যারা প্রবাসী আছেন তাদের জন্য ঢাকা এয়ারপোর্ট মানেই এক আতঙ্কের নাম। প্রবাসীরা ঢাকা এয়ারপোর্টে ঝামেলায় পড়েন নাই এমন কম আছে।
যেসব
ঝামেলায় পড়েন তার মধ্যে অন্যতম হল কাস্টমস কর্তৃক পণ্য ডি এম করা।
প্রবাসীরা সখ করে নিজের পরিবার পরিজনের জন্য বিদেশ থেকে পণ্য নিয়ে আসেন।
সাধারণ চিন্তায় আমাদের মন বলে যে প্রবাসে আমরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অর্থ
উপার্জন করে শখের জিনিস নিয়ে আসি সেখানে সরকারকে কেন ট্যাক্স দিবো? আসলেই
তাই। ট্যাক্স যাতে না দিতে হয় সে জন্য সরকার এজন্য একটা নিয়ম নীতিও তৈরি
করে দিয়েছে।
কিন্তু যে সমস্যার কারনে আমরা সাধারণ মানুষরা ঝামেলায়
পরতেছি সেটা হল অনেক অসাধু ব্যবসায়ী প্রবাসীদের এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পণ্য
বিদেশ থেকে আমদানি করে ব্যবসা করে যাচ্ছে আর সরকারকে কোটি কোটি টাকার
ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছে। এখন প্রশ্ন জাগতে পারে ভিসা দেখলেই তো বুঝা
যাবে কে প্রবাসী আর কে ব্যবসায়ী।
আসলে আসুধু ব্যবসায়িরা প্রবাসীদের ও
এই হীন কাজে ব্যবহার করতে ভুলেনি। যার কারনে বাংলাদেশ কাস্টমস আসলে ভাবনায়
পড়ে যাচ্ছে আসল অপরাধীদের সনাক্ত করতে।
যাহোক আমারা চাইলেও এটা
বন্ধ করতে পারবোনা । কারন অসাধু কে সাধু করা বাংলাদেশে খুব ই কঠিন কাজ।
এবার কাজের কথায় আসি। কিছু পণ্য আছে যেগুলি বাংলাদেশ সরকার আমদানি নিষিদ্ধ
করেছে। সেসব পণ্য আপনি যদি আপনার ব্যাগেজে করে নিয়ে আসেন তবে সেগুলি ঢাকা
এয়ারপোর্ট কাস্টমস আটকাবেই ।
এবার একটু সরকারী আইন কানুনের কথা বলবো । দেখা যাক সরকার আমাদের জন্য কি কি সুভিধা দিয়েছে ।
বাংলাদেশ
ব্যাগেজ নীতিমালা এস.আর.ও. নং ১৬৪-আইন/২০১৬/২৬/কাস্টমস যাত্রী
(অপর্যটক) (আমদানি) বিধিমালা, ২০১৬ অনুযায়ী,তফসিল-৩ এর মতে আকাশ এবং জলপথে
আগত ১২ (বার) বৎসর বা তদুর্ধ্ব বয়সের যাত্রীর সংগে আনীত হাতব্যাগ,
কেবিনব্যাগ বা অন্য উপায়ে আনীত মোট ৬৫ (পঁয়ষট্টি) কিলোগ্রাম ওজনের অতিরিক্ত
নহে এইরূপ ব্যাগেজ সকল প্রকার শুল্ক ও কর পরিশোধ ব্যাতিরেকে খালাসযোগ্য
হইবে ।
তবে একজন যাত্রী তফসিল-৩ এ উল্লেখিত পণ্যের প্রত্যেকটি একটি
(মোবাইল ফোন দুইটি) করিয়া পণ্য সকল প্রকার শুল্ক ও কর পরিশোধ ব্যতিরেকে
এবং তফসিল-২ এ উল্লিখিত পণ্যের প্রত্যেকটির একটি করিয়া পণ্য উক্ত তফসিলে
উল্লিখিত শুল্ক ও কর পরিশোধ সাপেক্ষে আমদানি করিতে পারিবেন।
তবে
তফসিল-৩ এ উল্লিখিত পণ্যের অতিরিক্ত বা ভিন্ন কোন (আমদানি নীতি আদেশ বা
অন্য কোন আইনের আওতায় নিয়ন্ত্রিত বা নিষিদ্ধ পণ্য ব্যতীত) ,আমদানি করিলে
প্রধান আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রক এর ছাড়পত্র উপস্থাপন সাপেক্ষে,
নির্ণয় পূর্বক (adjudication)
প্রদেয় সমুদয় শুল্ক কর, অর্থদণ্ড ও
জরিমানা, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, পরিশোধ সাপেক্ষে খালাস করিতে পারিবেন ।
যারা
বিদেশ থেকে আসার সময় স্বর্ণবার নিয়ে আসেন এই রকম একজন যাত্রী বিদেশ হইতে
দেশে আগমনকালে অনধিক ২৩৪ (দুইশত চৌত্রিশ) গ্রাম (বিশ তোলা) ওজনের
̄স্বর্ণবার ২৩৪ (দুইশত চৌত্রিশ) গ্রাম (বিশ তোলা) ওজনের রৌপবার বা রৌপ্য
পিণ্ড সকল প্রকার শুল্ক ও কর পরিশোধ সাপেক্ষে আমদানি করিতে পারিবেন।
এবার
বলবো ঢাকা এয়ারপোর্টে শুল্ক ও কর মুক্ত পণ্যের তালিকা । এসব পণ্য আপনি
বিনা শুল্কে আমদানি করতে পারবেন। তবে প্রত্যেকটির একটি করিয়া পণ্য যা
বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য নয় বুঝা যায়।
১ ক্যাসেট প্লেয়ার/টু-ইন-ওয়ান
২ ডিস্কম্যান/ওয়াকম্যান (অডিও)
৩ বহনযোগ্য অডিও সিডি প্লেয়ার
৪ ডেস্কটপ/ল্যাপটপ কম্পিউটার (একটি ইউপিএস সহ)
৫ কম্পিউটার ̄স্ক্যানার
৬ কম্পিউটার প্রিন্টার
৭ ফাক্স মেশিন
৮ভিডিও ক্যামেরা (HD Cam, DV Cam, BETA Cam, Professional কাজে ব্যহৃত হয় এরূপ ক্যামেরা ব্যাতিত)
৯ স্টীল ক্যামেরা /ডিজিটাল ক্যামেরা
১০ সাধারণ/পুশবাটন/কর্ডলেস টেলিফোন সেট
১১সাধারণ/ইলেকট্রিক ওভেন/ মাইক্রো ওয়েভ ওভেন
১২রাইস কুকার/প্রেসার কুকার/গ্যাস ওভেন (বার্নারসহ)
১৩টোস্টার/স্যান্ডউইচ মেকার/ব্লেন্ডার/ফুড প্রসেসর/জুসার/ কফি মেকার
১৪সাধারণ ও বৈদ্যুতিক টাইপরাইটার
১৫গৃহস্থলি সেলাই মেশিন (ম্যানুয়াল/ বৈদ্যুতিক)
১৬ টেবিল/ প্যাডেস্টাল ফ্যান/গৃহস্থলি সিলিং ফ্যান
১৭ স্পোর্টস সরঞ্জাম (ব্যাক্তি গত ব্যহারের জন্য)
১৮ ১০০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণালংকার ও ২০০ গ্রাম ওজনের রৌপ্য অলংকার (এক প্রকার অলংকার ১২টির অধিক হইবে না)
১৯ ১ কার্টন (২০০ শলাকা) সিগারেট ;
২০ ২১" পর্যন্ত Plasma, LCD, TFT, LED অনুরূপ প্রযুক্তির টেলিভিশন ও ২৯" পর্যন্ত (CRT)সাদাকালো/রঙ্গিন টেলিভিশন
২১ভিসিআর/ভিসিপি ;
২২ সাধারণ সিডি ও দুইটি স্পিকার সহ কম্পোনেন্ট(মিউজিক সেন্টার) (সিডি/ ভিসিডি/ডিভিডি/এলডি/ এমডি সেট)
২৩ ৪ (চার) টি সহ কম্পোনেন্ট(মিউজিক সেন্টার) সিডি/ভিসিডি/ডিভিডি/এলডি/এমডি/
২৪ এলসিডি কম্পিউটার মনিটর (টিভি সুবিধা থাকুক বা নাই থাকুক) ১৯" পর্যন্ত
২৫ দুইটি মোবাইল/ সেলুলার ফোন সেট ।
যাহোক
এটাতো গেল আইন কানুনের কথা । এবার আসি কাজের কথায়। আপনাকে যদি কাস্টমস
অফিসার মনে করে আপনার আনিত পণ্যে ট্যাক্স পরিশোধ করতে হবে তবে আপনাকে
ট্যাক্স দিতেই হবে। কত ট্যাক্স ধরবে সেটা নির্ভর করবে কাস্টমস অফিসারের মন
মানসিকতার উপর। উনি চাইলে আপনার পণ্যের ট্যাক্স কমিয়ে রাখতে পারেন। এর পরও
যাদের পণ্য ডি এম করা হয় তারা আমাদের সাথে সরা সরি যোগাযোগ করতে পারেন
আপনার পণ্য সঠিক ট্যাক্স পরিশোধ করে আপনার কাছে ফিরিয়ে দেয়াই আমাদের মূল
উদ্দেশ্য ।
আপনার পণ্য নিয়ে ঢাকা এয়ারপোর্টে যে কোন সমস্যায় আমরা আছি আপনার পাশে। ফোন করুন আমাদের হট লাইনে
০১৩১০-৫৭৬৩৫৭