আপনি কি নিজের জন্য উপযুক্ত ব্যবসার আইডিয়া খুঁজছেন? এই জন্য আপনি কি গুগলে সার্চ করছেন এবং প্রচুর আর্টিকেল পড়ছেন যাতে সেরা বিজনেস আইডিয়া পাওয়া যায় যা আপনার জন্য উপযুক্ত।আপনি আপনার ব্যবসার সেরা আইডিয়া গুলো পাবেন আমাদের ওয়েবসাইটে।
ফ্যাশন হাউজ একটি প্রচুর লাভজনক ব্যবসা। ফ্যাশন হাউজ ব্যবসা দিয়ে অনেকেই ভালো মানের আয় করতেছেন। বাংলাদেশে ফ্যাশন হাউজ ব্যবসা অনেক আগে থেকেই খুব লাভজনক একটা ব্যবসা । আজকে আপনাদের সামনে ফ্যাশন হাউজ নিয়ে একটা বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো। এই আর্টিকেলে ফ্যাশন হাউজ নিয়ে সকল আলোচনা করা হবে। ফ্যাশন হাউজ কি? কিভাবে শুরু করবেন ফ্যাশন হাউজ ব্যবসা? কিভাবে ফ্যাশন হাউজ ব্যবসার নামকরন করবেন ?
১) ফ্যাশন হাউজ
কিভাবে শুরু করবেন ফ্যাশন হাউজ ব্যবসা।
ফ্যাশন হাউজ শুরু করতে আপনাকে প্রথমেই জানতে হবে ফ্যাশন হাউজ আসলে কি ধরনের ব্যবসা। একটা ফ্যাশন হাউজে সুন্দর থ্রিপিস, শাড়ি, চুড়ি, গয়না, শোপিস, জিন্সপ্যান্ট, টি-শার্ট থেকে শুরু করে হাল আমলের ফ্যাশন স্কার্ফ, মানিব্যাগ, ব্যাগ অনেক কিছুই বিক্রি হয়। আপনার এলাকায়ও দিতে পারেন এমন একটি ফ্যাশন হাউজ, যেখানে হাল ফ্যাশনের সব অনুষঙ্গই বিক্রি হবে একই ছাদের নিচে। তবে ফ্যাশন হাউজ ব্যবসার শুরুর দিকে অন্যান্য অনুষঙ্গের চেয়ে শুধু পোশাক বিক্রি করলেই ভালো।
ফ্যাশন হাউজ ব্যবসার নামকরণ
ফ্যাশন হাউজের নামটাও অনেকটা ফ্যাশনেবল হওয়া চাই। কারণ একটা ফ্যাশন হাউজের নামও অনেক সময় ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে। এটা নতুন করে বলার কিছু নেই। ফ্যাশন হাউজের জায়গাটা ৩০০ থেকে ৪০০ বর্গফুটের মধ্যে হলে ভালো হয়। আর ফ্যাশন হাউজে এসি, ট্রায়ালের জন্য আলাদা রুম, দেখার জন্য কয়েক জায়গায় আয়না এবং সুন্দর বসার ব্যবস্থাও রাখতে হবে।
ফ্যাশন হাউজ ব্যবসার শুরুটা যেমন হবে
ফ্যাশন হাউজ ব্যবসা একা শুরু না করে কয়েকজন বন্ধুবান্ধব মিলে শোরুম দিলে সব দিক থেকেই সুবিধা। কারণ পোশাক সংগ্রহ, ডিজাইন পছন্দ, শোরুমে সময় দেওয়া, হিসাবনিকাশসহ অনেক কাজই করতে হয়। কর্মচারী রেখে করতে গেলে ফ্যাশন হাউজের আয়ের চেয়ে খরচ বেড়ে যাবে। এরপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে ফ্যাশন হাউজে আপনি নিজে ডিজাইন করা পোশাক বিক্রি করবেন, নাকি পাইকারি মার্কেট থেকে পছন্দের পোশাক কিনে এনে বিক্রি করবেন। তবে পুঁজির অঙ্কটা যেখানে হিসাবি, সে জায়গায় নতুন চ্যালেঞ্জ না নিয়ে আপনার ফ্যাশন হাউজে পাইকারি মার্কেটের হাজারো ডিজাইন থেকে পছন্দ করে পোশাক কিনে পারেন। মেয়েদের ও শিশুদের নানা ডিজাইনের পোশাক, জিন্স প্যান্ট রেডিমেড কিনলেও টি-শার্ট, পাঞ্জাবি ও ফতুয়া নিজে ডিজাইন করে ফ্যাশন হাউজে বিক্রি করতে পারেন।
ফ্যাশন হাউজে যেসব পোশাক বিক্রি করবেন
ফ্যাশন হাউজে সবসময় থাকতে হবে হাল সময়ের পোশাক। বিভিন্ন উপলক্ষ, যেমন ঈদ, নববর্ষে ফ্যাশন হাউজে রাখতে পারেন পাঞ্জাবি ও ফতুয়া। এছাড়া বিশেষ দিবস, যেমন ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর, পহেলা বৈশাখ ও পহেলা ফাল্গুনÑএসব বিশেষ দিন উপলক্ষে ফ্যাশন হাউজে তুলতে পারেন বিভিন্ন ধরনের পোশাক। বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে দোকানে তুলতে পারেন টাঙ্গাইলের শাড়ি, ব্লক প্রিন্ট শাড়ি। সম্ভব হলে নিজেরা ডিজাইন পছন্দ করে ব্লক করিয়ে নিতে পারেন। তাহলে ব্যতিক্রম কিছু ক্রেতাদের উপহার দিতে পারবেন।
ফ্যাশন হাউজে কত টাকা পুঁজি দরকার
ফ্যাশন হাউজের পজিশন, অ্যাডভান্স, ভাড়া স্থানভেদে ভিন্ন। এগুলো ছাড়া পোশাক কেনার জন্য পাঁচ থেকে ৬ লাখ টাকা পুঁজি হলেই চলবে। আর ফ্যাশন হাউজের সাজসজ্জায় লাগবে ২ লাখ টাকা।
ফ্যাশন হাউজে যেসব কাপড় কিনতে পারেন
টি-শার্টে হাফ কটন কাপড় বেশি চলে। এছাড়া পিকে পলো কাপড়ও বর্তমানে বেশ চলছে। শার্টের কাপড় হিসেবে সুতি ও কটন বেশি বিক্রি হয়। পাঞ্জাবিতে সুতি, সিল্ক, হাফসিল্ক, অ্যান্ডি, কটন, খাদি ও তাঁত বেশি বিক্রি হয়। ফরমাল প্যান্টের কাপড়ে কটনের চাহিদা বেশি।
শুরু হোক বিক্রি
ফ্যাশন হাউজ সাজানোর পর প্রতিটি পোশাকের দাম নির্ধারণটাও প্রয়োজন। এতে দর কষাকষি (নিয়ে) কোনো ঝামেলা থাকে না। এক্ষেত্রে টি-শার্ট প্রতিটি ৪০০ থেকে ১ হাজার ৮০০, হাফ ও ফুলশার্ট প্রতিটি ৫০০ থেকে ২ হাজার, পাঞ্জাবি প্রতিটি ৭০০ থেকে ৩ হাজার টাকা রাখতে পারেন।
লাভটাও জানা প্রয়োজন
তৈরি পোশাক বিক্রিতে লাভ তুলনামূলক কম। আর নিজেদের বানানো পোশাকে লাভ বেশি। তৈরি প্রতিটি পোশাকে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ লাভ থাকে। আর নিজেদের বানানো পোশাকে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ লাভ থাকে।
কিছু টিপস
১. ফ্যাশন হাউজটি এমন জায়গায় হতে হবে, যেখানে যাতায়াত সুবিধা এবং লোকসমাগম বেশি থাকে।
২. ফ্যাশন হাউজে টাকা লেনদেনের জায়গায় কম্পিউটার ও রসিদের ব্যবস্থা করতে হবে। আর শোরুমের নিজের নামে শপিং ব্যাগও তৈরি করতে হবে।
৩. ফ্যাশন হাউজের বিক্রি বাড়ানোর জন্য সব শ্রেণির ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী পোশাক রাখতে পারেন।
৪. ফ্যাশন হাউজে গান বাজানোর ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে।
৫. ফ্যাশন হাউজে নিরাপত্তার জন্য গার্ড ও সিসি ক্যামেরা রাখতে হবে।
৬. প্রতিটি ঋতুতে পোশাকের ধরন, রং, ডিজাইন পাল্টাতে হবে।
ফ্যাশন হাউজের ব্যবসা সুবিধাসমূহ
১। চাহিদা প্রচুর
আগে যদি মানুষের বাইরের পোশাক ২ বা ৩ টি থাকতো, এখন যেকোন মানুষের বাইরের ব্যবহারের জন্য কমপক্ষে ১০টি পোশাক রয়েছে। বাংলাদেশে ১৮ কোটি জনগনের বসবাস।
এই ১৮ কোটি জনগণই কাপড়ের সম্ভাব্য ক্রেতা। আবার প্রতিটি মানুষের যদি কমপক্ষে ২ টি করে জামার প্রয়োজন হয় তবে চাহিদা ৩৬ কোটি। একটু ভেবে দেখুন আপনার সম্ভাব্য ক্রেতা এবং পণ্যেও চাহিদা কত বেশি।
আমরা এখানে কম করেই হিসাব করছি। আপনি এবং আমি উভয়ই জানি চাহিদা আরো অনেক বেশি।
২। সারা বছর ব্যবসা করা যায়
ফ্যাশন হাউজের ব্যবসার অন্যতম সুবিধা হল, সারা বছর আপনি ব্যবসা করতে পারবেন। উৎসবের মৌসুমে চাহিদা বেড়ে গেলেও সারা বছর পোশাকের চাহিদা বাজারে আছে। নিত্য নতুন ফ্যাশনের পোশাক ক্রেতাদের সারা বছরই আকৃষ্ট করে।
৩। অপেক্ষাকৃত কম মূলধন
ফ্যাশন হাউজের ব্যবসা শুরু করার জন্য আপনার খুব বেশি মূলধনের প্রয়োজন নেই। আপনি অল্প কিছু টাকা দিয়ে শুরু করতে পারেন। প্রথমেই খুব বেশি বড় বিনিয়োগের প্রয়োজন নেই।
৪। অফলাইন এবং অনলাইন উভয় ক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগ
কিছু বছর আগেও অনলাইন সেবা আমাদের দেশে নতুন ছিল, তবে এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বেশ কিছু নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকলেও ইতিবাচক ধারনাও আছে। ফ্যাশন হাউজের ব্যবসার সবচেয়ে বড় সুবিধা আপনি অনলাইন এবং অফলাইন উভয় ক্ষেত্রে ব্যবসা করতে পারবেন।
৫। খুব বেশি কর্মীর প্রয়োজন হয় না
আপনি যদি নিজে সক্রিয় ভাবে ব্যবসায় অংশগ্রহন করেন, তবে ১ বা ২ জন কর্মী দিয়েই একটি বড় ফ্যাশন হাউজ পরিচালনা করা সম্ভব।
ফ্যাশন হাউজের ব্যবসার চ্যালেঞ্জ সমূহ
১। লোকেশন
ফ্যাশন হাউজের ব্যবসার জন্য লোকেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনাকে এমন জায়গায় ফ্যাশন হাউজের ব্যবসা করতে হবে যেখানে সহজে ক্রেতা আসতে পারে। আপনাকে খুঁজে পেতে ক্রেতার যেন কোন কষ্ট না হয়।
মার্কেটে দোকান নিলে ফ্যাশন হাউজের ব্যবসার জন্য বেশ ভাল। তবে যদি সে সুযোগ না থাকে তকে এমন মার্কেটের আশেপাশে বা জনসমাগম স্থানে দোকান নিতে পারেন।
২। দ্রুত ফ্যাশন বদলে যাওয়া
পোশাক শিল্পে পরিবর্তন আসে দ্রুত। কোন নতুন পোশাকের চাহিদা যেমন অনেক বেশি থাকে, তেমনি হঠাৎ করেই এক সময় এর চাহিদা কমে যায়। আর তাই পোশাক স্টকে তোলার সময় এই বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। আবার যখন যেমন ফ্যাশন চলছে তেমন পোশাক আপনার কাছে না থাকলে আপনি বাজারে টিকে থাকতে পারবেন না।
৩। প্রচুর প্রতিযোগিতা
কাপড়ের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। আগে যেমন মানুষ প্রয়োজনের বেশি কাপড় কিনতো না, এখন নিত্যনতুন আধুনিক এবং ট্রেন্ড ফলো করা মানুষের নিয়মিত চাহিদা। সুতরাং পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এই ব্যবসার প্রতি মানুষের চাহিদা।
অনেকেই ফ্যাশন হাউজের ব্যবসার করছেন, ফলে প্রতিযোগির সংখ্যাও প্রতিদিনই বাড়ছে। তবে আপনি যদি ব্যবসার নীতি ঠিক রাখেন, ভাল পণ্য নায্য মূল্যে এবং ভাল ব্যবহারের মাধ্যমে ক্রেতার কাছে পৌঁছাতে পারেন, এবং ফ্যাশন সচেতন হন তবে প্রতিযোগিতার এই বাজারে ভাল করতে পারবেন।
৪। ক্রেতা ধরে রাখা
ক্রেতাই ব্যবসার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।। আপনাকে ক্রেতা ধরে রাখতে হবে। ভাল ব্যবহার, মান সম্মত পণ্য এবং নায্য দাম দিয়ে ক্রেতাকে আকৃষ্ট করতে হবে এবং ধরে রাখতে হবে। একজন ক্রেতা আপনার যে মার্কেটিং করতে পারে, আপনি হাজার টাকা খরচ করেও তার সমমূল্য মার্কেটিং করতে পারবেন না।
৫। ফ্যাশন হাউজের ব্যবসার চ্যালেঞ্জ হিসাবে মূলধন
আপনি কম মূলধনে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করতে পারেন, তবে ব্যবসাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আপনাকে আরো বিনিয়োগ করতে হবে। মূলধন তখন একটি বড় সমস্য হয়ে দাঁড়ায়। এমন অবস্থা হওয়ার আগেই আপনাকে পরিকল্পনা করতে হবে।
আপনি ব্যবসার প্রথম থেকেই লাভের অংশের কিছু টাকা পরবর্তী বিনিয়োগের জন্য সঞ্চয় করতে পারেন। অদূর ভবিষ্যৎতে আপনাকে এই টাকা ব্যবসা বড় করতে সাহায্য করবে।