়েবসাইট হল রকমারি ডটকম।
আবার আমাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে
আপনি ব্যবসা করতে পারেন। এখানে সেলার একাউন্ট খুলে বিনামুল্যে বইয়ের বিজ্ঞাপন দিতে
পারেন।
স্থান নির্বাচন
স্কুল কলেজের আশেপাশে লাইব্রেরির
মাধ্যমে স্কুল, কলেজের বই, বাচ্চাদের বই বিক্রি করা যেতে পারে। অবশ্য স্কুল কলেজের
পাঠ্য বই বিক্রি করতে হলে স্কুল কলেজের পাশেই দোকান হতে হবে এমন কথা নেই। স্কুলের আশেপাশে
হলে ব্যবসার সম্ভাবনা বেশি। জেলা শহরে দোকান হলে সেটা স্কুলের আশেপাশে না হলে সমস্যা
নেই। শহরে মেইন রোডের পাশে দোকান হলে আপনি স্কুল কলেজের বই পাশাপাশি চাকুরির প্রস্তুতি
বই, ভর্তি পরিক্ষার বই, গল্পের বই ইত্যাদি বিক্রি করতে পারেন। ইসলামিক বই বিক্রির জন্য
বড় কোন মসজিদ বা মাদ্রাসার আশেপাশে স্থান নির্বাচন করতে পারেন।
কত টাকা লাগবে?
কোনো ব্যবসা শুরু করতে কত
টাকা লাগবে এটা মূলত ব্যবসার স্থান, ব্যবসার পরিসর এবং ধরন এর উপর নির্ভর করে।
আপনি যদি লাইব্রেরির দোকানের
সাথে এই ব্যবসা শুরু করেন তাহলে আপনার যেরকম পুঁজি লাগতে পারে তার একটি আইডিয়া নিচে
তুলে ধরছি…
সাধারনভাবে ২সাটারের একটি
দোকান দিয়ে আপনি শুরু করতে পারেন। ধরে নেই দোকানটির এডভান্স ৫০হাজার টাকার মধ্যে হয়ে
যাবে। আসলে এই এডভান্সটা এলাকা ও দোকানের অবস্থানের উপর নির্ভর করে। দোকানের ডেকরেশনের
জন্য আরও ২০০০০ (বিশ হাজার) টাকা, অন্যান্য স্টেশনারি পন্য বাবদ আরও ১০০০০ (দশ হাজার)
টাকা, বিভিন্ন বইপত্রের জন্য ১০০০০ (দশ হাজার) টাকা, সরকারি কাগজপত্র ও অন্যান্য খচ
সহ ১০০০০০ থেকে ১২০০০০ (এক লক্ষ থেকে এক লক্ষ বিশ হাজার) টাকার মধ্যে হয়ে যাবে।
আর যদি আপনি অনলাইনে বইয়ের
ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে আপনি কম টাকা বিনিয়োগ করে অথবা বিনিয়োগ ছাড়াই ব্যবসা শুরু
করতে পারবেন।
অনলাইনে আপনি যদি নতুন বই
দিয়ে শুরু করতে চান তাহলে আপনাকে প্রথমে কোনো বড় পাইকারি বইয়ের দোকানের সাথে কথা বলে
নিতে হবে। আপনার কোন অর্ডার আসলে আপনি কাস্টমারের ঠিকানা তাকে মেসেজ করে দিবেন। তারপর
সে ঐ ঠিকানায় বই কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিবে। এটা অনেকটা ড্রপ শিপিং এর মতই। এতে
কোনো বিনিয়োগ ছাড়াই আপনার ব্যবসা শুরু হয়ে গেল।
আর যদি পুরাতন বই দিয়ে ব্যবসা
শুরু করতে চান তাহলে প্রথমে পুরাতন বই সংগ্রহ করতে হবে। পুরাতন বইয়ের অনেক বাজার আছে।
আপনি খোজ নিলে আপনার আশে পাশে পুরাতন বইয়ের বাজার পাবেন। সেখান থেকে পাইকারি পুরাতন
বই কিনে নিয়ে আসবেন। মতিঝিলে পুরাতন বই স্টক লট আকারে বিক্রি হয়, সেখান থেকে কিনে নিয়ে
যেতে পারেন। অথবা বিভিন্ন প্রকাশনি থেকে বইয়ের লট কিনে নিয়ে আসবেন। তারপর বইগুলোর ছবি
তুলে পোস্ট করবেন। দরকার হলে বুস্ট করবেন।
বই সংগ্রহ করবেন কোথা থেকে?
বাংলাবাজার
বই বিশেষ করে পাইকারি বই
বেচাকেনার জন্য বাংলাবাজার বিখ্যাত। বাংলাবাজারে পাইকারি বইয়ের দোকানের পাশাপাশি বিভিন্ন
প্রকাশনির অফিসও রয়েছে।
নীলক্ষেত
ঢাকা কলেজ ও ইডেন মহিলা কলেজের
মাঝখানে অবস্থিত নীলক্ষেত। নীলক্ষেত বই বেচাকেনার জন্য বিখ্যাত। সব ধরনের বই আপনি এখানে
পাবেন।
চকবাজার
কথায় আছে, এমন কোনো পন্য
নেই যা চকবাজারে নেই। এখানে আপনি স্টেশনারি পন্য পাইকারি পাবেন।
ই-বাই
ডটকম
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অনলাইন
পাইকারি বাজার হল ই-বাই ডটকম। এখানে প্রায় সবধরনের পন্য পাইকারি পাবেন। এখানে সেলার
বিশ্বস্ত কিনা তা আপনি সবুজ টিকচিহ্ন দেখে বুঝতে পারবেন। শুধু তাই নয় আপনি এখানে বিনামূল্যে
পন্য বিক্রিও করতে পারবেন।
সাথে অন্য কি কি পন্য বিক্রি
করা যাবে?
বইয়ের ব্যবসা শুরু করার সবচেয়ে
ভাল মাধ্যম হল স্টেশনারি ব্যবসার সাথে শুরু করা। স্টেশনারি দোকান দিলে স্টেশনারি পন্য
পাশাপাশি একটি কম্পিউটার নিয়ে অন্যান্য কাজ, বিকাশ, নগদ এর ব্যবসাও করতে পারেন। কম্পিউটারে
কম্পোজ, গ্রাফিকস ডিজাইনিং, অনলাইনে বিভিন্ন চাকুরী, পরিক্ষার আবেদন ইত্যাদি ব্যবসা
করতে পারবেন।
গিফট আইটেমের ব্যবসাও এই
ব্যবসার পাশাপাশি করা যাবে। বিভিন্ন ছবি এলবাম ও টুকটাক ইলেক্ট্রনিক পন্যের ব্যবসাও
এর সাথে করা যেতে পারে।
কত টাকা আয় হবে?
আপনি যদি মোটামুটিভাবে ব্যবসা
ধরতে পারেন তাহলে প্রতি মাসে ন্যুনতম ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করতে পারবেন। জেলা শহরে
এমনও অনেক দোকান আছে যারা প্রতি মাসে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা আয় করে। আবার এমনও দোকান আছে
যারা শুধু ইসলামিক বই বিক্রি করে মাসে ২-৩ লাখ টাকা আয় করছে। অর্থাৎ ব্যবসার আয় কি
পরিমানে ঘবে এটা এভাবে বলে দেয়া যায় না। ব্যবসার পরিসর এবং ব্যবসার ধরনের উপর ব্যবসার
আয় নির্ভর করে।
আজকের আলোচনা নিয়ে কোনো প্রশ্ন
বা মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন।
ধন্যবাদ।