eibbuy.com
মুল পাতা

ফিলিস্তিনের বাইরে, ইসরাইলে কি মুসলিম বসবাস করে? তাদের পরিস্থিতি কি ফিলিস্তিনিদের মতোই?


Posted on: 2021-05-15 22:34:21 | Posted by: বিসমিল্লাহ্ ভ্যারাইটিজ স্টোর

ধন্যবাদ প্রশ্নটির জন্য। হ্যাঁ, ফিলিস্তিনের বাইরে ইসরায়েল ভূখণ্ডে প্রায় কুড়ি শতাংশের মতো মুসলিম বসবাস করেন এবং তারা ইসরায়েলের নাগরিক। এর মধ্যে প্রায় আঠেরো শতাংশ মানুষ আরব অথবা মিশ্র আরব বংশোদ্ভুত। এছাড়াও নেজেভ মরুভূমিতে বিশাল সংখ্যক নেজেভ বেদুইন বসবাস করেন। সেই সাথে গ্যালিলি অঞ্চলে আছে রুশ সাম্রাজ্য থেকে বিতাড়িত ও অটোমানদের অনুগত সিরকাশিয়ান বা আদিগে’খের সম্প্রদায়। এরাও মুসলিম। আরব বংশোদ্ভুত ইসরায়েলি মুসলিমরা ফিলিস্তিনিদের চেয়ে ব্যতিক্রমী। তাদের কাছে আছে ইসরায়েলের সকল নাগরিক সুযোগসুবিধে, সেই সাথে ইসরায়েলের পাসপোর্ট। যদিও এ নাগরিক অধিকার পেতে তাদের সংগ্রাম করতে হয়েছে গত শতকের ষাটের দশকের শেষ পর্যন্ত। রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর ইসরায়েল তার আরব প্রতিবেশীদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় যার কারণে ইসরায়েলকে মেনে নেয়া আরব নাগরিকরা সন্দেহের শিকার হয়ে পড়ে। ১৯৬০ পর্যন্ত ধরপাকড়, সম্পত্তি বেদখল ও নির্যাতন ছিল ইসরায়েলে বসবাসরত আরবদের নিয়তি। অনেকেই জর্দান, লেবাননসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে স্থানান্তরিত হন। ১৯৬০ এর পরে ইসরায়েলের আরব মুসলিম নাগরিকরা ইসরায়েল কর্তৃপক্ষকে বোঝাতে সক্ষম হন যে তাঁরা ফিলিস্তিনি না কিংবা স্বাধীন ফিলিস্তিন নিয়ে তাঁদের কোনও মাথাব্যথা নেই। তাঁরা শুধু চান উপনিবেশের অবসান ঘটিয়ে আসা স্বাধীন সরকারের কাছে তাদের নাগরিক মর্যাদা ও ভোটাধিকার। অবশেষে, ১৯৬৬ সালে সামরিক আইন অবসানের পর, ইসরায়েলের আরব মুসলিমরা তাদের নাগরিক সুবিধে পেতে শুরু করেন। তবে বিভিন্ন ইস্যুতে প্রায়ই ইহুদি-আরব দাঙ্গার কথা শোনা যায়। শুধু তাই নয়, ২০০০ সালে ফিলিস্তিনি মুক্তি আন্দোলন (ইন্তিফাদা) ও ২০০৬ সালে হিজবুল্লার ইসরায়েল আক্রমণের সময়ে ইসরায়েলের আরব মুসলিমরা ইহুদি দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিকদের কাছে বিশ্বাসঘাতক অপবাদ লাভ করে। আরবরাও ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে হিজবুল্লার হামলার সময়ে সুরক্ষা না দেয়ার জন্য ইসরায়েলকে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী বলে আখ্যা দেয়। ইসরায়েলের সংবিধান অনুযায়ী আরবি ইসরায়েলের অন্যতম দাপ্তরিক ভাষা ও উচ্চশিক্ষার মাধ্যম হওয়ায়, ইসরায়েলি আরব মুসলিমদের বেশিরভাগই উচ্চশিক্ষিত। যদিও এ সংখ্যা তাদের ইহুদি পড়শিদের তুলনায় কিছুটা কম। বেশিরভাগ ইসরায়েলি মুসলিম শিক্ষকতা, ব্যবসা, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও রাজনীতিতে জড়িত। প্রবাসী ইসরায়েলিদের খুব কম সংখ্যকই আরব। ইসরায়েলের সুরক্ষা বাহিনীতে আছে আরবদের জন্য আলাদা কোটা, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হলো বেদুইন বিগ্রেড। নেজেভ বেদুইন আরবরা ইসরায়েল রক্ষা বাহিনীর হয়ে অনেক যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন, এমনকি ফিলিস্তিনের বিপক্ষেও। বিখ্যাত ট্রাভেল ভ্লগার ও ফেসবুকে নাস ডেইলি নামক বিখ্যাত পাতাটির জনক, নুসেইর ইয়াসিন একজন আরব বংশোদ্ভুত ইসরায়েলি মুসলিম। এবার আসি আরবদের পর অন্যতম বিখ্যাত ইসরায়েলি মুসলিম সম্প্রদায়, সিরকাশিয়ানদের ব্যাপারে। ককেশাস অঞ্চলে রুশ অভিযানের পর সিরকাশিয়ানরা রুশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। যুদ্ধে পরাজিত অনেক সিরকাশিয়ান রুশ সাম্রাজ্য থেকে বিতাড়িত হয়ে অটোমান সাম্রাজ্যে প্রবেশ করে। অটোমানরা এই বিপুল শরণার্থীকে পূর্ব আনাতোলিয়া ও পশ্চিম আর্মেনিয়া (দক্ষিণ পূর্ব আনাতোলিয়া) তে পুনর্বাসন করে। বিনিময়ে সিরকাশিয়ানরা অটোমানদের পূর্ণ অনুগত হওয়াতে, অটোমানরা গ্যালিলি অঞ্চলে বিশাল উর্বর ভূখণ্ড সিরকাশিয়ানদের স্থায়ী বসতির জন্য দান করে। মূলতঃ গ্যালিলি অঞ্চলে আরব বিচ্ছিন্নতাবাদীদের খর্ব করার জন্যই এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। আরবরা কিন্তু উড়ে এসে জুড়ে বসা সিরকাশিয়ানদের মোটেই মেনে নেয়নি, যদিও সিরকাশিয়ানরাও ধর্মপ্রাণ মুসলিম। নিজেদের দক্ষতায় ফসলের ফলন ও রাজস্ব দুটোই বাড়ানোর মাধ্যমে অটোমানদের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করায় সিরকাশিয়ানরা আরবদের বিচ্ছিন্নতাবাদ দমনের দিকে মন দেয়। এ কাজে সহায়ক হিসেবে তারা পেয়ে যায় গ্যালিলি ইহুদিদের, যারা স্পেন ও ইতালি থেকে অটোমান সাম্রাজ্যে স্থানান্তরিত হয়েছিল উদার অটোমান শাসকদের সময়ে। সিরকাশিয়ান ও ইহুদিদের দাপটে আরবরা গ্যালিলির উর্বর অঞ্চল থেকে বিতাড়িত হয়ে মৃতসাগর ও জর্দন নদীর উপত্যকায় বসতি স্থাপন করে। অটোমানদের পতনের পর ব্রিটিশদের সাহায্যে আরবরা সিরকাশিয়ান গ্রামগুলোতে পুনরায় ফিরে আসে এবং হাঙ্গামা ও রক্তক্ষয়ের মাধ্যমে সিরকাশিয়ানদের বিতাড়িত করে। এ সময়ে অনেক সিরকাশিয়ান তাদের পুরোন দেশ ককেশাসে ফিরে যান, কারণ ততদিনে তাদের মূল শত্রু রুশ সাম্রাজ্যের পতন হয়েছে। প্রথম থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাঝের সময়টুকু গ্যালিলি অঞ্চল প্রায় সিরকাশিয়ান শূন্য হয়ে পড়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গ্যালিলি পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে আরবদের বিপক্ষে ইহুদিদের সাহায্য চায় সেই মুষ্টিমেয় সংখ্যক সিরকাশিয়ানরা। পুরোন বন্ধু হিসেবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় ইহুদিরা। অবশেষে গ্যালিলি অঞ্চলে সম্ভব হয় সিরকাশিয়ানদের পুনর্বাসন। সেই সাথে সিরকাশিয়ানরা ইসরায়েল সুরক্ষা বাহিনীতে পাকাপোক্ত করে নেয় তাদের স্থান। এখনও ইসরায়েল সীমা সুরক্ষা বলে ইহুদিদের চেয়েও সিরকাশিয়ানদের স্থান সর্বাগ্রে। বিখ্যাত ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ -এও সিরকাশিয়ানদের নিয়োগ করা হয়। ক্রীড়াঙ্গনেও কম যায় না সিরকাশিয়ান ইসরায়েলিরা। ইসরায়েল ফুটবল দলের অধিনায়ক বিবরাস নাটখো একজন সিরকাশিয়ান। তার খুড়তুতো ভাই নীলি নাটখোও ইসরায়েলের পক্ষে খেলতেন, যিনি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন। নিজেদের গ্রামকে ইসরায়েলের আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র করার জন্য সিরকাশিয়ানরা “আমার বাড়ি, আমার খাবার, পর্যটকদের জন্য” এই কর্মসূচী শুরু করেছে। সিরকাশিয়ানরা ২০০৯ সালে একটি বিক্ষোভ করে ইসরায়েল সরকারের বিরুদ্ধে। প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুদের মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা ও সরকারি সাহায্য না মেলাই এর মূল কারণ। আদিগে’খের বা সিরকাশিয়ান ভাষা যেহেতু ইসরায়েলের দাপ্তরিক ভাষা নয় তাই শিক্ষার ক্ষেত্রে সিরকাশিয়ানদের হিব্রু বা আরবি ভাষার ওপরে নির্ভর করতে হয়। তাই তাঁরা তাঁদের নিজেদের ভাষায় দাপ্তরিক অধিকার আদায়ের জন্য এ আন্দোলন করেন। অবশেষে ২০১৫ সালে আদিগে'খের বা সিরকাশিয়ান ভাষা ইসরায়েলের অন্যতম সংখ্যালঘু স্বীকৃত ভাষা হিসেবে মান্যতা পায় এবং সিরকাশিয়ানরা প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে হিব্রু/আরবি ছাড়াও সিরকাশিয়ান ভাষায় অধ্যয়নের সুযোগ পায়। এছাড়াও ইসরায়েল-সিরিয়া সীমান্তে গোলান অঞ্চলে কুর্দি ও কিছু তুর্কিও বসবাস করেন। লেবানন সীমান্তে শিয়া ও আলেবীদের দেখা মিলবে। আর তেলআবিবের উপকণ্ঠে আছে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বসবাস। ১৫% আরব ও অন্যান্য মুসলিম ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের অভিযোগ করেন, যদিও তাঁদের মতে তাঁদের ইহুদি প্রতিবেশিরা তাঁদের প্রতি সদাচরণ ও সহানুভূতিশীল আচরণ করে থাকেন।


Leave a Comment:

Login to comment

2017 © 2024 eibbuy. All Rights Reserved.
Developed By Fluttertune react js next js