অনার্স ২য় বর্ষে আমার এক বন্ধু কাপড়ের ব্যবসা শুরু করে। ওর এক আত্মীয়ের সাথে মিলে ব্যবসা শুরু করে। শাহবাগে শোরুম ছিল। ভালোই চলছিল।
কম্পিউটার সায়েন্সের আরেক বন্ধু মাঝে মধ্যে অন্যদের ওয়েবসাইট বানিয়ে দিয়ে বেশ ভালোই ইনকাম করত।
সম্প্রতি
কলেজের এক বন্ধু তার অন্য আরেক বন্ধুর সাথে মিলে ইউটিউব ব্যবসা শুরু
করেছে। ৩টা চ্যানেলে রোজ ৬-৮ টা ভিডিও আপলোড দিচ্ছে তারা। ভিউ হচ্ছে ভালোই।
কয়েকজন
সিনিয়রকে দেখেছি, ইন্টারনেট ব্রডব্যান্ডের ব্যবসা করতে। তারা
বিশ্ববিদ্যালয় হলগুলোতে ময়লার বিনিময়ে ওয়াইফাই সুবিধা দিত। ডিপার্টমেন্টের
এক সিনিয়র টিউশন মিডিয়া খুলে মাসে লাখের উপরে আয় করেছে।
আমার উপরতলায় থাকা হলের এক বড়ভাই তার বাড়িতে ১০ টা হাঁস দিয়ে শুরু করে এখন ১০০০ ছাড়িয়ে গেছে।
শীতের
সময় কিছু ছেলেরা মিলে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হুডির ব্যবসা করে
থাকে। গেলো শীতে এক বন্ধু শুধুমাত্র আমার হলের মধ্যে ১০০০ হুডির অর্ডার
নিয়ে ৩০,০০০+ ইনকাম করেছে।
পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যবসা করা যায়। কিন্তু
এরজন্য নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকাটা খুবই জরুরী। আমাদের মত দেশে পড়াশোনা
ছাড়া বেশীদূর আগানোটা খুবই কষ্টকর। ব্যবসা করতে গিয়ে যদি নিজের পড়াশোনা
গোল্লাই যায়, তবে এদিকে না আগানোই উচিত হবে।
এবার বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ছাত্রাবস্থায় করা যায় এমন কিছু ব্যবসার ধারণা দেয়ার চেষ্টা করছি।
১।
টিউশন : বাংলাদেশী ছাত্রদের জন্য পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যবসার আইডিয়ার কথা
বললে প্রথম মাথায় আসে—টিউশনের কথা। এসময়ে সবথেকে সুবিধের আইডিয়ায় হ'ল টিউশন
করানো।
২। ব্লগ : কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে পড়াশোনার পাশাপাশি
করার মত স্মার্ট বিজনেস আইডিয়া হচ্ছে ব্লগ। সপ্তাহে দু-তিনটা পোস্ট লিখতে
আপনার খুব বেশি সময় ব্যয় হবে না। ছাত্রাবস্থায় প্যাসিভ ইনকামের কথা ভাবাই
বেষ্ট, যেখানে আপনাকে সময় ও পরিশ্রম কম দেয়া লাগবে।
৩। ইউটিউব : লিখতে
ভালো না লাগলে ব্লগের পরিবর্তে ভিডিও ধারণ করেও ভালো প্যাসিভ ইনকাম করতে
পারেন ইউটিউব থেকে। অথবা দুটোই করতে পারেন।
৪। ফ্রিল্যান্সার : আপনার
কোনো বিষয়ে ভালো দক্ষতা থাকলে বা আপনি যে বিষয়ে পড়াশোনা করছেন—তার উপর
ফ্রিল্যান্সিং করুন। নতুন করে কোন বিষয় শিখে তার উপর ফ্রিল্যান্সিং করার
থেকে, এতে করে আপনার উপর চাপ কম পড়বে।
৫। সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার :
সোশ্যাল মিডিয়া—ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, স্নাপচ্যাট, পিন্টারেস্ট
কিকরে কাজ করে জানলে আপনি আপনার মেসের রুমে বসেই একজন সোশ্যাল মিডিয়া
ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতে পারেন।
৬। টি-শার্ট বিজনেস : আপনার
ক্যাম্পাসে টি-শার্টের ব্যবসা করতে পারেন। শীত বা গরমকে টার্গেট করে যেমন
টি-শার্টের ব্যবসা করতে পারেন তেমনি সারাবছরই টুকিটাকি কিছু টি-শার্ট
বিক্রি করতে পারেন।
৭। খাবার ব্যবসা : ক্যাম্পাসে হালকা বা ভারী খাবার,
যেমন—স্যান্ডউইচ, সেমাই, বিরিয়ানি, পোলাও, চিকেন, বিফ ইত্যাদি আইটেমের
খাবার সরবরাহ করতে পারেন। এরজন্য আপনার একটি ফেসবুক গ্রুপ খুলে নিলেই
যথেষ্ঠ হবে।
৮। পোষাপ্রাণী সরবরাহ : অনেকেই আছেন যারা পোষাপ্রাণী (রঙিন
পাখি, অ্যাকুরিয়াম, বিড়াল, কুকুর) রাখতে খুব পছন্দ করেন। আপনার ক্যাম্পাস
বা আশেপাশের এমন মানুষের প্রয়োজন মিটিয়ে আপনি বেশ ভালোরকম আয় করে নিতে
পারেন।
৯। ষ্টেশনারী পণ্য সরবরাহ : কলম, খাতা, প্যাড, জ্যামিতি ইত্যাদি
ছাত্রদের দরকারি সকল ধরনের জিনিস সরবরাহ ছাড়াও ক্যাম্পাসে ফটোকপি মেশিন,
প্রিন্টারের ব্যবসা করতে পারেন।
১০। হল/মেসের ফার্নিচার সরবরাহ : হলে বা
মেসে থাকতে হলে অনেক আসবাব কেনার দরকার পড়ে—পড়ার টেবিল, চেয়ার, খাট, বই
রাখার জন্য বক্স বা আলমারি ইত্যাদি। আপনি এসব ফার্নিচার কম দামে পুরাতনটা
কিনে কিছু লাভে বিক্রি করতে পারেন।
বোনাস আইডিয়া :
১১। খামার : যদি
গ্রামের কাছে থেকে পড়াশোনা করেন—তবে অল্প খরচে কিছু হাঁস-মুরগি বা
গরু-ছাগলের খামার করতে পারেন। দুইটা গরু দিয়ে শুরু করুন, বছর ঘুরতেই দেখবেন
চারটা হয়ে গেছে। আর শহরে থাকলেও এলাকায় অনেক অসচ্ছল মানুষ আছে, যাদের কাছে
আপনি গরু/ছাগল কিনে দিয়ে রাখতে পারেন। আপনার কোনো পেরেশানি ছাড়াই আপনার
টাকা বাড়তে থাকবে।