বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে কফিশপের
চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে সেই সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে কফিশপের ব্যবসার সম্ভাবনা। কফিশপের ব্যবসায়
পুজি কম লাগে, ব্যবসায় লাভ বেশি এবং ব্যবসার সম্ভাবনা বেশি এ জন্যই কফিশপ ব্যবসার জনপ্রিয়তা
দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েই চলছে বিশেষ করে তরুন সমাজে।
আপনি কিভাবে কফিশপের ব্যবসা
শুরু করবেন? কফিশপ ব্যবসা শুরু করতে কত টাকা লাগে? কফিশপ ব্যবসায় কি পরিমান আয় করতে
পারবেন তার একটি আইডিয়া এছাড়া কফিশপ ব্যবসার ক্ষেত্রে কি কি সমস্যা হতে পারে এসব বিষয়
নিয়ে আজ আলোচনা করব।
কেন কফিশপের ব্যবসা করবেন?
কফিশপের জনপ্রিয়তা শুধু শহর
এলাকাতেই সীমাবদ্ধ নয়, বর্তমান সময়ে গ্রাম এলাকাতেও এর ব্যপক প্রসার লক্ষ করা যাচ্ছে।
এই জনপ্রিয়তার কারন হল কফিশপের প্রয়োজনীয়তা। নিয়মিত চা-কফি পান করা যাদের অভ্যাস তাদের
জন্য কফিশপ ভাল একটি সলিউশন। বন্ধু-বান্ধব বা প্রেমিক-প্রেমিকাদের আড্ডার জন্য মোক্ষম
একটি প্লেস হল কফিশপ। কফিশপে শুধু আড্ডাই নয় এখানে বিভিন্ন অফিসিয়াল বা বিজনেস মিটিং
এর মতো গুরুত্বপূর্ন কাজও সম্পন্ন হয়ে থাকে। সারাদিন কাজ করে বাসায় ফেরার পথে কফিশপে
এক কাপ চা-কফিতে চুমুক দেয়া অনেকেরই অভ্যাস।
কফিশপে যে শুধু চা-কফি বিক্রি
হয় তা নয়। একটি কফিশপে চা-কফির পাশাপাশি লাচ্ছি, বিভিন্ন ফলের জুস, লেমনেইড, মিল্ক
শেক, চকলেট শেক, কোল্ড কফি ইত্যাদি বিক্রি হয়। তাছাড়া নরমাল চা কফির পাশাপাশি চকলেট
কফি, হোয়াইট কফি, হরলিক্স কফি, মাসালা চা, মাল্টা চা, পুদিনা চা, জলপাই চা, কাজু বাদামের
চা ইত্যাদি আইটেম বিক্রি করা যায়। আবার এর সাথে বিস্কুট, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এবং টুকটাক
ফাস্টফুড আইটেম বিক্রি করা যায়।
শহর কিংবা গ্রামে ঠিক মতো
শুরু করতে পারলে খুব সহজেই এই ব্যবসা দাড় করানো সম্ভব। কিভাবে শুরু করবেন কফিশপের ব্যবসা
তার একটি ধারাবাহিকতা নিচে তুলে ধরছি।
কফিশপের নাম নির্বাচন
যে কোনো ব্যবসা শুরু করার
আগে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম নির্বাচন গুরুত্বপূর্ন একটি কাজ। একজন নতুন কাস্টমার আপনার
দোকানে ঢুকবে নাকি ঢুকবে না তাছাড়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি তার নামের উপর অনেকটা
নির্ভর করে। সুতরাং খুব সাবধানে নাম নির্বাচন করবেন। যেই স্থানে কফিশপ দিবেন এর আশেপাশে
অন্যন্য কফিশপ থাকলে তাদের নাম দেখবেন। আর নাম নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইউনিক নাম নির্বাচন
করার চেষ্টা করবেন।
কফিশপের স্থান নির্বাচন
কফিশপ ব্যবসার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ন
একটি বিষয় হল স্থান নির্বাচন। মেইন রোডের পাশে এবং লাইটিং করে কাস্টমার আকর্ষন করা
যায় এমন যায়গায় কফিশপ দিতে হবে। কফিশপ বা রেস্টুরেন্ট দেওয়ার জন্য একটা বিষয় জানা খুবই
দরকার। সেটা হল আপনি যদি এমন জায়গায় কফিশপ বা রেস্টুরেন্ট দেন যেখানে আশেপাশে অন্য
কোনো রেস্টুরেন্ট নেই তাহলে আপনার কাস্টমার পাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে। কিছু প্লেস থাকে
ওখানে একসাথে অনেকগুলো রেস্টুরেন্ট বা কফিশপ থাকে। আপনি যদি এমন প্লেসে কফিশপ দেন তাহলে
আপনার কাস্টমার বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। তবে এর জন্য খাবারের মান ও সাজসজ্জায় খেয়াল
রাখতে হবে।
কি কি লাগবে?
কফিশপের ব্যবসা শুরু করতে
হলে ডেকোরেশনের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছাড়া আর যেসব লাগবে তার একটি তালিকা তুলে
ধরছি।
১. রেফ্রিজারেটর
২. ব্লেন্ডার
৩. কফি মেকার মেশিন
৪. চুলা বা স্টোভ
৫. কাপ, পিরিচ, গ্লাস রাখার
জন্য একটি র্যাক
৬. চা কফি পরিবেশনের জন্য
গ্লাস, কাপ, পিরিচ
৭. ওয়ান টাইম কাপ
৮. চা কফি তৈরির জন্য প্রয়োজনীয়
দ্রব্যাদি ইত্যাদি।
দোকান ডেকোরেশন
কফি হাইজের ব্যবসার জন্য
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন কয়েকটি বিষয়ের মধ্যে একটি হল দোকান ডেকোরেশন। দোকান এমনভাবে ডেকোরেশন
করতে হবে তা যেন তরুনদেরকে বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে। সেজন্য ডেকোরেশনকে একটু বেশি গুরুত্ব
দিতে হবে। ইউনিক হওয়ার চেষ্টা করবেন।
দোকানে একটি বুক সেলফ রাখতে
পারেন। সেলফ ডেভেলপমেন্ট এবং বিভিন্ন থিওরিটিক্যাল বই রাখতে পারেন এই সেলফে।
অল্প খরচের মধ্যে সুন্দর
করে দোকান সাজানোর চেষ্টা করবেন।
কত টাকা পুঁজি লাগবে?
শুরুতেই বলেছি কফিশপের ব্যবসায়
খুব বেশি একটা পুঁজি লাগে না। আপনি যদি ছোটোখাটো ভাবে শুরু করতে চান তাহলে প্রথমে আপনার
শুধু একটি কফি মেশিন, স্টোভ বা চুলা দিয়ে শুরু করলেই হবে। রেফ্রিজারেটর, ব্লেন্ডার
ইত্যাদি পরে কিনলেও হবে। দোকানের এডভান্স, কফি মেকিং মেশিন, প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি, প্রাথমিক
ডেকোরেশন এবং প্রথম ২ মাসের খরচসহ ১,০০,০০০৳ থেকে ১,২০,০০০৳ লাগতে পারে। এখানে ভালো মানের একটি
কফি মেকিং মেশিনের দাম ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা।
আপনি যদি শুরুতেই মোক্ষম
জায়গায় একটু বড়সড় করে কফিশপ দিতে চান তাহলে আর একটু বেশি পুঁজি দরকার হবে। সেক্ষেত্রে
একা বিনিয়োগ না করে কয়েকজন মিলে বিনিয়োগ করা ভালো হবে।
লাভ কেমন?
কফিশপের ব্যবসায় লাভ বেশি
আবার ঝুঁকি কম। আপনি প্রাথমিক পর্যায়ে যদি প্রতিদিন ১০০ কাপ সাধারন কফি (প্রতি কাপ
কফি ২০টাকা দরে) বিক্রি করেন তাহলে প্রতি মাসে আপনি ২০হাজার টাকা থেকে ৩০হাজার টাকা
আয় করতে পারবেন। ধীরে ধীরে আপনি যখন লাচ্ছি, ফাস্টফুড আইটেম উঠানো শুরু করবেন এই আয়
অনেকটা বেড়ে যাবে।
চা-কফি, বিভিন্ন জুস, টুকটাক
ফাস্টফুড আছে এবং মোটামুটি লোক সমাগম আছে এমন যায়গায় কফিশপ দিলে সেখান থেকে প্রতি মাসে
২-৩ লাখ টাকা অনায়াসে আয় করা যায়।
শুরু করবেন কিভাবে?
প্রথমে নাম ঠিক করে, প্লেস
ঠিক করে একটি পরিকল্পনা তৈরি করুন। দোকান ভাড়া নেন। তারপর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঠিক করে
ডেকোরেশনের কাজ করে ফেলুন। তারপর কাজ শুরু করে দিন। দোকান চালু করে ফেলুন। কাস্টমার
আনার জন্য বিজ্ঞাপন প্রচার করুন। কফিশপে ফ্রি ওয়াইফাই রাখবেন।
একটা কথা অবশ্যই খেয়াল রাখবেন।
কফিশপে আসা বেশিরভাগ কাস্টমার আবার আপনার কফিশপে আসার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং কাস্টমারদের
সাথে ভাল ব্যবহার করুন। এমন কাস্টমার তৈরি হবে যারা প্রতিদিন কফিশপে আসবে।
খাবারের মেনু বা কফিশপে কি
কি বিক্রি করতে পারবেন তার একটি তালিকা তুলে ধরছি…
১. নরমাল কফি
২. ব্লাক কফি
৩. কোল্ড কফি
৪. নরমাল রঙ চা
৫. নরমাল দুধ চা
৬. আঁদা চা
৭. পুদিনা চা
৮. মাল্টা চা
৯. জলপাই চা
১০. গ্রিন টি
১১. মালাই চা
১২. মাসালা চা
১৩. কাজু বাদামের চা
১৪. মিল্ক শেক
১৫. চকলেট শেক
১৬. বিভিন্ন ফলের জুস
১৭. লাচ্ছি
১৮. লেমনেইড
১৯. ফ্রেঞ্চ ফ্রাই
২০.পটেটো চিপস
২১. বার্গার
২২. স্যান্ডউইচ
২৩. শর্মা
২৪. ফুসকা ইত্যাদি
উল্লেখিত সকল আইটেম দিয়েই
শুরু করতে হবে এমন কথা নেই। এখানে শুধু একটা ধারনা দেয়ার চেষ্টা করেছি। এগুলো ছাড়াও
আরও অনেক আইটেম বিক্রি করা যাবে।
বিজ্ঞাপন কিভাবে দিবো?
কফিশপের জন্য পোস্টার বানিয়ে
রাস্তায় রাস্তায় পোস্টার লাগানোর কোনো দরকার নেই। কারন রাস্তার পোস্টার দেখে তেমন একটা
কাস্টমার আসবে না। কফিশপের জন্য ভাল বিজ্ঞাপন হল রাস্তা থেকে আপনার কফিশপে প্রবেশমুখ
বা রাস্তা থেকে কত ভাল ভাবে আপনার কফিশপ দেখা যায়। এজন্য ডেকোরেশনে বিশেষ নজর দিতে
হবে।
ফেসবুকে স্থানীয় ফুড রিভিউ
গ্রুপে পেইড প্রোমোশন করাবেন। যেসব কাস্টমার ফুড রিভিউ গ্রুপে আপনার কফিশপের একটি পজিটিভ
রিভিউ দিবে তাদের জন্য ডিসকাউন্ট রাখবেন। ফেসবুকে ও অন্যান্য সোশ্যাল সাইটে বিজ্ঞাপন
দিতে পারেন।
কফিশপের বিজ্ঞাপনের জন্য
খুব বেশি টাকা খরচ করতে হয় না। কারন এখানকার বেশিরভাগ কাস্টমার থাকবে রিপিট কাস্টমার।
এজন্য কাস্টমারের সাথে ভালো ব্যবহার এবং খাবারের মান ভালো রাখতে হবে। তাছাড়া দাম যদি
কম থাকে তাহলে কাস্টমার বেশি হবে। এজন্য লাভ কম করে দাম কাস্টমারের সাধ্যের মধ্যে রাখতে
হবে।
প্রশিক্ষন
কফিশপ ব্যবসায় প্রশিক্ষন
গুরুত্বপূর্ন একটি বিষয়। কফি, জুস, লাচ্ছি ও অন্যান্য আইটেম তৈরিতে প্রশিক্ষন এর প্রয়োজন
হয়। বর্তমানে এইসব প্রশিক্ষন ইউটিউব দেখেই নেয়া যায়। ইউটিউব দেখে দেশি বিদেশি বিভিন্ন
ধরনের লাচ্ছি, জুস, কফি তৈরির প্রক্রিয়া শিখে নিতে হবে।
কফিশপের সবজায়গা পরিস্কার
পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
শেষে একটি কথা না বললেই নয়।
এ ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হলে পন্যের মান ভাল ও কাস্টমারের সাথে সুন্দর আচরন করতে হবে।
লেগে থাকলে এই ব্যবসা সম্প্রসারন করে বড় রেস্টুরেন্ট অথবা অন্য স্থানে শাখা খোলা যাবে।
আজকের আলোচনা নিয়ে কোনো প্রশ্ন
বা মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন।
ধন্যবাদ