বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসায় ই-ভ্যালির উথান এবং ভবিষ্যৎ ।। Rise of Evaly in Bangladesh and its future

বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসায় ই-ভ্যালির উথান এবং ভবিষ্যৎ ।। Rise of Evaly in Bangladesh and its future


Posted on: 2020-03-17 14:32:39 | Posted by: eibbuy.com
বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসায় ই-ভ্যালির উথান এবং ভবিষ্যৎ ।। Rise of Evaly in Bangladesh and its future

বর্তমান বিশ্বে প্রতি ১০০ জনে ৫৮ জন ইন্টারনেট সেবা ব্যবহার করেন এবং এই সংখ্যা প্রতিনয়ত বেড়েই চলেছে।
মজার ব্যাপার হলো, ২০১৮ সালে বিটিআরসি'র তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ও প্রতি ১০০ জন এ ৫২দশমিক ৭৭ জন।
২০১৬ এবং ২০১৭ তে এই সংখ্যা ছিলো যথাক্রমে ১৩ দশমিক ২ এবং ৪৮ দশমিক ৪।
২০১৯ সালে এসে এ পর্যন্ত পুরো বিশ্বে অনলাইন কেনাকাটা হয় ৩.৫৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ ১ ট্রিলিয়ন লিখতে ১ এর পর ১২ টি শূন্য বসে৷
ট্রিলিয়ন শব্দটি আমাদের কাছে তেমন পরিচিত না। বিলিয়ন মানে তো আমরা সবাই জানি৷
৩.৫৩ ট্রিলিয়ন ডলারে হয় ৩ হাজার ৫ শত ৩০ বিলিয়ন। এক হাজার মিলিয়ন এ হয় এক বিলিয়ন ডলার। টাকার অংকে হিসেবটা খুব জটিল। সেদিকে আর যেতে চাই না। পরিচিতরা জানেন আমি অংকে খারাপ। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ই-কমার্সের গুরত্ব বোঝানোর উদ্দেশ্যে গুগল ঘেটে এই হিসেবগুলো বের করলাম।
আশা করা যায় আগামী ২০২২ সাল নাগাদ বৈশ্বিক ই-কমার্সের কেনাকাটা ৬ দশমিক ৫৪ ট্রিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে। বৈশ্বিক ই-কমার্সের এই বিস্তারে ক্রমবর্ধমান GDP নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান বেশ শক্ত। গোল্ডম্যান স্যাক্স এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ইকমার্স মার্কেট সাইজ হবে ২০ বিলিয়ন ডলার।
আমেরিকানরা শপিং পাগল জাতি।
এরা ব্ল্যাক ফ্রাইডের আগেরদিন রাতে দোকানের সামনে তাঁবু গেড়ে শুয়ে থাকে৷ কিছু লোক এদিন অর্থের বিনিময়ে আপনার জন্য লাইন ধরে থাকবে।
অনেকটা আমাদের দেশে ট্রেনের টিকেটের লাইন ধরে রাখার মতো ব্যবস্থা।
একদল ধনী মানুষ গৃহহীনদের মতো রাস্তায় রাত কাটাচ্ছে, শুধুমাত্র কিছু কম টাকায় পণ্য কেনার আশায়৷ তাও আবার সবাই নিজেদের পছন্দমতো পণ্য কেনার সুযোগ পায় না৷ পছন্দের পণ্য কিনতে দাংগা হাংগামার অন্ত নেই৷
এদের এই ব্ল্যাক ফ্রাইডে নিয়ে ইউটিউবে মজার মজার ভিডিও আছে। দেখতে ভালো লাগে৷
খোদ আমেরিকায় ২০১৯ সালে কয়টি শপিং মল বন্ধ হয়েছে অনুমান করতে পারেন?
৮,৬০০ টি! আশংকা করা হচ্ছে এই তালিকা ২০২২ এ গিয়ে আরো লম্বা হবে। বছরে প্রায় ২৫ শতাংশ হারে শপিংমল বন্ধ হচ্ছে শপিং পাগল দেশ আমেরিকায়৷ এই তালিকায় কিন্তু জ্যাকসন হাইটসের সিড়ির নিচের বিড়ির দোকান নেই। আছে "জেসি পেনি"র মতো শক্ত ভীতের খুচরো দোকানী৷
অর্থনীতিবিদগণ এটাকে বলছেন Retail Apocalypse, সোজা বাংলায় খুচরা ব্যাবসায় "কেয়ামতের আলামত"।
তাহলে শপিং প্রিয় এই জাতি কোথায় কেনাকাটা করছে? উত্তর হলো, অনলাইনে৷
কেন? কম মূল্য, তাই?
আসলে ব্যাপারটা তা নয়৷
ধরেন আপনি থাকেন আলস্কায়৷ আপনি একটি ভালো মানের মোবাইল কিনতে চান। আপনার প্রথম পছন্দ আইফোন। কিন্তু আপনার আশেপাশে একশো মাইলের মধ্যে আইফোন বিক্রেতা নেই৷
আপনার সময় মূল্যবান। মাটির নিচের খনিজ সম্পদ উত্তোলন করে আপনি মেলা টাকা কড়ি করেছেন। কিন্তু সেই টাকা খরচ করার সময় খুব কমই পান৷ অথবা লোকাল বার এর জে​​রিন-নাটালি কে ফেলে শহরে যেতে ইচ্ছে করেনা আপনার৷ কারন যেটাই হোক আপনি কোন প্রকার হ্যাঁপা ছাড়াই আপন গন্ডির নিরাপদ আলস্যে বসে আইফোন উপভোগ করতে চান।
সমাধান হলো, ই-কমার্স৷
এপল যদি আপনাকে ওয়ারেন্টি দেয়, এবং "কেউ" যদি সামান্য হাদিয়ার বিনিময়ে আপনাকে সেই পণ্যটি পৌছে দেয়, আপনি তখন বারবার সেই 'কেউ' কে ই বেছে নেবেন।
শুধু তাই নয়, আপনি একইসাথে আরো অনেক কিছুই পেতে চাইবেন৷
হয়তো জেরিন-নাটালির কাছে জানতে চাইবেন ওদের কিছু লাগবে কিনা। একটি আইফোনের পথ খরচায় যদি একাধিক পণ্য নেওয়া যায় তাহলে সেটা যে লাভজনক তা বুঝতে "ওয়ারেন বাফেট" হতে হয় না।
নিজে তো সেবা নিবেনই পাশাপাশি স্বপ্রোনোদিত হয়ে অন্যকেও উৎসাহিত করবেন। এভাবে একদিন সময়ের পরিক্রমায় আলাস্কার খনি থেকে কেউ আর আইফোন কেনার জন্য শহরে আসতে চাইবে না৷
বলতে চাইছি, ই-কমার্স এমন এক শিল্প যেটার জন্ম শহরে হলেও সেটা মূলত তৃণমূল জনপদের জন্য আশীর্বাদ।
যেখানে একজন ক্রেতা ঘরে বসে বিশ্বের যেকোন বিক্রেতার পণ্য বা সেবা গ্রহণ করতে পারবেন৷
তৃণমূল খুচরো ব্যবসায়ীদের জন্য সেটা মোটেই সুখকর অভিজ্ঞতা নয়৷ বিক্রেতার ইচ্ছেমতো দামে ইচ্ছেমতো মানের পণ্য গছিয়ে দেওয়া মোটামুটি অসম্ভব।
ই-কমার্সের আশীর্বাদে প্রচলিত সকল ধ্যান ধারণা ভেংগে "ক্রেতা স্বাধীনতা" উঠে এলো সবার উপর।
তাহলে ই-কমার্স কি আসলেই তৃণমূল খুচরো ব্যবসায়ীদের জন্য অভিশাপ?
ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস হলো যোগাযোগের টুল বা মাধ্যম। বিক্রেতার সাথে ক্রেতার সরাসরি যোগযোগের এই মাধ্যম জীবনকে করে সহজ৷
এবার আসি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে। এই দেশে প্রথমদিকে সবগুলো ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস ব্যার্থ হয়েছে। উদ্যোক্তাগণ এই ব্যবসার সাধারণ তত্ত্বটি ধরতে পারেননি৷ ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস মানে পণ্য নয় সেবা বিক্রি করা। পণ্য বিক্রি করেন বিক্রেতা।
পণ্য কিনতে চাইলে যে কেউ সরাসরি বিক্রেতার কাছেই যেতে পারে। একজন ক্রেতা মার্কেটপ্লেস এ আসেন সেবা গ্রহণের (ভ্যালু এডেড সার্ভিসের) জন্য।
সবাই শহরকেন্দ্রিক ই-কমার্স তৈরির চেষ্টায় এতো বেশি বিভোর হয়ে ছিলেন যে যেখানে মূল ব্যবসা সেখানে মনোযোগ দেননি৷
ক্রেতার চাইতে বিক্রেতার স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছেন। নিজেদের লাভের পাল্লা ভারী করতে গিয়ে ঝুড়ির তলা খুলে যায় সবার। প্রথমদিকের ই-কমার্স গুলোয় কেনকাটার অভিজ্ঞতা যাদের আছে তারা সবাই জানেন বাংলাদেশে ই-কমার্স মানেই ছিলো প্রতারিত হওয়া৷
জীবনকে সহজ করার চাইতে কঠিন করে তুলেছিল। ভোগান্তির অন্তঃ ছিলোনা।
অদ্ভত এই জাতি অপার সম্ভাবনাময় একটি শিল্পকে পরিণত করলো জাতীয় অনাস্থার প্রতীক হিসেবে।
ঢাকাবাসীর কাছে ই-কমার্স মানে ছিলো মতিঝিলে বসে গুলিস্তানের ফুটপাতে বিক্রি হওয়া ১০ টাকার পণ্য ৩০ টাকায় কিনে ৫০ টাকা ডেলিভারি চার্জ দেওয়া৷
শহরের লোকেরা ই-কমার্সকে গালি দেয়, গ্রামের লোকেরা ভয় পায়৷
তথৈবচ অবস্থা!
এই সময় কয়েকটি বিদেশি কোম্পানি এসে ই-কমার্সের পসরা সাজিয়ে বসে।
যে অর্থনীতি একটি ভালো মানের ই-কমার্সের জন্য হাঁসফাঁশ করছে, সেই অর্থনীতিতে এসকল ভুইফোড় ই-কমার্স গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে দাড়ালো ।
পূর্বসূরিদের মতো এরাও ক্রেতা সন্তুষ্ট করার চাইতে বিক্রেতার স্বার্থের দিকে মনোযোগ দিলো।
ফলাফল, ভয়াবহ পতন।
অপরিণত এই শিল্প এবারে ক্রেতা বিক্রেতা উভয়ের আস্থা হারালো৷ ক্ষতি যা হওয়ার তা হলো ক্রমবর্ধমান জাতীয় অর্থনীতির। এই ক্ষতি সত্যিই অপূরনীয়!
যাইহোক, ধান বানতে শিবের গীত অনেক হলো৷ এবারে বর্তমানে আসা যাক।
এই সময়ে দেশীয় ই-কমার্সের বহুল আলোচিত নাম হলো ইভ্যালি৷
চমকপ্রদ অফার দিয়ে ক্রেতা আকৃষ্ট করা, কমিশন ছাড়া ব্যবসা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিক্রেতা আকৃষ্ট করা, আপাতদৃষ্টিতে এটাই ইভ্যালি৷
এটাই কি ইভ্যালি? আরেকটু গভীরে ঢোকা যাক৷
ইভ্যালি প্রথমেই টার্গেট করলো যেকোন অর্থনীতির চালিকা শক্তি, তরুণ প্রজন্মকে। তরুণ না বলে কিশোর বললে সঠিক হয়৷ এসকল কিশোরেরা সহজেই উত্তেজিত হয়৷ এরা যখন দেখে ৩০ হাজারের মোবাইল ১০ হাজারে পাওয়া যাচ্ছে, তাও আবার নির্ভরশীল বিক্রেতা, তখন হুশ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
আড্ডা, অনলাইন উত্তাল হয়ে ওঠে ইভ্যালির গুঞ্জনে। কেউ বলে, ভুয়া, কেউ বলে ভেজাল মাল।
আসলেই কী!??
ইভ্যালি দাবি করে বসে, তাদেরকে অগ্রীম মূল্য প্রদান করতে হবে। যেকোন ভালো মানের ই-কমার্সের জন্য খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু ইভ্যালি ভালো মানের ই-কমার্স নয়। এদেশে এমনকি ক্যাশ অন ডেলিভারির উপর ও ভরসা রাখা দায়!
পাশাপাশি ই-কমার্স এ ক্রেতার আস্থা শূণ্যের কোঠায়। মানুষজন অনলাইনে মোবাইল অর্ডার করে বাক্স খুলে পায় পেঁয়াজ!
কেউবা ২০ হাজার টাকা কুরিয়ার সার্ভিসে (কন্ডিশন ডেলিভারি) দিয়ে এসে বাক্স খুলে দেখে দুই হাজারের ভাংগারী দিয়ে ঠাসা!
এই অবস্থায় অগ্রীম টাকা চাওয়াটা বিরল সাহসী পদক্ষেপ। কিন্তু বিনিময়ে লাভের অংকটি ও লোভনীয়।
শরীরবৃত্তীয় হরমোন হোক বা যৌবণ তাড়িত উচ্ছাসা, কেউ কেউ ইভ্যালির ডাকে সাড়া দেয়।
যখন দেরী করে হলেও ইভ্যালি তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে, তখন তারা যেকোন ব্যাবসার সবচাইতে বড় সম্পদটি তৈরি করতে সক্ষম হয়।
ক্রেতার আস্থা! যেটা এতোদিন অন্য সবাই উপেক্ষা করেছিলো।
বাংলাদেশের ই-কমার্সের জন্য এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়৷
সবচাইতে সংবেদনশীল অংশটিকে প্রথমবারের মতো কেউ নাড়া দিলো। সেটা হলো ক্রেতার আস্থা অর্জন।
এটাকে আমি যেকোন দেশীয় ই-কমার্সের অন্যতম পার্ফমেন্স ইন্ডিকেটর বলবো।
অনেকে অবশ্য বললো, বিক্রেতারা অসন্তুষ্ট৷ ভাইরে, বিক্রেতা কে তৈরি করে? ক্রেতারাই বিক্রেতা তৈরি করে অথবা ছুড়ে ফেলে৷
এর প্রমাণ এর আগে প্রায় সব-কটি ই-কমার্স চরম মাশুলের বিনিময়ে দিয়েছে।
এরপর ইভ্যালি দেশের প্রসিদ্ধ ব্র‍্যান্ডগুলোকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসা শুরু করলো৷
শুরু হলো, দেশীয় ই-কমার্সের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়৷
এসব ব্র্যান্ডের কেউ কেউ নিজেদের অনলাইন স্টোর খুলেছে নাম মাত্র। কেউবা অনলাইন নিয়ে মাথাই ঘামায় না৷
অফলাইন দাপিয়ে বেড়ানো এইসব জায়ান্টদের অনলাইন মার্কেট শেয়ার খুবই কম। সবাই মোটামুটি একমত যে, অনলাইনে প্রচারণা হয়৷
বেচাকেনা তেমন হয় না।
এইসব ব্র্যান্ডগুলোর হোমড়াচোমরাদের হয়তো কয়েক পুরুষের ব্যবসা। এসব অপরিপক্ক ই-কমার্স নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় কই! দোকানের কাস্টোমার সামলাতেই হিমশিম অবস্থা।
ইভ্যালি বুঝলো, এদেরকে ধরে রাখতে হলে অনেক বেশি কাস্টোমার লাগবে। তাহলেই এরা ইভ্যালির উপর ভরসা পাবে।
শুরু হলো আরো অফার৷ তবে এবারে ইভ্যালি অনেক বেশি শক্তিশালী৷
তাদের নিজেদের কর্মীর পাশাপাশি ইভ্যালির রয়েছে বিশাল এক এডভোকেট বাহিনী (আইনজীবী না, অপিনিয়ন লিডার)।
এরা নিজেরা ইভ্যালির সেবা গ্রহণ করেছে, এবং এর ফলে তাদের বন্ধু পরিবার-পরিজনদের মধ্যেও ইভ্যালি সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা জন্ম নিয়েছে।
সবাই মিলে হামলে পড়লো ইভ্যালির এই অফারে কেনাকাটা করার জন্য। কেউ এসি কিনলো, কেউ কিনলো আলমারি, কেউ ফ্রিজ আবার কেউবা গাড়ি!
শুরু হলো অনলাইন শপিং উন্মাদনা।
এবারের ক্রেতারা কেউ আর স্থান বা বয়সের সীমায় সীমাবদ্ধ নয়।
যারা কোনদিন অনলাইন থেকে একটি সুতোও কেনেনি তারাও ইভ্যালিতে অর্ডার করলো। এবং যথারীতি অগ্রীম টাকা জমা দিলো।
এদের মাধ্যমে ইভ্যালি সেইসব ব্র্যান্ডের কাছে প্রমাণ করলো, অনলাইনে শুধু প্রচারণা নয়, বিকিকিনি ও হয়।
বিক্রিবাট্টা শুধু ইলেকট্রনিক গ্যাজেটে আটকে নেই, লোকে মোটরসাইকেল, ডাইনিং টেবিল, এসি, পানির ফিল্টার এমনকি ডায়াপার পর্যন্ত কেনে যদি ক্রেতার আস্থা অর্জন করা যায়।
পাশাপাশি ইভ্যালি শুধু ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরের সকল জেলার বিক্রেতাদের জাতীয় পর্যায়ের ক্রেতা আকৃষ্ট করার সুযোগ তৈরি করে দিলো।
আমার দেখা এ পর্যন্ত ইভ্যালির সাফল্যগুলো হলো -
সারা দেশের গণমানুষের আস্থা অর্জন করা
সারা দেশের ছোট ছোট অফলাইন দোকানগুলোকে অনলাইন মার্কেটপ্লেসের সেবার আওতায় আনা
অনলাইনে অর্ডার করলে সঠিক পণ্য বুঝিয়ে দেওয়ার সেবা নিশ্চিত করা
অগ্রীম মূল্য প্রদানে অভ্যস্থ করা
ই-কমার্সের সুফল তৃণমূল পর্যায়ে পৌছে দেওয়া
কমিউনিটি বেজড ক্রেতা তৈরি করা
দেরীতে ডেলিভারি দেওয়াকে অনেকেই ব্যার্থতা বলবেন। আমি সেটা বলবো না।
বুঝিয়ে বলছি।
ড্রপশিপিং নামের একটি বিজনেস মডেল বর্তমান উন্নত বিশ্বে খুবই জনপ্রিয়। বাংলাদেশের ব্যাকপ্যাকব্যাংকে কেউ ড্রপশিপিং বলতে চাইলে বলতে পারেন, আমি তর্কে যাবো না।
ড্রপশিপিং এ অর্ডার করার দুইমাস পরও পণ্য ক্রেতার হাতে পৌছাতে পারে। ক্ষেত্র বিশেষে আরো দেরী হয়।
ক্রেতা কেন মেনে নেয়? কারন ক্রেতা পণ্যটি অন্য কোথাও পায় না। পেলেও দাম বেশি।
অথবা বিক্রেতার প্রতি অনাস্থা।
কি লাভ হবে মোবাইল অর্ডার করে দুইদিনের মধ্যে পেয়াজ ডেলিভারি পেয়ে?
তার চাইতে কি পনের দিন পর কাংখিত পণ্যটি পাওয়া ভালো নয়?
অনেকেই বলেন ইভ্যালি বাংলাদেশের ই-কমার্সের অভিশাপ। এরা মানুষকে জানাচ্ছে, ই-কমার্স মানেই অফার।
আপনি জানেন কি আমেরিকায় ৯০ শতাংশ ক্রেতা কোন কিছু কেনার আগে অন্তত একবার এমাজানে ঢূঁ মারেন কাংখিত পণ্যের মূল্য যাচাই করতে?
কারন এমাজানের চাইতে কম দামে কেউ দিতে পারে না।
ইন্ডার্স্ট্রি স্ট্যান্ডার্ড লিড টু কনভার্সন রেট হলো আনুমানিক ৩ শতাংশ।
মানে যতোজন আপনার সাইটে আসবেন তার ৩ শতাংশ মানুষ কিছু না কিছু কেনাকাটা করে।
এমাজানের জন্য এটা ৩ শতাংশের চাইতে বেশি কারন তারা আপসেল, প্রোমো, প্রাইম ইত্যাদির মাধ্যমে কনভার্সন রেট অপ্টিমাইজ করে থাকে।
এটা অন্যদের জন্য অভিশাপ হলেও, এমাজানের জন্য সফলতা নয় কি?
হয়তো একদিন বাংলাদেশেও প্রতি ১০ জন ক্রেতার মধ্যে ৯ জন কেনাকাটা করার আগে ইভ্যালির কোন অফার চলছে কিনা তা জানতে চাইলে?
এটা অন্যদের জন্য অভিশাপ হলেও, ইভ্যালির জন্য কিন্তু আশীর্বাদ।
অনেকেই বলেন, এমাজান, ইবে, জেডি এমনকি ফ্লিপকার্ট যদি বাংলাদেশে আসে তাহলে এইসব লোকাল ইকমার্স খেই হারিয়ে ফেলবে।
আসলেই কি তাই?
আলিবাবা, আলি এক্সপ্রেসকে আমরা সবাই চিনি। তাওবাও (Taobao) সম্পর্কে আমরা কতোটুকু জানি?
তাওবাও আলিবাবা'র অংগপ্রতিষ্ঠান। চীনের স্থানীয় ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস।
২০০৩ সালে ইবে (Ebay) যখন প্রথম চীনে ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নেয় তখন জ্যাক মা আলীবাবা নিয়ে ব্যস্ত। যদিও আলীবাবার বিজনেস মডেল এবং ইবে এর বিজনেস মডেল ভিন্ন কিন্তু আসল কথা তো একই।
আলীবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা চেয়েছিলেন ইবে যাতে চীনের ই-কমার্স ব্যাবসা কেড়ে নিতে না পারে।
তাই জ্যাক মা তার ছোট এপার্টমেন্টে খুব গোপনীয়তার সাথে তাওবাও বানানো শুরু করেন।
এই এপার্টমেন্ট থেকেই আলীবাবার যাত্রা শুরু হয়েছিলো।
একই সময় ইচনেট (Eachnet) নামের একটি সফল ই-কমার্স কিনে নেয় ইবে (Ebay)।
চায়না ছিলো ইবে'র ১৮তম আন্তর্জাতিক অফিস।
ইবে'র বিনিয়োগ ছিলো ১৮০ মিলিয়ন ডলার। ইবে'র তখনকার মার্কেট শেয়ার ছিলো ৯০ শতাংশ, আয়তনে ১ কোটি।
অন্যদিকে তাওবাও এর বিনিয়োগ ছিলো মাত্র ১৪ মিলিয়ন ডলার।
২০০৩ এ তাওবাও এর যাত্রা শুরুর দিকের কয়েকটা পয়েন্ট উল্ল্যেখ না করলেই নয়
(অনেকগুলো পয়েন্ট কাকতালীয়ভাবে ইভ্যালির সাথে মিলে যায়!!!???)
ক্রেতা-বিক্রেতা সবার জন্য ৩ বছর সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সেবা প্রদান
ইবে'র বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে যুদ্ধ ঘোষনা করা, যাতে মিডিয়া এটেনশন পাওয়া যায় চাইনিজ মার্কেটের জন্য বেটার এবং কাস্টমাইজড ওয়েবসাইট তৈরি চাকচিক্যময় বিজ্ঞাপন যা তরুণদের আকৃষ্ট করা
কমিউনিটি বেজড মার্কেটপ্লেসকে তৈরি করা লাইভ চ্যাটের সুবিধা কনসার্ট, সেলার কাস্টোমার নেটওয়ার্কিং ইভেন্ট অর্গানাইজ করা মাত্র দুবছরের মাথায় ইবে এবং তাওবাও সমানে সমানে চলে আসে। ইবে চায়নায় আরো ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে।
কিন্তু অন্যদিকে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইবে'র শেয়ারের দরপতন ঘটে। এবং এর পরের বছরই তাওবাও ইবে কে ছাড়িয়ে চায়নার শীর্ষ লোকাল ই-কমার্সে পরিনত হয়।
২০০৬ সালে এসে তাওবাও ঘোষনা করে তারা আরো তিন বছর ফ্রি সেবা দিবে। সাথে সাথে ইবে'র শেয়ারের দর ৫ শতাংশ কমে যায়।
ইবে'র কমিউনিকেশন চিফ হেনরি গোল্ডম্যান দাবি করেন,
ফ্রি" কোন ব্যাবসায়ীক মডেল হতে পারেনা। (অফার সারাবছর চলতে পারেনা!
২০০৬ এর শেষের দিকে ইবে তাদের চায়নার ব্যাবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়।
মনে আছে বিক্রেতা তৈরি করে কে?
আচ্ছা, তাহলে মার্কেটপ্লেস কে তৈরি করে?
ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে মিলে।
ইবে চায়নায় টিকতে পারেনি কারন তারা চেয়েছিলো টাকা দিয়ে মার্কেট শেয়ার কিনে নিতে।
যেটা তার বুঝতে ভুল করে তা হলো, ইকমার্স মার্কেটপ্লেস থেকে কেউ পণ্য কিনতে যায় না, সেবা গ্রহণ করতে যায়।
ইভ্যালি কি তাহলে তাওবাও এর পথে এগুচ্ছে?
হয়তো, হয়তো না।
আমি আউটসাইডার হিসেবে আমার অবজারভেশন শেয়ার করলাম। সময় বলে দিবে ভবিষ্যতের গতি কোনদিকে যাবে।
ইভ্যালি তাহলে লাভ করবে কবে?
এই প্রশ্নের উত্তর আমি জানি।
তৎকালীন সময়ে ইবে'র সিইও মেগ হুইটম্যান সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন,
ই-কমার্সে লাভ করতে অন্তত ২ থেকে ৩ বছর সময় প্রয়োজন।
আশা করা যায় ততোদিন পর্যন্ত অফার চলতে থাকবে...

©Boka Bahadur


Related Post

জনপ্রিয় পণ্য

সাম্প্রতিক পণ্য

Leave a Comment:
alibaba & Import Export expert

সি এন্ড এফ, আমদানি, আলিবাবা নিয়ে যেকোনো সমস্যায় আমাকে ফেসবুকে মেসেজ করুন

এখানে ক্লিক করুন
2017 © 2024 eibbuy. All Rights Reserved.
Developed By Fluttertune react js next js